কয়েক মাস ধরে নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারের আচরণ একধরনের নিশ্চুপ ও নমনীয়। সরকারের এমন ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আমরাই পারি জোট। পাশাপাশি জোটটি এসব সহিংসতার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে।

আজ রোববার আমরাই পারি জোট এক বিবৃতিতে এ নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে। বিবৃতিতে জোটের পক্ষে স্বাক্ষর করেন ৩২ জন বিশিষ্ট নাগরিক।

বিবৃতিতে বিভিন্ন পত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ব্যক্তিপর্যায়ের প্রকাশিত তথ্যের বরাত দিয়ে বলা হয়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সারা দেশে ঘরে-বাইরে ধর্ষণ, হত্যা, হয়রানি, সাইবার বুলিংসহ নারী ও কন্যাশিশুর ওপর নানা ধরনের নির্যাতন বেড়েই চলছে। এমনকি নারী ও শিশু ধর্ষণ ও হত্যার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক যে নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেলেও সরকারের দিক থেকে একধরনের নিশ্চুপ ও নমনীয় আচরণ দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যের বরাত দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয় শুধু গত ফেব্রুয়ারি মাসে ১৬টি পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী ১৮৯ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু জোট মনে করছে নির্যাতনের সংখ্যা আরও বেশি। অনেকে ভয়, সংকোচ ও শঙ্কা থেকে তা প্রকাশ করছেন না।

বিবৃতিতে সাম্প্রতিক ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে নারী নিপীড়নের ঘটনা, রংপুরে ফুল সংগ্রহ করতে যাওয়া শিশুকে ধর্ষণ, নাটোরে ঘাস কাটতে গিয়ে আদিবাসী শিশু ধর্ষণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর পোশাক নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, মেয়েদের ফুটবল খেলার ওপর আক্রমণসহ বেশ কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হয়।

আমরাই পারি জোট মনে করে এসব কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং নারীর স্বাধীন চলাচল ও তাঁর স্বাধীন স্বত্তাকে ভয় দেখিয়ে তাঁকে গৃহবন্দী করার এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা।

এমন পরিস্থিতিতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে এবং সর্বত্র নারীর নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানায় জোটটি। পাশাপাশি তারা জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানায়।

জোটের পক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন সুলতানা কামাল, শাহিন আনাম, শীপা হাফিজা, জিনাত আরা হক, ফওজিয়া খোন্দকার ইভা, রেখা সাহা, মাহবুবা বেগম হেনা, সেলিনা আহমেদ, সাহিদা পারভীন শিখা, কাজী সুফিয়া, বনশ্রী মিত্র নিয়োগী, জিয়াউল আহসান, রাবেয়া বেগম, হাসিনা বেগম নীলা, লায়লা আরজুমান্দ বানুসহ মোট ৩২ জন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আমর ই প র সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।

এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।

এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।

সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।

আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।

শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।

পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • মুসলিম পরিবারে শিশুর নিরাপত্তা
  • পুরোপুরি বিলুপ্তির পর উগান্ডায় আবার ফিরল গন্ডার
  • ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের