রাজশাহীর পবা উপজেলার বামনশিখর গ্রামের যে বাড়ি থেকে চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানে এখনো মানুষের ভিড়। দূর–দূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন, নানা কথা বলছেন। প্রতিবেশী ও কাছের মানুষেরা বলছেন, না খেয়ে থাকলেও মিনারুল কারও কাছে হাত পাততেন না। তাঁর স্ত্রীও চাইতেন না। দুই সন্তানও সেভাবেই বেড়ে উঠছিল। মিনারুল তাঁর বাবা-মা-ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে নিজের পরিবারের কাউকে মিশতে দিতেন না।

আজ শনিবার সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টা ওই এলাকায় অবস্থান করে এসব তথ্য জানা গেছে। মিনারুলের প্রতিবেশী মোক্তার হোসেন বলেন, ‘মিনারুল অভাব-অনটন, ধারদেনায় জর্জরিত ছিল। ঠিকমতো পেটে ভাত জুটত না। এ কারণে নিজের পথ নিজে বাইছা নিছে। এই কথাগুলো কাউকেই বলেনি। নিজের বাড়ির মা-বাপ-ভাই-কাউকেই বলেনি কুনুদিন। প্রতিবেশীদেরও বলত না। বউও কাউকে বলত না। ছেলেমেয়েরাও ওর মতোই ছিল। তারাও বলত না। হয়তো কাক বলতে কাকে বলবে, সে বুঝেনি। সে ছিল চাপা স্বভাবের। কুনুদিন প্রকাশ করেনি। না খেয়ে দিনের পর দিন রাস্তায় ঘুরেছে।’

মিনারুলের চাচা আবু তালেব বলেন, ‘ঋণের খবর বাবা বুলতি পারব না। অভাব ছিল। কিন্তু বুঝতে পারিনি। কাউকে বুলত না যে বাবা। ও যে এই ঘটনা ঘটাবে, এটা আমরা জানতাম না। এক আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।’

মিনারুলের প্রতিবেশী আলাল উদ্দিন বলেন, ‘তিন দিন আগে মিনারুল আমার কাছে এসে বুলল, “কাকা, টেকা ধার কোথাও পাওয়া যাবে কি না।” আমি বুললাম যে, “লাভ সুদে কেউ টেকা দিবে না, জমি বা পুকুর বন্দক লিয়ে দিবে।” পরে আর কথা হয়নি। শুনেছি বাবার কাছেও নাকি টেকা চেয়েছিল।’

চার মরদেহ উদ্ধারের পরদিন ওই বাড়িতে আজও মানুষের ভিড়। আজ সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের বামনশিখর গ্রামে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

একনেকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপিপি অনুমোদনের দাবিতে প্রতীকী গণ–অনশন

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের দাবিতে প্রতীকী গণ–অনশন করেছেন শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা–কর্মচারীরা।

আজ শনিবার শাহজাদপুরে অস্থায়ী একাডেমিক ভবন–৩–এর সামনে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত শিক্ষক–কর্মচারীরা ও বেলা ১১টা থেকে শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও শিক্ষার্থীদের অনশন চলছিল।

স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ কর্মসূচিতে সংহতি জানায়। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব সাইফ মুস্তাফিজ, বহল বাড়ি ও বুড়ি পোতাজিয়া সচেতন নাগরিক ফোরাম, শাহজাদপুর সচেতন নাগরিক ফোরাম, মালিথা স্মৃতি পরিষদ ও শাহজাদপুর স্বার্থ রক্ষা কমিটির নেতারা জানান, ডিপিপি বারবার বিলম্বিত হয়েছে, এবার আর নয়। আগামীকাল রোববারের একনেক সভায় এটি অনুমোদন না হলে দায় সরকারকেই নিতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) নজরুল ইসলাম বলেন, ডিপিপি দ্রুত অনুমোদনের দাবিতে শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা–কর্মচারীরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছেন। একনেকে ডিপিপি অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কর্মসূচি চলমান থাকবে। আগামীকাল একনেক সভা আছে। এদিন তাঁরা ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন। যদি ডিপিপি অনুমোদন না হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁরা লাগাতার আন্দোলনে যাবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকায় প্রকল্পটি প্রস্তাবিত হয়। এরপর সাতবার সংশোধনের পর সর্বশেষ ৫১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকায় নেমে আসে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৫ সালের মার্চ থেকে ২০২৯ সালের ফেব্রুয়ারি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির বাংলা, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, সংগীত ও ব্যবস্থাপনা নামে পাঁচটি বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ২০০। সেই সঙ্গে ৩৪ শিক্ষক, ৫৪ কর্মকর্তা ও ১০৭ কর্মচারী রয়েছেন। পৌর শহরের শাহজাদপুর মহিলা কলেজ ও ছাইফ উদ্দিন এহিয়া ডিগ্রি কলেজসহ ভাড়া করা দুটি বাড়িতে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।

গত ২৬ জুলাই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচি বর্জনের মধ্য দিয়ে ডিপিপি অনুমোদনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে কয়েক দিন ধরে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বগুড়া–নগরবাড়ী মহাসড়ক অবরোধ করে পথনাটক, শিকল ভাঙার গান ও প্রতীকী ক্লাসের আয়োজন করা হয়। এরপরও সাড়া না পেয়ে গত বৃহস্পতিবার হাটিকুমরুল গোলচত্বরে মানববন্ধন ও রোববার মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। বুধবার রেলপথ অবরোধের পর বৃহস্পতিবার যমুনা সেতুর পশ্চিমে সেতুর মুখে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ