এখনকার শিশুরা বই থেকে অনেকটাই দূরে সরে যাচ্ছে। তারা ঝুঁকে যাচ্ছে মোবাইল, ট্যাব কিংবা টেলিভিশনের প্রতি। এই আসক্তি তাদের বই পড়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত করছে। অথচ জ্ঞান অর্জন, কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি এবং মানসিক বিকাশের জন্য বই পড়ার বিকল্প নেই। তাই ছোটবেলা থেকেই শিশুর মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
পরিবার থেকেই শুরু হোক বইয়ের প্রতি ভালোবাসা
শিশুর বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যদি মা-বাবা নিজেরাই বই পড়েন, শিশুও স্বাভাবিকভাবেই বইয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। শিশুকে গল্প পড়ে শোনানো, বই নিয়ে আলোচনা করা বা রাতে ঘুমানোর আগে গল্প বলা যেতে পারে। এসব ছোট ছোট অভ্যাস তার মনে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মাতে সাহায্য করবে।
বই নির্বাচন হোক শিশুর বয়স ও রুচির ভিত্তিতে
প্রত্যেক শিশুর রুচি ও আগ্রহ ভিন্ন। তাই বই বাছাইয়ের সময় তার বয়স ও পছন্দের বিষয়গুলো মাথায় রাখা জরুরি। ছোটদের জন্য রঙিন ছবি ও সহজ ভাষার বই উপযুক্ত। বড় শিশুদের রূপকথা, কল্পকাহিনি, বিজ্ঞানভিত্তিক বই কিংবা ইতিহাসের গল্প তাদের মধ্যে কৌতূহল বাড়াতে পারে। বই নির্বাচন করার সময় শিশুকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিলে সে বইয়ের প্রতি আরও আগ্রহী হবে।
বইমেলা ও লাইব্রেরির প্রতি আগ্রহী করে তোলা
বইমেলা, লাইব্রেরি বা বইয়ের দোকানে নিয়ে গিয়ে শিশুকে নতুন বইয়ের জগৎ সম্পর্কে জানানো যেতে পারে। বইমেলায় ঘুরতে গেলে শিশুরা নানা ধরনের বই ও পছন্দের লেখকদের সঙ্গে পরিচিত হতে এবং বই কেনার আনন্দ উপভোগ করতে পারে। পাশাপাশি যদি পরিবারে একটি ছোট্ট বুকশেলফ রাখা হয়, তাহলে শিশুরা বই পড়ার প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হবে।
বইকে বিনোদনের অংশ করা
বর্তমান যুগে প্রযুক্তির বিকল্প নেই। এটি যেন বইয়ের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে না ফেলে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। শিশুকে বইকে বিনোদনের অংশ করতে গল্প বলা প্রতিযোগিতা, বই পড়ে তার গল্প বলার অভ্যাস তৈরি করা বা বইয়ের চরিত্র নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
কীভাবে বই পড়াকে উপভোগ্য করা যায়?
১.
২. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুললে শিশু ধীরে ধীরে এটি উপভোগ করতে শুরু করবে।
৩. শিশু যদি বন্ধুর সঙ্গে বই আদান-প্রদান করে, তবে বই পড়ার আগ্রহ বাড়বে।
৪. শিশু যদি পড়ে একটি গল্প বলতে পারে বা গল্পের নৈতিক দিকগুলো বুঝিয়ে বলতে পারে, তবে তাকে পুরস্কৃত করা যেতে পারে। এতে সে আরও বই পড়তে উৎসাহিত হবে। v
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।