রাখাল রাহাকে এনসিটিবির কমিটি থেকে বহিষ্কার ও বিচার দাবি হেফাজতে ইসলামের
Published: 21st, February 2025 GMT
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটির সদস্য রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদুর রহমানের ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্ট নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে হেফাজতে ইসলাম। তাঁকে এনসিটিবির কমিটি থেকে বহিষ্কার করে বিচার করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে হেফাজতের দুই নেতা বলেন, ‘আমরা হতবাক হয়ে গেছি, এনসিটিবির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কমিটিতে দায়িত্বরত একজন সদস্য কীভাবে এমন অসভ্য, কুরুচিপূর্ণ ভাষায় ইসলাম অবমাননা করতে পারে! ইসলামের একটি মর্যাদাপূর্ণ নফল ইবাদত তাহাজ্জুদ এবং আল্লাহ সম্পর্কে তার শব্দচয়ন ও ভাষা অসভ্যতার সব সীমা ছাড়িয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ধর্মপ্রাণ তৌহিদি জনতার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া হয়েছে বলে আমরা মনে করি।’
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার দায়ে রাখাল রাহাকে এনসিটিবির কমিটি থেকে দ্রুত বহিষ্কার করে বিচারের মুখোমুখি করতে সরকারের কাছে দাবি জানান হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ দুই নেতা।
বিবৃতিতে বলা হয়, সংখ্যালঘুর ধর্ম কিংবা সংখ্যাগুরুর ধর্ম হোক, কোনো ধর্মের অবমাননাই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং তা আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কারও ভিন্নমত থাকতেই পারে, গঠনমূলক ভাষায় তা প্রকাশ করতে কোনো বাধা নেই। গঠনমূলক সমালোচনা ও মতবিনিময় বরং একটি সমাজের সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক মনোকাঠামোর উন্নতির জন্য সহায়ক। কিন্তু গালাগাল, কটূক্তি ও অবমাননাকর ভাষা ব্যবহার সভ্যতার মাপকাঠির মধ্যে পড়ে না।
হেফাজতের দুই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘ঘৃণা ছড়ানো বাক্স্বাধীনতা নয়। বাক্স্বাধীনতার সীমা-পরিসীমাগুলোও সবার জানা থাকা জরুরি। কিন্তু এ দেশে মূলত ব্যক্তিগত হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে নাস্তিকতা, মুক্তমনা ও প্রগতিশীলতা চর্চার নামে ইসলাম, রাসুল (সা.
পৃথক বিবৃতিতে রাখাল রাহার ধর্ম অবমাননার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী। তিনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার দায়ে রাখাল রাহাকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এনস ট ব র ইসল ম র র কম ট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শুল্ক হ্রাসে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই, আরো কমাতে আলোচনার পরামর্শ
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাসে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই মন্তব্য করে শুল্ক আরো কমাতে আলোচনার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।
তিনি বলেন,“বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাসে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে স্পষ্ট বলেছে, বেশকিছু দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বা নিরাপত্তা চুক্তি আলোচনা এখনো চলমান রয়েছে, যেগুলো সম্পাদিত হলে এসব দেশের শুল্ক আরো কমতে পারে। তাই বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাস আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।”
শনিবার (২ আগস্ট) রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ সভাকক্ষে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বারে গুলিতে নিহত ৪, সন্দেহভাজন পলাতক
৩০ বছরের হিমায়িত ভ্রুণ থেকে জন্ম নিলো জীবিত শিশু
তিনি বলেন, “প্রথমেই আমি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, তারা একটি ভারসাম্যপূর্ণ শুল্ক কাঠামো ঘোষণা করেছে। যেটি বিগত প্রায় ৪ মাস যাবৎ আমাদের আমাদের উদ্বেগের কারণ ছিল। বাংলাদেশ থেকে অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ পুননির্ধারণ করা হয়েছে। যা আমাদের প্রধান পোশাক রপ্তানিকারী প্রতিযোগীদের তুলনায় সমান বা কাছাকাছি এবং কিছু প্রধান প্রতিযোগী যেমন চীন (৩০ শতাংশ) ও ভারতের (২৫ শতাংশ) তুলনায় কম।”
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সাথে বলতে চাই আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বিশেষ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও তাদের টিম এই কঠিন আলোচনার সময় যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়। তাদের প্রচেষ্টাতেই বাংলাদেশ একটি বিপর্যয় এড়াতে পেরেছে।”
মাহমুদ হাসান খান বলেন, “এই ফলাফল একদিনে আসেনি, যাত্রাটি ছিল অনেক চ্যালেঞ্জের।২ এপ্রিল যখন যুক্তরাষ্ট্র ‘লিবারেশন ডে ট্যারিফ’ নামে নতুন শুল্ক ঘোষণা করল, তখন বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ ধার্য করা হয়। তখন ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ৩২ শতাংশ ও পাকিস্তানের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলো। এটা আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়। কারণ এত বড় শুল্ক ব্যবধানে বাজার ধরে রাখা সম্ভব নয়। আমাদের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ২০ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, আর দেশটিতে আমাদের মোট রপ্তানির ৮৭ শতাংশ হয় তৈরি পোশাক পণ্য।”
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “গোপনীয়তা রক্ষা চুক্তির কারণে বেসরকারি খাত এই আলোচনায় সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল না। তাই রপ্তানিকারক ও ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছিল, ‘কী হতে যাচ্ছে?’ আমরা সত্যিই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। যখন দেখলাম ২ জুলাই ভিয়েতনামের ওপর শুল্ক ৪৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হলো। আর প্রায় তিন মাস নেগোশিয়েশনের পর ৭ জুলাই আমাদের ওপর শুল্ক মাত্র ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হলো, তবে পুনরায় আলোচনার জন্য ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় পাওয়া যায়। এরই মধ্যে পরবর্তী ২ সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনও ১৯ শতাংশ হারে সমঝোতায় পৌঁছায়।”
তিনি বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আলোচনায় সম্পৃক্ত হতে। সব রকম তথ্য-বিশ্লেষণ দিয়ে সরকারকে সহায়তা করতে। আমরা চেষ্টা করেছি যেন বিষয়টিকে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া আমরা বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সবার সাথে যোগাযোগ করেছি। এমনকি আমরা ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গেও বৈঠক করেছি।”
মাহমুদ হাসান খান বলেন, “বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক অবধারিতভাবে আমাদের পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়াবে। যেখানে শিল্পগুলো আগে থেকেই ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে প্রাণান্তকরভাবে যুদ্ধ করছে। এক্ষেত্রে সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো যাতে করে ব্যবসা থেকে ছিটকে না পড়ে, তা সরকারকে নজরদারিতে রাখতে হবে। আমরা একান্তভাবে আশা করি, শিল্প ও দেশের স্বার্থে সরকারের সকল নীতি সহায়তা চলমান থাকবে।”
“এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, বিশেষ করে কাস্টমস সংক্রান্ত নীতিগুলো শিল্পবান্ধব হবে, চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং শিল্প নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ পাবে।”
তিনি বলেন, “মার্কিন রপ্তানির প্রায় ৭৫ শতাংশ হচ্ছে আমাদের তুলাভিত্তিক পোশাক। শুল্ক সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে বলা আছে, যদি নূন্যতম ২০ শতাংশ আমেরিকার কাঁচামাল (যেমন আমেরিকার তুলা) ব্যবহার করা হয়, তাহলে আমেরিকার কাঁচামালের মূল্যের ওপর এই অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ আমেরিকার কাঁচামাল ব্যবহার করলে আমরা বাড়তি কিছু শুল্ক ছাড় পাব।”
ঢাকা/নাজমুল/সাইফ