Samakal:
2025-06-16@08:02:10 GMT

কৃষিজমিতে বিসিকের শিল্পবর্জ্য

Published: 20th, February 2025 GMT

কৃষিজমিতে বিসিকের শিল্পবর্জ্য

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিসিক শিল্পনগরীর অপরিশোধিত তরল বর্জ্য নালা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে কৃষিজমিতে। এতে শত শত বিঘা জমিতে ফসল আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। ছয় বছর ধরে অনাবাদি পড়ে আছে জমিগুলো। বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। 
বিসিক শিল্পনগরীর এজিএম রুকন উদ্দিন ভূইয়ার দাবি, আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কারণে এ অবস্থা। প্রকল্পের কাজের বালুতে কারখানার নালা ভরাট হয়ে পানি উপচে পড়ে কৃষিজমিতে পড়ছে। এ বিষয়ে ওই কাজের পিডির সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি সড়কের পশ্চিম পাশ দিয়ে নালা তৈরি করে দেবেন বলেছিলেন। কাজটি হলেই এ সমস্যা আর থাকবে না। এ সময় কারখানায় ইটিপি নেই কেন জানতে চাইলে উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান। 
 প্রকল্প ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদের ভাষ্য, সড়কের কাজ শুরুর আগে থেকেই এ সমস্যা। মূলত শিল্পবর্জ্যের কারণেই নালা ভরাট হয়ে গেছে। তারপরও এলাকার কৃষকদের সুবিধার্থে কাজ শেষে নালা করে দেব। 
জানা গেছে, সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের নন্দনপুরে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে বিসিক শিল্পনগরীর অবস্থান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানে বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) নেই। ফলে কারখানা থেকে নির্গত ক্রিমিয়াম, লেড, নিকেলসহ বিভিন্ন রাসায়নিকের তরল উপাদান মহাসড়কের পাশের নালা দিয়ে তিতাস নদীর পানিতে পড়ত। সম্প্রতি আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এর পর থেকে প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত বালুতে নালা ভরাট হয়ে বিপত্তির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তরল বর্জ্য নিষ্কাশিত না হতে পেরে বিসিকের উত্তর-পশ্চিমাংশের জমিতে পড়ছে। এতে প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে ভুক্তভোগী কৃষকদের দাবি। 
বিসিক শিল্পনগরী ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের নালা ভরাট হয়ে উপচে বর্জ্য পার্শ্ববর্তী জমিতে পড়েছে। রাস্তাগুলোও 
তরল বর্জ্যে সয়লাব হয়ে গেছে। এতে বিসিকের ভেতরে যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। শিল্পনগরীর মধ্যবর্তী পুকুরের পানিও কালো রং ধারণ করেছে। 
বেতবাড়িয়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুল হামিদ বলেন, ‘চার লেন সড়কের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই বালু পড়ে নালা বন্ধ হয়ে গেছে। সড়ক ঘেঁষে আমার ৩ বিঘা জমি রয়েছে। বিসিকের এসিডযুক্ত পানির কারণে সেখানে ফসল হয় না। বিষয়টি প্রশাসনকে জানালেও প্রতিকার মেলেনি।’ 
একই গ্রামের তাজুল ইসলাম জানান, শিল্প বর্জ্যের কারণে ধানের পাতা লালচে রং হয়ে যায়। এক গোছাতে চার-পাঁচটির বেশি ধানের শীষ বের হয় না। তাও চিটা হয়ে যায়। এ কারণে ধান আবাদ বন্ধ। এখন চাল কিনে খেতে হয়। অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আমরা ক্ষতিপূরণ চাই। 
বুধল ইউনিয়নের মেম্বার মোহাম্মদ আলী বলেন, গ্রামবাসীকে নিয়ে চেয়ারম্যান বিসিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, প্লান্ট বসাবে।  আজ পর্যন্ত সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি। তাদের কারণে এলাকার সাধারণ কৃষকদের কষ্ট হচ্ছে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, ওই এলাকার অনেক জমি অনাবাদি পড়ে আছে। অভিযোগ পেয়ে বিসিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তারা কথা রাখেননি। 
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নয়ন মিয়া বলেন, অভিযোগ পেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিপূরণ আদায়, সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণসহ মামলা করা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব স ক শ ল পনগর প রকল প র ক শ ল পনগর র বর জ য সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

আমরা একটি ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পে জড়িয়ে গেছি

সমকাল : চামড়া খাতে দীর্ঘদিনের সমস্যা। এটি কেন? 
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন : ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) আইনজীবী আদালতে জানান, সাভারে চামড়া শিল্পনগরী সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত হওয়ার পরও ট্যানারি মালিকরা হাজারীবাগ থেকে যেতে চাচ্ছেন না। এমন মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে মহামান্য হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত দেন যে ট্যানারি সাভারে করতে হবে। একই সঙ্গে হাজারীবাগের ট্যানারিতে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার আদেশ দেন। এতে ট্যানারি মালিকরা সাভারে যেতে বাধ্য হন। সেখানে গিয়ে দেখি, কোনো অবকাঠামো প্রস্তুত হয়নি। সিইটিপি হয়নি, রাস্তাঘাট ছিল না। তখন থেকে চামড়া খাতে ব্যাপক সমস্যা শুরু হয়। উদ্যোক্তারা বাধ্য হয়ে ধারদেনা করে সাভারে কারখানা করেছেন। এখনও কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধন প্লান্ট-সিইটিপির সমস্যা রয়েই গেছে। এদিকে কয়েক বছর আগে থেকেই চামড়া প্রস্তুতের ক্ষেত্রে মান নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিকভাবে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদপ্রাপ্ত না হলে ভালো কোনো গ্রাহক আমাদের চামড়া কিনছে না। ইতালিসহ বেশ কিছু দেশ বাংলাদেশ থেকে চামড়া কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের জুতা কোম্পানিগুলোকেও ক্রেতারা বলে দিয়েছে, তারা যদি এলডব্লিউজি সনদ ছাড়া প্রতিষ্ঠান থেকে চামড়া কেনে, তাহলে তাদের জুতা কিনবে না। ইতোমধ্যে ট্যানারি মালিকরা অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছেন। অথচ সরকার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিইটিপি প্রস্তুত করছে না। সার্বিকভাবে আগে যে চামড়া ট্যানারি মালিকরা দেড় হাজার টাকায় কিনতেন, এখন তা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় কিনলেও প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে লোকসান  করছেন। এভাবে ঋণের দায়ে জর্জরিত হয়ে ৩০ থেকে ৪০ জন ট্যানারি মালিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এখন আমরা একটি ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পে জড়িয়ে গেছি। 
সমকাল :  চামড়া শিল্পনগরী স্থাপনের ফলে এ খাতের উন্নতি হওয়ার কথা। হচ্ছে না কেন?
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন : সাভারে শিল্পনগরীর সিইটিপির মানোন্নয়ন, কঠিন বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত এবং ট্যানারির অভ্যন্তরীণ পরিবেশ উন্নত করা দরকার। অসম্পূর্ণ শিল্পনগরীতে স্থানান্তরের কারণে ট্যানারির আগের ভাবমূর্তি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। তরল বর্জ্য শোধনের জন্য নির্মিত সিইটিপি ত্রুটিপূর্ণ ও প্রয়োজনের তুলনায় কম সক্ষমতার। কঠিন বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ উপেক্ষিত। ফলে কমপ্লায়েন্স হতে পারছে না ট্যানারি। 
সমকাল : এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী?
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন : এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ সরকারের ভুলের কারণে চামড়াশিল্প বর্তমান অবস্থায় এসেছে। এ শিল্পকে নীতিসহায়তা দিতে হবে। সম্প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয় স্বীকার করেছে, সাভার চামড়া শিল্পনগরী উন্নয়ন ছিল ত্রুটিপূর্ণ। যারা এ অব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন শিল্প উপদেষ্টা। সবার আগে সাভার ট্যানারিশিল্পের অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। সিইটিপি পুরোপুরি প্রস্তুত করতে হবে। শুধু এসব করলেই হবে না; কারণ এসব ভুলের কারণে উদ্যোক্তারা গত সাত বছর লোকসান করেছেন, উদ্যোক্তাদের ক্ষতি পূষিয়ে দিতে হবে। 
সমকাল : সরকারের কী কী নীতি সহায়তা চান?
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন : নানা কারণে ট্যানারিগুলো অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। সংকট সমাধানে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে হবে। উদ্যোক্তাদের  স্বল্পমেয়াদি ঋণকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণে রূপান্তর করতে হবে। ঋণখেলাপি এবং ঋণখেলাপির দ্বারপ্রান্তে উপনীত উদ্যোক্তাদের ঋণ পুনঃতপশিল করতে হবে। হাজারীবাগের জমিগুলোর সদ্ব্যব্যহার ত্বরান্বিত করে উদ্যোক্তাদের আর্থিক সংকট মেটানো দরকার। 
 সমকাল : কোরবানির চামড়ার দাম না পাওয়ার কারণ হিসেবে ট্যানারি মালিকদের এক ধরনের সিন্ডিকেটের কথা শোনা যায়। এ ব্যাপারে কী বলবেন?
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন : কোনো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা অন্য কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলেই বলে থাকেন, সিন্ডিকেট আমাকে শেষ করে দিল। প্রকৃত অর্থে ১৫০ ট্যানারি মালিক ৬৮ হাজার গ্রাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। তিন থেকে চার হাত বদল হয়ে চামড়া ট্যানারিতে আসে। ট্যানারি মালিক চামড়ার মান যাচাই  করার পর  দাম নির্ধারণ করেন।  চামড়া ভালো থাকলে সর্বোচ্চ দাম ধরা হয়। পচন ধরলে স্বাভাবিকভাবেই দাম কম হবে। তাই ঠিকমতো লবণ দিয়ে চামড়া সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা জরুরি। যে ব্যক্তি কোরবানি দেবেন, প্রাথমিকভাবে তাকেই লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করতে হবে। এ জন্য বাড়তি খুব বেশি খরচ হবে না।
সমকাল : সিইটিপি সংস্কার হলেই কি সব ট্যানারি এলডব্লিউজি সনদ পাবে?
 মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন : সিইটিপি সংস্কার হলেই ৩০ থেকে ৪০টি ট্যানারি এলডব্লিউজি সনদ পাওয়ার যোগ্য হবে। একই সঙ্গে ছোট ট্যানারিগুলোর জন্য আলাদা আলাদা ক্লাস্টার করে কমপ্লায়েন্স উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।  
সমকাল : চামড়া ও চামড়াজাতপণ্যের রপ্তানিতে আমরা পিছিয়ে কেন?
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন : আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে পণ্যের গুণগত মান একটি বড় নিয়ামক। ট্যানারিগুলোর এলডব্লিউজি সনদ পেতে উৎপাদন প্রক্রিয়া, পরিবেশ সুরক্ষা, কাঁচামালের উৎস, সামাজিক দায়বদ্ধতা, শ্রমিক অধিকার ও পরিচ্ছন্ন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করাসহ বহুবিধ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। মানদণ্ড অর্জন করতে একদিকে যেমন বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন, অন্যদিকে দরকার এসব বিষয়ে উত্তম চর্চা।
সমকাল : রপ্তানি আয় বাড়াতে আপনার পরামর্শ কী?
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন : বিশ্ববাজারে দর পতনের কারণে আগের চেয়ে বেশি চামড়া রপ্তানি করলেও আয় কম। ফলে রপ্তানি আয় কয়েক বছর ধরে প্রায় একই রকম থাকছে। এ থেকে উত্তরণের উপায় হচ্ছে, কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা। কমপ্লায়েন্ট না হওয়ার কারণে ইউরোপের বাজার আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। একই কারণে আমাদের চামড়াজাতপণ্য কিনতে বিখ্যাত ক্রেতারা আগ্রহ দেখায় না কিংবা অত্যন্ত কম দাম অফার করে। তাই ট্যানারিগুলোকে কমপ্লায়েন্ট করা সবচেয়ে জরুরি।

 সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেসবাহুল হক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আমরা একটি ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পে জড়িয়ে গেছি