৩০ জুন জন্ম নিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের অন্যতম চিন্তাবিদ, লেখক ও প্রতিবাদের প্রতীক। তাঁর পরিচয় বহুমাত্রিক—তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক চিন্তক। আহমদ ছফাকে শুধু ‘প্রাবন্ধিক’ বললে তাঁর গভীরতা, ব্যাপ্তি ও প্রভাবকে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়। তিনি ছিলেন সেই দুর্লভ বাঙালি, যিনি এক হাতে বই লিখতেন আর অন্য হাতে দেশের বিবেক জাগিয়ে তুলতেন।
ছফার লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল যুক্তিনির্ভরতা ও বুদ্ধিবৃত্তির স্বাধীনতা। তিনি ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার এবং অন্ধ আনুগত্যের বিরুদ্ধে ছিলেন সর্বদা সচেতন। তাঁর মতে, জাতিকে যদি জাগ্রত করতে হয়, তবে আগে জাগাতে হবে চিন্তার স্বাধীনতা। একটি সমাজ তখনই বিকশিত হয়, যখন সেখানে মতপ্রকাশের অধিকার থাকে, মতভেদকে সম্মান করা হয় এবং বিতর্ককে অগ্রগতি হিসেবে দেখা হয়। সুতরাং ছফার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রয়োজন একটি যুক্তিবাদী, মুক্তচিন্তার পরিবেশ। পাঠ্যক্রমে মুক্তচিন্তা, যুক্তি ও দর্শনের চর্চা বাড়াতে হবে। গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সাহিত্য-সংস্কৃতিতেও ভিন্নমতকে দমন নয়, বরং উৎসাহ দিতে হবে। আজকের তরুণ প্রজন্ম যদি প্রশ্ন করতে শেখে, তবে ছফার পথেই তারা হেঁটে চলেছে।
আহমদ ছফা এমন এক বাংলাদেশ কল্পনা করেছিলেন, যা হবে মানুষের, মানবতার, ন্যায়ের ও সংস্কৃতির। তাঁর লেখায় শুধু সাহিত্যের সৌন্দর্য নয়, ছিল রাষ্ট্রচিন্তার বিশ্লেষণ, ইতিহাসের নির্মোহ পুনর্মূল্যায়ন এবং ভবিষ্যৎ নির্মাণের দিকনির্দেশ। ছফার ভাবনায় ছিল রাষ্ট্র কেবল ভূগোল নয়, এটি এক আত্মিক প্রকাশ। ছফা যে বাংলাদেশ কল্পনা করতেন, সেখানে রাষ্ট্র হবে জনগণের। দল নয়, ক্ষমতালিপ্সু গোষ্ঠী নয়, বরং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সম্মানজনক জীবনের নিশ্চয়তা থাকবে সেই রাষ্ট্রে। কিন্তু আজকের বাংলাদেশে রাজনীতি যেভাবে ব্যক্তি ও দলের সংকীর্ণতাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে, তা ছফার আদর্শ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রয়োজন সাংবিধানিক সংস্কার, রাজনৈতিক দলগুলোর জবাবদিহি এবং নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকা। ছফা চাইতেন রাজনীতির কেন্দ্রে থাকুক নীতির প্রশ্ন, আদর্শের প্রশ্ন, মানবিকতার প্রশ্ন। এই চেতনা প্রতিষ্ঠা করতে হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রশাসন পর্যন্ত সব জায়গায় আদর্শিক মানদণ্ড ফেরত আনতে হবে।
আহমদ ছফার সবচেয়ে বড় হতাশার জায়গা ছিল—স্বাধীন বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা। তিনি দেখতে পেয়েছিলেন, কীভাবে অনেক বুদ্ধিজীবী পাকিস্তানি আমলে ক্ষমতার পদলেহন করেছেন, আর স্বাধীনতার পর সেই একই পন্থায় বেঁচে থেকেছেন। তিনি বলেছিলেন: এই জাতির সবচেয়ে দুর্ভাগ্য এই যে তাদের যারা বুদ্ধিজীবী, যারা চিন্তার দায়িত্ব নিয়েছেন, তারা অধিকাংশই মেরুদণ্ডহীন। ছফার মতে, যদি জাতির চিন্তানেতৃত্ব ব্যর্থ হয়, তবে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার বা মানবিকতা—কোনো কিছুরই বিকাশ সম্ভব নয়। একটি জাতির ‘বুদ্ধিবৃত্তিক মেরুদণ্ড’ ভেঙে গেলে জাতি হয়ে পড়ে দিশাহীন। একদিকে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, অন্যদিকে চিন্তার পঙ্গুত্ব—এই দুইয়ের সম্মিলনে জাতি ধীরে ধীরে আত্মবিস্মৃত হয়ে পড়ে। এই উক্তি আজও সমান প্রাসঙ্গিক। যখন চিন্তাবিদেরা দলকানা হয়ে পড়েন, সত্যকে এড়িয়ে যান, অথবা ভয়ে চুপ থাকেন—তখন ছফার এই উচ্চারণ যেন ঘনঘোর সতর্কবার্তা হয়ে ফিরে আসে। একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশেও নৈতিক নেতৃত্বের অভাব, একচেটিয়া ভাবনাচর্চা এবং মতপ্রকাশের সংকট এই সমস্যারই প্রকাশ।
ছফা চাইতেন এক সাহসী বুদ্ধিজীবী সমাজ, যারা সত্য বলবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে এবং রাষ্ট্রের বিবেক হয়ে কাজ করবে। এ ধরনের সমাজ গড়তে হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে হতে হবে স্বাধীন চিন্তার অগ্রভাগ। লেখক, শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী—এঁদের দায়িত্ব নিতে হবে সমাজকে নৈতিকভাবে জাগিয়ে তোলার। নৈতিকতা ছাড়া জ্ঞান যেমন অন্ধ, তেমনি ছফার বাংলাদেশও অসম্ভব।
স্বাধীনতা-পরবর্তীকালের বাংলাদেশের মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতিচর্চাকে ছফা দুটি দলে চিহ্নিত করেছেন—এক দলে আছেন ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণে উৎপীড়িত ও লাঞ্ছিত মানুষ, অপর দলে আছেন ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠী। ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও দুদলের রুচি ও ধরন আলাদা।.
বাঙালি মুসলমান হিসেবে আত্মপরিচয়ের সংকট দূর করতে হলে ছফার দেখানো পথে ফিরতে হবে। আমাদের ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য—এই উপাদানগুলোর মধ্যেই রয়েছে আমাদের জাতিসত্তা। এই আত্মপরিচয়কে ভিত্তি করেই তৈরি করতে হবে একটি সাংস্কৃতিক জাগরণ, যেখানে ‘বাঙালি’ পরিচয় গৌরবের ও একতাবদ্ধ হওয়ার শক্তি হবে। আহমদ ছফা বিশ্বাস করতেন, উন্নয়নের প্রথম ও প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে শিক্ষা ও সংস্কৃতি। তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষাকে মানবিক ও অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ করে গড়ে তুলতে হবে। পাঠ্যবই থেকে শুরু করে পাঠদর্শন পর্যন্ত ঢেলে সাজাতে হবে। শুধু তথ্য নয়, মানুষ গড়ার শিক্ষা দরকার। পাশাপাশি সংস্কৃতির প্রতিটি শাখায় উৎসাহ দিতে হবে মুক্তচিন্তা, সৃজনশীলতা ও সাহসী প্রকাশকে।
আহমদ ছফা কখনো সংখ্যাগুরু চিন্তাধারার অংশ হননি। তিনি ছিলেন সেই বিরল লেখক, যিনি বরাবর শোষিত মানুষের পক্ষে কলম ধরেছেন। সাহিত্যে, সাংবাদিকতায় কিংবা বক্তৃতায়—সব জায়গায় তাঁর অবস্থান ছিল অবিচল ও আপসহীন। তিনি বিশ্বাস করতেন, লেখকের কাজ শুধু সাহিত্য রচনা নয়, বরং সময়ের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। এই কারণেই তাঁর লেখায় বারবার উঠে এসেছে ক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, শোষিতের প্রতি সহমর্মিতা এবং বাংলাদেশি জাতিসত্তার জাগরণ। আহমদ ছফার সবচেয়ে আলোচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’ এবং ‘বাঙালি মুসলমানের মন’। এই দুই গ্রন্থে তিনি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন বাঙালির জাতিসত্তা ও মুসলমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির মনস্তত্ত্ব। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে পাকিস্তানি আমলে বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা জাতীয় স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থে কাজ করেছেন, কীভাবে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের সময়ও দ্বিধাগ্রস্ত থেকেছেন। তাঁর লেখা কোনো দল বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ নেয়নি, বরং সব ধরনের পক্ষপাতিত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছে।
১৯৭২ সালে গণকণ্ঠে ‘বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হলে তা সাহিত্য সমাজে ভূকম্পনের মতো অভিঘাত হানে। সরকার, বুদ্ধিজীবী, এমনকি লেখক সমাজ—সবাই তাঁর কলমের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে নিঃশব্দ। কারণ, তিনি তুলে ধরেন সেই অপ্রিয় সত্য, যা সবাই এড়িয়ে যেতে চায়। যুবক বয়সে আহমদ ছফা সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হন। কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইন উপড়ে ফেলার মতো বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। মাস্টারদা সূর্য সেনের বিপ্লবী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে আত্মগোপনে যান। এই জীবনধারা পরবর্তী সময়ে তাঁর চিন্তায়, লেখায় ও মননে গভীর ছাপ ফেলেছিল। তাঁর বন্ধু ও সমকালীন লেখকেরা যখন সুবিধাবাদিতা, পদক-পদবির পেছনে ছুটেছেন, তখন ছফা ছিলেন উল্টো পথে হেঁটে যাওয়া এক সাহসী মানুষ।
আহমদ ছফা ছিলেন ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক অবিচল কণ্ঠ। তাঁর লেখায় বারবার উঠে এসেছে সমাজের গোঁড়ামি ও রাজনৈতিক শঠতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান। তিনি কখনো ধর্মকে ব্যক্তিগত বিশ্বাসের বাইরে সমাজ নিয়ন্ত্রণের অস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেননি। তাঁর মতে, জাতি গঠনের মূল ভিত্তি হতে হবে মুক্তচিন্তা, মানবতাবাদ ও সাংস্কৃতিক চেতনা। আহমদ ছফা অনুধাবন করেছিলেন: যারা বাংলাদেশের সর্বমানবের জীবনের মঙ্গলের মতো একটি প্রাণোচ্ছল সংস্কৃতি কামনা করেন, তাদের রাজনীতি ও সংস্কৃতিকে পিঠাপিঠি ভাইবোনের মতো দেখা ছাড়া উপায় নেই। কেননা, রাজনীতিতে যদি ফ্যাসিবাদ শিকড় গেড়ে বসে, সাংস্কৃতিক অগ্রসরণের প্রশ্নই ওঠে না। সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ছাড়া কোনো রাজনৈতিক অগ্রগতি নেই। রাজনীতি সুন্দরভাবে, সুস্থভাবে অপরের সঙ্গে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক স্থাপন করে বাঁচার সংগ্রাম।’ আহমদ ছফার সাহিত্যচর্চা ছিল তাত্ত্বিক, অথচ জীবনঘনিষ্ঠ। তাঁর উপন্যাস অলাতচক্র, গাভী বিত্তান্ত কেবল সাহিত্যের দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, সমাজ ও রাষ্ট্র বিশ্লেষণের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। তাঁর ভাষা সহজ, অথচ বিষয়ের গভীরতা অতল। তিনি সাহিত্যের মাধ্যমে জনগণের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন, যেখানে দুর্বল, প্রান্তিক, নিপীড়িত মানুষের জীবন কথা বলে।
আহমদ ছফাউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স ব ধ নত ঔপন ব শ ক র জন ত ক কর ছ ন র অন য প রক শ আদর শ ক ষমত করত ন
এছাড়াও পড়ুন:
৩৫ বছর আগে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচনে যা ঘটেছিল
১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ছিল বৃহস্পতিবার। সেদিন সকাল আটটা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়, শেষ হয় বেলা সাড়ে তিনটায়। ভোট চলাকালেই বোঝা গিয়েছিল ১২ সংগঠনের ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ বিপুল ভোটে জিততে চলছে। কেননা, শিক্ষার্থীরা এ প্যানেল নিয়ে ছিলেন বেশ উচ্ছ্বসিত।
নির্বাচনের পর ১০ ফেব্রুয়ারি ইত্তেফাক পত্রিকার প্রধান খবরের শিরোনাম ছিল—‘চাকসু নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের বিপুল বিজয়’। আর দৈনিক আজাদী পত্রিকার শিরোনাম ছিল—‘চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের ধস নামানো জয়’। খবরে বলা হয়, ৯৯টি পদের মধ্যে ৮৮টিতে জয় পায় সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।
নির্বাচনের পর ছাত্রশিবির সংবাদ সম্মেলন করে। তারা কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তোলে। যদিও সেসব অভিযোগ পরবর্তী সময় ‘হাওয়ায়’ মিলিয়ে যায়। ১০ ফেব্রুয়ারি ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম নগরে বিজয় মিছিল বের করা হয়।
পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী, ১০ ফেব্রুয়ারি বেলা দুইটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও শিক্ষার্থীরা সেই বিজয় মিছিলে অংশ নিতে শহীদ মিনারে যান। বিকেল চারটায় শুরু হয় বিজয় মিছিল। স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে নগরের বিভিন্ন সড়ক। মিছিলটি নিউমার্কেট, স্টেশন রোড, মোমিন রোড, আন্দরকিল্লা, লাল দিঘীরপাড় থেকে সন্ধ্যায় আবার শহীদ মিনারে ফিরে যায়। চাকসুর নির্বাচিত নেতারাও যোগ দেন ওই বিজয় মিছিলে। নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের বিজয়ে একই দিন মিছিল বের হয় কুমিল্লায়। পরদিন ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে শত মাইল দূরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও আনন্দমিছিল হয়।
সেদিন সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬টি বাসে শিক্ষার্থীরা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবন ঘেরাও করেন। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য করা হয়েছিল মূলত শিক্ষার্থীদের চাপে। সর্বদলীয় সভায় ওই ঐক্য করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমাদের ডাকা হয়।আজিম উদ্দিন আহমদ, সাবেক জিএস, চাকসুনির্বাচনের পর ছাত্রলীগ, জাতীয় ছাত্রলীগ, বিপ্লবী ছাত্রধারা, ছাত্রপরিষদ, ছাত্র পরিষদ, ইসলামী যুব সেনা, প্রগতিশীল মানবতাবাদী ছাত্রজোটসহ বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়ে অভিনন্দন জানায়। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘এই বিজয় স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রমনা শিক্ষার্থীদের বিজয়।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের তৎকালীন উপসহসভাপতি জিয়াউল আহসান সে সময় বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘এ বিজয় সারা দেশের ছাত্ররাজনীতিতে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার সূচনা করবে।’
সর্বদলীয় সভা শেষে ছাত্র ঐক্য
চাকসুর পঞ্চম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে। এতে ভিপি ও জিএস পদে নির্বাচিত হন ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন নেতা জসিম উদ্দিন সরকার ও আবদুল গাফফার। ফলে ষষ্ঠ নির্বাচনেও ছাত্রশিবির ছিল ‘কনফিডেন্ট’। অর্থাৎ তারা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল। তবে ছাত্রশিবিরের বিপরীত প্রান্তে দাঁড়িয়েছিল ১২টি ছাত্রসংগঠন। সবাই মিলে গড়ে তুলেছিল ঐক্যবদ্ধ মোর্চা- সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।
যে ১২ সংগঠনের মধ্যে ঐক্য হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ছাত্রলীগ (হাবিবুর রহমান-অসীম কুমার), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (আবদুস সাত্তার-মোশারফ হোসেন), ছাত্রলীগ (নাজমুল হক-শফি আহমেদ), ছাত্রলীগ (বজলুল রশীদ-আজম), জাতীয় ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, ঐক্য সমিতি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন।যে ১২ সংগঠনের মধ্যে ঐক্য হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ছাত্রলীগ (হাবিবুর রহমান-অসীম কুমার), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (আবদুস সাত্তার-মোশারফ হোসেন), ছাত্রলীগ (নাজমুল হক-শফি আহমেদ), ছাত্রলীগ (বজলুল রশীদ-আজম), জাতীয় ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, ঐক্য সমিতি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন। এর মধ্যে নাজমুল হক ও শফি আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ জাসদের সমর্থক ছিল।
সে সময় ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ সহজেই তৈরি হয়নি। স্মৃতিচারণা করে চাকসুর সর্বশেষ জিএস আজিম উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের আগে জানুয়ারি মাসে একদিন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবনে সর্বদলীয় সভা হয়। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, বিএনপির নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) শাহ আলম, বাসদ নেতা বালাগাত উল্লাহ, জাসদ নেতা আবুল কালাম আজাদসহ অন্যান্য নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
আজিম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সেদিন সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬টি বাসে শিক্ষার্থীরা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবন ঘেরাও করেন। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য করা হয়েছিল মূলত শিক্ষার্থীদের চাপে। সর্বদলীয় সভায় ওই ঐক্য করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমাদের ডাকা হয়।’
চাকসু ভবন