দুর্ঘটনায় কর্মীর মৃত্যুতে জিপিএইচ ইস্পাতের শোক
Published: 13th, April 2025 GMT
দুর্ঘটনায় দুইজন কর্মীর মৃত্যুতে জিপিএইচ ইস্পাত পরিবার গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে। রোববার কোম্পানির পক্ষ থেকে উপদেষ্টা ওসমান গনি চৌধুরীর স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ শোক জানানো হয়।
বিবৃতিতে ওসমান গনি চৌধুরী জানান, জিপিএইচ ইস্পাত সব সময় কর্মীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। তবে এরই মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে রোববার সকালে জিপিএইচ ইস্পাত-এর ইসিআর ভবনে একটি আকস্মিক দুর্ঘটনা ঘটে। ভবনে অবস্থিত ৫০০ কেজি ভার বহনে সক্ষম মালামাল উত্তোলনকারী হোয়েস্টটি অতিরিক্ত ভারের কারণে ছিঁড়ে যাওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
হোয়েস্টটি শুধুমাত্র মালামাল উত্তোলনের জন্য ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও, নূরুর সাফা নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত দুইজন সহকারী নিয়ম ভঙ্গ করে মালামালের সঙ্গে হোয়েস্টে ওঠেন। এতে হোয়েস্টটি অতিরিক্ত ভারে ছিঁড়ে যায় এবং দুজন কর্মীই গুরুতর আহত হন।
দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই জিপিএইচ-এর অ্যাম্বুলেন্স ও মেডিকেল টিমের সহায়তায় আহত দুইজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে তারা উভয়েই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
বিবৃতিতে বলা হয়, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় জিপিএইচ-এর পক্ষ থেকে আমরা আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। দুইজন কর্মীর অকাল মৃত্যুতে জিপিএইচ কর্তৃপক্ষ গভীরভাবে শোকাহত।
এতে আরও বলা হয়, জিপিএইচ ইস্পাত সব সময় কর্মীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে এবং এই অপূরণীয় ক্ষতি জিপিএইচ পরিবারকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। আমরা বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য
কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।
মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।
লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।
দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।
জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।
রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।
দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।