জুলাই অভ্যুত্থানে নজরুলের কবিতা প্রেরণা জাগিয়েছে: ফারুকী
Published: 19th, February 2025 GMT
জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে নজরুলের কবিতা সবার মধ্যে অনুপ্রেরণা জাগিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
তিনি বলেন, “কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের হৃদয়ের মধ্যে থাকা একজন কবি। জুলাই অভ্যুত্থানে দেখবেন, নজরুলের কবিতা ব্যবহৃত হয়েছে, যা আমাদের অনুপ্রেরণা জাগিয়েছে। যদিও কবি কাজী নজরুল সাংবিধানিক স্বীকৃতি না থাকলেও আমাদের মনে তিনি জাতীয় কবি হিসেবে স্থান দখল করেছিলেন। এখন শুধু এক আনুষ্ঠানিকতা তৈরি হলো।”
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বাংলাদেশের জাতীয় কাজী নজরুল ইসলামকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত র্যালির শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি বলেন, “নজরুল ইনস্টিটিউট একটি নজরুল র্যালির আয়োজন করায় তাদের ধন্যবাদ জানচ্ছি। একইসঙ্গে নজরুল ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে নজরুলের গান নিয়ে রক অ্যালবাম তৈরিসহ বেশকিছু কাজ করা হচ্ছে। আমি সবশেষ একটি কথা নজরুল ইনস্টিটিউটকে বলতে চাই, আপনারা নজরুলের গান ও কাজকে আরও ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি করবেন।”
এ সময় অন্যদের মাঝে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.
পরে শহিদ মিনার থেকে শুরু হওয়া র্যালিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল টাওয়ার-টিএসসি সড়ক হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবির সমাধিসৌধতে এসে শেষ হয়। সেখানে হামদ-নাত ও দোয়ার আয়োজন করা হয়।
গত বছর ২৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ১৯৭২ সালের ৪ মে স্বাধীন বাংলাদেশে আসার তারিখ থেকে তাকে বাংলাদেশের ‘জাতীয় কবি’ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আতাউর রহমান এ প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন। গত ২ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইনস ট ট ল ইসল ম নজর ল র
এছাড়াও পড়ুন:
লবণ শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়
“প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করি। লবণ তুলি, বস্তা ভরি। কিন্তু যে মজুরি পাই, তা দিয়ে এক বেলার চাল-ডালও কেনা যায় না। লবণ চাষের কাজ করলেও আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।”
এ কথা কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার তাবলেরচর এলাকার লবণ শ্রমিক জাহেদ আলমের। হাজারো লবণ শ্রমিক দিনভর কড়া রোদে ঘাম ঝরালেও মিলছে না ন্যায্য মজুরি। নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন জাহেদ আলমের মতো শত শত লবণ শ্রমিক।
উত্তর ধুরুংয়ের লবণ চাষি রশীদ আহমদ বলেন, “এবার সাড়ে ৫ কানি জমিতে লবণ চাষ করেছি। এই বছর আবহাওয়া ভালো ছিল, উৎপাদনও হয়েছে। কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় আমরা লোকসানে যাচ্ছি। প্রতিমণ লবণের উৎপাদন খরচ পড়ে ৩৫০ টাকার মতো, অথচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকায়। এই লোকসান শ্রমিকদের মজুরিতেও প্রভাব পড়েছে।”
তিনি জানান, মজুরি দিতে না পারায় একদিকে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে চাষিরাও হতাশ হয়ে পড়ছেন।
আরমান হোসেন নামে আরেক শ্রমিক বলেন, “লবণের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। লবণের দাম কম পেলেই চাষিরা আমাদের পারিশ্রমিকের ওপর লোকসান চাপিয়ে দেয়। এতে আমরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হই। এই অনিয়ম দূর হোক।”
চাষিরা বলছেন, একদিকে জমির ইজারা, পলিথিন, লবণ পরিবহন, শ্রমিক মজুরি-সব খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রতি মণ লবণে তারা ১৭০ টাকার মতো লোকসান গুণছেন। এই লোকসানের কারণে লবণ শ্রমিকরাও দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।
লেমশীখালীর চাষি বেলাল উদ্দিন আকাশ বলেন, ‘‘গত বছর এই সময় প্রতি মণ লবণ বিক্রি করেছি ৪৫০ টাকায়। এখন পাই ১৮৫ টাকা। এতে শ্রমিকের মজুরি দিতেও আমরা হিমশিম খাচ্ছি।”
চাষি আবুল বশর ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট করেই দাম নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাতে লবণ উৎপাদন কমে যায়। পরে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করার সুযোগ তৈরি হয়। অথচ এতে মাঠের হাজারো শ্রমিকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে।”
মহেশখালী লবণ চাষি ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘‘মজুরি না পেয়ে অনেক শ্রমিক লবণের মাঠ ছাড়ছেন। এইভাবে চলতে থাকলে শ্রমিক সংকট হবে।”
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, “চাষিদের ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে উৎপাদনে অনীহা দেখা দিচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকদেরও চাহিদা কমে যাচ্ছে। বাজারে দাম কমে যাওয়ার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় প্রায় ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব অঞ্চলে উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ। মৌসুম শেষে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন, যা দেশের বার্ষিক চাহিদার সমান।