Samakal:
2025-09-18@04:58:17 GMT

সংগ্রামের প্রেরণা নজরুল

Published: 23rd, May 2025 GMT

সংগ্রামের প্রেরণা নজরুল

কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী চেতনার কবি; বাংলাদেশের গণমানুষের কবি। তিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন এবং লিখেছেন অসংখ্য কবিতা, গান, প্রবন্ধ, যা ছিল সব অনিয়ম-অন্যায়, অত্যাচার-অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে। সেসব গান ও কবিতা আমাদের সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল ’২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও।

কাজী নজরুল ইসলাম লড়াই করতে গিয়ে তাঁর সাহিত্যিক জীবনের বেশির ভাগ সময়ে রাজরোষের শিকার হয়েছেন। ১৯২২-৩১ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে তাঁর পাঁচটি বই নিষিদ্ধ হয়। কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন দু’বার। ১৯২৩ সালে প্রথমবার এক বছরের জন্য কারাগারে যেতে হয় ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতা লেখার জন্য। ১৯৩০ সালে ‘প্রলয় শিখা’ কাব্যগ্রন্থের জন্য আরেকবার কারাগারে যেতে হয়।  একের পর এক বাজেয়াপ্ত ও কারাদণ্ডাদেশে তিনি ভারতে পরিচিত হয়ে ওঠেন আপসহীন ও প্রতিবাদী কবিরূপে। স্বাধীনতাকামীদের কাছে তিনি পরিণত হন মুক্তির অগ্রদূত হিসেবে। এ জন্য তাঁকে বলা হয় ‘বিদ্রোহী কবি’। 
কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা, গান, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক সব লেখনীতে অনিয়ম, অনাচার, নির্যাতন, দাসত্ব, ঔপনিবেশিকতাবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ ছিল। যেখানেই যা অনিয়ম দেখেছেন সেখানেই তার বিরুদ্ধে তাঁর কলম চলেছে তীব্র বেগে। কখনও কোনো অন্যায়কে তিনি প্রশ্রয় দেননি।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে, সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কার, অনিয়ম, নারীর অধিকার ও সমান মর্যাদা আদায়, ধনী-গরিবের বৈষম্য দূরীকরণ, অত্যাচারী শোষকদের বিরুদ্ধে, ধর্মের কুসংস্কার ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের মুক্তির আহ্বান এবং সাম্য ও মানবতার বার্তা সুস্পষ্টভাবে পাওয়া যায় তাঁর লেখায়। শত বাধা এলেও থামেনি তাঁর কলম। কখনও পিছপা হননি তিনি। জেলে বন্দি অবস্থায় লিখেছেন প্রবন্ধ ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’। সমাজের সব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি শক্তি সংগ্রহ করেছিলেন ইতিহাস, ঐতিহ্য, পুরাণ, ধর্মগ্রন্থ থেকে। 
শান্তি-সংগ্রাম, প্রেম-বিরহ, আনন্দ-বেদনা, অবচেতন-জাগরণে নজরুল প্রাতঃস্মরণীয়। তাই যে কোনো অন্যায়কে রুখে দিতে তাঁর রচিত কবিতা, গান, কণ্ঠস্বর আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা, আমাদের শক্তি এবং আমাদের উজ্জীবন ও প্রাণের সুর।

কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি, সাম্যবাদের কবি, অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি এবং বিদ্রোহী কবি। যখনই আমাদের মাঝে কোনো অন্যায়- অবিচার, বৈষম্য দেখা যায় তখনই আমরা শক্তি আহরণ করি নজরুলের কবিতা, গান থেকে। ভারতের আজাদী ও বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেমন তাঁর কবিতা, গান আমাদের মধ্যে অনুপ্রেরণা, শক্তি ও সাহস জুগিয়েছিল, তেমনি আমাদের মধ্যে অনুপ্রেরণা, শক্তি ও সাহস জুগিয়েছিল ২০২৪-এর জুলাই বিপ্লবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১ জুলাই ২০২৪ থেকে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। সরকার তা দমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ থেকে দুর্বার গতিতে চলতে থাকে। সেই সময় তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছিল নজরুলের সেই বিখ্যাত কবিতা– চল্‌ চল্‌ চল্‌!/ ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল,/ নিম্নে উতলা ধরণী-তল,/ অরুণ প্রাতের তরুণ দল/ চল্‌ রে চল্‌ রে চল্‌। নজরুলের আরও যেসব কবিতা ছাত্র-জনতাকে উৎসাহিত করেছিল সেগুলো হলো– কারার ঐ লৌহ-কপাট/ ভেঙে ফেল, কর রে লোপাট…। তা ছাড়া বল  বীর–/ বল উন্নত মম শির!/ শির  নেহারি আমারি, নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রির!
সকল অনিয়ম, অন্যায়-অবিচার, জুলুম, নির্যাতনের প্রতিবাদে নজরুল আজীবন সংগ্রাম করেছেন। অনেক বাধার সম্মুখীন হলেও থামেনি তাঁর কলম; থামেনি তাঁর লেখা। আমাদের সৌভাগ্য, আমরা তাঁর মতো একজন মানবদরদি কবি পেয়েছি। তিনি আমাদের মাঝে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন শ্রদ্ধা ও অনুপ্রেরণা হিসেবে। নজরুলজয়ন্তীতে আমরা এই বিদ্রোহী কবিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।

মোজাহিদ হোসেন: শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া 
mojahidhosen5913@gmail.

com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নজর ল উৎসব নজর ল ইসল ম আম দ র ম অন য য়

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ