আফ্রিকার নতুন ‘চে গুয়েভারা’ ইব্রাহিম যেভাবে আলোড়ন তুললেন
Published: 10th, June 2025 GMT
আধুনিক আফ্রিকায় নতুন এক রাজনৈতিক জাগরণের প্রতীক হয়ে উঠেছেন বুরকিনা ফাসোর তরুণ সেনানায়ক ইব্রাহিম ত্রাউরে। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন তিনি।
দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে নতুনভাবে সাজাচ্ছেন তিনি। সেই সঙ্গে নাড়া দিয়েছেন ভিমরুলের চাকে। গোটা সাহেল অঞ্চলে পশ্চিমা ঔপনিবেশিক শক্তির প্রভাবের বিরুদ্ধে একটি স্পষ্ট বার্তাও দিয়েছেন।
মালি ও নাইজারের সাম্প্রতিক সামরিক নেতাদের সঙ্গে একযোগে ফ্রান্সবিরোধী একটি জোট গড়ে তুলেছেন। এই ঘটনা আফ্রিকার নতুন রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছে।
কিন্তু এই ভবিষ্যৎ কীভাবে গড়ে উঠবে? কারা এর পৃষ্ঠপোষক? এই সামরিক বাহিনী থেকে আসা নেতাদের নিয়ে আফ্রিকার জনমনে প্রতিক্রিয়া কেমন?
আরও পড়ুনযে কারণে পুতিনের নজর এখন আফ্রিকার দিকে?৩০ জুলাই ২০২২ইব্রাহিম ত্রাউরে আর নতুন যুগের বাসনা২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বুরকিনা ফাসোর তৎকালীন সামরিক শাসক পল-হেনরি সান্দাওগো দামিবাকে সরিয়ে দিয়ে ক্ষমতায় আসেন ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ত্রাউরে।
সেনাবাহিনীর এই বিদ্রোহের পেছনে প্রধান কারণ ছিল জিহাদি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দামিবার ব্যর্থতা। এই শাসক ছিলেন ফ্রান্সপন্থী। সেটাও তরুণ বুরকিনা নাগরিকদের মনে তীব্র ক্ষোভ তৈরি করেছিল।
ত্রাউরে শুরু থেকেই নিজেকে টমাস সাংকারার উত্তরসূরি হিসেবে তুলে ধরেছেন। সাংকারা ছিলেন এক বিপ্লবী নেতা। তাঁকে আফ্রিকার চে গুয়েভারা বলে ডাকা হয়। তিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বুরকিনা ফাসো শাসন করেছিলেন। হয়ে উঠেছিলেন আফ্রিকান সমাজতন্ত্র ও স্বনির্ভরতার প্রতীক।
ত্রাউরের নেতৃত্বে বুরকিনা ফাসো সুস্পষ্ট অগ্রাধিকার দিয়েছে ‘জিহাদি’দের বিরুদ্ধে ‘জনগণকে সম্পৃক্ত করে’ লড়াই করার। সরকার একদিকে গণমিলিশিয়া সংগঠনের মাধ্যমে তরুণদের সশস্ত্র প্রতিরোধে যুক্ত করছে।
অন্যদিকে পশ্চিমা সামরিক উপস্থিতি থেকে ধীরে ধীরে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ত্রাউরে ফ্রান্সকে তাঁর দেশ থেকে তাদের বাহিনী সরিয়ে নিতে বলেন। বাতিল করেন ফ্রান্সের সঙ্গে করা আগের পুতুল শাসকদের সাক্ষর করা সশস্ত্র চুক্তি। এই সিদ্ধান্ত ছিল যুগান্তকারী।
আরও পড়ুননগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো শুধু লেখকই নন, একজন যোদ্ধাও০৪ জুন ২০২৫টমাস সাংকারার উত্তরাধিকারত্রাউরের নেতৃত্বের ভাবধারায় স্পষ্টভাবেই প্রতিফলিত হচ্ছে সাংকারার রাজনৈতিক চেতনা-জাতীয় মর্যাদা, স্বনির্ভরতা, উপনিবেশবাদ-বিরোধিতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার। সাংকারা তাঁর সময়েই বহুজাতিক করপোরেশন ও পশ্চিমা সাহায্যের বিকল্প খুঁজতে চেষ্টা করেছিলেন।
নারী স্বাধীনতা, গণস্বাস্থ্য, শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার ও কৃষিভিত্তিক স্বনির্ভরতা ছিল তার নীতির মূল কথা। যদিও ১৯৮৭ সালে এক অভ্যুত্থানে তিনি নিহত হন। সেই অভ্যুত্থানের সঙ্গে দেশের ফ্রান্সপন্থী শক্তির যোগসূত্র ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। কিন্তু সাংকারার ভাবমূর্তি আজও বুরকিনা ফাসো ও গোটা আফ্রিকায় জীবন্ত।
আফ্রিকার বাস্তবতা আজ আরও জটিল। এখন আফ্রিকায় সন্ত্রাসবাদ, চরম দারিদ্র্য, দুর্বল রাষ্ট্রযন্ত্র এবং বৈশ্বিক শক্তির দ্বন্দ্ব একই সঙ্গে উপস্থিত। কিন্তু এই জটিল সময়ে ত্রাউরে সাংকারার সেই ভাবনাকে নতুন যুগে রূপান্তরিত করে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুনমত প্রকাশের স্বাধীনতা: আফ্রিকা পারে, আমরা নই০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫সাহেল অঞ্চলে নতুন সামরিক জোট: ফ্রান্সের পতনের সূচনা২০২৩–২৪ সালের মধ্যে সাহেল অঞ্চলে তিনটি দেশের ক্ষমতায় সামরিক বাহিনী এসেছে—মালি, বুরকিনা ফাসো ও নাইজার। তিন দেশের এই সামরিক নেতৃত্ব এখন একত্র হয়ে ‘সাহেল রাষ্ট্রজোট’ (আলিয়ঁস দে জেতা দ্যু সাহেল) নামের একটি জোট গঠন করেছে।
এই জোটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিজের হাতে তুলে নেওয়া, ফ্রান্স ও পশ্চিমাদের সামরিক প্রভাব দূর করা এবং একটি বিকল্প ভূরাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলা।
নাইজারে ফ্রান্সের গুরুত্বপূর্ণ ইউরেনিয়াম খনি রয়েছে। এই খনি বহু বছর ধরে ফরাসি পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। এই খনিজ সম্পদ ব্যবহারের জন্য ফ্রান্স নিজের দেশকে জ্বালানি জোগান দিচ্ছে।
কিন্তু খোদ নাইজারের নাগরিকেরা এখনো সামান্য বিদ্যুতের অভাবে ঘরে কেরোসিনের বাতি জ্বালায়। এসব কিছু সাহেল অঞ্চলে জনরোষের বড় কারণ।
নাইজারে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে সরিয়ে দিয়ে ক্ষমতায় আসেন জেনারেল আবদুর রহমান তিয়ানী। এরপর ফ্রান্সবিরোধী আন্দোলন আরও তীব্র হয়।
এই জোট কেবল নিরাপত্তা নয়, একটি আদর্শিক অবস্থানও গ্রহণ করছে। আর তা হলো পশ্চিমা হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে আফ্রিকার সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার।
এই আন্দোলন শুধু সামরিক নয়। এর একটি গণ ভিত্তিও তৈরি হয়েছে। সেখানকার জনগণ মনে করছে, পশ্চিমা শক্তির উপস্থিতি তাদের দেশে সন্ত্রাস দমন করেনি, বরং তা আরও গভীর সংকট সৃষ্টি করেছে।
নৈতিক পরাজয়ের মুখে ফ্রান্সসহ পশ্চিমা বিশ্বএই অঞ্চলে ফ্রান্স ও তার পশ্চিমা মিত্রদের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল ছিল স্থানীয় সরকারগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করে জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় ‘সহায়তা’ প্রদান।
কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, এই সহায়তার মধ্য দিয়ে আফ্রিকান দেশগুলোর ওপর এক প্রকার আধিপত্য কায়েম রাখা হয়েছে।
ফরাসি বাহিনীর উপস্থিতি সন্ত্রাস দমন করতে পারেনি। বরং স্থানীয় জনমনে সেই পুরোনো ঔপনিবেশিক অভিজ্ঞতার পুনর্জাগরণ ঘটিয়েছে।
এখন ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই পরিবর্তনের জবাবে নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। মানবিক সহায়তা বন্ধ করছে এবং সামরিক হুমকিও দিচ্ছে। কিন্তু এতে কার্যত আফ্রিকার এই নতুন নেতৃত্ব আরও জেদি হয়ে উঠছেন।
জনসাধারণের সমর্থনও বাড়ছে। আফ্রিকান জনমনে এখন প্রশ্ন উঠছে যে ফ্রান্স আমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার নামে খনিজ সম্পদ লুটে নিয়েছে, তাকে আর কত দিন সহ্য করব?
রাশিয়া ও চীন: নতুন মিত্র না নতুন আধিপত্যপশ্চিমা জগৎ আফ্রিকার এই সামরিক নেতৃত্বকে একঘরে করতে চাইছে। আর রাশিয়া ও চীন সেই শূন্যস্থান পূরণে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
মালিতে রাশিয়ার ভাগনার বাহিনী প্রবল হয়েছে। বিভিন্ন দেশে ভাগনারের ভূমিকা বিতর্কিত। কিন্তু মালির সামরিক সরকার মনে করছে, রাশিয়ার সহায়তায় তারা অন্তত সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাস্তব ফল পাচ্ছে।
বুরকিনা ফাসোতেও রাশিয়ার পতাকা নিয়ে মিছিল হয়েছে। ত্রাউরে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করছেন। চীন তুলনামূলকভাবে ধীরে কিন্তু বিস্তৃত পরিসরে কাজ করছে। তারা কাজ করছে বৃহৎ পরিকাঠামো নির্মাণ, বাণিজ্যিক চুক্তি ও শিক্ষা-স্বাস্থ্য সহায়তার মাধ্যমে।
তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এই নতুন মিত্ররা কতটা স্বাধীনতা দেবে আফ্রিকাকে? নাকি এটি কেবল ঔপনিবেশিকতার নতুন রূপ?
আফ্রিকান জনমতে নতুন আশার উত্থানসাহেল অঞ্চলে জনসাধারণের একটি বড় অংশ সামরিক সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে। যদিও গণতন্ত্রবাদীরা এতে উদ্বিগ্ন। তবে সাধারণ মানুষ এই পরিবর্তনে নিজেদের নিরাপত্তা, আত্মমর্যাদা ও স্বপ্ন দেখতে পাচ্ছে।
বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম সাংকারার মতো আদর্শবান নেতৃত্বের খোঁজে ছিল বহুদিন ধরে। সেই নেতা এখন তাঁরা ত্রাউরের মতো নেতাদের মধ্যে খুঁজে পাচ্ছেন।
ত্রাউরের মতো নেতাদের আফ্রিকার রাজনৈতিক মঞ্চে আসা কেবল একটা দেশ চালানোর ব্যাপার নয়। এই বাস্তবতা একই সঙ্গে একটি ইতিহাসের পুনরায় আবিষ্কার।
অনেক পুরোনো এক লড়াইয়ের আবার জেগে ওঠা। আফ্রিকানরা নিজেদের মতো করে বাঁচতে চান, নিজের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিজে গড়তে চান। সেই সঙ্গে চান নিজের সম্পদের ওপর নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা।
আরও পড়ুনআফ্রিকার তিন দেশ পারল, আমরা কেন পারলাম না২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ভবিষ্যৎ কে জানেএই নতুন জোট ও নেতৃত্ব যতটা আশা জাগায়, ততটাই প্রশ্নও তোলে। কীভাবে এই সামরিক সরকারগুলো গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষা করবে? পশ্চিমা সহায়তা ছাড়া কীভাবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা যাবে? এখন কি ফ্রান্সের জায়গায় নতুন ঔপনিবেশিক শক্তি হয়ে আসবে রাশিয়া আর চীন?
এই নেতারা যদি সত্যিই সাংকারার উত্তরাধিকার বহন করতে চান, তবে তাঁদের স্বচ্ছতা, জনসাধারণের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং স্বাধীনতার পাশাপাশি সমতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পথেই এগোতে হবে। নইলে এই বিপ্লবও শেষ পর্যন্ত মৌলিক পরিবর্তন না ঘটিয়ে পুরোনো ক্ষমতায় নতুন শাসক আসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
ইব্রাহিম ত্রাউরে ও সাহেল অঞ্চলের বর্তমান সামরিক আন্দোলন এক গভীর ঐতিহাসিক ক্ষোভ ও আশার বহিঃপ্রকাশ। আজকের যুগেও যে উপনিবেশ প্রথা শেষ হয়নি, এই আন্দোলন সেই বিরোধী চেতনার নতুন রূপ।
আফ্রিকার মানুষ এখানে শুধু আর দরিদ্র নিঃস্বতার প্রতীক হয়ে থাকতে চাইছেন না। তাঁরা বাস্তব পরিবর্তনের অংশ হতে চাইছেন। দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমাদের হাতে লেখা আফ্রিকার ইতিহাসের পাঠ নতুন করে লেখার চেষ্টা হচ্ছে। আর এবার তা আফ্রিকার মানুষ নিজ হাতেই লিখবে।
জাভেদ হুসেন প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঔপন ব শ ক স ব ধ নত র জন ত ক ক ষমত য় উপস থ ত ন ইজ র ব রক ন র নত ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদেও গাজায় থেমে নেই ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞ
ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদেও ফিলিস্তিনের গাজায় থেমে নেই ইসরায়েলি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ। ঈদের দিন সকাল থেকে দুই দিনে শতাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ত্রাণ নিতে যাওয়া ক্ষুধার্ত মানুষও রয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের মতো চাঁদ দেখা সাপেক্ষে শুক্রবার কোরবানির ঈদ উদ্যাপিত হয় অবরুদ্ধ গাজায়। এ নিয়ে টানা চতুর্থ ঈদ ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ও হত্যাযজ্ঞের মধ্যে কাটিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
হাসপাতাল সূত্রগুলো জানায়, ঈদের দিন ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় ৪২ জন নিহত হন। এর মধ্যে উত্তর গাজার জাবালিয়ায় এক হামলায় নিহত হয়েছেন ১১ জন। এ ছাড়া গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে সাত ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান।
ঈদের পরদিন শনিবার সকাল থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও ৬৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গাজা নগরীর সাবরা এলাকায় এক হামলার ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৬ জন। গাজার জরুরি পরিষেবা বিভাগ ‘সিভিল ডিফেন্স’ এ তথ্য দিয়েছে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় সাড়ে ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
জরুরি পরিষেবা বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, সাবরা এলাকায় এক হামলায় নিহত ১৬ জনের মধ্যে ছয় শিশু রয়েছে। এ ঘটনায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া প্রায় ৮৫ জন বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ওই ভবনে আঘাত হানলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে জানান জরুরি পরিষেবা বিভাগের মুখপাত্র। এ ঘটনাকে ‘পুরোপুরি হত্যাযজ্ঞ’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একেবারে সীমিত সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে জরুরি পরিষেবা বিভাগ।
ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র যেন ‘মৃত্যুফাঁদ’
এদিকে শনিবার সকালে ত্রাণের জন্য জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর আবারও গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। রাফাহ এলাকার একটি ত্রাণকেন্দ্রের কাছে সংঘটিত এ ঘটনায় আটজন নিহত হয়েছেন। নাসের হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আগের দিনও ওই এলাকায় ত্রাণকেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে সাত ফিলিস্তিনি নিহত হন।
অবশ্য জরুরি পরিষেবা বিভাগের বরাত দিয়ে গতকাল সকালে ত্রাণকেন্দ্রের কাছে ছয়জন নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি পরিচালিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ)’ ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে আল-আলম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মে মাসের শেষ দিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে তিনটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করে বিতর্কিত জিএইচএফ। এর পর থেকে ত্রাণকেন্দ্রের প্রায় এক কিলোমিটার দূরে আল-আলম এলাকায় ত্রাণের আশায় নিয়মিত জড়ো হন ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা।
সকালে ঘটনাস্থলে থাকা সামির আবু হাদিদ এএফপিকে বলেন, কয়েক হাজার মানুষ সেখানকার একটি মোড়ে জড়ো হন। যখনই তাঁরা ত্রাণকেন্দ্রের দিকে এগোনোর চেষ্টা করেন, তখন সাঁজোয়া যান থেকে গুলিবর্ষণ শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা।
আল-আলম ত্রাণকেন্দ্রের কাছে গুলির বিষয়ে জানতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে এএফপি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তরের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গত ২৭ মে থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল পরিচালিত ফাউন্ডেশনটির ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে গুলিতে এ নিয়ে ১১৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। প্রাণহানির কারণে কয়েক দফা ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
আরও পড়ুনগাজায় ঈদ কেবলই স্মৃতি০৬ জুন ২০২৫ফিলিস্তিনি এনজিও নেটওয়ার্কের পরিচালক আমজাদ শাবা আল-জাজিরাকে বলেন, সম্প্রতি গঠিত জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রগুলো এক ধরনের ‘ফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। সেখান থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা।
আমজাদ শাবা বলেন, উত্তর গাজার বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করে দক্ষিণে নিয়ে আসার ইসরায়েলি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে এ বিতর্কিত ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ জন্য উত্তর গাজায় কোনো ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়নি, যাতে সেখানকার বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে দীর্ঘ পথ হেঁটে ত্রাণের জন্য দক্ষিণে আসেন।
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন দাতব্য সংস্থাগুলোর পরিবর্তে জিএইচএফের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ নেয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। এদিকে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, গাজার শতভাগ মানুষ মারাত্মক পর্যায়ের খাদ্য অনিরাপত্তার মুখে রয়েছেন। চরম অপুষ্টির কারণে ৭০ হাজার শিশুর জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসার প্রয়োজন।
এদিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস এলাকা থেকে একজন থাই জিম্মির মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর তাঁকে গাজায় ধরে নিয়ে যায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা।
আরও পড়ুনগাজায় হামাসবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দেওয়ার কথা স্বীকার করলেন নেতানিয়াহু০৬ জুন ২০২৫