পাবনার ঈশ্বরদীতে সরকারি অফিস আলোকসজ্জা করে ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠানের জমকালো আয়োজন নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। আয়োজন দেখে মনে হয়েছে, এটি কোনো কমিউনিটি সেন্টার।

শুক্রবার বিকেলে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল চত্বরে ও অফিসের ছাদে প্যান্ডেল সাজিয়ে এই বিয়ের আয়োজন করা হয়। জানা গেছে, ওই কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জিল্লুর রহমানের মেয়ের গায়ে হলুদ ও বিয়ের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা এই কার্যালয় চত্বরে সম্পন্ন হয়।

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঈদে টানা ৯ দিনের ছুটিতে বন্ধ রয়েছে সব সরকারি অফিস। এ সুযোগে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে জিল্লুর রহমান নামের একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী তার মেয়ের বিয়ের জন্য আলোকসজ্জা করে সেখানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের কক্ষের তালা খুলে অফিস কক্ষ ব্যবহার ও পুরো সরকারি ভবন আলোকসজ্জা করা হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানের কিছু ছবি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোছা.

আকলিমা খাতুনের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটি স্থানীয় এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

সরকারি অফিসে বিয়ের আয়োজন সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার অনুমতি নিয়েই এখানে অনুষ্ঠান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জিল্লুর রহমান। এ বিষয়ে এর চেয়ে বেশি কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তিনি।

ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোছা. আকলিমা খাতুন মুঠোফোনে বলেন, অফিসেরই একজন কর্মচারী বলে তাকে বাহিরের একটি অংশ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছি। তবে ভেতরের কোনো কক্ষ ব্যবহারের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।

পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. একে এস মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারি অফিস ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। এটি রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি। শুধুমাত্র জনস্বার্থে এটি ব্যবহার করতে হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে জবাবদিহি করতে হবে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. তারেক হোসেন বলেন, সরকারি অফিসে বিয়ের অনুষ্ঠান করার কোনো সুযোগ বা নিয়ম নেই। আমি এ বিষয়টি জানলাম, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি জানার চেষ্টা করছি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প বন কর মকর ত র ক অন ষ ঠ ন ব যবহ র সরক র ব ষয়ট উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির