পোশাক খাতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে নজর যুক্তরাষ্ট্রের
Published: 15th, March 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মেড ইন আমেরিকা’ নীতির কারণে দেশটির খুচরা ব্যবসায়ীরা দেশীয়ভাবে উৎপাদন বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। বিশেষ করে তৈরি পোশাক, জুতা ও স্যুট-কোট ব্যবসায়ীরা দেশীয়ভাবে তাদের উৎপাদন সম্প্রসারণ করার চিন্তা করছেন। তবে তা করতে গিয়ে তারা নানা সংকটের কথা জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্য, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে পণ্য ও উপকরণ আমদানি কঠিন হয়ে পড়েছে। এ জন্য বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে সস্তায় আমদানি কমার আশঙ্কা নেই।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমিত সুযোগ-সুবিধার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক উৎপাদনে সাফল্য পাওয়া অত্যন্ত কঠিন; এমনকি অসম্ভব বলা যায়। কারণ, এখানে শ্রমিকের মজুরি বেশি, পাশাপাশি আমদানি করা উপকরণের শুল্ক বেশি হওয়ায় তৈরি পোশাকের দাম অনেক বেশি পড়ে যায়। বোতাম, কাপড় ও জিপারের মতো উপকরণ আমদানি করতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ট্রাম্পের শুল্কনীতি। চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন শুল্ক আরোপের কারণে গামবার্টের বোতামের দাম ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সম্প্রতি ওয়ালমার্ট কোম্পানির প্রধান ডগ ম্যাকমিলনসহ মার্কিন কোম্পানির সিইওদের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। বৈঠকে তিনি কোম্পানিগুলোর করপোরেট কর ২১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
নিউইয়র্কভিত্তিক পুরুষদের শার্ট প্রস্তুতকারী কোম্পানি গামবার্ট শার্টমেকার্সের মালিক ও প্রধান নির্বাহী মিক গামবার্ট বলেন, ‘আমরা (যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা) ব্র্যান্ডগুলোর কাছ থেকে প্রচুর (উৎপাদনের) অনুরোধ পাচ্ছি।’ গামবার্টের প্রতিষ্ঠান খুচরা বিক্রেতা চেইন শপ নর্ডস্ট্রমের তিনটি শোরুমে বোতামযুক্ত সুতি শার্ট সরবরাহ করে। গামবার্ট জানান, নর্ডস্ট্রম আগামী জুনের শেষের মধ্যে সরবরাহ বাড়িয়ে ৫০টি স্টোরে পণ্য পৌঁছানোর অনুরোধ করেছে।
ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক নারীদের পোশাক বিক্রয় কোম্পানি রিফর্মেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যাথলিন ট্যালবট বলেন, তিনিও দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে বিনিয়োগে বিশ্বাসী। লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউইয়র্ক ও নেভাদায় তিনি নারীদের পোশাক সরবরাহ করার পরিকল্পনা করছেন। তবে সাফল্য আসতে সময় লাগবে বলে তিনি মনে করেন।
তবে আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি স্টিভ লামার বলেন, ‘আমাদের কাছে বৃহৎ পরিসরে পোশাক ও জুতা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত শ্রম, দক্ষতা, উপকরণ এবং অবকাঠামো নেই।’
আমেরিকানরা কম দামের চীনা ও এশিয়ান তৈরি পোশাক কিনতে অভ্যস্ত। যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া পোশাক ও জুতার প্রায় ৯৭ শতাংশ আমদানি করা হয়। চীন মার্কিন পোশাক আমদানির সবচেয়ে বড় উৎস, যদিও গত ১৫ বছরে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি বাড়িয়েছে তারা।
ওহাইওর মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার সহযোগী অধ্যাপক ইয়াও জিন বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে মার্কিন পোশাক উৎপাদন খাত সংকুচিত হয়েছে। কারণ ব্র্যান্ড ও খুচরা ব্যবসায়ীরা চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশসহ কম মজুরির দেশগুলোর কারখানা থেকে পণ্য পাচ্ছে। এ জন্য তৈরি পোশাকের ব্যবসা যুক্তরাষ্ট্রে দাঁড় করানো কঠিন হবে।
ন্যাশনাল কাউন্সিল অব টেক্সটাইল অর্গানাইজেশনের সভাপতি কিম গ্লাস জানান, তিনি মেক্সিকো ও কানাডার ওপর শুল্ক আরোপের বিপক্ষে। কারণ কাপড়, তুলা, পশম ও সুতা আমদানিতে শুল্ক বাড়ালে ব্যবসায়ীরা অসহায় হয়ে পড়েন। আর দেশীয় বিনিয়োগে দীর্ঘমেয়াদি নিশ্চয়তা না পেলে ব্যবসায় ভালো করা অসম্ভব।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস য় র গ মব র ট সরবর হ আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
চাপে পড়ে নয়, অনুরোধে ভারতে ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন: ফরিদা আখতার
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, কোনো চাপে পড়ে নয়; বরং ধর্মীয় সৌজন্যবোধ ও অনুরোধের কারণে ভারতে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি গত বছরের তুলনায় অর্ধেকের কম। এ ছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ১১ হাজার টন ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন উপদেষ্টা। এর আগে জেলা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, নারী কৃষক এবং স্থানীয় এনজিও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা সভায় অংশ নেন তিনি।
গত বছরের তুলনায় এবার ইলিশ রপ্তানি কমেছে জানিয়ে ফরিদা আখতার বলেন, ‘গত বছর আমরা ভারতে ইলিশ রপ্তানি করেছি তিন হাজার টন। আর এ বছর রপ্তানির জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ২০০ টন। তাই কোনো চাপের ফলে ইলিশ পাঠানোর কিছু নেই; বরং আমরা ধর্মীয় সম্প্রীতির জায়গা থেকে ইলিশ পাঠাচ্ছি।’
দুর্গাপূজায় ভারতে যাচ্ছে ১২০০ টন ইলিশ, রপ্তানির অনুমতি দিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়বাজারে ইলিশের কম সরবরাহের বিষয়ে এই উপদেষ্টা বলেন, চলতি বছর জাটকা নিধনের ফলে ইলিশের উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে সরবরাহ কমেছে। গত মৌসুমের তুলনায় চলতি বছরের জুলাই মাসে ৩৭ শতাংশ ও আগস্ট মাসে ৪৭ শতাংশ কম ইলিশ ধরা পড়েছে। এর কারণে বাজারে ইলিশের দাম বেশি। তবে এ মাসেই দেশের কিছু জায়গায় সাশ্রয়ী মূল্যে ইলিশ বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনএত ইলিশ হঠাৎ কোথায় গেল০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফরিদা আখতার বলেন, কৃষিতে যেমন প্রণোদনা আছে, মৎস্য খাতে তেমন প্রণোদনা নেই বললেই চলে। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার জনকল্যাণের জন্য নানামুখী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। গবাদিপশুকে এলএসডি (লাম্পি স্কিন ডিজিজ) মুক্ত করতে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জসহ চার জেলাকে সম্পূর্ণভাবে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে।
আলোচনা সভায় কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ, সিভিল সার্জন স্বপন কুমার বিশ্বাস, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোক্তাদির খান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ রানাসহ প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুনভরা মৌসুমেও বড় ইলিশ নাগালের বাইরে, ভরসা ‘টেম্পু ইলিশ’০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫