মশিউর সিকিউরিটিজ লিমিটেডের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে পুঁজি হারিয়েছেন বিনিয়োগকারী ফারহানা জাফরিন। তিনি মশিউর সিকিউরিটিজের মাধ্যমে শেয়ার কেনাবেচার জন্য এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। সেই বিনিয়োগের একটি টাকাও ফেরত পাননি জাফরিন। তার মতো অনেক বিনিয়োগকারী মশিউর সিকিউরিটিজের প্রতারণার শিকার হয়ে কোটি টাকা হারিয়েছেন।

নিঃস্ব বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরতে চেয়ে প্রধান উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। পাশাপাশি প্রতারক প্রতিষ্ঠানসহ ডিএসই ও বিএসইসির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাজধানীর বিজয়নগরে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিনিয়োগকারীরা এসব অভিযোগ করেন।

আরো পড়ুন:

আইন লঙ্ঘন করা দুই ব্রোকারেজ হাউজকে জরিমানা

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিশেষ তহবিলের মেয়াদ বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক

সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্যে বিনিয়োগকারীরা বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা এখানে সমবেত হয়েছি মশিউর চিকিউরিটিজ (ডিএসই মেম্বার ১৩৪) এর দুর্নীতির বিষয়ে আপনাদের অবহিত করতে। প্রতিষ্ঠানটি যেভাবে গ্রাহকে ধোকা দিয়েছে তা আমরা এখন পেশ করব। মশিউর সিকিউরিটিজের অর্থ আত্মসাৎ এর উদ্দেশ্যে ক্লায়েন্টের শেয়ার বিক্রি করে এবং অনুমোদনহীন ব্যাক অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার করে ক্লায়েন্টের মেইলে জাল পোর্টফলিও পাঠায়, যা মূল পোর্টফোলিওর অনুরূপ। যাতে করে গ্রাহক বুঝতে না পারে তার পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার বিক্রি হয়েছে। পরবর্তীতে তারা টাকা আত্মসাৎ করে। আমরা জানি শেয়ার বিক্রি কিংবা ক্রয় করলে সিডিবিএল হতে কনফার্মেশন মেসেজ আসে। এক্ষেত্রে গ্রাহকের মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে নিজেদের মোবাইল নম্বর চালিয়ে দেয় মশিউর সিকিউরিটিজ। এভাবে প্রতিষ্ঠানটি জালিয়াতির আশ্রয় নেয়।’

এছাড়া রেকর্ড ডেটের আগে বেশি দামে যে পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করে রেকর্ড ডেটের পর সেই পরিমাণ শেয়ার কিনে রেখে দিত। যাতে বিনিয়োগকারী বুঝতে না পারে। ফলে বিনিয়োগকারী লভ্যাংশ পেত না এবং বিক্রি ও ক্রয়ের মূল্য পার্থকের টাকা হিসাব থেকে সরিয়ে নিত। নিরব দীর্ঘমেয়াদী প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সাথে তারা এ ধরনের প্রতারণার কাজ করেছে। অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহকের পোর্টফোলিয়তে রক্ষিত নগদ টাকা গ্রাহককে ফেরত না দিয়ে নিজেরা আত্মসাৎ করেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিনিয়োগকারীরা আরো বলেন, ‘মানুষের সারা জীবনের সঞ্চয় মশিউর সিকিউরিটি নিয়ন্ত্রণ সংস্থার নাকের ডগা দিয়ে নিয়ে যাবে যা দুঃখজনক এবং স্পর্শকাতর। নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিনিয়োগকারীদের অর্থের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। নিয়ন্ত্রণ সংস্থার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সহায়তায় মশিউর সিকিউরিটিজ এ ধরনের কাজ করেছে। দীর্ঘদিন গ্রাহকের অর্থ ও শেয়ারের প্রকৃত তথ্য প্রতিষ্ঠানটি আড়াল করার মাধ্যমে ১৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে।’

‘আমরা সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সবার মনযোগ আকর্ষণ করছি। এ ধরনের প্রতিষ্ঠিত প্রতারকের হাত থেকে আমাদের অর্থ উদ্ধারে সহযোগিতা চাই এবং প্রতারকের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি চাই।’

‘বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে জানানো হলে তারা তদন্তের নামে কালক্ষেপণ করেছে। এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। ইতোমধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) এ বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’

বিনিয়োগকারী ফারহানা জাফরিন বলেন, “আমি চাকরি জীবনের সব জমানো পুঁজি মশিউর সিকিউরিটিজে রেখে আজ নিঃস্ব। আমি একটি টাকাও ফেরত পাইনি।”

আবু মাসুদ নামে একজন বিনিয়োগকারী বলেন, “আমি ৩৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। আমাদের পোর্টফলিও এক রকম দেখাতো, আর তাদের অন্য সার্ভারে আরেক রকম পোর্টফলিও হিসাব রাখতো। যার কারণে আমরা সঠিক তথ্য পেতাম না। তারা আমাদের নম্বরের জায়গায় তাদের নিজেদের নম্বর দিয়ে সিডিবিএলে তথ্য পাঠিয়েছেন। যার কারণে আমরা সিডিবিএল থেকে কোনো তথ্য পেতাম না।”

শাহজাহান আলী বলেন, “মশিউর সিকিউরিটিজ আমাকে ৪০ লাখ ১৫ হাজার ৯০০ টাকার চেক দিয়েছে। কিন্তু টাকা তুলতে গিয়ে দেখি চেক ডিজ ওনার হয়। যার ফলে আমরা আর টাকা পাইনি। মশিউর সিকিউরিটিজের প্রতারণার জন্য আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”

এদিকে এ বিষয়ে মশিউর সিকিউরিটিজ লিমিটেড কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঢাকা/এনটি/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট গ র হক

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। শুভেচ্ছা বিনিময়কালে পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ও বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টায় ঢাকার আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনে এ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এ জন্য দেশের পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। উভয় পক্ষের এ বৈঠকে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু সুপারিশ অন্তুর্ভুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। এ বৈঠকে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, “বিএসইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আজকে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে আমরা পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরব। বিশেষ করে প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কিছু সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আমরা বিএসইসি চেয়ারম্যানের কাছে দাবি জানাবো। আলোচনার মাধ্যমেই যে কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে।”

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম রাইজিংবিডিকে বলেন, “ঈদের আগেই এ বৈঠকের বিষয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিএসইসি। আমরা বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করব। আলোচনার মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে।”

তবে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমআইএ) সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরা বিএসইসির এ আমন্ত্রণকে প্রত্যাখ্যান করেছি। একই সঙ্গে আমরা বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করছি।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম রাইজিংবিডিকে বলেন, “বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করা হবে। এ জন্য আজকে বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।”

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৯ ব্রোকার-মার্চেন্ট ব্যাংকের কার্যক্রম তদন্তে বিএসইসির কমিটি
  • পুঁজিবাজার অংশীজনদের সঙ্গে বিএসইসির ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়
  • ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির