প্রতিবাদী সাহিত্য মানব সমাজের সেই আয়না, যা যুগ যুগ ধরে অন্যায়, অবিচার, শোষণ আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। এই সাহিত্য সমাজের বুকে জমে থাকা অসাম্য, অমানবিকতা এবং ক্ষমতাবানদের অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষ ও বিদ্রোহের ভাব প্রকাশ করে। এর প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হলো সমাজের কদর্য দিকগুলোর স্পষ্ট চিত্রায়ণ, ক্ষমতার অপব্যবহারের সমালোচনা, নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের প্রতি গভীর সহানুভূতি এবং একটি উন্নত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজের স্বপ্ন। 

কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা কিংবা দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটকের মতো কালজয়ী রচনা এই প্রতিবাদী সাহিত্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যেখানে ঔপনিবেশিক শাসনের শৃঙ্খল এবং সমাজের গেঁথে বসা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ ঘোষিত হয়েছে। প্রতিবাদী সাহিত্য কেবল কালের সাক্ষী নয়, বরং এটি পরিবর্তনের অনুঘটক হিসেবেও কাজ করে, মানুষকে সচেতন করে তোলে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা যোগায়।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের গভীরে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, প্রতিবাদী সাহিত্যের উৎস মানব সমাজের একেবারে প্রারম্ভিক কাল থেকেই প্রোথিত ছিল। যদিও প্রাচীনকালে সুস্পষ্টভাবে ‘প্রতিবাদী’ সাহিত্য তেমন একটা চোখে পড়ে না, তবুও তৎকালীন সমাজের নানা অসঙ্গতির প্রতি নীরব অথবা সরব অসন্তোষের কিছু ইঙ্গিত বিভিন্ন রচনায় খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রাচীন গ্রিসের বিখ্যাত নাট্যকার ইউরিপিদেসের রচনায় যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং সমাজের নৈতিক স্খলনের যে সমালোচনা দেখা যায়, তা সেই সময়ের এক ধরনের প্রতিবাদী সুর। তাঁর ট্র্যাজেডিগুলোতে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের চিত্রায়ণ তৎকালীন সমাজের বাস্তবতাকে তুলে ধরে। মধ্যযুগে ধর্মের প্রবল আধিপত্যের কারণে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর কিছুটা স্তিমিত হয়ে আসে, তবে লোকমুখে প্রচলিত কাহিনি, গাথা এবং মরমি সাহিত্যিকদের রচনায় সমাজের চিরাচরিত গোঁড়ামির বিরুদ্ধে ক্ষীণ হলেও প্রতিবাদ বিদ্যমান ছিল। 
সুফিবাদের অনেক রচনায় আধ্যাত্মিকতার আবরণে সমাজের বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠান এবং ধর্মীয় গোঁড়ামির সমালোচনা দেখা যায়।

আধুনিক যুগের ঊষালগ্নে রেনেসাঁস এবং জ্ঞানালোকের প্রভাবে যুক্তিবাদ ও মানবতাবাদের নবজাগরণ ঘটে। এ সময় থেকেই প্রতিবাদী সাহিত্যের একটি সুস্পষ্ট এবং শক্তিশালী ধারা লক্ষ করা যায়। ফরাসি বিপ্লব এবং শিল্প বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে ভলতেয়ার, রুশো, মেরি ওলস্টোনক্রাফটের মতো প্রথিতযশা লেখকদের রচনা তৎকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন চিন্তাভাবনার উন্মেষ ঘটায়। তাঁদের লেখনী জনগণের মধ্যে অধিকার সচেতনতা এবং মুক্তির আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে। ভলতেয়ারের শ্লেষাত্মক রচনা এবং রুশোর সামাজিক চুক্তির ধারণা প্রচলিত রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। মেরি ওলস্টোনক্রাফটের ‘এ ভিন্ডিকেশন অফ দ্য রাইটস অফ উইমেন’ নারীদের অধিকারের পক্ষে এক বলিষ্ঠ প্রতিবাদ হিসেবে আজও সমাদৃত।

উনিশ শতকে ঔপনিবেশিক শাসনের বিস্তার বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদী সাহিত্যের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার কবি ও সাহিত্যিকরা ঔপনিবেশিক শক্তির নির্মম শোষণ, জাতিগত বিদ্বেষ এবং সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাঁদের শক্তিশালী কলম ধরেন। ভারতের কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চিলির পাবলো নেরুদা, কেনিয়ার নগুগি ওয়া থিয়োংও প্রমুখ লেখকের অমর সৃষ্টি ঔপনিবেশিক শাসনের নাগপাশ থেকে মুক্তির তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে মূর্ত করে তোলে এবং বিভিন্ন দেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে এক গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। তাঁদের সাহিত্য কেবল শোষণের চিত্রায়ণই করেনি, বরং মুক্তির মন্ত্রও যুগিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় যেমন ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে এক সূক্ষ্ম অথচ শক্তিশালী প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়, তেমনি নজরুলের কবিতা সরাসরি বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পাবলো নেরুদার কবিতায় লাতিন আমেরিকার মানুষের সংগ্রাম ও মুক্তির আকাঙ্ক্ষা প্রতিধ্বনিত হয়।

বিংশ শতাব্দীতে দুটি ভয়াবহ বিশ্বযুদ্ধ, ফ্যাসিবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার মানবতাকে এক চরম সংকটের মুখে ঠেলে দেয়। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে প্রতিবাদী সাহিত্য আরও শক্তিশালী এবং বহুমাত্রিক রূপে আত্মপ্রকাশ করে। জর্জ অরওয়েলের ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ এবং ‘নাইন্টিন এইটি-ফোর’-এর মতো কালজয়ী উপন্যাস সর্বগ্রাসী শাসনের ভয়াবহ রূপ উন্মোচন করে এবং মানুষের স্বাধীনতার মূল্য তুলে ধরে। বার্টোল্ট ব্রেখটের নাটক যুদ্ধ এবং সমাজের অমানবিক দিকগুলোর তীব্র সমালোচনা করে মানুষকে সচেতন করে তোলে। নাটকের মাধ্যমে তিনি দর্শককে প্রশ্ন করতে এবং সমাজের প্রচলিত ধারণার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে উৎসাহিত করেন। একই সময়ে নারীবাদের উত্থান নারী লেখিকাদের প্রতিবাদী সাহিত্যকে আরও সমৃদ্ধ করে। সিমন দ্য বোভোয়ার, ভার্জিনিয়া উলফ প্রমুখ নারীবাদী লেখিকা নারী অধিকার এবং লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে তাঁদের বলিষ্ঠ বক্তব্য রাখেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ল্যাংস্টন হিউজ, মায়া অ্যাঞ্জেলুর মতো খ্যাতিমান লেখকদের প্রতিবাদী সাহিত্য বর্ণবাদের বিরুদ্ধে এক জোরালো বার্তা দেয় এবং ন্যায়সঙ্গত সমাজের দাবি তোলে। ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী সাহিত্য এবং লাতিন আমেরিকার স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, মারিও ভার্গাস ইয়োসার মতো বিশ্বখ্যাত লেখকদের প্রতিবাদী উপন্যাসও এই সময়ের সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন, যা বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারের পক্ষে জনমত গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মার্কেজের ‘শত বর্ষের নিঃসঙ্গতা’য় স্বৈরাচারী শাসনের প্রেক্ষাপটে মানুষের জীবন ও সংগ্রাম এক ভিন্ন মাত্রা পায়।

বাংলাদেশের সাহিত্যও প্রতিবাদী চেতনায় সর্বদা মুখরিত থেকেছে। উনিশ শতকের নীল বিদ্রোহ নিয়ে রচিত দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটক ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম বলিষ্ঠ প্রতিবাদগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই নাটক তৎকালীন সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে এবং নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ঔপনিবেশিক শোষণ এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের এক জ্বলন্ত অগ্নিশিখা জ্বালিয়েছিল। তাঁর কবিতা তরুণ প্রজন্মকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে অনুপ্রাণিত করে। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত সাহিত্য এদেশের মানুষের আত্মত্যাগ, অদম্য সাহস এবং মুক্তির তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে। শামসুর রাহমান, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস প্রমুখ লেখকের রচনা স্বাধীন বাংলাদেশেও রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার থেকেছে। তাঁদের লেখা সমাজের বিবেক হিসেবে কাজ করেছে। শামসুর রাহমানের কবিতায় স্বৈরাচার-বিরোধী স্পষ্ট উচ্চারণ এবং আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের উপন্যাসে সমাজের প্রান্তিক মানুষের জীবন ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের জটিল চিত্রায়ণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

বর্তমানে বিশ্বায়ন এবং মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগে নতুন ধরনের বৈষম্য এবং শোষণ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। পরিবেশ দূষণ, প্রযুক্তিগত বিভাজন, ধর্মীয় মৌলবাদ এবং জাতিগত সংঘাতের মতো জটিল বিষয়গুলো প্রতিবাদী সাহিত্যের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করেছে। নির্মলেন্দু গুণ, সেলিনা হোসেন, তসলিমা নাসরিনসহ সমসাময়িক লেখক-লেখিকাদের মধ্যে অনেকেই তাঁদের শক্তিশালী রচনায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সমালোচনা করছেন এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক ও স্থিতিশীল বিশ্বের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। নির্মলেন্দু গুণের কবিতায় যেমন শ্রেণী বৈষম্য ও রাজনৈতিক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর শোনা যায়, তেমনি সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে নারীমুক্তি ও প্রান্তিক মানুষের জীবন সংগ্রামের চিত্রায়ণ দেখা যায়। তসলিমা নাসরিন তাঁর বিতর্কিত রচনার মাধ্যমে নারীর অধিকার ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছেন। ডিজিটাল যুগে ব্লগ, অনলাইন জার্নাল ও সোশ্যাল মিডিয়ার মতো নতুন মাধ্যম প্রতিবাদী সাহিত্যকে আরও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের লেখক ও অ্যাক্টিভিস্টরা এই প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে তাঁদের প্রতিবাদী চিন্তা ও ভাষ্য সমাজের সামনে তুলে ধরছেন। এটি প্রতিবাদী সাহিত্যের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এবং ব্যাপক অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

পরিশেষে বলা যায়, প্রতিবাদী সাহিত্য কেবল অতীতের অন্যায় ও অবিচারের বিবরণ নয়, এটি বর্তমানের অসঙ্গতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা এবং ভবিষ্যতের ন্যায়সঙ্গত সমাজের স্বপ্নদ্রষ্টা। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের বিবর্তনের সাথে সাথে এর আঙ্গিক ও ভাষা পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু এর মূল চেতনা, মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং সকল প্রকার শোষণ ও বৈষম্যের অবসান আজও অক্ষুণ্ণ রয়েছে। প্রতিবাদী সাহিত্য যুগে যুগে মানুষকে সাহস জুগিয়েছে, সচেতন করেছে এবং পরিবর্তনের পথে চালিত করেছে। সমাজের যেকোনো ক্রান্তিকালে এই সাহিত্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ভবিষ্যতেও করবে, যতক্ষণ না পৃথিবীতে সম্পূর্ণরূপে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সাহিত্য কেবল সাহিত্যিক সৃষ্টি নয়, এটি সমাজ পরিবর্তনের এক জীবন্ত হাতিয়ার। এর ঐতিহাসিক বিবর্তন প্রমাণ করে যে, যখনই সমাজে অন্যায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তখনই সাহিত্য তার শক্তিশালী ভাষা দিয়ে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এবং মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

তারা//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স হ ত য র এক স হ ত য ক বল ও র জন ত ক তৎক ল ন স উপন য স বন ত হ বল ষ ঠ অন য য নজর ল র রচন রচন য

এছাড়াও পড়ুন:

শুভ জন্মাষ্টমী আজ

অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন করতে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ—এই বিশ্বাস পোষণ করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। শ্রীকৃষ্ণের এই আবির্ভাব তিথি শুভ জন্মাষ্টমী হিসেবে উদ্‌যাপন করা হয়।

সনাতন ধর্মের মানুষ বিশ্বাস করেন, পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই শক্তিকে দমন করে মানবজাতির কল্যাণ এবং ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল। আজ শনিবার শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথি।

জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল শুক্রবার এক বাণীতে তিনি বলেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর। সমাজে বিদ্যমান শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে কেউ যেন নষ্ট করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সমাজে সাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে শ্রীকৃষ্ণ আজীবন ন্যায়, মানবপ্রেম ও শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। শ্রীকৃষ্ণ যেখানেই অন্যায়-অবিচার দেখেছেন, সেখানেই অপশক্তির হাত থেকে শুভশক্তিকে রক্ষার জন্য আবির্ভূত হয়েছেন।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আবহমানকাল থেকে এ দেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে ভরপুর বৈষম্যমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি জানিয়েছে, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে আজ সকাল আটটায় দেশ-জাতির মঙ্গল কামনায় শ্রীশ্রী গীতাযজ্ঞ, বেলা তিনটায় ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিল ও রাতে শ্রীকৃষ্ণপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি জানিয়েছে, রাজধানীর পলাশীর মোড়ে আজ বেলা তিনটায় কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিলের উদ্বোধন করবেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন ও নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ