Samakal:
2025-05-24@00:42:37 GMT

সংগ্রামের প্রেরণা নজরুল

Published: 23rd, May 2025 GMT

সংগ্রামের প্রেরণা নজরুল

কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী চেতনার কবি; বাংলাদেশের গণমানুষের কবি। তিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন এবং লিখেছেন অসংখ্য কবিতা, গান, প্রবন্ধ, যা ছিল সব অনিয়ম-অন্যায়, অত্যাচার-অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে। সেসব গান ও কবিতা আমাদের সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল ’২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও।

কাজী নজরুল ইসলাম লড়াই করতে গিয়ে তাঁর সাহিত্যিক জীবনের বেশির ভাগ সময়ে রাজরোষের শিকার হয়েছেন। ১৯২২-৩১ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে তাঁর পাঁচটি বই নিষিদ্ধ হয়। কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন দু’বার। ১৯২৩ সালে প্রথমবার এক বছরের জন্য কারাগারে যেতে হয় ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতা লেখার জন্য। ১৯৩০ সালে ‘প্রলয় শিখা’ কাব্যগ্রন্থের জন্য আরেকবার কারাগারে যেতে হয়।  একের পর এক বাজেয়াপ্ত ও কারাদণ্ডাদেশে তিনি ভারতে পরিচিত হয়ে ওঠেন আপসহীন ও প্রতিবাদী কবিরূপে। স্বাধীনতাকামীদের কাছে তিনি পরিণত হন মুক্তির অগ্রদূত হিসেবে। এ জন্য তাঁকে বলা হয় ‘বিদ্রোহী কবি’। 
কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা, গান, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক সব লেখনীতে অনিয়ম, অনাচার, নির্যাতন, দাসত্ব, ঔপনিবেশিকতাবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ ছিল। যেখানেই যা অনিয়ম দেখেছেন সেখানেই তার বিরুদ্ধে তাঁর কলম চলেছে তীব্র বেগে। কখনও কোনো অন্যায়কে তিনি প্রশ্রয় দেননি।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে, সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কার, অনিয়ম, নারীর অধিকার ও সমান মর্যাদা আদায়, ধনী-গরিবের বৈষম্য দূরীকরণ, অত্যাচারী শোষকদের বিরুদ্ধে, ধর্মের কুসংস্কার ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের মুক্তির আহ্বান এবং সাম্য ও মানবতার বার্তা সুস্পষ্টভাবে পাওয়া যায় তাঁর লেখায়। শত বাধা এলেও থামেনি তাঁর কলম। কখনও পিছপা হননি তিনি। জেলে বন্দি অবস্থায় লিখেছেন প্রবন্ধ ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’। সমাজের সব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি শক্তি সংগ্রহ করেছিলেন ইতিহাস, ঐতিহ্য, পুরাণ, ধর্মগ্রন্থ থেকে। 
শান্তি-সংগ্রাম, প্রেম-বিরহ, আনন্দ-বেদনা, অবচেতন-জাগরণে নজরুল প্রাতঃস্মরণীয়। তাই যে কোনো অন্যায়কে রুখে দিতে তাঁর রচিত কবিতা, গান, কণ্ঠস্বর আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা, আমাদের শক্তি এবং আমাদের উজ্জীবন ও প্রাণের সুর।

কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি, সাম্যবাদের কবি, অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি এবং বিদ্রোহী কবি। যখনই আমাদের মাঝে কোনো অন্যায়- অবিচার, বৈষম্য দেখা যায় তখনই আমরা শক্তি আহরণ করি নজরুলের কবিতা, গান থেকে। ভারতের আজাদী ও বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেমন তাঁর কবিতা, গান আমাদের মধ্যে অনুপ্রেরণা, শক্তি ও সাহস জুগিয়েছিল, তেমনি আমাদের মধ্যে অনুপ্রেরণা, শক্তি ও সাহস জুগিয়েছিল ২০২৪-এর জুলাই বিপ্লবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১ জুলাই ২০২৪ থেকে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। সরকার তা দমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ থেকে দুর্বার গতিতে চলতে থাকে। সেই সময় তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছিল নজরুলের সেই বিখ্যাত কবিতা– চল্‌ চল্‌ চল্‌!/ ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল,/ নিম্নে উতলা ধরণী-তল,/ অরুণ প্রাতের তরুণ দল/ চল্‌ রে চল্‌ রে চল্‌। নজরুলের আরও যেসব কবিতা ছাত্র-জনতাকে উৎসাহিত করেছিল সেগুলো হলো– কারার ঐ লৌহ-কপাট/ ভেঙে ফেল, কর রে লোপাট…। তা ছাড়া বল  বীর–/ বল উন্নত মম শির!/ শির  নেহারি আমারি, নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রির!
সকল অনিয়ম, অন্যায়-অবিচার, জুলুম, নির্যাতনের প্রতিবাদে নজরুল আজীবন সংগ্রাম করেছেন। অনেক বাধার সম্মুখীন হলেও থামেনি তাঁর কলম; থামেনি তাঁর লেখা। আমাদের সৌভাগ্য, আমরা তাঁর মতো একজন মানবদরদি কবি পেয়েছি। তিনি আমাদের মাঝে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন শ্রদ্ধা ও অনুপ্রেরণা হিসেবে। নজরুলজয়ন্তীতে আমরা এই বিদ্রোহী কবিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।

মোজাহিদ হোসেন: শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া 
mojahidhosen5913@gmail.

com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নজর ল উৎসব নজর ল ইসল ম আম দ র ম অন য য়

এছাড়াও পড়ুন:

রোমান্টিক দৃশ্য নিয়ে সমালোচনার ঝড়, মুখ খুললেন নায়িকা

সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে কমল হাসান অভিনীত ‘থাগ লাইফ’ ছবির ট্রেলার। মণিরত্নম পরিচালিত এ ছবিতে কমল হাসান ছাড়া আছেন সিলবারাসন, অভিরামী, ঐশ্বরিয়া লক্ষ্মী, তৃষা কৃষ্ণানসহ অনেকে। ‘থাগ লাইফ’ ছবির ট্রেলার মুক্তির পর থেকে তৃষা আর কমল হাসানের মধ্যে রোমান্টিক দৃশ্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এ প্রসঙ্গে জবাব দিয়েছেন তৃষা। আর এই দক্ষিণি নায়িকা স্পষ্ট জানিয়েছেন যে এসব সমালোচনায় তাঁর কোনো যায়–আসে না।

৩৮ বছর পর বড় পর্দায় আসতে চলেছেন ‘নায়কন’ ছবির সেই জাদুকরি জুটি কমল হাসান ও মণিরত্নম। ‘থাগ লাইফ’ ছবির লেখক ও প্রযোজকও কমল হাসান। লেখালেখির কাজে তাঁকে সহায়তা করেছেন মণিরত্নম। ৭০ বছর বয়সী কমল হাসানের সঙ্গে ৪২-এর তৃষার পর্দায় রোমান্স নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। এ প্রসঙ্গে তৃষা বলেছেন, ‘যখন উনি (কমল হাসান) এ ছবির ঘোষণা করেছিলেন, আমি তখনই জানতাম, এমন কিছু হতে চলেছে। আর আমি তখন এই ছবির জন্য স্বাক্ষর পর্যন্ত করিনি।’

গতকাল মুম্বাইয়ে ‘থাগ লাইফ’ ছবির হিন্দি ট্রেলার মুক্তির অনুষ্ঠানে তৃষা ও কমল হাসান। এএনআই

সম্পর্কিত নিবন্ধ