চট্টগ্রাম নগরে জোড়া খুনের ঘটনায় অংশ নেন ১৩ থেকে ১৪ জন। এর মধ্যে ৭ থেকে ৮ জনের হাতে ছিল পিস্তল। পাঁচটি মোটরসাইকেলে ছিলেন তাঁরা। এর বাইরে আশপাশে আরও কয়েকজন দাঁড়ানো ছিলেন পুলিশ কিংবা লোকজনের গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য।

গত শনিবার রাতে নগরের বাকলিয়া কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে বাকলিয়া অ্যাকসেস রোডের ঘটনাস্থলের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) টিভি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানায় পুলিশ।

পুলিশের দাবি, বেশির ভাগের হাতে ছিল ৭.

৬৫ (মিলিমিটার) বোরের পিস্তল। এর মধ্য তিনজনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। এতে কালো জ্যাকেট পরিহিত, কাঁধে ব্যাগ, মাথায় হেলমেট পরা ব্যক্তি মো. হাছান। মোটরসাইকেলে থাকা চেক শার্ট পরা ব্যক্তি মোবারক হোসেন। গেঞ্জি পরা মাথায় টুপি দেওয়া ব্যক্তি রায়হান।

বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন আজ বুধবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনায় জড়িত বেশির ভাগকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাঁদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

তবে ঘটনার চার দিন পার হলেও পুলিশ জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এমনকি শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে বাকলিয়া অ্যাকসেস রোডের মুখ পর্যন্ত অন্তত দুই কিলোমিটারজুড়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে এলেও বাকলিয়া ও চকবাজার থানা-পুলিশ আসে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ার পর।

এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন বখতিয়ার হোসেন (৩০) ও মো. আবদুল্লাহ (৩২)। তারা ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। গাড়িতে সরোয়ারও ছিলেন তবে বেঁচে যান। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের করা মামলায় বলা হয়েছে, দুই ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ ও সরোয়ার হোসেনের বিরোধের জের ধরে আলোচিত জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে। সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়ায় জন্য দায়ী করে ক্ষুব্ধ হয়ে সরোয়ার ও তাঁর অনুসারীদের ওপর এ হামলা চালানো হয়।

সাজ্জাদ ও সরোয়ার দুজনই বিদেশে পলাতক আট খুনের মামলার আসামি শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ আলীর অনুসারী ছিলেন। দুজনের বিরুদ্ধে ১৫টি করে মামলা রয়েছে। তবে এক দশক ধরে সরোয়ার সাজ্জাদ আলীর গ্রুপ থেকে বেরিয়ে আসেন। এরপর সরোয়ার ও ছোট সাজ্জাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

৫ আগস্টের পর দুজনই জামিনে বেরিয়ে আসেন। গত আট মাসে জোড়া খুনসহ সরোয়ারের পাঁচজন অনুসারী গুলিতে মারা যান। প্রতিটি মামলায় সাজ্জাদ ও তাঁর অনুসারীদের আসামি করা হয়। নগরের বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মারার হুমকি দেওয়ার পর গত ২৯ জানুয়ারি সাজ্জাদকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ। পরে গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিংমল থেকে এক দম্পতি তাঁকে পুলিশে ধরিয়ে দেন। হুমকির পর তাঁরাও থানায় মামলা করেন সাজ্জাদ ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার রাতে রুপালি রঙের একটি প্রাইভেট কার কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে বাকলিয়া অ্যাকসেস রোডে আসতে থাকে। গাড়িটি শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে কিছু দূর যাওয়ার পর পেছন থেকে পাঁচটি মোটরসাইকেল সেটিকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। প্রাইভেট কারের ভেতর থেকেও মোটরসাইকেল আরোহীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। গুলিতে অনেকটা ঝাঁঝরা হয়ে যায় গাড়িটি। এ ঘটনায় সন্ত্রাসী সাজ্জাদ, তাঁর স্ত্রী তামান্না শারমিনকে হুকুমের আসামিসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে গত মঙ্গলবার বাকলিয়া থানায় মামলা করেন নিহত বখতিয়ারের মা ফিরোজা বেগম। মামলার বাকি পাঁচ আসামি হলেন মো. হাছান, মোবারক হোসেন, মো. খোরশেদ, মো. রায়হান ও মো. বোরহান। তাঁরা সবাই সাজ্জাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

জানতে চাইলে সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না শারমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে থাকা তাঁর স্বামী কীভাবে জোড়া খুনের পরিকল্পনা করেছেন। সব তাঁদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

তবে ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন এখন ভালো হয়ে গেছেন দাবি করে বলেন, সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়ায় তাঁকে দায়ী করছে, ফেসবুকে হুমকিও দিয়েছেন সাজ্জাদের স্ত্রী। এ জন্য তাঁকে মারতে গিয়ে জোড়া খুন হয়েছে।

এ ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া গাড়ির আরোহী রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা সরোয়ার হোসেনের ডাকে তাঁরা অক্সিজেন থেকে নতুন ব্রিজ বালুর টাল এলাকায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে হামলার মুখে পড়েন। তিনি বলেন, সম্প্রতি সাজ্জাদের গ্রেপ্তার এবং এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝামেলা বেড়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র অন স র এ ঘটন য় ব কল য়

এছাড়াও পড়ুন:

দাদন ফাঁসে ‘দাসের’ জীবনে শ্রমিক

২০ বছর ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের চাতালে কাজ করেন ছোবহান মিয়া। এখন আছেন উপজেলার আলমনগরের ছিদ্দিক অটো রাইস মিলে। ওই চাতালে যোগ দেওয়ার সময় মালিকের কাছে দাদন হিসেবে টাকা নেন। এখন এই পরিমাণ দুই লাখ টাকার ওপর। এই টাকার জন্য স্ত্রী খায়রুন বেগমকেও (৩৫) খাটতে হয় ছোবহানের সঙ্গে।

ছিদ্দিক অটো রাইস মিলে ২০ বছর খেটেও দাদনের টাকা শোধ হয়নি ছোবহানের (৪৭)। আগে এখানেই কাজ করতেন তাঁর বাবা হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার শিবপুর গ্রামের আফসর মিয়া। তিনি মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। বছর দুয়েক আগে ছোবহানের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মা জাহানারা বেগমও। মা, তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ছিদ্দিক অটো রাইস মিলের পাশে গড়ে তোলা খুপরি ঘরেই থাকেন ছোবহান। মায়ের নামেও নেওয়া হয়েছে দাদন।

ছোবহানের মতো জীবনের গল্প আশুগঞ্জের দেড়শ চাতালে কর্মরত আট হাজারের বেশি শ্রমিকের। তাদের এক-তৃতীয়াংশই পুরুষ। যাদের নেই কোনো সরকারি-বেসরকারি মজুরি কাঠামো। প্রতি বাংলা বছরের শুরুতে তারা চাতাল মালিকের কাছে থেকে ‘দাদন’ নিয়ে কাজ করেন। তবে কাজ না করলে মজুরি মেলে না তাদের। 

শ্রমিকরা জানান, প্রতি চাতালে গড়ে ৪০-৫০ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক সপরিবারে কাজ করেন। পুরুষরা সপরিবারে কাজের কথা বলেই দাদন নেন। ধানের মাঠ বা বস্তা হিসেবে নির্ধারিত হয় তাদের মজুরি। সাধারণত একটি চাতালে ৬০০-৭০০ মণ ধান শুকানো যায়। মাঠ হিসেবে মজুরির জন্য শ্রমিকদের ভেজা ধান গাড়ি থেকে নামানো, সেদ্ধ করা, শুকানো, চাল তৈরির পর গাড়িতে উঠানো পর্যন্ত দায়িত্ব নিতে হয়। সাধারণত আবহাওয়া ভালো থাকলে এই কাজ সম্পন্ন হতে তিন-চার দিন লেগে যায়। বৃষ্টি থাকলে লেগে যায় ৮-১০ দিন পর্যন্ত। এ কাজ শেষ করা হলে পুরুষ শ্রমিকরা মজুরি হিসাবে ৩০০-৪০০ টাকা ও নারী শ্রমিকরা ৫০-৬০ টাকা পান। এ ছাড়া খোরাকি বাবদ সব শ্রমিককে প্রতি ১০০ মণ ধানে দেওয়া হয় ২৫ কেজি চাল।

বস্তা হিসেবে মজুরির জন্য সেদ্ধ চালের চাতালে প্রতি বস্তা ধান ও চালে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শ্রমিকরা পান ২৮ টাকা, আতপ চালের চাতালে মেলে ২২ টাকা। শ্রমিকরা জানান, কোনোভাবেই পুরুষ শ্রমিকের তিন-চার দিনের মজুরি ৩০০-৪০০ টাকার বেশি হয় না। দৈনিক গড় মজুরি সীমাবদ্ধ থাকে ১০০-১৫০ টাকায়। 

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চাল উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে আশুগঞ্জের পরিচিতি রয়েছে। এক সময় এখানে চাতালের সংখ্যা ছিল চার শতাধিক। এসব চাতালে কাজ করতেন ২৫-৩০ হাজার শ্রমিক। ২০১৪-১৫ সালের দিকে এ উপজেলায় অটো ড্রায়ার কারখানা বাড়তে শুরু করে। এসব কারখানার দাপটে চাতাল কমতে কমতে টিকে আছে দেড়শর মতো।

ছিদ্দিক অটো রাইস মিলের অপর শ্রমিক কামালের (৩৮) জন্ম আশুগঞ্জেই। তাঁর বাড়ি কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার নূরপুরে। চাতাল মালিকের কাছে কামালের দাদন দুই লাখ টাকার বেশি। এখানেই খুপরিতে স্ত্রী জেসমিন ও পাঁচ নাবালক ছেলেকে নিয়ে থাকেন। জেসমিন তাঁর সঙ্গে চাতালে শ্রম দেন। দাদন কীভাবে শোধ করবেন– এমন প্রশ্নের উত্তর ভাগ্যের হাতে সঁপে দেন কামাল। চাতালকেই নিজের ঘরবাড়ির মতো ভাবেন। তাই ঋণ নিয়ে চিন্তাই করবেন না। কামাল বলেন, ‘যেখানেই যাই, কাজ করতেই হবে। আল্লাহর রহমত হলে ও চাতাল মালিকের দয়া হলেই সেই ঋণ কোনোদিন শোধ করা সম্ভব।’

মৌখিক চুক্তিতে নামমাত্র মজুরিতে এই শ্রমিকরা ‘স্বেচ্ছাবন্দি’ হিসেবে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন বছরের পর বছর। কবে এ দশা থেকে মুক্তি মিলবে– তা অজানা তাদের। শ্রমিকরা জানান, যে টাকা আয় হয়, এদিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। তাই সঞ্চয় করে দাদন পরিশোধের কোনো টাকাই হাতে থাকে না। চালের উৎপাদন বন্ধ থাকলে মজুরিও পান না। কারও অসুখ-বিসুখ হলে যে টাকার দরকার, তার জন্যও হাত পাততে হয় চাতাল মালিকের কাছে। তখন ‘ভাংতি’ নেওয়া টাকা পরে দাদনের অঙ্কে যোগ হয়। এতে দিনে দিনে তাদের মাথায় বোঝা আরও বাড়তে থাকে। সেই ঋণ শোধ করাও হয় না, মজুরি বাড়ানোর দাবিও তুলতে পারেন না।

ফারুক ‘সর্দারের’ গল্প

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীগঞ্জ গ্রামের মো. মন্নাস মিয়ার ছেলে ফারুক মিয়া (৪৮)। বাবার কোনো জমিজিরাত ছিল না। খুব শৈশবেই এলাকায় শ্রম বিক্রি শুরু করেন। আনুমানিক ১৭ বছর আগে সামসুন্নাহারকে বিয়ে করেন। কিছুদিনের মধ্যেই সংসারের অভাব বেড়ে যায়। এক ভায়রা ভাইয়ের পরামর্শে আশুগঞ্জের এক চাতালে কাজ শুরু করেন। শুরুতে দাদন নেননি। পরে সংসারের প্রয়োজনে প্রথম দফায় ১০ হাজার টাকা নেন। দাদন বাড়তে বাড়তে এখন তাঁর মাথায় তিন লাখ টাকার বোঝা। 

আলমনগরের ছিদ্দিক অটো রাইস মিলে ফারুক এখন কর্মরত সর্দার হিসেবে। বিয়ের কয়েক বছর পর স্ত্রীকেও নিয়ে আসেন। তিনিও একই চাতালের কর্মী। ছোট দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ১৬ ফুট দীর্ঘ ও ১০-১২ ফুট চওড়া খুপরিতে থাকেন ফারুক। বড় দুই ছেলে থাকে একই আকারের অন্য কক্ষে। একই চাতালের কর্মী আরও ১৫টি পরিবার একই চাতালের খুপরিতে থাকে। তাদের ব্যবহারের জন্য শৌচাগারের সংখ্যা মাত্র দুটি। খাবার পানির জন্য আছে দুটি নলকূপ। এই খুপরিতে সংযুক্ত বিদ্যুৎ বিল বহন করেন চাতাল মালিক। 

১৫ বছরের মতো এই চাতালে কর্মরত ফারুকের ভাষ্য, দাদন বাড়ার জন্য নিজের সাংসারিক প্রয়োজনের পাশাপাশি দায় রয়েছে পালিয়ে যাওয়া কিছু শ্রমিকেরও। এসব শ্রমিকের দাদনের অঙ্কও তাঁর হিসাবে যোগ হয়েছে।

সর্দারের ওপর কেন পালিয়ে যাওয়া শ্রমিকের দাদন চেপে বসে, সে বিষয়ে কথা হয় ব্যবসায়ী মো. মহিউদ্দিন মোল্লার সঙ্গে। তিনি আগে চাতাল পরিচালনা করতেন। এখন যৌথভাবে পরিচালনা করছেন এগ্রো ফুড নামের ড্রায়ার মিল। মহিউদ্দিন মোল্লা বলেন, চাতালের মালিকরা নিজের প্রয়োজনেই শ্রমিক খোঁজেন। তখন সর্দারের মাধ্যমে কাজে আসেন পুরুষরা। তাদের পরিবারে ৩ থেকে ৪ বা ৪ থেকে ৫ জন সদস্য থাকেন। চুক্তি অনুযায়ী, দাদনের টাকা দেওয়া হয় সর্দারের মাধ্যমে। আগে কোনো লিখিত চুক্তিপত্র হতো না। এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র রেখে তা দেখভাল করেন সর্দার। কোনো শ্রমিক পালিয়ে গেলে, দায়ভারও তাঁর ওপর বর্তায়।

জানা গেছে, দাদনের অঙ্কটি সীমাবদ্ধ থাকে মালিক ও সর্দারের মধ্যেই। শ্রমিকের সঙ্গে লিখিত চুক্তি না হলেও সর্দারের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে লিখিত চুক্তি হয়। কোনো শ্রমিক হাতবদল বা কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করলে যে চাতাল মালিক তাঁকে নেবেন, তিনি ওই শ্রমিকের টাকা দিয়ে দেন। অনেক ক্ষেত্রে আগের চেয়েও বেশি টাকা নেন শ্রমিকরা। এ ঝুঁকির জন্য সর্দাররা দাদনের টাকা থেকেও কমিশন নেন।

চাতাল মিল শ্রমিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা আব্বাস সরদার, সভাপতি মো. হরমুজ আলী ও সাধারণ সম্পাদক মো. আল আমিনের কথায় শ্রমিকের অসহায়ত্বের কারণ উঠে আসে। তারা বলেন, অধিকাংশ শ্রমিকের পায়ের নিচে মাটি নেই। অথচ গড়ে প্রতি শ্রমিকের মাথার ওপর দেড়-দুই লাখ টাকা দাদন। মজুরি যে তারা পান, তা দিয়ে  সংসারই চলে না। তাই দাদন পরিশোধ করতে পারেন না। এটি দুই পক্ষের জন্যই ক্ষতিকর। 

আশুগঞ্জ উপজেলা চাতাল মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হেলাল সিকদারও বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, দাদন মালিকের জন্যও বোঝা। প্রতি মালিককে দাদনের জন্য বাড়তি বিনিয়োগ করতে হয় ২৫-৩০ লাখ টাকা। এ জন্য ব্যাংকে যেমন সুদ গুনতে হয়, তেমনি শ্রমিক পালিয়ে গেলেও ক্ষতির মুখেও পড়তে হয়। দাদন না নিলে শ্রমিকের মজুরি কিছুটা হলেও বাড়ানো সম্ভব।

আশুগঞ্জ সরকারি শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রের জনসংখ্যা পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. নাঈম আহমেদের ভাষ্য, চাতাল শ্রমিকরা চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণের জন্য এখানে আসেন। কিন্তু কখনও তারা ঋণ নিয়ে কথা বলেননি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ