কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী চেতনার কবি; বাংলাদেশের গণমানুষের কবি। তিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন এবং লিখেছেন অসংখ্য কবিতা, গান, প্রবন্ধ, যা ছিল সব অনিয়ম-অন্যায়, অত্যাচার-অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে। সেসব গান ও কবিতা আমাদের সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল ’২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও।
কাজী নজরুল ইসলাম লড়াই করতে গিয়ে তাঁর সাহিত্যিক জীবনের বেশির ভাগ সময়ে রাজরোষের শিকার হয়েছেন। ১৯২২-৩১ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে তাঁর পাঁচটি বই নিষিদ্ধ হয়। কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন দু’বার। ১৯২৩ সালে প্রথমবার এক বছরের জন্য কারাগারে যেতে হয় ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতা লেখার জন্য। ১৯৩০ সালে ‘প্রলয় শিখা’ কাব্যগ্রন্থের জন্য আরেকবার কারাগারে যেতে হয়। একের পর এক বাজেয়াপ্ত ও কারাদণ্ডাদেশে তিনি ভারতে পরিচিত হয়ে ওঠেন আপসহীন ও প্রতিবাদী কবিরূপে। স্বাধীনতাকামীদের কাছে তিনি পরিণত হন মুক্তির অগ্রদূত হিসেবে। এ জন্য তাঁকে বলা হয় ‘বিদ্রোহী কবি’।
কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা, গান, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক সব লেখনীতে অনিয়ম, অনাচার, নির্যাতন, দাসত্ব, ঔপনিবেশিকতাবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ ছিল। যেখানেই যা অনিয়ম দেখেছেন সেখানেই তার বিরুদ্ধে তাঁর কলম চলেছে তীব্র বেগে। কখনও কোনো অন্যায়কে তিনি প্রশ্রয় দেননি।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে, সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কার, অনিয়ম, নারীর অধিকার ও সমান মর্যাদা আদায়, ধনী-গরিবের বৈষম্য দূরীকরণ, অত্যাচারী শোষকদের বিরুদ্ধে, ধর্মের কুসংস্কার ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের মুক্তির আহ্বান এবং সাম্য ও মানবতার বার্তা সুস্পষ্টভাবে পাওয়া যায় তাঁর লেখায়। শত বাধা এলেও থামেনি তাঁর কলম। কখনও পিছপা হননি তিনি। জেলে বন্দি অবস্থায় লিখেছেন প্রবন্ধ ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’। সমাজের সব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি শক্তি সংগ্রহ করেছিলেন ইতিহাস, ঐতিহ্য, পুরাণ, ধর্মগ্রন্থ থেকে।
শান্তি-সংগ্রাম, প্রেম-বিরহ, আনন্দ-বেদনা, অবচেতন-জাগরণে নজরুল প্রাতঃস্মরণীয়। তাই যে কোনো অন্যায়কে রুখে দিতে তাঁর রচিত কবিতা, গান, কণ্ঠস্বর আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা, আমাদের শক্তি এবং আমাদের উজ্জীবন ও প্রাণের সুর।
কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি, সাম্যবাদের কবি, অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি এবং বিদ্রোহী কবি। যখনই আমাদের মাঝে কোনো অন্যায়- অবিচার, বৈষম্য দেখা যায় তখনই আমরা শক্তি আহরণ করি নজরুলের কবিতা, গান থেকে। ভারতের আজাদী ও বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেমন তাঁর কবিতা, গান আমাদের মধ্যে অনুপ্রেরণা, শক্তি ও সাহস জুগিয়েছিল, তেমনি আমাদের মধ্যে অনুপ্রেরণা, শক্তি ও সাহস জুগিয়েছিল ২০২৪-এর জুলাই বিপ্লবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১ জুলাই ২০২৪ থেকে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। সরকার তা দমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ থেকে দুর্বার গতিতে চলতে থাকে। সেই সময় তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছিল নজরুলের সেই বিখ্যাত কবিতা– চল্ চল্ চল্!/ ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল,/ নিম্নে উতলা ধরণী-তল,/ অরুণ প্রাতের তরুণ দল/ চল্ রে চল্ রে চল্। নজরুলের আরও যেসব কবিতা ছাত্র-জনতাকে উৎসাহিত করেছিল সেগুলো হলো– কারার ঐ লৌহ-কপাট/ ভেঙে ফেল, কর রে লোপাট…। তা ছাড়া বল বীর–/ বল উন্নত মম শির!/ শির নেহারি আমারি, নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রির!
সকল অনিয়ম, অন্যায়-অবিচার, জুলুম, নির্যাতনের প্রতিবাদে নজরুল আজীবন সংগ্রাম করেছেন। অনেক বাধার সম্মুখীন হলেও থামেনি তাঁর কলম; থামেনি তাঁর লেখা। আমাদের সৌভাগ্য, আমরা তাঁর মতো একজন মানবদরদি কবি পেয়েছি। তিনি আমাদের মাঝে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন শ্রদ্ধা ও অনুপ্রেরণা হিসেবে। নজরুলজয়ন্তীতে আমরা এই বিদ্রোহী কবিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।
মোজাহিদ হোসেন: শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
mojahidhosen5913@gmail.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নজর ল উৎসব নজর ল ইসল ম আম দ র ম অন য য়
এছাড়াও পড়ুন:
শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত
নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।
দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।
ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।
৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।
ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট