কম মূল্যে জকিগঞ্জের ২৭ হাটবাজার ইজারা দেওয়ার অভিযোগ
Published: 18th, February 2025 GMT
সিলেটে বিভাগের বৃহৎ গ্রামীণ বাজারের মধ্যে জকিগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ ও শাহগলী বাজার। গত বছর শাহগলী বাজার ৭০ লাখ এবং কালিগঞ্জ বাজার ৫৫ লাখ টাকায় ইজারা দিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন। তবে এ বছর সেই বাজার দুটিই যথাক্রমে ১৪ ও ১০ লাখ টাকা কম মূল্যে ইজারা দেওয়া হয়েছে। একইভাবে কম ইজারা মূল্য নেওয়া হয়েছে উপজেলার আরও ২৫টি বাজারের ক্ষেত্রে।
অভিযোগ উঠেছে, প্রচার ছাড়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারগুলো কম মূল্যে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে গতকাল সোমবার সিলেট জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন ইজারা নিতে আগ্রহী ১৫ জন। স্থানীয়রা জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান পলাতক থাকার সুযোগে প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ করে’ স্থানীয় রাজনৈতিক একাধিক নেতা এ কাজ করেছেন। এতে সরকার বড় অংকের রাজস্ব হারিয়েছে।
ডিডি বরাবর আবেদনে ১৫ জন উল্লেখ করেছেন, প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই গত বুধবার হাটবাজারগুলো ইজারা দেন জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ওই দিন লোকমুখে জানতে পেরে তারা ইজারায় অংশ নিতে চাইলেও বাধা দেওয়া হয়। ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে নির্ধারিত লোকদের ডেকে নিয়ে ইজারা দিয়েছেন ইউএনও। অথচ হাটবাজার ইজারা সংক্রান্ত নীতিমালায় বলা হয়েছে, সরকারি অফিস-আদালত ও জনসমাগমস্থলে নোটিশ টাঙয়ে বা নির্দিষ্ট বাজারে মাইকিং করে ইজারার বিষয়টি জানাতে হবে।
তারা আরও উল্লেখ করেন, পূর্ব সিলেটের বড় হাট জাকিগঞ্জের কালিগঞ্জ ও শাহগলী বাজার ইজারা নিতে প্রতিবছর অনেক সিডিউল বিক্রি হয়। এবার ঘটেছে উল্টো। গত বছর শাহগলী বাজার ৭০ লাখ টাকায় ইজারা হলেও এবার ৫৬ লাখ ৬০ হাজার টাকায় দেওয়া হয়েছে। এতে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে প্রায় ১৪ লাখ টাকা। অপরদিকে কালিগঞ্জ বাজার ৪৫ লাখ ৯০ হাজার টাকায় ইজারা দিলেও গত বছর তা ছিল ৫৫ লাখ টাকা। সরকারি রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে পুনরায় ইজারার দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস শাকুর বলেন, সমঝোতা করে দরপত্র দেওয়া হয়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিলেও তিন বছর ধরে উপজেলায় পত্রিকা আসে না। ভালো করে প্রচার করা উচিত ছিল।
জকিগঞ্জ উপজেলার ইউএনও মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ইজারা দেওয়া হয়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে। সরকারি মূল্যের নিচে যাওয়ার সুযোগ নেই। গত বছরের চেয়ে এবার কম মূল্যে ইজারা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অতীতের বিষয়টি জানা নেই। তিনি নতুন যোগ দিয়েছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কম ম ল য গত বছর য় ইজ র সরক র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মতলব দক্ষিণে এক বিদ্যালয়ের ২০ এসএসসি পরীক্ষার্থীর রোল নম্বরে অন্য শিক্ষার্থীদের নাম
চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় একটি বিদ্যালয়ের ২০ পরীক্ষার্থীর রোল নম্বরে অন্য শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া গেছে। এ কারণে তাদের ফলাফল আসেনি। নিবন্ধন প্রক্রিয়ার ত্রুটির কারণে এমনটি হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।
ওই বিদ্যালয়ের নাম আলহাজ তোফাজ্জল হোসেন ঢালী উচ্চবিদ্যালয়। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে ২০ জুলাই লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী। এ ছাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে গতকাল রোববার মৌখিক অভিযোগ করে বিদ্যালয়টির আরও ১৯ পরীক্ষার্থী। ফলাফল না পেয়ে এসব পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীরা হলো সামিয়া, নাদিয়া আক্তার, আঁখি, মীম, মাহিয়া আক্তার মাহী, রিফাতুল ইসলাম, আরাফাত রহমান, তানজিনা আক্তার, অন্তরা, ফারিয়া ইসলাম, সাবিকুন্নাহার জুমা, জাকিয়া আক্তার মুন্নী, ইয়াসমিন আক্তার, নুসরাত, আসমা আক্তার, দ্বীপ চক্রবর্তী, মাহমুদা, শিরিনা আক্তার, আহাদ ঢালী ও খাদিজা আক্তার ফাতেমা।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আলহাজ তোফাজ্জল হোসেন ঢালী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সব বিভাগ হতে মোট ৮৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ৬৪ জনের ফলাফল পাওয়া যায়। বাকি ২০ জনের ফলাফল পাওয়া যায়নি। ওই ২০ জনের রোল নম্বরের বিপরীতে অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নাম-তথ্য পাওয়া যায়, যারা এবার এসএসসি পরীক্ষাতেই বসেনি। ছাত্রীর রোল নম্বরের বিপরীতে ফলাফল শিটে ছাত্রের নাম এবং ছাত্রের ফলাফল শিটে ছাত্রীর নাম দেখা যায়।
সাবিকুন্নাহার অভিযোগে জানায়, ১০ জুলাই প্রকাশিত ফলাফল শিটে তার রোল নম্বর সার্চ দিলে ফারদিন হোসেন নামের আরেক ছাত্রের নাম আসে, অথচ সে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেয়নি। ছাত্রটি একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ছে। পরীক্ষা দিয়ে ফলাফল না পেয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ জুমা।
জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মাজহারুল হক বলেন, হাফিজুর রহমান নামের এক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অনলাইনে নিবন্ধনের কাজ করেন। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র ডাউনলোড করে তাদের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্বও তাঁকে দেওয়া হয়। তাঁর দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ড ও ভুলের কারণে ওই পরীক্ষার্থীরা ফলাফল পাচ্ছে না। নবম শ্রেণিতে তাদের নিবন্ধনই ঠিকমতো হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে ওই পরীক্ষার্থীদের নিবন্ধন কার্ড সংশোধন করে ফলাফল সংশোধনের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
এদিকে বিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষকের দাবি, এসএসসির ফলাফল প্রকাশের পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক হাফিজুর রহমান বিদ্যালয়ে আসছেন না। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বন্ধ। এই প্রতিবেদকও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পেয়েছেন।
অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে ইউএনও আমজাদ হোসেন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তদন্ত প্রতিবেদন কয়েক দিনের মধ্যে জমা দেওয়া হবে জানিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গাউছুল আজম পাটওয়ারী বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ওই পরীক্ষার্থীদের নিবন্ধনই করা হয়নি। যেসব নিবন্ধন কার্ড ও প্রবেশপত্র পরীক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ভুয়া। ঘটনাটির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে আগামীকাল মঙ্গলবার কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের একটি প্রতিনিধিদল ওই বিদ্যালয়ে যাবে।