কোন লক্ষণে বুঝবেন শরীরে ভিটামিন ডি কমে গেছে?
Published: 7th, April 2025 GMT
প্রোটিন, ফাইবার, মিনারেলসের মতো ভিটামিন ডি-ও শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। হাড় মজবুত করা থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি— ভিটামিন ডি-এর জুড়ি মেলা ভার। শরীরের সামগ্রিক সুস্থতার জন্যেও ভিটামিন ডি অত্যন্ত উপকারী। চিকিৎসকেরা তাই ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাওয়ার কথা বলেন। কারণ ভিটামিন ডি-র অভাবে নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। কোন লক্ষণগুলো দেখে বুঝবেন শরীরে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি তৈরি হয়েছে?
মানসিক অবসাদ
শরীরে ভিটামিন ডি-র মাত্রা কম হলে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ দেখা দিতে পারে। তা থেকে ঘন ঘন মেজাজ বিগড়ে যেতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে, ভালোভাবে বিশ্রাম নিয়েও যদি আলস্য কাটতে না চায় এবং ক্লান্ত বোধ করেন, তবে এটি ভিটামিন ডি-র অভাবের কারণে হতে পারে।
গাঁটে ব্যথা
শরীরে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি হলে গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা বাড়ে। সারাক্ষণ গায়ে হাত-পা ব্যথা, পিঠে ব্যথা, কোমর ব্যথায় ভুগলে তা শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাবের ইঙ্গিত হতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় এই ভিটামিন। শরীরকে বিভিন্ন ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ঘন ঘন ভাইরাল জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগছেন? এই উপসর্গগুলো শরীরে ভিটামিন ডি-র ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে।
খিদে কমে যাওয়া
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবেন বলে খাওয়া কমিয়ে দেওয়া অন্য বিষয়। খিদে পেলে খেতে ইচ্ছে না করা মোটেই ঠিক বিষয় নয়। খিদে কমে যাওয়া হতে পারে ভিটামিন ডি ঘাটতির লক্ষণ। তাই, খিদে কমে গেলে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখুন।
অত্যধিক চুল পড়া
কমবেশি চুল ঝরার সমস্যা থাকে অনেকের। তবে চুল ঝরার পরিমাণ যদি অত্যধিক হারে বেড়ে যায়, তা হলে কিন্তু নজর দেওয়া প্রয়োজন। কারণ, শরীরে ভিটামিন ডি অত্যধিক পরিমাণে কমে গেলে এমন সমস্যা হতে পারে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ
বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।
এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।
এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।
কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।