পুলিশি সেবা নিতে গিয়ে ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী হয় ঘুষ দিয়েছেন, নয়তো হয়রানির শিকার হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি এবং উন্নয়ন অধ‍্যয়ন বিভাগের শাসন ও নীতিবিষয়ক গবেষণা দলের জরিপে বিষয়টি উঠে এসেছে।

গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে এ জরিপ চালানো হয়। এতে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার (ফাজিল ও কামিল) ২ হাজার ৪০ শিক্ষার্থী অংশ নেন। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) জরিপ পরিচালনায় সহযোগিতায় রয়েছে। জরিপে শিক্ষার্থীদের কাছে গণ-অভ্যুত্থানের পূর্ববর্তী সময়ে (২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে) পুলিশের সেবা গ্রহণের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল।

জরিপের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আজ রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘জনবান্ধব, দায়বদ্ধ পেশাদার পুলিশি ব্যবস্থা বিনির্মাণ: শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা এবং প্রস্তাব’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম।

জরিপে দেখা গেছে, পুলিশের সেবা নিতে ঘুষ, উপহার অথবা রাজনৈতিক নেতার সুপারিশ লেগেছে ৩১ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থীর। পুলিশের সেবা নিতে গিয়ে ৯ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থীর সরকারি কর্মকর্তার সুপারিশ ব্যবহার করতে হয়েছে। ৩৭ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী সেবা নেওয়ার সময় হয়রানির শিকার হয়েছেন। তবে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সহজেই পুলিশের সেবা পেয়েছেন। আর জরিপে অংশ নেওয়া ১১ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী নিকট অতীতে (৫ আগস্টের আগে) কোনো ধরনের পুলিশের সেবা নেননি।

* রাজনীতিমুক্ত স্বাধীন পুলিশ কমিশনের কথা বলেছেন ৮০% শিক্ষার্থী।
* ৬৮.

৫% শিক্ষার্থী মনে করেন, একটি অভিযোগকেন্দ্র থাকা উচিত, যেখানে পরিচয় গোপন রেখে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাবে।

জরিপে উঠে এসেছে, পুলিশ সাধারণত শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতা অথবা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে চায় না। পুলিশ কেমন আচরণ করবে, তা নির্ভর করে সেবাপ্রার্থীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদার ওপর।

জরিপে আরও দেখা গেছে, বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য ক্ষমতাসীন দলের আদেশ ও ইচ্ছা বাস্তবায়নে আগ্রহী। ক্ষমতাসীন দলের একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে পুলিশ। সে জন্যই পুলিশের জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায় না।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, একটি অভিযোগকেন্দ্র থাকা উচিত, যেখানে পরিচয় গোপন রেখে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাবে। ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, পুলিশের জনবল বাড়ানো উচিত।

শিক্ষার্থীরা মনে করেন, পুলিশকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহি করতে গণশুনানির আয়োজন করা এবং একটি স্বাধীন নজরদারি সেল গঠন করা যেতে পারে, যেখানে নাগরিকেরা অভিযোগ করতে পারবেন। একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। যে কমিশন পুলিশের নিয়োগ, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। রাজনীতিমুক্ত স্বাধীন পুলিশ কমিশনের কথা বলেছেন ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী।

জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক তৈয়েবুর রহমান। তিনি বলেন, ১৯৯০ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত মোটামুটি একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ পাওয়া গিয়েছিল। তখন পুলিশের এক ধরনের ভূমিকা ছিল। তারপর (২০০৯ সালের পর) পুলিশের ভূমিকা ছিল আলাদা। তিনি মনে করেন, এখন পুলিশকে ভেঙেচুরে সাধারণ মানুষের উপযোগী করতে হবে।

৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে ঘুষ দিয়ে সেবা নিতে হচ্ছে, যা ভালো কিছু নয় উল্লেখ করে সেমিনারে যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়ান-হেনরিক মায়ার-শ্যালিং বলেন, মাত্র ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী বলেছেন, তাঁরা সহজে সেবা পেয়েছেন। ফলে পুলিশকে আরও অনেক দূর যেতে হবে।

সেমিনারে ইউএনডিপি বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ সুশাসন বিশেষজ্ঞ শীলা তাসনিম হক বলেন, অস্ত্রের ব্যবহারসহ পুলিশের আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ বি এম ওমর ফারুক।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

লামিনে ‘মেসি’ ইয়ামাল

১৭ বছর বয়সী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো: ১৯ ম্যাচ, ৫ গোল, ৪ গোলে সহায়তা।

১৭ বছর বয়সী লিওনেল মেসি: ৯ ম্যাচ, ১ গোল, গোলে সহায়তা নেই।

১৭ বছর বয়সী লামিনে ইয়ামাল: ১০০ ম্যাচ, ২২ গোল, ৩৩ গোলে সহায়তা।

মেসি–রোনালদোর সঙ্গে তুলনা নয়, লামিনে ইয়ামালের শুরুটা বোঝাতে এই পরিসংখ্যান হাজির করেছে টিএনটি স্পোর্টস। ধূমকেতুর মতো শুরু হলেও ধূমকেতুর মতোই মিলিয়ে যাওয়ার পাত্র তিনি নন।

বার্সেলোনার এস্তাদি অলিম্পিক লুইস কোম্পানিসে  গত রাতের ম্যাচটি স্মরণ করতে পারেন। ৬ গোলের থ্রিলার, যেখানে বার্সেলোনা–ইন্টার মিলান সেমিফাইনাল প্রথম লেগের ‘ক্লাসিক’ লড়াই ৩–৩ গোলে অমীমাংসীত। দুই দলের হয়েই ‘সুপার হিরো’ ছিলেন বেশ কজন। ইন্টারের যেমন ডেনজেল ডামফ্রিস ও মার্কাস থুরাম, বার্সার তেমনি রাফিনিয়া, ফেরান তোরেসরা। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে ঠিকই রবির কিরণের মতো আলো দিয়েছেন এক কিশোর—লামিনে ইয়ামাল নাসরাউয়ি এবানা। সংক্ষেপে লামিনে ইয়ামাল।

আরও পড়ুন৬ গোলের থ্রিলারে বার্সেলোনা–ইন্টার সেয়ানে সেয়ানে টক্কর৮ ঘণ্টা আগে

২৪ মিনিটে ইয়ামালের করা গোলটির প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। যেভাবে খেলেছেন তাতে গোলটি না করলেও লোকে কাল রাতে তাঁর পারফরম্যান্স মনে রাখতেন। পরিসংখ্যান বলছে ১০২টি টাচ, একটি গোল, ২টি গোল হওয়ার মতো পাস, ৬টি শট (পোস্টে মেরেছেন দুবার) এবং ১০টির মধ্যে ৬টি সফল ড্রিবলিং।

কিন্তু পরিসংখ্যানে এ তথ্য নেই—মাঠে ডান প্রান্তকে ইয়ামাল ফাইনালে ওঠার হাইওয়ে বানিয়ে যতবার কাট–ইন করে ইন্টারের বক্সে ঢুকেছেন, সেটা আসলে ইতালিয়ান ক্লাবটির রক্ষণের জন্য দুঃস্বপ্নের। প্রতিবারই মৌমাছির মতো ছেঁকে ধরা হয়েছে ইয়ামালকে। কিন্তু আটকানো কি সম্ভব হয়েছে? রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওগুলো ভাসছে। সেসব আসলে ইয়ামালের পায়ের কারুকাজে ইন্টারের রক্ষণকে স্রেফ খোলামকুচির মতো উড়িয়ে দেওয়ার ভিডিও।

ইয়ামাল কত ভয়ংকর সেটা এই এক ছবিতেই পরিস্কার। সবাই ছেঁকে ধরেও তাঁকে আটকাতে পারেননি

সম্পর্কিত নিবন্ধ