শিগগির দেশকে নির্বাচনী উৎসবের দিকে নিতে হবে
Published: 23rd, May 2025 GMT
দক্ষিণ এশিয়ার জাতিসত্তাগুলোর মধ্যে সর্বাগ্রে ঔপনিবেশিক সীমান্তছক পেরিয়ে নিজস্ব ধাঁচের রাষ্ট্র গড়তে নেমেছিল বাংলাদেশ। প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশ জাতি ও বিশ্বাসকেন্দ্রিক শ্রেষ্ঠত্ববাদ অতিক্রম করা এক গণরাষ্ট্র হয়ে আশপাশের অন্যান্য জাতিকেও মুক্তির পথ দেখাবে। বাংলাদেশের জন্ম ভারত ও পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র-ঐতিহ্যকে বড় মুশকিলে ফেলেছে।
‘রাষ্ট্র’ গঠন ও পুনর্গঠনে একাত্তরের অঙ্গীকারগুলোই আবার জীবন্ত হয়েছে ‘৩৬ জুলাই’য়ের আগে-পারে। সমকালে অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের জন্য এত সফল নির্দলীয় জাতীয় জাগরণের নজির নেই। ‘বাংলাদেশ মডেল’ স্বৈরশাসকদের জন্য একটা বৈশ্বিক বার্তা দিয়েছিল।
কিন্তু প্রায় ১০ মাস পর আমরা কোথায় এসে দাঁড়ালাম? গণ অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশ আয়নায় কী দেখছে?
যদি আমরা বিশ্বাস করি ৩৬ জুলাই সফল হয়েছে সৈনিক-জনতার ঐকমত্যে, তাহলে সেই সম্মতিকে সিভিল-মিলিটারি সম্পর্কের ঔপনিবেশিক ধরন সংস্কারেও কাজে লাগাতে হবে।স্বপ্ন ছিল গণতন্ত্রের উন্নত এক নিরীক্ষার, কিন্তু মিলছে নিরন্তর চলমান এক মবতন্ত্র। সবাই চেয়েছিল বৈষম্যের প্রাচীরগুলো ধ্বংসের কাজ তাৎক্ষণিকভাবে শুরু হবে। কিন্তু এরই মধ্যে গণ-অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য প্রশ্নবিদ্ধ ও ধোঁয়াশা হলো অনেকখানি। ‘বিপ্লব’ পুরো বেহাত না হলেও ধুঁকছে। প্রতিদিন শিশুসুলভ গোঁয়ার্তুমিতে রাজধানীর জনজীবন জিম্মি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা বাগ্যুদ্ধ পেরিয়ে রাজপথেও পরস্পরের মহড়া দিতে নামছে। গণ-অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সম্মতি ও সমর্থনে যে অন্তর্বর্তী সরকার হয়েছে, তার দুই উপদেষ্টার বিদায় চাচ্ছে এক পক্ষ, অন্য পক্ষ সরাতে চাচ্ছে অন্য তিন উপদেষ্টাকে। ৩৬ জুলাইয়ের এই মরণদশায় খোদ রাষ্ট্রকেও আমরা নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে ফেলছি। শক্তিধর দেশগুলোর পাশা খেলায় বুঝে না বুঝে বাংলাদেশকে পক্ষ-প্রতিপক্ষ বানানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। প্রতিনিধি বাছাইয়ের সুযোগহীন জনতা বোবা-বিরক্তি নিয়ে অনির্বাচিত জাতীয় নেতাদের এসব প্রয়াস দেখছেন। তসবিহ গণনার মতো প্রহর গুনছেন নির্বাচনের। তাদের অবিলম্বে এমন রাজনৈতিক সরকার চাই, যারা কেবল প্রত্যাশার বাণী শোনাবে না, জবাবদিহি করবে।
সিভিল-মিলিটারি সম্পর্ক গণ-অভ্যুত্থানের ৮-১০ মাসে কাদের স্বার্থে ও কাদের দ্বারা এত নাজুক অবস্থায় ঠেলে দেওয়া হলো, সেই প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।নির্বাচিত প্রশাসনের অপেক্ষায় বাংলাদেশঅধিকাংশ মানুষ এখন আর রাষ্ট্র সংস্কারের কথামালায় আস্থা রাখতে পারছে না। তাদের উৎসাহ প্রায় মৃত। তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের সংকোচনে পীড়িত। সর্বত্র বেকারত্ব বাড়ছে। কৃষির প্রধান মৌসুমের ফলন নিরাপদে গোলায় উঠলেও শিল্পের অশনিসংকেতের আঁচ গেছে শহরতলিতেও। স্থানীয় সরকার নেই। জাতীয় সরকারও নেই। অথচ মানুষের বুকে চিৎকার করে বলার মতো অনেক কথা।
অভ্যন্তরীণ জরুরি কাজ বাদ দিয়ে সীমান্ত করিডর, বন্দর ইজারার মতো বাড়তি বিতর্কে মানুষ কিছু বলতে চায় এখন। তাই জরুরি ভিত্তিতে নির্বাচন প্রয়োজন। জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো আকারে-ইঙ্গিতের চৌহদ্দি ছেড়েও সেই প্রয়োজনের কথা বলছে।
নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মাঠপর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের বড় কাঠামো রয়েছে। তারা বুঝতে পারছে দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় দেশের অভ্যন্তরীণ সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামো ভেঙে পড়তে চলেছে। ১৭ কোটি মানুষের রাজনৈতিক অভিভাবকহীন সমাজকে পাহারা দেওয়া ধাপে ধাপে দায়িত্ব পাওয়া কয়েক হাজার সৈনিকের কাজ নয়। সৈনিক-জনতার সেই মৈত্রীকেও প্রাতিষ্ঠানিকতা না দিয়ে ক্রমাগত ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। সিভিল-মিলিটারি সম্পর্ক গণ-অভ্যুত্থানের ৮-১০ মাসে কাদের স্বার্থে ও কাদের দ্বারা এত নাজুক অবস্থায় ঠেলে দেওয়া হলো, সেই প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।
নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে দীর্ঘদিন মাঠে রেখে দেওয়ায় পুরো প্রতিরক্ষাকাঠামো ইতিমধ্যে তার বার্ষিক মানোন্নয়নে পিছিয়ে পড়ছে এবং সেটা নানান সামাজিক দূষণের শিকার হয়ে পড়ারও শঙ্কায় আছে। ১৯৯০ ও ২০২৪–এর জনজাগরণ বাংলাদেশকে যেখানে নিয়ে এসেছে, সেই সমাজকে সামরিক পথে নিয়ন্ত্রণ করা দুরূহ। একে যেকোনো মূল্যে দ্রুত নির্বাচনী গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক পথে চালিত করা জরুরি।
কিন্তু প্রায় ১০ মাস পর আমরা কোথায় এসে দাঁড়ালাম? গণ অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশ আয়নায় কী দেখছে?সংস্কার প্রশ্নে সশস্ত্র বাহিনীর কথা শুনতে সমস্যা কোথায়এ সময়ে রাষ্ট্র সংস্কার সমাধা করাও গণ-অভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। দরকার ৩৬ জুলাইয়ের ইচ্ছাগুলোকে অতীতের মতো চেতনা-পণ্য না করে প্রশাসনিক পরিবর্তনের ব্যবহারিক অনুবাদ। ‘সংস্কার’ স্বল্পসংখ্যক সুশীল নাগরিকদের কেতাবি বিষয় হতে পারে না। পুলিশ ও প্রশাসনের সংস্কার নিয়ে এখন আর কথাই হচ্ছে না। অথচ স্বাধীনতার পর থেকে এই দুটি পরিসরে পরিবর্তনের প্রয়োজন বেশি উপলব্ধি করেছে জনসমাজ। সংস্কার বিষয়ে পেশাজীবী সংস্থাগুলো বিশেষ করে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাকাঠামো প্রশ্নে সশস্ত্র বাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক মতামত নেওয়াও জরুরি।
যদি আমরা বিশ্বাস করি ৩৬ জুলাই সফল হয়েছে সৈনিক-জনতার ঐকমত্যে, তাহলে সেই সম্মতিকে সিভিল-মিলিটারি সম্পর্কের ঔপনিবেশিক ধরন সংস্কারেও কাজে লাগাতে হবে। তৃতীয় বিশ্বের একটা দেশে সশস্ত্র বাহিনী বারবার নির্বাচনের জন্য বলছে, তাগাদা দিচ্ছে—এটাও অভিনব ঘটনা। বাংলাদেশের জনগণ ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব সৌভাগ্যবান যে সিভিল কর্তৃত্বে আস্থাশীল সশস্ত্র বাহিনী তাদের রয়েছে। কিন্তু সেই বাহিনীকে প্রতিদিন হেনস্তা ও অপদস্থ না করে জাতীয় সংস্কার এজেন্ডাগুলো নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলা যেতে পারে তাদের সঙ্গে।
এই সশস্ত্র বাহিনীর জন্ম হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মাঠে। যুদ্ধকালে সৈনিকেরা অস্ত্রটি কৃষকের হাতে দিয়ে লাঙলে হাত লাগাতেন। ৩৬ জুলাই ভিন্ন আদলে সেই আবেগের পুনর্জন্ম দেখেছে। কিন্তু বেসামরিক সমাজের কেউ অভ্যুত্থানের সেই শক্তিকে অনির্দিষ্ট সময় ক্ষমতায় থাকার প্রত্যয়নপত্র হিসেবে ধরে নিলে জাতীয় স্বার্থ বিপন্ন হবে।
ছদ্ম যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে সিরিয়া, লিবিয়া, ইরাক ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়েছে। বাংলাদেশকে এই সংস্কৃতি থেকেও দূরে রাখতে হবে। ঘরের কাছের মিয়ানমারেও তার আলামত দেখছি আমরা। বাংলাদেশের এ বিষয়ে প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা। একই সঙ্গে মবতন্ত্রের আস্ফালন বন্ধে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো সর্বোচ্চ কঠোর হবে, এ–ও জনপ্রত্যাশা।সিভিল-মিলিটারি সম্পর্কের সংহতি জাতীয় স্বার্থে কত প্রয়োজন, সম্প্রতি পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ তা দেখিয়েছে। বাংলাদেশের বেলাতেও একই কথা খাটে। অথচ ৩৬ জুলাই থেকে মবতন্ত্র দেশকে ওঠবস করাচ্ছে। সামরিক-বেসামরিক নেতৃত্বের দরকারি বোঝাপড়াতেও মবতন্ত্রকে আঘাত করতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুশ ইনের মতো পরিস্থিতিতে আবশ্যকতা ছিল উল্টোটা।
এ অবস্থায়, দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে খাদের কিনার থেকে তুলতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাহসী দেশপ্রেমিক ভূমিকা সময়ের দাবি। রাষ্ট্রকাঠামোর সব সংস্কার গুরুতর রাজনৈতিক প্রশ্ন। এনজিও কায়দায় তা সম্ভব নয়। ছদ্ম যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে সিরিয়া, লিবিয়া, ইরাক ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়েছে। বাংলাদেশকে এই সংস্কৃতি থেকেও দূরে রাখতে হবে। ঘরের কাছের মিয়ানমারেও তার আলামত দেখছি আমরা। বাংলাদেশের এ বিষয়ে প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা। একই সঙ্গে মবতন্ত্রের আস্ফালন বন্ধে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো সর্বোচ্চ কঠোর হবে, এ–ও জনপ্রত্যাশা। ইতিমধ্যে মববাজরা নানান রাজনৈতিক স্লোগানের আড়ালে দেশজুড়ে এক অরাজক অবস্থা কায়েম করেছে। জনপ্রতিনিধিত্বহীন সমাজে অভ্যুত্থানের দোহাইয়ে অনেক অনাচার হয়েছে। এসবের শেষ দরকার।
সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্যে এসে শিগগির বাংলাদেশকে নির্বাচনী উৎসবের দিকে নিতেই হবে। এই লক্ষ্যে রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা ও বিলম্ব হবে আত্মঘাতী। দেশে সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচন চায়, অথচ রাজনীতিবিদেরা তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ—এমন নজির বিশ্বে কম। এই ব্যবধান কমাতে উদ্যোগী না হলে গণ-অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সশস ত র ব হ ন র র জন ত ক ঔপন ব শ ক ৩৬ জ ল ই ন র জন র হয় ছ ১০ ম স সরক র অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
ডাইনির সাজে শাবনূর!
ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূর এখন অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। মাঝেমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টের মাধ্যমে নিজের খবর জানান দেন তিনি। এবার সেই পর্দার প্রিয় নায়িকা হাজির হয়েছেন এক ভিন্ন সাজে—ডাইনির রূপে!
প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর বিশ্বের নানা প্রান্তে পালিত হয় ঐতিহ্যবাহী হ্যালোইন উৎসব। পশ্চিমা বিশ্বে এটি এক জনপ্রিয় দিন, যেখানে মানুষ নানা ভুতুড়ে সাজে নিজেদের উপস্থাপন করে। যদিও অনেকেই মনে করেন এটি কেবল ভূতের সাজের উৎসব, আসলে মৃত আত্মাদের স্মরণেই হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী এ দিনটি উদযাপিত হয়।
আরো পড়ুন:
পর্দায় ‘মহল্লা’র ভালো-মন্দ
বাবা হওয়ার কোনো বয়স আছে? সত্তরে কেলসির চমক
সেই উৎসবের আমেজে এবার শামিল হয়েছেন শাবনূরও। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা এক ছবিতে দেখা গেছে, ছেলে আইজানকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সেজেছেন ভয়ংকর এক ডাইনির সাজে—চোখের কোণ বেয়ে নেমে আসছে লাল রক্তের রেখা, সঙ্গে এক ‘ভূতুড়ে’ চেহারার চরিত্র।
ছবির ক্যাপশনে শাবনূর লিখেছেন, “আমি সাধারণ মা নই, আমি একজন দুর্দান্ত মা—যিনি একজন ডাইনিও! হ্যালোইনের শুভেচ্ছা, বাচ্চারা!”
পোস্টের শেষে তিনি যোগ করেছেন, “এটা শুধু মজা করার জন্য।”
ভক্তরা কমেন্টে ভরিয়ে দিয়েছেন শুভেচ্ছা ও প্রশংসায়। কেউ লিখেছেন, “শাবনূর মানেই চমক,’ কেউ আবার জানিয়েছেন, ‘হ্যালোইনেও আপনি আমাদের শাবনূরই—ভালোবাসা রইল।”
ঢাকা/রাহাত/লিপি