শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতার দ্বন্দ্বে বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হলেন সহ–উপাচার্য
Published: 11th, March 2025 GMT
বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বকে সামনে রেখে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের দুই শিক্ষকের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সহ–উপাচার্য মো. সাজেদুল করিম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ রেদোয়ান ও অধ্যাপক স্বপন কুমার সরকারের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার এই দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব শেষ করেন অধ্যাপক রোমেল আহমেদ। নতুন বিভাগীয় প্রধান হিসেবে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে একজন দায়িত্ব পাওয়ার কথা থাকলেও আরেক শিক্ষকের জ্যেষ্ঠতার জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এতে বিভাগীয় কার্যক্রমেও ব্যাঘাত ঘটার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে উপাচার্যের নির্দেশে ১ মার্চ থেকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছেন সহ–উপাচার্য মো.
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতির বর্তমান নিয়মানুযায়ী, যেসব শিক্ষক অধ্যাপকের দ্বিতীয় গ্রেডের যোগ্যতা পূরণের পর যথাসময়ে আবেদন করবেন, তাঁরা প্রাপ্যতার দিন থেকে দ্বিতীয় গ্রেডের জ্যেষ্ঠতা ও আর্থিক সুবিধা প্রাপ্য হবেন। দেরি করে আবেদনকারী শিক্ষকদের দ্বিতীয় গ্রেডের জ্যেষ্ঠতা ও আর্থিক সুবিধা সিন্ডিকেটের পরদিন থেকে কার্যকর হবে। গত বছরের ৬ জুন ২৩২তম সিন্ডিকেটে নিয়মটি পাস হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভাগে যোগদানের দিক থেকে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হলেন মোহাম্মদ রেদোয়ান। তবে যোগ্যতা অর্জন করে সঠিক সময়ে দ্বিতীয় গ্রেডে আবেদন না করায় তাঁর জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন তিনি। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ২৩৩তম সিন্ডিকেটে মোহাম্মদ রেদোয়ান ও অধ্যাপক স্বপন কুমার সরকারের দ্বিতীয় গ্রেডে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে স্বপন কুমার সরকার দ্বিতীয় গ্রেডে যোগ্যতা অর্জনের যথাসময়ে আবেদন করায় যোগ্যতা অর্জনের দিন থেকে তাঁর জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হয়।
অন্যদিকে নিয়মানুযায়ী সিন্ডিকেটের পরদিন থেকে মোহাম্মদ রেদোয়ানের দ্বিতীয় গ্রেডে পদোন্নতি হওয়ার কথা। কিন্তু এর আগে গত বছরের ২০ নভেম্বর তিনি কর্তৃপক্ষ বরাবর বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে চিঠি দেওয়ায় তাঁর পদোন্নতির চিঠি আপাতত স্থগিত আছে। মোহাম্মদ রেদোয়ানের আবেদনের কারণে ২৩৩তম সিন্ডিকেটেই তাঁর ‘দ্বিতীয় গ্রেড প্রাপ্তির তারিখ সংশোধনসংক্রান্ত সুপারিশ’ প্রদানের জন্য একটি কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। কমিটিতে সহ–উপাচার্য মো. সাজেদুল করিমকে সভাপতি করা হয়। পরবর্তী সময়ে এ কমিটির কাজের কোনো অগ্রগতি না দেখে ১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর আরেকটি চিঠি দেন মোহাম্মদ রেদোয়ান।
মোহাম্মদ রেদোয়ান অভিযোগ করেন, ‘দ্বিতীয় গ্রেডের যোগ্যতা অর্জনের পর আমি গত বছরের ২১ মার্চ পদোন্নতির জন্য আবেদন করি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য কয়েকজনের সলাপরামর্শে আমার জ্যেষ্ঠতা আটকানোর জন্য গত বছরের ৬ জুন ২৩২তম সিন্ডিকেটে দ্বিতীয় গ্রেড দেননি। আমাকে দ্বিতীয় গ্রেডে পদোন্নতি না দিতে ওই সিন্ডিকেটে একটি কালো আইন করে রেখে যান। কিন্তু আগে এ আইন ছিল না। এ জন্য জুলাই গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমার সঙ্গে করা পদোন্নতি নিয়ে বৈষম্যের কথা অবহিত করি।’
বিভাগীয় প্রধানের পদকে সামনে রেখে জ্যেষ্ঠতার দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক স্বপন কুমার সরকার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে যেহেতু সহ–উপাচার্য মহোদয় দায়িত্ব নিয়েছেন এবং নিয়মের ভেতর দিয়ে যে সমাধান দরকার, বিশ্ববিদ্যালয় সেটা করবে। আমি এটাকে সানন্দেচিত্তে বরণ করি, যা হবে বিভাগের ভালোর জন্যই হবে। এসব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে আন্দোলন করার কিছু নেই।’
এ বিষয়ে সহ–উপাচার্য মো. সাজেদুল করিম বলেন, অধ্যাপক মোহাম্মদ রেদোয়ানের পদোন্নতির বিষয়টি তদন্ত করে তাঁর জ্যেষ্ঠতার বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ র দ য় ন স জ দ ল কর ম গত বছর র দ বন দ ব য গ যত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। আজ মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ পরবর্তী ওই দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। আজ বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।
আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।
আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।
সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।
রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর শুনানি চলছে।