বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের (ডলার বদলে টাকা নেওয়ার) সময় ভুল বোঝাবুঝির জের ধরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইরানের দুই নাগরিককে মারধর করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই সময় তাদের ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে ‘মব’ সৃষ্টি করা হয়।

মারধরের এক পর্যায়ে তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশও আহত হয়। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার দু’জন হলেন– সাব্বির ও আব্দুল্লাহ। তারা স্থানীয় বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের বাড্ডা অঞ্চলের সহকারী কমিশনার এইচ এম শফিকুর রহমান সমকালকে বলেন, পুলিশের ওপর আক্রমণ ও গুরুতর আঘাতের অভিযোগ এনে গতকাল বুধবার পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। এতে দুই ইরানি নাগরিককে মারধরের ঘটনার বর্ণনাও রয়েছে। ভাটারা থানার এই মামলায় গ্রেপ্তার দু’জনসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, আহত দুই বিদেশির ভাষ্য, গত মঙ্গলবার দুপুরে তারা এক বাংলাদেশির কাছ থেকে ডলার বদলে টাকা নেন। লেনদেনের এক পর্যায়ে বাংলাদেশি ব্যক্তি দাবি করেন, তিনি কম ডলার পেয়েছেন। এ নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে তিনি বিদেশিদের বহনকারী গাড়িতে আঘাত করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই দৃশ্য দেখে আশপাশের লোকজন জড়ো হতে থাকে। ভয় পেয়ে দুই বিদেশি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগের চেষ্টা চালান। তখন লোকজন ধাওয়া করে তাদের মারধর করে। ওই সময় তাদের বাংলাদেশি গাড়িচালক পিটুনির শিকার হয়ে পালিয়ে যান। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ফুটপাতে দাঁড়িয়ে দুই পক্ষ আর্থিক লেনদেন করছেন। ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে, তা ফুটেজ দেখে স্পষ্ট হওয়া যায়নি। 

মারধরের শিকার ব্যক্তিরা হলেন– ইরানের নাগরিক মোহাম্মদ আহমদ (৭৪) ও তাঁর নাতি মো.

মেহেদী (১৮)। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। তারা এ দেশে বেড়াতে এসেছেন বলে জানিয়েছেন। আহত গাড়িচালকের খোঁজ মেলেনি।

ভাটারা থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, ছিনতাইয়ের একটি অভিযোগ উঠলেও তেমন কোনো ভুক্তভোগীকে পাওয়া যায়নি। ফলে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছে, তা পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ছাড়া বলার সুযোগ নেই।  

ভাটারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন হক বলেন, ইরানের দুই নাগরিকের ভাষ্যে ঘটনাটির একরকম বর্ণনা পাওয়া গেছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠার কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তারা নিরপরাধ কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ