সাম্প্রতিক সময়ে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত সংঘাত ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত দুই দেশ একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে। এ যুদ্ধবিরতি তাদের স্থানীয় সময় অনুযায়ী গত সোমবার মধ্যরাতে কার্যকর হয়।

যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছে মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, যদি যুদ্ধ না থামে, তাহলে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে তিনি আর কোনো বাণিজ্য চুক্তি করবেন না।

সংঘাত শুরু হওয়ার সময় প্রাণহানির সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ জন থাই ও কম্বোডিয়ান নাগরিক নিহত হয়েছেন। সীমান্ত এলাকার কাছ থেকে প্রায় দুই লাখ মানুষ বাস্তুহারা হয়েছেন। থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী কিছু প্রদেশে সামরিক আইন জারি করা হয়েছে। দুই দেশের জাতীয়তাবাদী বক্তব্য আরও বেড়েছে।

যুদ্ধবিরতির আগে কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলে হামলা চালানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও থাই সেনাবাহিনীর দাবি, তারা তা প্রতিহত করেছে। যুদ্ধে দুই দেশই ভারী অস্ত্র ব্যবহার শুরু করে এবং থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ায় বিমান হামলাও চালায়।

কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেন (যিনি এখনো দেশটির রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী) এক শীর্ষ সামরিকপন্থী থাই রাজনীতিককে ‘অত্যন্ত ধূর্ত ও ক্ষমতালোভী’ আখ্যা দেন এবং কম্বোডিয়ার মানুষকে থাইল্যান্ডের হুমকির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

আরও পড়ুনহুন সেনের রহস্যময় চাল: থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়ার এ সংঘাত কেন২৫ জুলাই ২০২৫

অন্যদিকে থাইল্যান্ডের নির্বাহী প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচাইয়াচাই (মূল প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা থাইল্যান্ডের শীর্ষ আদালত কর্তৃক অপসারিত হওয়ায় তিনি দায়িত্ব পালন করছেন) বলেছিলেন, এ সংঘাত ‘সর্বাত্মক যুদ্ধে’ রূপ নিতে পারে।

যদিও বাস্তবে কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী থাইল্যান্ডের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ এবং তার আধুনিক অস্ত্র নেই। ফলে সর্বাত্মক যুদ্ধে দেশটির পক্ষে জেতা সম্ভব না। তারপরও তারা যুদ্ধে জড়িয়েছিল এবং আপাতত ভালো খবর হলো, দুই দেশই এখন যুদ্ধ চাইছে না।

তবে এ যুদ্ধবিরতি টিকবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। আল–জাজিরার খবর অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির পরও সংঘাতপূর্ণ এলাকায় থাই ও কম্বোডিয়ার সীমানায় লড়াই চলছিল আগের মতোই। এই চুক্তিতে দুই দেশের দাবি করা সীমান্ত অঞ্চল নিয়ে কোনো সমাধান হয়নি।

এ সংঘাতের প্রকৃত কারণ বুঝতে গেলে ইতিহাসে ফিরে যেতে হয়। সাধারণত সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, সীমান্ত বিভাজনের সমস্যা ১০০ বছরের পুরোনো। ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনামলে কম্বোডিয়ার সীমানা ঠিকমতো নির্ধারণ হয়নি এবং স্বাধীন শ্যাম দেশের (বর্তমান থাইল্যান্ড) সঙ্গে করা চুক্তিগুলোও অস্পষ্ট ছিল।

আরও পড়ুনথাই-কম্বোডিয়ার সামরিক শক্তি পরীক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র-চীন যেভাবে যুক্ত২৬ জুলাই ২০২৫

শ্যামদেশ বা আজকের থাইল্যান্ড কখনো কোনো বিদেশি শক্তির উপনিবেশ ছিল না। এ ভূখণ্ডকে কখনোই ব্রিটিশ, ফরাসি বা অন্য কোনো ঔপনিবেশিক শক্তি সরাসরি শাসন করেনি। ব্রিটিশরা মিয়ানমার (বার্মা) দখল করেছিল আর ফরাসিরা যেমন ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়াকে উপনিবেশ বানিয়েছিল।

কিন্তু থাইল্যান্ড তাদের হাত থেকে স্বাধীন থাকতে পেরেছিল। তবে কখনো কখনো তারা ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর সঙ্গে আপস করে সীমান্ত চুক্তি করেছিল।

এ ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কম্বোডিয়া ছিল ফরাসি উপনিবেশ এবং ফরাসিরাই অনেক আগে সীমান্ত চিহ্নিত করেছিল, যা নিয়ে আজকের এ বিরোধ।

ফরাসিরা কম্বোডিয়ার হয়ে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি করেছিল। সেসব চুক্তির অনেকগুলো অস্পষ্ট ছিল। ফলে বহু বছর ধরে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে বিরোধ থেকে গেছে। বিশেষ করে কিছু প্রাচীন মন্দির নিয়ে তাদের বিরোধ রয়ে গেছে।

দুই দেশই যেসব মন্দিরকে নিজেদের দাবি করে, তার মধ্যে দুটি মন্দির বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একটি হলো প্রেয়া ভিহিয়ার মন্দির। এটি একটি হিন্দু মন্দির, যা প্রায় এক হাজার বছর আগে খেমার সাম্রাজ্যের সময় তৈরি হয়েছিল।

মন্দিরটি একটি উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এবং স্থাপত্য ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আন্তর্জাতিক আদালত ১৯৬২ সালে কম্বোডিয়ার বলে রায় দিলেও থাইল্যান্ড এটির মালিকানা দাবি করে।

আরও পড়ুনতরুণ থাই নেতার রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের পরিণতি কী২১ মে ২০২৩

দ্বিতীয় মন্দিরটি হলো ‘প্রাসাত তা মুয়েন থম’ নামের মন্দির। এটি খেমার যুগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। এটির অবস্থান থাইল্যান্ডে হলেও কম্বোডিয়া ঐতিহাসিকভাবে এটিকে নিজেদের বলে দাবি করে।

এই মন্দিরগুলো শুধু প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন নয়; বরং জাতীয় গর্ব। এগুলো নিয়ে বিরোধ শুধু স্থাপত্য বা ইতিহাসের জন্য নয়; বরং তা আধুনিক রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

এ অঞ্চল নিয়ে অতীতে নানা সংঘাত হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সীমান্তের থাই অংশে অনেক খেমার গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করেন। এটি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। ২৮ মে সংঘাত শুরুর সময় উভয় দেশই বলেছে, প্রথমে অন্য পক্ষ গুলি ছুড়েছে।

হুন সেন দাবি করেন, থাই জেনারেলরা প্রাসাত তা মুয়েন থম মন্দির বন্ধ করে দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘাত বাড়িয়েছে।

কিন্তু এসব কারণের বাইরেও এখনকার সংঘাতের পেছনে আরও গভীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। বহুদিন ধরে সীমান্ত নিয়ে টানাপোড়েন চলছে, কিন্তু এত বড় সংঘাত আগে হয়নি।

এ মুহূর্তে সংঘাতের মূল কারণ হচ্ছে থাইল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। সংঘাত এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা ও হুন সেনের মধ্যে এক ভুলভাবে ফাঁস হওয়া ফোনালাপ (যেখানে তিনি থাই সেনাবাহিনীকে অবজ্ঞা করে কথা বলেন এবং কম্বোডিয়ার প্রতি দুর্বলতা দেখান) ঝামেলার সূত্রপাত করেছে। পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে যে থাই সামরিক ও রাজার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়, তারা এ ফোন রেকর্ডকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে।

‘প্রাসাত তা মুয়েন থম’ খেমার যুগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। এটির অবস্থান থাইল্যান্ডে হলেও কম্বোডিয়া ঐতিহাসিকভাবে এটিকে নিজেদের বলে দাবি করে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কম ব ড য় র স ও কম ব ড য় র কর ছ ল র জন ত মন দ র

এছাড়াও পড়ুন:

মাত্র দেড় মাসে কীভাবে ১৭ কেজি ওজন কমালেন ক্রিকেটার সরফরাজ খান?

শুরুটা যেভাবে করেছিলেন

সরফরাজ খান ১৭ কেজি ওজন কমিয়েছেন ভাত, রুটি, চিনি, ময়দা ও বেকড খাবার একেবারে বাদ দিয়ে। এর পরিবর্তে খাদ্যতালিকায় তৃপ্তির জন্য রেখেছিলেন বেশি আঁশসমৃদ্ধ ফল ও সবজির সালাদ, ব্রকলি, শসা। প্রোটিনের জন্য রেখেছিলেন গ্রিল করা মাছ ও মুরগি, সেদ্ধ ডিম আর গুড ফ্যাটের জন্য রেখেছিলেন অ্যাভোকাডো। চা ও কফির পরিবর্তে খেয়েছেন গ্রিন টি ও গ্রিন কফি।

৮০ শতাংশ ওজন কমে সঠিক ডায়েটে

ভারতের হলিস্টিক হেলথ এক্সপার্ট ড. মিকি মেহতা বলেন, ‘আপনি যত কঠোর ব্যায়ামই করুন না কেন, ওজন কমানোর ক্ষেত্রে প্রায় ৮০ শতাংশ ভূমিকা রাখে খাদ্যনিয়ন্ত্রণ, আর বাকি ২০ শতাংশ ব্যায়াম। প্রতিদিন কী খাবেন, সেটাই ঠিক করে দেবে শরীর কত দ্রুত বদলাবে।’

সরফরাজ খান ১৭ কেজি ওজন কমিয়েছেন ভাত, রুটি, চিনি, ময়দা ও বেকড খাবার একেবারে বাদ দিয়ে

সম্পর্কিত নিবন্ধ