পহেলা বৈশাখে জন্ম, তাই রেশমীর মেয়ের নাম বৈশাখী
Published: 15th, April 2025 GMT
আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট অনুযায়ী বগুড়ার রেশমীর বেগমের সন্তান হওয়ার তারিখ ছিল আগামী ২৪ এপ্রিল। কিন্তু এগারদিন আগেই ১৩ এপ্রিল রাত ১২টার দিকে প্রসব বেদনা ওঠে। ব্যাথায় ছটফট করছিলেন আর কাঁদছিলেন। মায়ের ছটফটানি আর কাঁন্না দেখে কাঁদছিল তাঁর চার বছর বয়সী মেয়ে আরিফা জান্নাত তৃপ্তিও। এক পর্যায়ে সে রাতে রেশমীকে নেওয়া হয় বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে। পরেরদিন পহেলা বৈশাখের সকালে স্বাভাবিক উপায়েই রেশমী জন্ম দেন ফুটফুটে এক কন্যা শিশু। নিমিষে যেন গত রাতের প্রসব বেদনা ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। সন্তানকে বুকে জড়িয়ে তাঁর চোখ থেকে পড়ছিল আনন্দঅশ্রু। বৈশাখের প্রথম দিন জন্ম, তাই রেশমী জানালেন, মেয়ের নাম হবে বৈশাখী।
রেশমী বেগম বলেন, প্রথম সন্তান জন্মের সময় এত কষ্ট ব্যাথা ছিলো না। দ্বিতীয় সন্তানের সময় ব্যাথায় মনে হচ্ছিল আমার প্রাণ চলে যাবে। ডাক্তারকে সিজার করার জন্য অনুরোধ করছিলাম। কিন্তু ডাক্তার বলেন সিজার লাগবে না, স্বাভাবিকভাবেই বাচ্চা হবে। তখন চিকিৎসকের উপর খুব রাগ ওঠেছিল, গালাগালও করেছি ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে। সারারাত ঘুমাতে পারিনি। সকালে যখন বাচ্চা হলো তখন মনে হয়েছে সৃষ্টিকর্তা আমাকে নতুন করে প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছেন। প্রসবের এক ঘণ্টা পর বাচ্চাকে যখন নার্স আমার কোলে তুলে দিলো, তখন প্রাণ জুড়িয়ে গেছে। সোনামনির মুখ দেখে মন ভরে গেছে শান্তিতে।
জানা গেছে, সোমবার সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে শিশুটির জন্ম হয় বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে। রেশমী বেগমের স্বামী বেলাল হোসেন বগুড়ার গাবতলী উপজেলার সৈয়দ আহম্মদ কলেজে মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক। রেশমী নিজে গৃহিনী কিন্তু লেখাপাড়াও চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারি আজিজুল হক কলেজে বাংলা বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্রী। বেলাল হোসেনের বাড়ি জেলার শাজাহানপুর উপজেলার চুপিনগর এলাকায়। বেলাল হোসেন কয়েকদিন ধরে অসুস্থ্য, ঘরে শয্যাশায়ী। বাবার কাছে বড় মেয়েকে রেখে তাই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন রেশমী। তবে দ্বিতীয় কন্যার জন্মের পরপরই ভিডিও কলে কথা হয়েছে স্বামী স্ত্রীর। নবজাতক সন্তানকে দেখে আনন্দে কাঁদতে কাঁদতে সৃষ্টিকর্তার কাছে দু’হাত তুলে দোয়া করেছেন বেলাল হোসেন।
বেলাল হোসেন ফোনে বলেন, নির্ধারিত তারিখের ১১ দিন আগে হঠাৎ রেশমীর প্রসব বেদনা ওঠায় দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম। স্ত্রী ছটফটানি আর কান্না দেখে স্থির থাকতে পারছিলাম না। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ্য, তাই স্ত্রীর সঙ্গে হাসপাতালে যেতে পারিনি। সন্তান জন্ম নিলেও তার মুখ দেখারও সৌভাগ্য হয়নি। তাতে মনে মনে ভীষন কষ্ট পাচ্ছিলাম। রাতে রেশমী কিছুক্ষণ পরপর হাসপাতাল থেকে ফোন করছিল; কিন্তু আমার কিছুই করার ছিল না। চিকিৎসকের উপর নির্ভর করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ভালোভাবে যখন বাচ্চা হলো; তখন আমার দুঃশ্চিন্তা দূর হয়েছে। ভিডিও কলে নবজাতক মেয়ের ছবি দেখে আমি আনন্দে কেঁদে ফেলিছি।
বেলাল হোসেন আরও বলেন, আমি দুই রাজকন্যার জনক। পৃথিবীতে আমার চেয়ে সুখি আর কেউ নেই। সবাই আমার রাজকন্যাদের জন্য দোয়া করবেন। আমি অসুস্থ্যতার জন্য মেয়েকে হাসপাতালে দেখতে যেতে পারছি না। কিন্তু নবজাতক ভালো আছে জেনে শান্তি লাগছে। এই পহেলা বৈশাখ আমার আর রেশমীর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
পহেলা বৈশাখের ভোরে জন্ম তাই, রেশমী ও বেলাল হোসেনের নবজাতক কন্যাকে আদর করে এখনই বৈশাখী নামে ডাকছেন নানী জুলেখা খাতুন। এ নাম স্থায়ী হবে কিনা তা এখনো ঠিক হয়নি। কথা হয় রেশমী বেগমের সঙ্গে। মেয়েরা বড় হলে কাকে কী করতে চান এ বিষয়ে বলেন, ওর বাবা যেহেতু একজন শিক্ষক, তাই একটাকে শিক্ষক হিসেবে তৈরি করতে চাই। কাকে শিক্ষক করতে চাই তা পরে ঠিক করবো।
হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক রেবেকা সুলতানা জানান, নির্ধারিত সময়ের আগে প্রসব হলেও বাচ্চার ওজন ও স্বাস্থ্যের কোন অবনতি ঘটেনি। জন্মের সময় শিশুটির ৩ কেজি ওজন হয়েছে। নবজাতক ও মা বেশ ভালো আছেন। আশা করছি রেশমী বেগম মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে বাড়ি যেতে পারবেন।
এদিকে বাচ্চাকে সোমবার রাতেই নানা বাড়ি গাবতলী উপজেলার পেরিরহাট এলাকায় নিয়ে গেছেন রেশমীর স্বজনরা। চিকিৎসক বলছেন, তাতে বাচ্চার কোন সমস্যা হবে না। বেলাল হোসেন একটু সুস্থ্য হওয়ার পর মঙ্গলবার সকালে শ্বশুড়বাড়ি গিয়ে বাচ্চাকে নাকফুল দিয়ে কোলে তুলে নেন। তিনি বলেন, নাতনির মুখ দেখতে আমার মা জমিলা খাতুন অপেক্ষা করছেন। তিনদিন পর দাদার বাড়ি নিয়ে যাব ওকে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ শ র জন ম চ ক ৎসক প রসব
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।