Samakal:
2025-07-08@11:23:14 GMT

সংগ্রামের প্রেরণা নজরুল

Published: 23rd, May 2025 GMT

সংগ্রামের প্রেরণা নজরুল

কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী চেতনার কবি; বাংলাদেশের গণমানুষের কবি। তিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন এবং লিখেছেন অসংখ্য কবিতা, গান, প্রবন্ধ, যা ছিল সব অনিয়ম-অন্যায়, অত্যাচার-অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে। সেসব গান ও কবিতা আমাদের সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল ’২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও।

কাজী নজরুল ইসলাম লড়াই করতে গিয়ে তাঁর সাহিত্যিক জীবনের বেশির ভাগ সময়ে রাজরোষের শিকার হয়েছেন। ১৯২২-৩১ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে তাঁর পাঁচটি বই নিষিদ্ধ হয়। কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন দু’বার। ১৯২৩ সালে প্রথমবার এক বছরের জন্য কারাগারে যেতে হয় ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতা লেখার জন্য। ১৯৩০ সালে ‘প্রলয় শিখা’ কাব্যগ্রন্থের জন্য আরেকবার কারাগারে যেতে হয়।  একের পর এক বাজেয়াপ্ত ও কারাদণ্ডাদেশে তিনি ভারতে পরিচিত হয়ে ওঠেন আপসহীন ও প্রতিবাদী কবিরূপে। স্বাধীনতাকামীদের কাছে তিনি পরিণত হন মুক্তির অগ্রদূত হিসেবে। এ জন্য তাঁকে বলা হয় ‘বিদ্রোহী কবি’। 
কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা, গান, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক সব লেখনীতে অনিয়ম, অনাচার, নির্যাতন, দাসত্ব, ঔপনিবেশিকতাবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ ছিল। যেখানেই যা অনিয়ম দেখেছেন সেখানেই তার বিরুদ্ধে তাঁর কলম চলেছে তীব্র বেগে। কখনও কোনো অন্যায়কে তিনি প্রশ্রয় দেননি।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে, সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কার, অনিয়ম, নারীর অধিকার ও সমান মর্যাদা আদায়, ধনী-গরিবের বৈষম্য দূরীকরণ, অত্যাচারী শোষকদের বিরুদ্ধে, ধর্মের কুসংস্কার ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের মুক্তির আহ্বান এবং সাম্য ও মানবতার বার্তা সুস্পষ্টভাবে পাওয়া যায় তাঁর লেখায়। শত বাধা এলেও থামেনি তাঁর কলম। কখনও পিছপা হননি তিনি। জেলে বন্দি অবস্থায় লিখেছেন প্রবন্ধ ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’। সমাজের সব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি শক্তি সংগ্রহ করেছিলেন ইতিহাস, ঐতিহ্য, পুরাণ, ধর্মগ্রন্থ থেকে। 
শান্তি-সংগ্রাম, প্রেম-বিরহ, আনন্দ-বেদনা, অবচেতন-জাগরণে নজরুল প্রাতঃস্মরণীয়। তাই যে কোনো অন্যায়কে রুখে দিতে তাঁর রচিত কবিতা, গান, কণ্ঠস্বর আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা, আমাদের শক্তি এবং আমাদের উজ্জীবন ও প্রাণের সুর।

কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি, সাম্যবাদের কবি, অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি এবং বিদ্রোহী কবি। যখনই আমাদের মাঝে কোনো অন্যায়- অবিচার, বৈষম্য দেখা যায় তখনই আমরা শক্তি আহরণ করি নজরুলের কবিতা, গান থেকে। ভারতের আজাদী ও বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেমন তাঁর কবিতা, গান আমাদের মধ্যে অনুপ্রেরণা, শক্তি ও সাহস জুগিয়েছিল, তেমনি আমাদের মধ্যে অনুপ্রেরণা, শক্তি ও সাহস জুগিয়েছিল ২০২৪-এর জুলাই বিপ্লবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১ জুলাই ২০২৪ থেকে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। সরকার তা দমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ থেকে দুর্বার গতিতে চলতে থাকে। সেই সময় তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছিল নজরুলের সেই বিখ্যাত কবিতা– চল্‌ চল্‌ চল্‌!/ ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল,/ নিম্নে উতলা ধরণী-তল,/ অরুণ প্রাতের তরুণ দল/ চল্‌ রে চল্‌ রে চল্‌। নজরুলের আরও যেসব কবিতা ছাত্র-জনতাকে উৎসাহিত করেছিল সেগুলো হলো– কারার ঐ লৌহ-কপাট/ ভেঙে ফেল, কর রে লোপাট…। তা ছাড়া বল  বীর–/ বল উন্নত মম শির!/ শির  নেহারি আমারি, নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রির!
সকল অনিয়ম, অন্যায়-অবিচার, জুলুম, নির্যাতনের প্রতিবাদে নজরুল আজীবন সংগ্রাম করেছেন। অনেক বাধার সম্মুখীন হলেও থামেনি তাঁর কলম; থামেনি তাঁর লেখা। আমাদের সৌভাগ্য, আমরা তাঁর মতো একজন মানবদরদি কবি পেয়েছি। তিনি আমাদের মাঝে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন শ্রদ্ধা ও অনুপ্রেরণা হিসেবে। নজরুলজয়ন্তীতে আমরা এই বিদ্রোহী কবিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।

মোজাহিদ হোসেন: শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া 
mojahidhosen5913@gmail.

com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নজর ল উৎসব নজর ল ইসল ম আম দ র ম অন য য়

এছাড়াও পড়ুন:

আকুর বিল পরিশোধের পর কমল রিজার্ভ

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল পরিশোধের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে। গতকাল সোমবার মে ও জুন মাসের আমদানি বিল পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার।

জানা যায়, আজ মঙ্গলবার মে ও জুন মাসের বকেয়া ২০১ কোটি ডলার আকুকে পরিশোধ করা হয়। এরপর রিজার্ভ কমে হয় ২৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। আর আর্ন্তজাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাবপদ্ধতি (বিপিএম৬) অনুয়ায়ী রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার।

এর আগে ২ জুলাই রিজার্ভ ছিল ৩১ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার। বিপিএম ৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার।

আকু হলো এশিয়ার কয়েকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যকার একটি আন্ত-আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিব্যবস্থা। এর মাধ্যমে এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, তার মূল্য প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি করা হয়। অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানিসংক্রান্ত লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্যদেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ।

আকুর সদস্যদেশগুলোর মধ্যে ভারত তার পরিশোধিত অর্থের তুলনায় অন্য দেশগুলো থেকে বেশি পরিমাণে ডলার আয় করে। অন্যদিকে বেশির ভাগ দেশকেই আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় হিসেবে অতিরিক্ত ডলার খরচ করতে হয়। ব্যাংকগুলো আমদানির খরচ নিয়মিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেয়। এই অর্থ রিজার্ভে যোগ হয়। তবে ওই দায় দুই মাস পরপর রিজার্ভ থেকে পরিশোধ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ