একজন মুমিন-মুসলিমের সবচেয়ে বড় সম্পদ ‘ইমান’। তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় হলো ‘মুমিন’। কারণ, ইমানহীন আমল বা কাজ মূল্যহীন বা নিষ্ফল। আল্লাহ–তাআলা এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘যদি তুমি (আল্লাহর সঙ্গে) শরিক করো (মানে ইমানহীনতাকে গ্রহণ করো) তাহলে তোমার কর্ম (আমল) নিষ্ফল হবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সুরা জুমার, আয়াত: ৬৫)
ইমানের পরিচয় জানার পর সর্বপ্রথম যে বিষয় জানার দাবি উঠে, তা হলো—ইমানের রোকন বা স্তর সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা। বিশেষজ্ঞ আলেম-ওলামাদের মতে, ইমানের রোকন বা স্তর বলতে দুটি বিষয়কে বোঝানো হয়।
কিছু আলেম-ওলামাদের মতে, পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে যেসব বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করাকে আবশ্যক করা হয়েছে, সেগুলোই হচ্ছে ইমানের রোকন বা স্তর। এ মতের ভিত্তিতে পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৩৬, ১৭৭, ১৮৫; সুরা কামারের ৪৯; সুরা নিসার ১৩৬ নম্বর আয়াত এবং বুখারির ১/৯৬ এবং মুসলিমের ১/১৫৭ নম্বর হাদিসের আলোকে ৬টি মতান্তরে ৭টি বিষয় হলো ইমানের রোকন বা স্তর।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–র রাজনীতির মূল বৈশিষ্ট্য২১ আগস্ট ২০২৩
কিছু আলেম-ওলামাদের মতামত হলো, ইমানের রোকন বা স্তর হলো দুই ধরনের। এক. মৌলিক বা মূল রোকন। দুই. অতিরিক্ত বা শাখাগত রোকন। (উমদাতুল কারী, আল্লামা আইনি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৭৩)
ইমাম আবু হানিফা, ইমাম তাহাবি ও ইমাম আবুল মুঈন (রহ.)সহ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অধিকাংশ আলেমের মতে, ইমানের মূল রোকন হলো অন্তরের বিশ্বাস—যা সব সময় থাকা আবশ্যক। আর অতিরিক্ত রোকন হলো মৌখিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া। (বুনিয়াদি আকাইদ, মাওলানা বেলাল বিন আলী, সম্পাদনা: মাওলানা তাহমীদুল মাওলা, চেতনা প্রকাশন, পৃষ্ঠা ২৩)
ইমানের মৌলিক রোকন বা স্তর হিসেবে অন্তরের বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতির সঙ্গে আরও একটি বিষয় যুক্ত রয়েছে, সেটা হলো—আমল বা কাজে বাস্তবায়ন করা। ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ি, ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) ১. অন্তরের বিশ্বাস, ২. মৌখিক স্বীকৃতি এবং ৩. আমল বা কাজে বাস্তবায়ন করাকে ইমানের পরিচয় ও ইমানের রোকন বলেছেন। (শারহু ফিকহিল আকবর, মোল্লা আলী কারী, পৃষ্ঠা ১৪১-১৫০)
অন্তরের বিশ্বাস মানে হলো ইমানের সব রোকন বা স্তর এবং সব শাখা-প্রশাখাসহ রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর আনা সমস্ত জীবনবিধানের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে মুখে স্বীকার করাও আবশ্যক। কারণ, শুধু অন্তরে বিশ্বাসের মাধ্যম ইমান পরিপূর্ণ হয় না। মৌখিক স্বীকৃতি ইমানের অন্যতম প্রধান অংশ। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চাচা আবু তালিবের মৃত্যুশয্যায় মুখে কালিমা উচ্চারণে রাসুলুল্লাহর (সা.) বারবার অনুরোধের বিষয়টি (বুখারি, হাদিস: ১,৩৬০) এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ। আর আমল বা কাজে বাস্তবায়ন করা মানে হচ্ছে একজন মুসলিম যা অন্তরে বিশ্বাস করেন এবং মুখে স্বীকৃতি প্রদান করেন—আমলে তার বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। (দ্য ব্রাঞ্চ অব ইমান, ড. ইয়াসির ক্বাদি, পৃষ্ঠা ৩৬-৪১)
আরও পড়ুনখাদিজা (রা.)–র ব্যবসা পরিচালনার ১০টি রীতি ২২ আগস্ট ২০২৩আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মতে, ইমান ও আমল পরস্পর অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জগিত। সংখ্যাগরিষ্ঠ ইমাম ও মুহাদ্দিসের মতে, অন্তরের বিশ্বাস (তাসদিক) ও মুখের স্বীকৃতি (ইকরার) ইমানের প্রথম স্তরের উপাদান আর আমল হলো দ্বিতীয় স্তরের উপাদান। ইমাম আবু হানিফা (রহ.)সহ তাঁর অনুসারীদের মতে, আমল ইমানের অংশ নয় বটে, কিন্তু এটা ইমানের একান্ত দাবি ও পরিপূরক বিষয়।
উভয় মতের আলেম-ওলামারা এ ব্যাপারে একমত—ইমান ও আমল দুটি অপরিহার্য বিষয়। ইমান ছাড়া আমল যেমন গুরুত্বহীন ও অপরিপূর্ণ; আমলহীন ইমানও তেমন অপরিপূর্ণ ও শাস্তিযোগ্য। ইমান হলো প্রাণ আর আমল হলো দেহ। প্রাণহীন দেহের যেমন কোনো মূল্য নেই। ইমান ছাড়া আমলও তেমন মূল্যহীন। (উসুলুল ইমান, ড. আহমদ আলী, গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩১-৩২)
আরও পড়ুনসুরা কমরে চাঁদ দুই ভাগ হওয়ার বিবরণ২১ আগস্ট ২০২৩ইমানের মৌলিক ভিত্তি বা রোকান বা স্তর হলো ছয়টি মতান্তরে সাতটি। আর সেগুলো হলো:
১. আল্লাহর প্রতি; ২. ফেরেশতাদের প্রতি; ৩. নবী-রাসুলদের প্রতি; ৪. আল্লাহ প্রেরিত কিতাবগুলোর প্রতি; ৫. পরকাল, পুনরুত্থান বা শেষ দিবসের প্রতি; এবং ৬. তাকদীরের (ভাগ্য) প্রতি ইমান (বিশ্বাস স্থাপন করা) আনা। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৩৬, ১৭৭ ও ১৮৫; সুরা কামার, আয়াত: ৪৯; সুরা নিসা, আয়াত: ১৩৬) এবং বুখারি, ১/ ৯৬-৯৭; মুসলিম, ১/১৫৭) অনেক গবেষক শেষ দিবস বা কিয়ামত আর পুনরুত্থানকে আলাদাভাবে পেশ করেছেন। সে মতে, তাদের দৃষ্টিতে ইমানের আরকান মোট সাতটি। (কিবাতুল ইমান, মুহাম্মাদ নাঈম ইয়াসিন, বাংলা অনুবাদ: মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিক, পৃষ্ঠা ১৭)
সব কটির ওপর যদি কেউ সমানভাবে ইমান না আনে, তবে তার ইমান পূর্ণাঙ্গ হবে না। আর এসব বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করার নামই হলো ইমান। (আকিদাতুত তাহাবি, ইমাম আবু জাফর আত-তাহাবি, ব্যাখ্যা: শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে আবদুর রহমান, অনুবাদ: উস্তাজ রিফাত মাহমুদ, সমকালীন প্রকাশন, পৃষ্ঠা ১০৩-১০৬)
আরও পড়ুনসুরা কাফে আল্লাহ বলেছেন মানুষ সৃষ্টির কারণ২০ আগস্ট ২০২৩উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর প র আল ল হ দ র মত আমল ব আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
রাস্টফ ব্যান্ডের ভোকাল আহরার মাসুদ মারা গেছেন। সেমাবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ভক্তদের কাছে দীপ নামে পরিচিত ছিলেন আহরার মাসুদ।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়। তবে এ শিল্পীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
আরো পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
সিজেএফবি পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা
রাস্টফ ব্যান্ডের ফেসবুক পেজে দীপের মৃত্যুর খবর জানিয়ে লেখা হয়, “এমন এক বেদনাদায়ক মুহূর্তে সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়া বা কোনো শব্দ খুঁজে পাওয়া—প্রায় অসম্ভব। প্রিয় ভোকালিস্ট, বন্ধু ও সহযাত্রী আহারার ‘দীপ’ মাসুদের মৃত্যুসংবাদ আমাদের স্তম্ভিত করেছে। আমরা শোকে ভেঙে পড়েছি, এখনো অবিশ্বাসের ভেতর ডুবে আছি। গত রাতেই তিনি আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন।”
দীপের শূন্যতা ব্যাখ্যা করে লেখা হয়, “তার পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের অন্তরের সমবেদনা ও প্রার্থনা। আপনাদের মতো আমরাও এই অপূরণীয় ক্ষতি বোঝার চেষ্টা করছি, চেষ্টা করছি দীপের অসাধারণ প্রতিভাকে সম্মান জানাতে এবং তার চেয়েও বড় কথা—মানুষ হিসেবে তিনি আমাদের কাছে যে অমূল্য ছিলেন, তাকে স্মরণ করতে। এই কঠিন সময়ে সবার কাছে অনুরোধ, দয়া করে পরিবার ও কাছের মানুষদের ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান করুন এবং তার আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করুন। শান্তিতে ঘুমাও, দীপ। তোমার শূন্যতা চিরকাল বেদনাময় হয়ে থাকবে।”
তরুণদের কাছে জনপ্রিয় আরেকটি ব্যান্ড পাওয়ারসার্চও দীপের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, “স্মরণ করছি আহরার মাসুদ দীপকে। কিছুক্ষণ আগে আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রিয় ভাই, ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং এক সত্যিকারের শিল্পীকে। এক্লিপস, কার্ল, ক্যালিপসো ও সবশেষ রাস্টফ ব্যান্ডের অবিস্মরণীয় কণ্ঠ আহরার মাসুদ দীপ আমাদের মাঝে আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।”
পাওয়ারসার্চ আরো লেখেন, “আহরার মাসুদ দীপ শুধু একজন ভোকালিস্টই ছিলেন না, তিনি ছিলেন শক্তি, সৃজনশীলতা আর আবেগের প্রতীক, যিনি তার চারপাশের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছেন; একই সাথে তার অত্যন্ত নমনীয় ব্যবহার, যা সবাইকে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীই করে ফেলত! শান্তিতে থাকো ভাই, তুমি সব সময় আমাদের গল্পের অংশ হয়ে থাকবে।”
ঢাকা/শান্ত