সময়টা ১৯৯৯ সাল। মরিশাস থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পাড়ি জমান নিদ্যানন্দ রায়া। উদ্দেশ্য ছিল স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করা। বাবার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, জীবনে যত দিন পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন, তত দিন পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন তিনি।

এরপর দুই দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। বাবাকে দেওয়া সেই কথা রেখেছেন নিদ্যানন্দ। এখন তাঁর বয়স ৬৯ বছর। এ বয়সে এসে মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটি থেকে সামাজিক নীতি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। নামের শুরুতে ‘ড.

’ শব্দটি যুক্ত করেছেন।

এ অর্জন কেমন লাগছে? প্রশ্নের জবাবে নিদ্যানন্দের চটজলদি জবাব, ‘তেমন কিছুই না। এটা জীবনের একটা অর্জন মাত্র।’

বিবিসি রেডিও লন্ডনকে দেওয়া সাক্ষাতকারে নিদ্যানন্দ বলেন, আমি বেশ গরিব পরিবার থেকে এসেছি। আমার বাবা ছিলেন নাপিত। আর মা পরিচারিকার কাজ করতেন। আমি বন থেকে কাঠ, ফলমূল সংগ্রহ করতাম। মা–বাবার বেতন দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় আমাকে স্কুল ছাড়তে হয়েছিল। এসব কারণই আমাকে শৃঙ্খলাবোধ আর জ্ঞান অর্জনের পথে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

ড. নিদ্যানন্দ এখন লন্ডনের এনফিল্ডে বসবাস করেন। পড়াশোনার জন্যই দেশ ছেড়েছিলেন। বলছিলেন, নিজ দেশে পড়াশোনার সুযোগ সীমিত ছিল। তাই দেশ ছেড়ে এসেছিলেন।

বিবিসি রেডিও লন্ডনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিদ্যানন্দ বলেন, ‘আমি বেশ গরিব পরিবার থেকে এসেছি। আমার বাবা ছিলেন নাপিত। আর মা পরিচারিকার কাজ করতেন। আমি বন থেকে কাঠ ও ফলমূল সংগ্রহ করতাম। মা–বাবার বেতন দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় আমাকে স্কুল ছাড়তে হয়েছিল। এসব কারণই আমাকে শৃঙ্খলাবোধ আর জ্ঞান অর্জনের পথে উদ্বুদ্ধ করেছিল।’

যুক্তরাজ্যকে ‘সুযোগের ভূখণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করে নিদ্যানন্দ বলেন, ‘এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে আপনি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেন।’

স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর নিদ্যানন্দ সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার প্রস্তাব পান। কিন্তু সেখানে কাজের সুযোগ না থাকায় সেটা করতে পারেননি।

মাঝের সময়টায় যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হওয়ার জন্য কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে নিদ্যানন্দকে। দীর্ঘ সময় পরিবারের খরচ চালাতে স্কুলশিক্ষক স্ত্রী ল্যাকসোমিকে সহায়তা করতে পারেননি তিনি। বরং স্ত্রীই তখন পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন। নিদ্যানন্দ বলেন, ‘তখন আমাকে চাকরি খুঁজে বের করতে হয়েছিল। আমাকে স্থায়ী হতে হয়েছিল। আমাকে সবকিছু করতে হয়েছিল।’

‘এখানে আসার পর আমি গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলাম। পরে আমাকে একজন পরিচর্যাকারী হিসেবেও কাজ করতে হয়েছে,’ বলেন নিদ্যানন্দ।

নিজের পিএইচডি গবেষণায় নিদ্যানন্দ মৌরিতানিয়ার ক্রেওলের ফরাসিভাষী সম্প্রদায়ের মানুষদের ঔপনিবেশিক–পরবর্তী অভিজ্ঞতার বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এলিনোর কফম্যানের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এই শিক্ষক বলেন, আমি তাঁর সাফল্যে রোমাঞ্চিত। আশা করব, তিনি তাঁর উল্লেখযোগ্য গবেষণা চালিয়ে যাবেন।

নিজের পিএইচডি গবেষণায় নিদ্যানন্দ মৌরিতানিয়ার ক্রেওলের ফরাসিভাষী সম্প্রদায়ের মানুষদের ঔপনিবেশিক–পরবর্তী অভিজ্ঞতার বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।

মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এলিনোর কফম্যানের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন নিদ্যানন্দ। এই শিক্ষক বলেন, ‘আমি তাঁর সাফল্যে রোমাঞ্চিত। আশা করব, তিনি তাঁর উল্লেখযোগ্য গবেষণা চালিয়ে যাবেন।’

জীবনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিষয়ে বলতে গিয়ে কয়েক দশক আগে বাবাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করেন নিদ্যানন্দ। তিনি বলেন, ‘আমি বাবাকে দেওয়া কথা রেখেছি। বাবা, আমি তোমাকে গর্বিত করেছি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ন দ য নন দ প এইচড কর ছ ল কর ছ ন পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

২৮ অক্টোবর উপলক্ষ্যে না’গঞ্জ জেলা শ্রমিক কল্যান ফেডারেশনের আলোচনা সভা ও দোয়া

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যান ফেডারেশন কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক নুরুল আমিন বলেছেন, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামী আপোষহীন। যার প্রমাণ ঐতিহাসিক ২৮ অক্টোবর। সেদিন সারাদেশে জামায়াতের কর্মীরা জীবন উৎসর্গ করেছে ইসলামী আন্দোলন ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য। আমাদের শহীদের শুধু জামায়াতের কাছে নয় পুরো জাতির কাছে প্রেরণার বাতিঘর।

তিনি ২৮ অক্টোবর মঙলবার সকাল ৭ টায়  শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে ফেডারেশনের জেলার কার্যালয়ে ঐতিহাসিক ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠার তাণ্ডবে শাহাদাত বরণকারী শহীদ রুহুল আমিন ও শহীদ হাবিবুর রহমান সহ সকল শহীদদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। 

ফেডারেশনের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো রিদওয়ানুল আজীম এর সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর জেলা মজলিসে শুরা ও কর্ম পরিষদ সদস্য মাওলানা মজিবুর রহমান মিয়াজী । 

নুরুল আমিন বলেন, সেই সময় আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের কি পরিকল্পনা ছিল তা পরবর্তী ১৭ বছরে জাতি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছে। তারা বাংলাদেশকে ভারতের একটি তাবেদার রাজ্য পরিণত করার জন্য সেদিন এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের অত্যন্ত প্রহরী জামায়াতে ইসলামী, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের উপর চূড়ান্ত আঘাত করেছিল। তারা চেয়েছিল এদেশের মাটি থেকে ইসলামী আন্দোলন ও তার নেতৃত্বকে মুছে ফেলার।

তার প্রথম পরিকল্পনা হিসাবে তারা সেই সময় ২৮ অক্টোবরকে বেছে নিয়েছে। তারা সারাদেশে লগি বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে শহীদ মুজাহিদ, মাসুম, জসিম, হাবিবুরসহ অসংখ্য নেতাকর্মী ও সাধারণ নাগরিককে হত্যা করেছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে পঙ্গু করে দিয়েছে। আমাদের অফিসগুলো জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।

একই সাথে বহু মানুষের ঘরবাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও প্রতিষ্ঠান পুড়িয়েছে। পুরো বিশ্ব সেদিন হতবাক হয়ে গিয়েছিল। রাজনীতির নামে এ কোন ধরনের জ্বালাও পোড়াও নীতি। আসলে তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতার মসনদ দখল করা। তারা ভারতের প্রেসক্রিপশনে এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিলিয়ে দিয়ে দেশ ও জাতির উপর অসভ্য ও বর্বর আঘাত হেনেছে।

তিনি আরো বলেন, সেদিন জামায়াতের কর্মীরা জীবন বাজি রেখে নেতৃবৃন্দকে রক্ষা করেছে। ফলে তাদের একটি বড়ো পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে যায়। জামায়াতের দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব থাকতে এদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য পরিণত করা যাবে না এই বিশ্বাস তাদের ছিল। পরবর্তীতে ভারতের অন্য একটি প্রেসক্রিপশনে তথাকথিত মানবতা বিরোধী অপরাধের নামে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে হত্যা করেছে।

নেতৃবৃন্দ জীবন দিয়েছেন কিন্তু আপোষ করেননি। তাদের সেই আত্মত্যাগের ফসল জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আজকে দেশের মানুষ জানে কাদের কাছে এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিরাপদ। আজকে জামায়াতের যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তার পেছনে ২৮ অক্টোবরের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

সভাপতির বক্তব্য আবদুল মান্নান বলেন, এদেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে শ্রমিকদের অবদান কখনো সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। অথচ প্রতিটি আন্দোলনেই সফলতার পেছনে শ্রমিকদের অবদান অতুলনীয়।

২৮ অক্টোবরে ঢাকার পল্টনে শ্রমিক নেতা হাবিবুর রহমান ও গাজীপুরে শ্রমিক কল্যাণের তৎকালীন জেলা সভাপতি রুহুল আমিনের শাহাদাত আন্দোলন সংগ্রামে শ্রমিকদের ত্যাগ তিতিক্ষার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমরা মনে করি আমাদের ভাইদের আত্মত্যাগ বিফলে যায়নি। তাদের রক্তের উপরে এদেশে ইসলাম বিজয়ী হবে ইনশাল্লাহ।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মো হুমায়ুন কবীর, ফতুল্লা দক্ষিণ থানা সভাপতি আজিজ উদ্দিন বাবুল, ও সাইনবোর্ড ওয়ার্ডের সভাপতি মো সাইফুল ইসলাম প্রমূখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ: আবেদন, খরচ ও বৃত্তির খোঁজ
  • অস্ট্রেলিয়ায় গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ স্কলারশিপে ৬০০ বৃত্তি, আবেদনের সুযোগ ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত
  • নিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ারের সুযোগ এবং সম্ভাবনা কেমন
  • ব্ল্যাক টিউসডে ১৯২৯, যেভাবে শুরু হয় মহামন্দা
  • আপিল মঞ্জুর করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল চাইলেন জামায়াতের সেক্রেটারির আইনজীবী
  • তৃতীয় প্রান্তিকে রবির কর–পরবর্তী মুনাফা ২৪২ কোটি টাকা
  • হাসপাতালে হাসান মাসুদ
  • ২৮ অক্টোবর উপলক্ষ্যে না’গঞ্জ জেলা শ্রমিক কল্যান ফেডারেশনের আলোচনা সভা ও দোয়া
  • যবিপ্রবি প্রক্টর ওঠা মিথ্যা অভিযোগের প্রতিবাদে মানববন্ধন