ফসলি জমির মাটি না কাটার নির্দেশ, ক্ষতিপূরণ চাইলেন কৃষকেরা
Published: 22nd, March 2025 GMT
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার সাংহাই হাওরের বুক চিরে ফসলি জমি নষ্ট করে সড়ক নির্মাণের ঘটনায় প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশের পর নির্মাণাধীন সড়কটি পরিদর্শন করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা। তাঁরা স্থানীয় কৃষক ও গ্রামবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করে তাঁদের বক্তব্য শোনেন এবং লিখিত মতামত নেন।
মতবিনিময়ে কৃষকেরা সরকারের কাছে জমি ও ফসলের ক্ষতিপূরণ চাওয়ার পাশাপাশি বর্ষাকালে যাতে হাওরের পানিপ্রবাহ ও নৌ-চলাচল স্বাভাবিক থাকে, সেই নিশ্চয়তা চেয়েছেন। এ সময় সচিব জমিতে লাগানো ধানসহ মাটি কেটে সড়কে ফেলার বিষয়টি জেনে তাৎক্ষণিকভাবে ঠিকাদারের প্রতিনিধিকে ডেকে ফসলি জমির মাটি না কাটার নির্দেশ দেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার প্রথম আলোয় ‘হাওরের বুক চিরে হচ্ছে সড়ক, কৃষক-ফসলি জমির সর্বনাশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.
পরে তাঁরা নির্মাণাধীন সড়কের হাসনাবাদ এলাকায় যান এবং স্থানীয় কৃষক ও গ্রামবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কর্মকর্তারা সড়ক ঘুরে দেখার সময় কৃষকেরা ধান লাগানো জমি থেকে জোর করে মাটি কাটার বিষয়টি তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মতবিনিময়ে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সমর কুমার পাল, শান্তিগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. গোলাম রব্বানী চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুনহাওরের বুক চিরে হচ্ছে সড়ক, কৃষক-ফসলি জমির সর্বনাশ ১৮ মার্চ ২০২৫মতবিনিময়ে হাসনাবাদ গ্রামের কৃষক ইউসুফ আলী বলেন, সড়কের কারণে তাঁর ৩৩ শতক জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এবার জমিতে ধান লাগিয়েছিলেন। জমির ধানসহ মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। একই গ্রামের কৃষক শওকত আলী জানান, হাওরে তাঁর ২৫ বিঘা জমি আছে। এর মধ্যে সড়কের কারণে চার বিঘা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কৃষক লিলু মিয়া (৭০) জানান, তাঁর সবচেয়ে বেশি জমির ক্ষতি হয়েছে ১৪ বিঘা। তিনি বলেন, ‘সড়কের কাজ করব আমরারের আগে কুনতা জিগাইছে না। এখন দুই দিন ধইরা কয়। আমরা কইছি, তোমরা তো লাভবান অইরায়, আমরার জমির ক্ষতিপূরণ দেও।’
কৃষকেরা জানান, সড়কে যেভাবে কাজ হচ্ছে তাতে উজানে জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ও নৌ-চলাচল বাধাগ্রস্ত হবে। চার কিলোমিটার সড়কে মাত্র তিনটা ছোট কালভার্ট রাখা হয়েছে। এখন লোকজন কথা বলায় বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে।
কৃষকদের বক্তব্য শুনে সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, একটি পত্রিকায় সড়ক নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সরকার তাঁকে এখানে পাঠিয়েছে। সবার বক্তব্য নিয়ে তিনি একটি প্রতিবেদন দেবেন। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তিনি কাজ বন্ধ করেছেন। এখন এলাকাবাসী চাইলে আবার কাজ হবে। সড়কটি স্থানীয় মানুষের সুবিধার্থেই করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না। তবে মানুষের মতামত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেবেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ নানা মত দিয়েছেন। উপস্থিত বেশির ভাগই রাস্তাটি দরকার বলেছেন। আবার কেউ কেউ না বলেছেন। তবে তাঁরা জমির ক্ষতিপূরণ ও জমির ক্ষতি যেন কম হয়, সেটি চান। আমি সবই ওপরে জানাব।’
প্রকল্প পরিচালক মুজিবুর রহমান জমি অধিগ্রহণে কোনো বরাদ্দ নেই বলে জানান। তবে মাটি কেনায় বরাদ্দ থাকার কথা স্বীকার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঠিকাদার যে টাকায় কাজ নিয়েছে, দূর থেকে মাটি কিনে এনে কাজ করলে তাঁর পোষাবে না। এসব রাস্তা সাধারণত স্থানীয় লোকজনকে বুঝিয়ে অথবা পাশের খাসজমি থেকে মাটি নিয়েই করা হয়।’
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ প্রকল্পে সাংহাই হাওরে একটি সড়কের কাজ হচ্ছে। হাওরটি একটি বড় ধানের হাওর। বর্ষায় হাওরে পানি থই থই করে। তখন অনেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। শুকনো মৌসুমে ধান হয়। ওই হাওরের বুক চিরে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চার কিলোমিটার একটি সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। ঢাকার জেবি ইনোভেশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি বাস্তবায়ন করছে। সড়ক ও দুই পাশে মাটি তুলে খালের মতো করায় প্রস্থে প্রায় ১০০ ফুটের মতো করে ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে।
আরও পড়ুনকার স্বার্থে এমন বিনাশী প্রকল্প২০ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র রহম ন প রকল প সড়ক র ক র একট
এছাড়াও পড়ুন:
আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।
আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।
ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫