বাংলা বা বাংলাদেশের উপন্যাসের শক্তি, আধুনিকতা, গঠনকাঠামো বিবেচনায় নিয়ে একে দুর্বল সাহিত্য হিসেবে চিহ্নিত করার নেপথ্যে যেসব বয়ান তৈরি করা হয়, তা সবটা ঠিক না হলেও এই বক্তব্য পুরোপুরি খণ্ডন করা যায় না। মুসলিম কথাকারদের বেলায় এটি আরও বেশি যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন অনেকে। বঙ্কিম-রবীন্দ্র পেরিয়ে কল্লোল যুগের পরেও বিভাগপূর্ব বা পরের বাঙালি মুসলিম ঔপন্যাসিকেরা উপন্যাসের শক্ত জমিন খুঁজে পাননি। এ বিষয়ে সৈয়দ শামসুল হক এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ছাড়া কারও নাম তিনি বলতে পারেন না।

বলা যেতে পারে বিভাগপূর্ব ও অব্যবহিত পরে বাংলাদেশের প্রধান শক্তিমান ও আধুনিক কথাকার সৈয়দ ওয়ালউল্লাহ্। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ বাংলায় মাত্র তিনটি উপন্যাস লিখেছিলেন— ‘লালসালু’ (১৯৪৮), ‘চাঁদের অমাবস্যা’ (১৯৬৪) ও ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ (১৯৬৮)। (পরে আরও দুটি লিখেছেন ইংরেজিতে—‘হাউ টু কুক বিনস’ ও ‘দ্য আগলি এশিয়ান’।) দীর্ঘ সময় ধরে মাত্র তিনটি উপন্যাস লিখলেন তাকে মানোত্তীর্ণ করার জন্য; উপন্যাস লেখার এবং তা শিল্পের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ করার যে প্রত্যয় তাঁর ছিল, তা সফল বলা চলে। বাংলা সাহিত্যে তাঁর উপন্যাস নতুন সংযোজন—কি গল্পে, কি কৌশলে, কি অন্তর্গত নিগূঢ় তীক্ষ্ণধী বিশ্লেষণে।

বিভাগপূর্ব ও অব্যবহিত পরে বাংলাদেশের প্রধান শক্তিমান ও আধুনিক কথাকার সৈয়দ ওয়ালউল্লাহ্। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ বাংলায় মাত্র তিনটি উপন্যাস লিখেছিলেন— ‘লালসালু’ (১৯৪৮), ‘চাঁদের অমাবস্যা’ (১৯৬৪) ও ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ (১৯৬৮)। (পরে আরও দুটি লিখেছেন ইংরেজিতে—‘হাউ টু কুক বিনস’ ও ‘দ্য আগলি এশিয়ান’।)

ওয়ালীউল্লাহর মানস-প্রত্যয় ও শিল্পবোধ ছিল পরিণত, প্রগতিশীল এবং সমসাময়িক কালের সারা বিশ্বের শিল্প–সাহিত্যের সঙ্গে একাত্ম। সংগত কারণেই তাঁর উপন্যাস নব নব পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে, ঘটনা সেখানে বড় কোনো উৎপাদক নয়। আধুনিক পর্যায়ের উপন্যাসে ঘটনার সমাগমের পরিবর্তে গুরুত্ব পেয়েছে জীবনমুখিনতা, আত্মবিশ্লেষণ ও প্রতিটি ঘটনাকে জীবন-জিজ্ঞাসার বেদিতে অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ। বাংলা উপন্যাসে ঊনবিংশ শতাব্দীর চতুর্থ দশকে ওয়ালীউল্লাহ্ আবির্ভূত হয়ে তাঁর প্রথম উপন্যাসকে এই নবধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন। সাহিত্যে বিশেষভাবে উপন্যাসে যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছিল, ওয়ালীউল্লাহ্ তা গভীর তাৎপর্যের সঙ্গে লক্ষ করেছিলেন। স্ট্রিম অব কনশাসনেস বা সচেতনতার অতল প্রবাহ নামে যে নতুন ধারণা আধুনিক কালে বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলা উপন্যাসে, ওয়ালীউল্লাহ্ প্রথম তার প্রয়োগ দেখালেন। অস্তিত্ববাদী চিন্তাচেতনা, ব্যক্তিমানুষের অস্তিত্বজনিত যন্ত্রণা (ইগোম্যানিয়াস), ভীতি (অ্যাংস্ট), চেতনজাত অভিজ্ঞতা প্রভৃতির ব্যবহারিক উদাহরণ তাঁর উপন্যাসে মেলে।

‘লালসালু’ উপন্যাসের গঠনকৌশল আপাতদৃষ্টে সামাজিক উপন্যাসের মতো হলেও এর গঠনগত বৈশিষ্ট্য বেশ আলাদা। মুসলমানদের নিয়ে লেখার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন ঔপন্যাসিক। পিছিয়ে পড়া মুসলিম সমাজ যে ধর্মান্ধতার পথে ছিল, সেখানে আঘাত করে তাদের জাগিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন। ওয়ালীউল্লাহ্কে ভুল বোঝার কোনো সুযোগ নেই।

সাধারণত পুরাতন মধ্যযুগীয় ধারায় পিকারেস্ক জাতীয় উপন্যাসে ‘লালসালু’র মজিদের মতো চরিত্র থাকে, যারা সচরাচর টাইপড। তবে মজিদ প্রকৃত অর্থে কোনো ছকে বাঁধা চরিত্র নয়। উপন্যাসে মজিদের নতুন সফল জীবন নির্মাণ করতেই কাহিনির বিস্তার। মজিদের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ দিয়ে সে সবাইকে সম্পৃক্ত করেছে গভীরভাবে। নিঃস্ব অসহায় মজিদ অভিনব বাণিজ্য মিশন নিয়ে মহব্বত নগরে আসে। মৃত একজন মানুষের কবরকে (মাটির ঢিবি) জনৈক বিখ্যাত মোদাচ্ছের পীরের মাজার বলে চালিয়ে দিয়ে গোটা গ্রামাবাসীকে জিম্মি করে। মজিদের চরিত্র নির্মাণ করতে যেসব অনুষঙ্গ প্রয়োজনীয়, যে যে চরিত্র আবশ্যক, তাই উপন্যাসে স্থান পেয়েছে। এই ব্যাপারে লেখকের স্বল্পবাক্ অর্থাৎ পরিমিতিবোধ প্রশংসনীয়। উপন্যাসের সৃষ্টিকৌশল বিবেচনায় আনলে লেখকের বর্ণনাভঙ্গিমা, নাটকীয়তা, ভাষা ব্যবহারের দক্ষতা, কাব্যময়তা, নিস্পৃহতা ও চরিত্রগুলোর রহস্য উন্মোচনের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। উপন্যাসের শিল্প সুষমাকে বিচার করতে হলে উল্লিখিত বিবেচনা ছাড়াও লেখকের প্রকরণগত সৌন্দর্যচেতনা, আলংকারিক প্রয়োগও লক্ষ করতে হবে। লালসালু ওয়ালীউল্লাহর প্রথম উপন্যাস হলেও এতে কাঠামোগত ও শিল্পগত ত্রুটি নেই। তবে পরের দুটো উপন্যাসের জটিল বিশ্লেষণধর্মিতা ও কাহিনির রহস্যময়তা এখানে নেই। এ উপন্যাসের শুরুর বর্ণনাটা বেশ চমকপ্রদ, অন্তর্মুখী দৃষ্টি নিয়ে লেখকের পরিণত বোধ প্রথম বাক্যেই প্রকাশ পেয়েছে, ‘শস্যহীন জনবহুল এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের বেরিয়ে পড়বার ব্যাকুলতা ধোঁয়াটে আকাশকে পর্যন্ত যেন সদা সন্ত্রস্ত করে রাখে।’ একটি বাক্যেই উপন্যাসের সমগ্র গভীরতা পরিস্ফুট হয়; আমরা প্রথমেই মূলভাবনার মধ্যে ডুবে যাই।

‘চাঁদের অমাবস্যা’র গঠনকৌশল ও বুনন স্বতন্ত্র ধারার। আমাদের সাহিত্যে এ–জাতীয় উপন্যাসের নমুনা এটিই প্রথম। মনোসমীক্ষণজাত অনুধাবন ক্ষমতা, ঘটনার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিচার–বিশ্লেষণ, যুক্তিতর্কের মানদণ্ড, চরিত্রের অগ্রসরণ ওয়ালীউল্লাহর মানসোৎকর্ষকে আরও বেশি উজ্জ্বল করেছে। কাহিনি ছাড়া এভাবে এগিয়ে যাওয়ার কৌশলও আমাদের উপন্যাসে নতুন।

‘চাঁদের অমাবস্যা’র গঠনকৌশল ও বুনন স্বতন্ত্র ধারার। প্রচলিত ধারণা থেকে অনভিজ্ঞ পাঠক একে মৃত্যুরহস্যমণ্ডিত রহস্যোপন্যাস বলতে পারেন। সরদার ফজলুল করিম একসময় একে তা-ই বলে ছিলেন। একজন সাধারণ নারীর মৃত্যুজনিত ঘটনা নিয়ে জনৈক যুবক স্কুলশিক্ষক আরেফ আলীর আত্মদহন, আত্মবিশ্লেষণ, ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে পুনঃপুন যুক্তিতর্কের অবতারণা এবং জীবন সম্পর্কে তার সহজাত দায়বদ্ধতা নিয়েই উপন্যাসের অবয়ব গড়ে উঠেছে। আরেফের চেতন-অবচেতন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে এ উপন্যাসটি জটিল ও বিশ্লেষণধর্মী শিল্পকুশলতার বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। আমাদের সাহিত্যে এ–জাতীয় উপন্যাসের নমুনা এটিই প্রথম। মনোসমীক্ষণজাত অনুধাবন ক্ষমতা, ঘটনার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিচার–বিশ্লেষণ, যুক্তিতর্কের মানদণ্ড, চরিত্রের অগ্রসরণ ওয়ালীউল্লাহর মানসোৎকর্ষকে আরও বেশি উজ্জ্বল করেছে। কাহিনি ছাড়া এভাবে এগিয়ে যাওয়ার কৌশলও আমাদের উপন্যাসে নতুন। বর্ণনাভঙ্গি গভীর, নিরাসক্ত ও দার্শনিক অবলোকন দ্বারা নির্মিত।

‘কাঁদো নদী কাঁদো’ ওয়ালীউল্লাহর ধারাবাহিক নিরীক্ষাধর্মিতার সফল উদাহরণ। এ উপন্যাসে স্থির, নির্মোহ, সূক্ষ্ম অবলোকন ও নতুন এক বিন্যাসরীতি লক্ষণীয়। প্রচলিত ধারার একক কোনো যুথবদ্ধ কাহিনি এখানে নেই, কিংবা চরিত্রের কোনো বিশেষ স্থান, গুরুত্ব নেই। মনে হতে পারে ঔপন্যাসিকের নিজস্ব কমিটমেন্ট প্রতিষ্ঠা করার জন্য একের পর এক চরিত্র এসেছে। এই উপন্যাসে চরিত্র অসংখ্য, যা ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। কুমুরডাঙ্গা গ্রামবাসীর জীবনযাত্রা, বাকাল নদের সঙ্গে তাদের জীবন-সংলগ্নতা, প্রাত্যহিক জীবনযন্ত্রণা, নদীবিধৈাত ছোট্ট শহরের অজস্র অসহায় মানুষ এবং তার সঙ্গে নায়ক চরিত্র মোহাম্মদ মোস্তফার ব্যক্তিগত দহন এই উপন্যাসের মূল পরিসর। মোস্তফার ব্যক্তিগত জীবনযন্ত্রণা, শৈশব-যৌবন, পারিবারিক সংকট, বিবাহসংক্রান্ত জটিলতা এবং অবশেষে আত্মহত্যা—এসবের সঙ্গে আপাতদৃষ্টে কুমুরডাঙ্গার কাহিনি মেলে না। তবে একটা জায়গায় তা সমগোত্রীয়—বাকাল নদে চর পড়ার কারণে কুমুরডাঙ্গার মানুষের জীবনের সব সফলতা যেমন নদীর চরে আটকে পড়েছে, মোস্তফাও তার সব সফলতাকে অসার বাসনা হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

‘লালসালু’তে অন্ধ বিশ্বাসের চড়ায় আটকে পড়েছিল মহব্বত নগরের গ্রামবাসী। মুসলিম সমাজের সামগ্রিক শিক্ষা-সচেতনতার যে সংকট, তাই হয়তো এখানে সবচেয়ে বড় বাধা, বড় প্রাচীর। তাই যুবক শিক্ষক আরেফ আলী (চাঁদের অমাবস্যা), মোহাম্মদ মোস্তফা (কাঁদো নদী কাঁদো) কেউ সে সংকট মোকাবিলা করতে পারে না। শিক্ষক আরেফ তবু ছিল অল্প শিক্ষিত, কিন্তু মোস্তফা উচ্চশিক্ষিত, তবু তার সংকট কাটে না। প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তির সামাজিক, ধর্মীয়, পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত মানসিক জটিলতার গল্প বয়নের মধ্য দিয়ে ঔপন্যাসিক সামগ্রিক অর্থে একটি অবিকশিত সমাজে মানুষের অস্তিত্বের নানান সংকট চিহ্নিত করেছেন।

নতুন কাঠামোগত কৌশল, চিন্তার গভীরতা, মনোযোগ, জীবনবোধ, পরিবেশ-প্রতিবেশ জ্ঞান, শক্তিশালী ভাষা, নির্মোহ দৃষ্টি, বৈজ্ঞানিক-দার্শনিক-মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ এবং প্রতিটি ঘটনা পরম্পরাকে শাণিত যুক্তির আলোকে উপস্থাপন করায় ওয়ালীউল্লাহর এই তিনটি উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে নতুন মাত্রাগত সাফল্য পেয়েছে।

‘কাঁদো নদী কাঁদো’র বাকাল নদে মূলত বাংলাদেশের যেকোনো বৃহৎ নদী, কুমুরডাঙ্গা সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ। প্রকৃত অর্থে কুমুরডাঙ্গার অধিবাসীদের সামগ্রিক বেদনার নির্যাসে একক স্রোত হয়ে নদীর বুকে প্রবাহিত সবার যন্ত্রণা ধারণ করার সঠিক এবং একমাত্র বিকল্প নদীর কান্না; সে কারণে নদী কাঁদে এবং ধীরে ধীরে অনেকেই তা শুনতে পায়। কুমুরডাঙ্গার জীবনচিত্র, নদীর কান্না, স্টিমারের যাত্রী, অপূর্ব কথক তবারক ভুইঞা—সব মিলিয়ে উপন্যাসটি একটা মহাকাব্যিক ব্যঞ্জনা প্রকাশ করে। কাহিনি নির্মাণের এই অভিনব কৌশল যেমন সার্থক, তেমনি তা নিরীক্ষার অপূর্ব নিদর্শন।

ওয়ালীউল্লাহর নিজস্ব শব্দ-নির্মাণ, কুশলী বাক্য-নির্মিতি এবং নিজস্ব প্রবণতাকে সূক্ষ্মভাবে পাঠকের হৃদয়ে প্রবেশ করানোর কৌশল অভিনব। একটি আলাদা অবকাঠামোগত শৈলী নির্মাণে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন—এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না। কারণ, বঙ্কিম-রবীন্দ্র-শরৎ পরবর্তী উপন্যাস-ধারাক্রমে ঔপন্যাসিকের ঋদ্ধ-মননজাত উপলব্ধিবোধ ও বিশ্লেষণধর্মিতার উদাহরণ নেই। এমনকি এই নতুন নিরীক্ষা বঙ্কিম-রবীন্দ্র-শরৎ সাহিত্যে ছিল না। সুতরাং সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর গভীর তীক্ষ্ণ হার্দিক বাণীবিন্যাস যে একটা নতুন বর্ণনারীতিতে পৌঁছেছে, তাতে সন্দেহ নেই।

নতুন কাঠামোগত কৌশল, চিন্তার গভীরতা, মনোযোগ, জীবনবোধ, পরিবেশ-প্রতিবেশ জ্ঞান, শক্তিশালী ভাষা, নির্মোহ দৃষ্টি, বৈজ্ঞানিক-দার্শনিক-মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ এবং প্রতিটি ঘটনা পরম্পরাকে শাণিত যুক্তির আলোকে উপস্থাপন করায় ওয়ালীউল্লাহর এই তিনটি উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে নতুন মাত্রাগত সাফল্য পেয়েছে।

মুসলমান সমাজের জন্য লিখতে গিয়ে তাদের মোহগ্রস্ততা কাটাবার যে প্রত্যয় ওয়ালীউল্লাহ ব্যক্ত করেছিলন, সাংবাদিকতার ঊর্ধ্বে উঠবার যে সংকল্প তিনি করেছিলেন, আমাদের দৃঢ় ধারণা, তাতে তিনি সফল হয়েছেন। এর পাশাপাশি বাঙালি পাঠকের গড় দৃষ্টিসীমা, প্রবণতা তিনি নতুন এই জটিল আবর্তে মিশিয়ে দিয়েছেন, প্রচলের সীমানা ভেঙে আন্তর্জাতিক মোহনায় নিয়ে গেছেন আমাদের কথাসাহিত্যকে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ম রড ঙ গ র উপন য স র শ উপন য স ল খ ই উপন য স ঔপন য স ক র উপন য স ক ঠ ম গত ঘটন র স র জ বন আম দ র ত কর ছ ক ত কর চর ত র ল লস ল কর ছ ল রহস য ব যবহ প রথম প রচল

এছাড়াও পড়ুন:

প্রচলের সীমানা ভেঙে আন্তর্জাতিক মোহনায়

বাংলা বা বাংলাদেশের উপন্যাসের শক্তি, আধুনিকতা, গঠনকাঠামো বিবেচনায় নিয়ে একে দুর্বল সাহিত্য হিসেবে চিহ্নিত করার নেপথ্যে যেসব বয়ান তৈরি করা হয়, তা সবটা ঠিক না হলেও এই বক্তব্য পুরোপুরি খণ্ডন করা যায় না। মুসলিম কথাকারদের বেলায় এটি আরও বেশি যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন অনেকে। বঙ্কিম-রবীন্দ্র পেরিয়ে কল্লোল যুগের পরেও বিভাগপূর্ব বা পরের বাঙালি মুসলিম ঔপন্যাসিকেরা উপন্যাসের শক্ত জমিন খুঁজে পাননি। এ বিষয়ে সৈয়দ শামসুল হক এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ছাড়া কারও নাম তিনি বলতে পারেন না।

বলা যেতে পারে বিভাগপূর্ব ও অব্যবহিত পরে বাংলাদেশের প্রধান শক্তিমান ও আধুনিক কথাকার সৈয়দ ওয়ালউল্লাহ্। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ বাংলায় মাত্র তিনটি উপন্যাস লিখেছিলেন— ‘লালসালু’ (১৯৪৮), ‘চাঁদের অমাবস্যা’ (১৯৬৪) ও ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ (১৯৬৮)। (পরে আরও দুটি লিখেছেন ইংরেজিতে—‘হাউ টু কুক বিনস’ ও ‘দ্য আগলি এশিয়ান’।) দীর্ঘ সময় ধরে মাত্র তিনটি উপন্যাস লিখলেন তাকে মানোত্তীর্ণ করার জন্য; উপন্যাস লেখার এবং তা শিল্পের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ করার যে প্রত্যয় তাঁর ছিল, তা সফল বলা চলে। বাংলা সাহিত্যে তাঁর উপন্যাস নতুন সংযোজন—কি গল্পে, কি কৌশলে, কি অন্তর্গত নিগূঢ় তীক্ষ্ণধী বিশ্লেষণে।

বিভাগপূর্ব ও অব্যবহিত পরে বাংলাদেশের প্রধান শক্তিমান ও আধুনিক কথাকার সৈয়দ ওয়ালউল্লাহ্। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ বাংলায় মাত্র তিনটি উপন্যাস লিখেছিলেন— ‘লালসালু’ (১৯৪৮), ‘চাঁদের অমাবস্যা’ (১৯৬৪) ও ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ (১৯৬৮)। (পরে আরও দুটি লিখেছেন ইংরেজিতে—‘হাউ টু কুক বিনস’ ও ‘দ্য আগলি এশিয়ান’।)

ওয়ালীউল্লাহর মানস-প্রত্যয় ও শিল্পবোধ ছিল পরিণত, প্রগতিশীল এবং সমসাময়িক কালের সারা বিশ্বের শিল্প–সাহিত্যের সঙ্গে একাত্ম। সংগত কারণেই তাঁর উপন্যাস নব নব পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে, ঘটনা সেখানে বড় কোনো উৎপাদক নয়। আধুনিক পর্যায়ের উপন্যাসে ঘটনার সমাগমের পরিবর্তে গুরুত্ব পেয়েছে জীবনমুখিনতা, আত্মবিশ্লেষণ ও প্রতিটি ঘটনাকে জীবন-জিজ্ঞাসার বেদিতে অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ। বাংলা উপন্যাসে ঊনবিংশ শতাব্দীর চতুর্থ দশকে ওয়ালীউল্লাহ্ আবির্ভূত হয়ে তাঁর প্রথম উপন্যাসকে এই নবধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন। সাহিত্যে বিশেষভাবে উপন্যাসে যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছিল, ওয়ালীউল্লাহ্ তা গভীর তাৎপর্যের সঙ্গে লক্ষ করেছিলেন। স্ট্রিম অব কনশাসনেস বা সচেতনতার অতল প্রবাহ নামে যে নতুন ধারণা আধুনিক কালে বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলা উপন্যাসে, ওয়ালীউল্লাহ্ প্রথম তার প্রয়োগ দেখালেন। অস্তিত্ববাদী চিন্তাচেতনা, ব্যক্তিমানুষের অস্তিত্বজনিত যন্ত্রণা (ইগোম্যানিয়াস), ভীতি (অ্যাংস্ট), চেতনজাত অভিজ্ঞতা প্রভৃতির ব্যবহারিক উদাহরণ তাঁর উপন্যাসে মেলে।

‘লালসালু’ উপন্যাসের গঠনকৌশল আপাতদৃষ্টে সামাজিক উপন্যাসের মতো হলেও এর গঠনগত বৈশিষ্ট্য বেশ আলাদা। মুসলমানদের নিয়ে লেখার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন ঔপন্যাসিক। পিছিয়ে পড়া মুসলিম সমাজ যে ধর্মান্ধতার পথে ছিল, সেখানে আঘাত করে তাদের জাগিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন। ওয়ালীউল্লাহ্কে ভুল বোঝার কোনো সুযোগ নেই।

সাধারণত পুরাতন মধ্যযুগীয় ধারায় পিকারেস্ক জাতীয় উপন্যাসে ‘লালসালু’র মজিদের মতো চরিত্র থাকে, যারা সচরাচর টাইপড। তবে মজিদ প্রকৃত অর্থে কোনো ছকে বাঁধা চরিত্র নয়। উপন্যাসে মজিদের নতুন সফল জীবন নির্মাণ করতেই কাহিনির বিস্তার। মজিদের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ দিয়ে সে সবাইকে সম্পৃক্ত করেছে গভীরভাবে। নিঃস্ব অসহায় মজিদ অভিনব বাণিজ্য মিশন নিয়ে মহব্বত নগরে আসে। মৃত একজন মানুষের কবরকে (মাটির ঢিবি) জনৈক বিখ্যাত মোদাচ্ছের পীরের মাজার বলে চালিয়ে দিয়ে গোটা গ্রামাবাসীকে জিম্মি করে। মজিদের চরিত্র নির্মাণ করতে যেসব অনুষঙ্গ প্রয়োজনীয়, যে যে চরিত্র আবশ্যক, তাই উপন্যাসে স্থান পেয়েছে। এই ব্যাপারে লেখকের স্বল্পবাক্ অর্থাৎ পরিমিতিবোধ প্রশংসনীয়। উপন্যাসের সৃষ্টিকৌশল বিবেচনায় আনলে লেখকের বর্ণনাভঙ্গিমা, নাটকীয়তা, ভাষা ব্যবহারের দক্ষতা, কাব্যময়তা, নিস্পৃহতা ও চরিত্রগুলোর রহস্য উন্মোচনের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। উপন্যাসের শিল্প সুষমাকে বিচার করতে হলে উল্লিখিত বিবেচনা ছাড়াও লেখকের প্রকরণগত সৌন্দর্যচেতনা, আলংকারিক প্রয়োগও লক্ষ করতে হবে। লালসালু ওয়ালীউল্লাহর প্রথম উপন্যাস হলেও এতে কাঠামোগত ও শিল্পগত ত্রুটি নেই। তবে পরের দুটো উপন্যাসের জটিল বিশ্লেষণধর্মিতা ও কাহিনির রহস্যময়তা এখানে নেই। এ উপন্যাসের শুরুর বর্ণনাটা বেশ চমকপ্রদ, অন্তর্মুখী দৃষ্টি নিয়ে লেখকের পরিণত বোধ প্রথম বাক্যেই প্রকাশ পেয়েছে, ‘শস্যহীন জনবহুল এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের বেরিয়ে পড়বার ব্যাকুলতা ধোঁয়াটে আকাশকে পর্যন্ত যেন সদা সন্ত্রস্ত করে রাখে।’ একটি বাক্যেই উপন্যাসের সমগ্র গভীরতা পরিস্ফুট হয়; আমরা প্রথমেই মূলভাবনার মধ্যে ডুবে যাই।

‘চাঁদের অমাবস্যা’র গঠনকৌশল ও বুনন স্বতন্ত্র ধারার। আমাদের সাহিত্যে এ–জাতীয় উপন্যাসের নমুনা এটিই প্রথম। মনোসমীক্ষণজাত অনুধাবন ক্ষমতা, ঘটনার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিচার–বিশ্লেষণ, যুক্তিতর্কের মানদণ্ড, চরিত্রের অগ্রসরণ ওয়ালীউল্লাহর মানসোৎকর্ষকে আরও বেশি উজ্জ্বল করেছে। কাহিনি ছাড়া এভাবে এগিয়ে যাওয়ার কৌশলও আমাদের উপন্যাসে নতুন।

‘চাঁদের অমাবস্যা’র গঠনকৌশল ও বুনন স্বতন্ত্র ধারার। প্রচলিত ধারণা থেকে অনভিজ্ঞ পাঠক একে মৃত্যুরহস্যমণ্ডিত রহস্যোপন্যাস বলতে পারেন। সরদার ফজলুল করিম একসময় একে তা-ই বলে ছিলেন। একজন সাধারণ নারীর মৃত্যুজনিত ঘটনা নিয়ে জনৈক যুবক স্কুলশিক্ষক আরেফ আলীর আত্মদহন, আত্মবিশ্লেষণ, ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে পুনঃপুন যুক্তিতর্কের অবতারণা এবং জীবন সম্পর্কে তার সহজাত দায়বদ্ধতা নিয়েই উপন্যাসের অবয়ব গড়ে উঠেছে। আরেফের চেতন-অবচেতন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে এ উপন্যাসটি জটিল ও বিশ্লেষণধর্মী শিল্পকুশলতার বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। আমাদের সাহিত্যে এ–জাতীয় উপন্যাসের নমুনা এটিই প্রথম। মনোসমীক্ষণজাত অনুধাবন ক্ষমতা, ঘটনার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিচার–বিশ্লেষণ, যুক্তিতর্কের মানদণ্ড, চরিত্রের অগ্রসরণ ওয়ালীউল্লাহর মানসোৎকর্ষকে আরও বেশি উজ্জ্বল করেছে। কাহিনি ছাড়া এভাবে এগিয়ে যাওয়ার কৌশলও আমাদের উপন্যাসে নতুন। বর্ণনাভঙ্গি গভীর, নিরাসক্ত ও দার্শনিক অবলোকন দ্বারা নির্মিত।

‘কাঁদো নদী কাঁদো’ ওয়ালীউল্লাহর ধারাবাহিক নিরীক্ষাধর্মিতার সফল উদাহরণ। এ উপন্যাসে স্থির, নির্মোহ, সূক্ষ্ম অবলোকন ও নতুন এক বিন্যাসরীতি লক্ষণীয়। প্রচলিত ধারার একক কোনো যুথবদ্ধ কাহিনি এখানে নেই, কিংবা চরিত্রের কোনো বিশেষ স্থান, গুরুত্ব নেই। মনে হতে পারে ঔপন্যাসিকের নিজস্ব কমিটমেন্ট প্রতিষ্ঠা করার জন্য একের পর এক চরিত্র এসেছে। এই উপন্যাসে চরিত্র অসংখ্য, যা ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। কুমুরডাঙ্গা গ্রামবাসীর জীবনযাত্রা, বাকাল নদের সঙ্গে তাদের জীবন-সংলগ্নতা, প্রাত্যহিক জীবনযন্ত্রণা, নদীবিধৈাত ছোট্ট শহরের অজস্র অসহায় মানুষ এবং তার সঙ্গে নায়ক চরিত্র মোহাম্মদ মোস্তফার ব্যক্তিগত দহন এই উপন্যাসের মূল পরিসর। মোস্তফার ব্যক্তিগত জীবনযন্ত্রণা, শৈশব-যৌবন, পারিবারিক সংকট, বিবাহসংক্রান্ত জটিলতা এবং অবশেষে আত্মহত্যা—এসবের সঙ্গে আপাতদৃষ্টে কুমুরডাঙ্গার কাহিনি মেলে না। তবে একটা জায়গায় তা সমগোত্রীয়—বাকাল নদে চর পড়ার কারণে কুমুরডাঙ্গার মানুষের জীবনের সব সফলতা যেমন নদীর চরে আটকে পড়েছে, মোস্তফাও তার সব সফলতাকে অসার বাসনা হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

‘লালসালু’তে অন্ধ বিশ্বাসের চড়ায় আটকে পড়েছিল মহব্বত নগরের গ্রামবাসী। মুসলিম সমাজের সামগ্রিক শিক্ষা-সচেতনতার যে সংকট, তাই হয়তো এখানে সবচেয়ে বড় বাধা, বড় প্রাচীর। তাই যুবক শিক্ষক আরেফ আলী (চাঁদের অমাবস্যা), মোহাম্মদ মোস্তফা (কাঁদো নদী কাঁদো) কেউ সে সংকট মোকাবিলা করতে পারে না। শিক্ষক আরেফ তবু ছিল অল্প শিক্ষিত, কিন্তু মোস্তফা উচ্চশিক্ষিত, তবু তার সংকট কাটে না। প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তির সামাজিক, ধর্মীয়, পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত মানসিক জটিলতার গল্প বয়নের মধ্য দিয়ে ঔপন্যাসিক সামগ্রিক অর্থে একটি অবিকশিত সমাজে মানুষের অস্তিত্বের নানান সংকট চিহ্নিত করেছেন।

নতুন কাঠামোগত কৌশল, চিন্তার গভীরতা, মনোযোগ, জীবনবোধ, পরিবেশ-প্রতিবেশ জ্ঞান, শক্তিশালী ভাষা, নির্মোহ দৃষ্টি, বৈজ্ঞানিক-দার্শনিক-মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ এবং প্রতিটি ঘটনা পরম্পরাকে শাণিত যুক্তির আলোকে উপস্থাপন করায় ওয়ালীউল্লাহর এই তিনটি উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে নতুন মাত্রাগত সাফল্য পেয়েছে।

‘কাঁদো নদী কাঁদো’র বাকাল নদে মূলত বাংলাদেশের যেকোনো বৃহৎ নদী, কুমুরডাঙ্গা সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ। প্রকৃত অর্থে কুমুরডাঙ্গার অধিবাসীদের সামগ্রিক বেদনার নির্যাসে একক স্রোত হয়ে নদীর বুকে প্রবাহিত সবার যন্ত্রণা ধারণ করার সঠিক এবং একমাত্র বিকল্প নদীর কান্না; সে কারণে নদী কাঁদে এবং ধীরে ধীরে অনেকেই তা শুনতে পায়। কুমুরডাঙ্গার জীবনচিত্র, নদীর কান্না, স্টিমারের যাত্রী, অপূর্ব কথক তবারক ভুইঞা—সব মিলিয়ে উপন্যাসটি একটা মহাকাব্যিক ব্যঞ্জনা প্রকাশ করে। কাহিনি নির্মাণের এই অভিনব কৌশল যেমন সার্থক, তেমনি তা নিরীক্ষার অপূর্ব নিদর্শন।

ওয়ালীউল্লাহর নিজস্ব শব্দ-নির্মাণ, কুশলী বাক্য-নির্মিতি এবং নিজস্ব প্রবণতাকে সূক্ষ্মভাবে পাঠকের হৃদয়ে প্রবেশ করানোর কৌশল অভিনব। একটি আলাদা অবকাঠামোগত শৈলী নির্মাণে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন—এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না। কারণ, বঙ্কিম-রবীন্দ্র-শরৎ পরবর্তী উপন্যাস-ধারাক্রমে ঔপন্যাসিকের ঋদ্ধ-মননজাত উপলব্ধিবোধ ও বিশ্লেষণধর্মিতার উদাহরণ নেই। এমনকি এই নতুন নিরীক্ষা বঙ্কিম-রবীন্দ্র-শরৎ সাহিত্যে ছিল না। সুতরাং সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর গভীর তীক্ষ্ণ হার্দিক বাণীবিন্যাস যে একটা নতুন বর্ণনারীতিতে পৌঁছেছে, তাতে সন্দেহ নেই।

নতুন কাঠামোগত কৌশল, চিন্তার গভীরতা, মনোযোগ, জীবনবোধ, পরিবেশ-প্রতিবেশ জ্ঞান, শক্তিশালী ভাষা, নির্মোহ দৃষ্টি, বৈজ্ঞানিক-দার্শনিক-মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ এবং প্রতিটি ঘটনা পরম্পরাকে শাণিত যুক্তির আলোকে উপস্থাপন করায় ওয়ালীউল্লাহর এই তিনটি উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে নতুন মাত্রাগত সাফল্য পেয়েছে।

মুসলমান সমাজের জন্য লিখতে গিয়ে তাদের মোহগ্রস্ততা কাটাবার যে প্রত্যয় ওয়ালীউল্লাহ ব্যক্ত করেছিলন, সাংবাদিকতার ঊর্ধ্বে উঠবার যে সংকল্প তিনি করেছিলেন, আমাদের দৃঢ় ধারণা, তাতে তিনি সফল হয়েছেন। এর পাশাপাশি বাঙালি পাঠকের গড় দৃষ্টিসীমা, প্রবণতা তিনি নতুন এই জটিল আবর্তে মিশিয়ে দিয়েছেন, প্রচলের সীমানা ভেঙে আন্তর্জাতিক মোহনায় নিয়ে গেছেন আমাদের কথাসাহিত্যকে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ