পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় ২২ এপ্রিলের সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার যোগসাজশের ইঙ্গিত আছে। ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এনআইএ) প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ দাবি করেছে বলে একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে এনডিটিভি অনলাইন।

এনআইএর ওই সূত্রগুলো জানিয়েছে, পেহেলগামে ২৬ জনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া সন্ত্রাসী হামলার ছক লস্কর-ই-তৈয়বা-ই করেছে। আইএসআইয়ের ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দাদের নির্দেশনায় হয়েছে বলেই সন্দেহ করা হচ্ছে। হামলার ছকটি পাকিস্তানে লস্করের সদরদপ্তরে চূড়ান্ত হয়েছে বলেও অনুমান করা হচ্ছে।

আটক একাধিক চর জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, বেসামরিক পর্যটকদের ওপর ওই নৃশংস হামলার কেন্দ্রে থাকা হাশিম মুসা ওরফে সুলেমান এবং আলি ভাই ওরফে তালহা ভাই পাকিস্তানি নাগরিক। তারা তাদের পাকিস্তানভিত্তিক ‘হ্যান্ডলারদের’ সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং সময়, লজিস্টিকস ও হামলা কার্যকরের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নিতেন।

হাশমি ও আলি ভাই হামলার কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতে প্রবেশ করেন। গোপন সহায়তাকর্মীদের (ওজিডব্লিউ) একটি নেটওয়ার্ক তাদের আশ্রয়, ঘোরাফেরা ও হামলার স্থান নির্ধারণসহ স্থানীয় লজিস্টিকাল সরবরাহ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তদন্তের জন্য এনআইএ বিপুল পরিমাণ ফরেনসিক ও ইলেকট্রনিক তথ্য জড়ো করেছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া ৪০টির বেশি কার্তুজ ব্যালিস্টিক ও রাসায়নিক উপাদান পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়।

তদন্তকারীরা হামলার স্থানটির থ্রিডি ম্যাপিং করেছেন এবং উপত্যকার আশপাশের মোবাইল টাওয়ার থেকে ডাম্প ডেটাও সংগ্রহ করেছেন।

হামলার কয়েক দিন আগে ওই এলাকায় হঠাৎ করে স্যাটেলাইট ফোনের ব্যবহার বেড়ে গিয়েছিল। তদন্তকারীরা বৈসরন ও এর আশপাশে অন্তত তিনটি স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহারের বিষয় নিশ্চিত হয়েছেন। এগুলোর মধ্যে দুটির সঙ্কেত শনাক্ত ও পর্যালোচনা করা হয়েছে।

এনআইএ এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৮০০-এর বেশি লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এখনো নিরাপত্তা হেফাজতে রয়েছে এমন মানুষের সংখ্যাও দেড় শতাধিক। তাদেরকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এদের মধ্যে গোপন সহযোগী (ওজিডব্লিউ) যেমন আছে, তেমনি জামাত-ই-ইসলামি ও হুরিয়াত কনফারেন্সের বিভিন্ন উপদলসহ নিষিদ্ধঘোষিত অনেক সংগঠনের সঙ্গে জড়িতরাও আছেন।

বারামুল্লা, অনন্তনাগ, সোপোরে, পুলওয়ামা ও কুপওয়ারাসহ একাধিক জেলায় অভিযান চলছে। সন্ত্রাসীদের সহায়তাকারী সন্দেহে অনেকের বাড়িঘরেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

১৯৯৯ সালে আইসি-৮১৪ ছিনতাইয়ের অন্যতম মূল চরিত্র মুশতাক আহমেদ জারগার ওরফে লাত্রুমের বাড়িতেও তল্লাশি হয়েছে। মুশতাক এখন পাকিস্তান থেকেই কার্যক্রম চালান বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হামলাকারীদের গতিবিধি শনাক্ত করতে এনআইএ পেহেলগাম ও এর আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট ও জনবহুল স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। আশপাশের অঞ্চলের নিরাপত্তা চেকপোস্টগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে তাদের চলাচলের ধরন চিহ্নিত করার কাজও চলছে।

হতাহতদের পরিবারের সদস্য, ঘোড়াচালক, খাবার বিক্রেতাসহ এক ডজনেওর বেশি প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। অনেকেই বলছেন, হামলাকারীদের শরীরে ক্যামেরা লাগানো ছিল। প্রচারের উদ্দেশ্যে পুরো ঘটনাটি রেকর্ড করতেই সম্ভবত শরীরে ক্যামেরা লাগিয়েছিলেন তারা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, পেহেলগামে হামলায় জড়িতরা ১৫ এপ্রিলের দিকে পেহেলগাম যান। এরপর তারা বৈসরন, অরু ও বেতাব উপত্যকা ও স্থানীয় একটি পার্ক ভালোভাবে রেকি করেন এবং তুলনামূলক কম নিরাপত্তা উপস্থিতি দেখে বৈসনকে হামলার স্থান হিসেবে বেছে নেন। হামলার আগে অন্তত দুইদিন তারা বৈসরনে পর্যটকদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। এই কাজে চার গোপন সহযোগী (ওজিডব্লিউ) তাদের সহযোগিতা করেছিলেন।
 

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এক ধ ক আশপ শ তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকে মুখর কুয়াকাটা

শ্রমিক দিবসসহ সরকারী তিন দিনের ছুটি উপলক্ষে বাড়তি পর্যটকের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠেছে পটুয়াখালীর পর্যটন নগরী কুয়াকাটা।

ব্যবসায়ীরা জানান, পর্যটকদের আনাগোনায় বুকিং রয়েছে ৯০ শতাংশ হোটেল মোটেল। বিক্রি বেড়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। খালি নেই হোটেল-মোটেল-কটেজ-রিসোর্টের কোনো কক্ষ। সব আবাসিক হোটেল, মোটেল, কটেজ, রিসোর্ট সব কানায় কানায় পূর্ণ। বুকিং না থাকায় অনেক পর্যটক পড়েছেন ভোগান্তিতে। বিক্রি বেড়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিপণী বিতানগুলোতে।ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারা।

আরো পড়ুন:

মহাকাশ ঘুরে এলেন কেটি পেরিসহ ৬ নারী

সৈকতে জেগে ওঠা কংক্রিট-জিও ব্যাগ পর্যটকদের গলার কাঁটা

স্থানীয়রা জানান, আগত পর্যটকরা সৈকতে আনন্দে মেতেছেন। অনেকে দল বেঁধে নোনা জলে গাঁ ভাসিয়ে উচ্ছাসে মেতেছেন। অনেকে আবার ঘোড়া, ওয়াটার বাইক কিংবা মোটরবাইকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনেকে আবার সৈকতের বেঞ্চিতে বসে সমুদ্রের তীরে আছড়ে পড়া ঢেউসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক রুবাইয়াত হোসেন বলেন, “তিন দিনের ছুটি উপলক্ষে আমরা পরিবারের সবাই মিলে কুয়াকাটা এসেছি। আজ এসে বড় বড় ঢেউ উপভোগ করেছি। সমুদ্রের বিশালতা আমাদের হৃদয়ে স্থান পেয়েছে।”

খুলনার পাইপগাছা থেকে আসা পর্যটক মুরাদ হোসাইন বলেন, “আমরা খুলনার একটি কলেজ পড়ি। ২০ জন বন্ধু মিলে প্রথমবারের মতো কুয়াকাটায় আসল। এখানের সবকিছুই বেশ দারুণ লেগেছে। তবে হোটেল ভাড়া এবং খাবার মূল্য একটু বেশি মনে হচ্ছে।”

পর্যটকদের নিরাপত্তায় মাঠে ট্যুরিষ্ট পুলিশ, থানা পুলিশ ও নৌ-পুলিশের তৎপরতা রয়েছে।

ট্যুরিষ্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, “শুক্রবার কুয়াকাটায় আরো বেশি পর্যটকের আগমন ঘটতে পারে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় জন্য আমাদের সদস্যরা সর্বদা তৎপর রয়েছে।”

ঢাকা/ইমরান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হামলায় পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত, দাবি ভারতের
  • পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত হোক
  • তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকে মুখর কুয়াকাটা
  • কাপ্তাই হ্রদের ‘দ্বীপে’ রিসোর্ট-কটেজ, টানছে পর্যটক