নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল, হেফাজত নেতাদের নামে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ সব দাবি পূরণ না করা হলে ঢাকাসহ সারা দেশ অচল করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহসভাপতি ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব।

আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে হেফাজতের এই নেতা বলেন, ‘আমাদের দাবি না মানা হলে আগামীকাল ঢাকা অচল হয়ে যাবে। আন্দোলনের মুখে হাসিনার বিদায় হয়েছে, আপনি ফুঁয়ের সঙ্গে বিদায় হয়ে যাবেন। আপনার সময় আগামীকাল পর্যন্ত, এর মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত না এলে দেশ অচল করে দেওয়া হবে, আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে।’

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের কোরআনবিরোধী প্রতিবেদন ও কমিশন বাতিল; সংবিধানে বহুত্ববাদের পরিবর্তে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল; ফ্যাসিবাদের আমলে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, শাপলা চত্বরসহ সব গণহত্যার বিচার; ফিলিস্তিনে এবং ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে আগামীকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশ সফলের লক্ষ্যে বিক্ষোভ সমাবেশটির আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের পল্টন জোন।

আগামীকাল হেফাজতের সমাবেশে সারা দেশ থেকে মানুষ অংশগ্রহণ করবে জানিয়ে জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ইতোমধ্যে দিনাজপুর থেকে ৪২টি বাস আসার জন্য প্রস্তুত হয়েছে। চার থেকে সাড়ে হাজার মানুষ বরিশাল থেকে লঞ্চে আসবে। সমাবেশ সফল করতে তিনি সবাইকে শনিবার ফজরের নামাজের পর মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানান।

হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী বলেন, আগামীকাল আলটিমেটাম দেওয়া হবে। হেফাজতের নেতাদের নামে, আলেমদের নামে থাকা মামলা প্রত্যাহার এবং নারী কমিশন বাতিল না হলে প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা সারওয়ার কামাল আজিজী বলেন, ‘আমাদের দাবি স্পষ্ট, তা মানতে হবে। না হলে প্রয়োজনে আরেকটা শাপলা চত্বর করা হবে। ইসলামবিরোধী এই কমিশন বাতিল করতে হবে, বাতিল না করা পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আহমেদ আলী কাসেমী, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মীর ইদ্রিস, পল্টন জোনের উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আবদুল কাইয়ুম সোবহানী, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি জাবের কাসেমী প্রমুখ।

বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে হেফাজতে ইসলামের পল্টন জোনের সভাপতি মাওলানা সালাহ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি মিছিল বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে বের হয়ে পল্টন হয়ে বিজয়নগর মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

আরও সংগঠনের মিছিল

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বিলুপ্ত এবং এর প্রতিবেদন বাতিলের দাবিতে বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটক এলাকায় পৃথক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ।

এ ছাড়া ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা বন্ধ এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার দাবিতে পৃথক বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ। মিছিল থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা দখলের প্রতিবাদ এবং জাতিগত নিধন বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ব ষয়ক আগ ম ক ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

৩৬ জুলাইকে জাতীয় মুক্তি দিবস ঘোষণাসহ ১৩ দাবি ইনকিলাব মঞ্চের

ছাত্র আন্দোলনের ৩৬ জুলাইকে জাতীয় মুক্তি দিবস ঘোষণাসহ ১৩ দফা দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।

সোমবার (১৬ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবির কথা জানায় সংগঠনটি।

সংগঠনটির মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদী বলেন, “আমাদের স্বাধীনতা দিবস আছে, বিজয় দিবস আছে, কিন্তু আমাদের মুক্তি ঘটেনি। তাই ঐতিকহাসিক ৩৬ জুলাইকে জাতীয় মুক্তি দিবস ঘোষণা করতে হবে। এ ছাড়াও জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার আগে জনগণের মতামতের জন্য তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।”

আরো পড়ুন:

বেগম রোকেয়া পদকের জন্য আবেদনপত্র আহ্বান

নিরাপদ খাদ্য দিবস শনিবার: ‘নিরাপদ খাদ্য উচ্চ রক্তচাপ ঝুঁকি কমায়’

তিনি বলেন, “গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মৌলিক সংস্কার এবং ২০২৪ সালের গণহত্যার বিচার নিশ্চিত না করে দেশে যদি নির্বাচন আয়োজন করা হয়, তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘গাদ্দার’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে। এই সনদে ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের নিরিখে বৈষম্যবিরোধী ইনসাফভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র বিনির্মাণের সুস্পষ্ট রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “সংবিধান থেকে জনবিরোধী ও জুলাই সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সব ধারা উপধারা বাতিল করে জুলাই সনদকে সাংবিধানের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সব দল, মত এবং লিঙ্গের ন্যায্য শরিকানা নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে বলা হবে- আমরা বাংলাদেশের জনগণ এই ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান সম্পল্প করেছি।”

সংবাদ সম্মেলনে ইনকিলাব মঞ্চ ১৩টি প্রস্তাবনা তুলে ধরে, যা জুলাই সনদের কার্যকর প্রয়োগ ও জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে।

প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করা সব শহীদকে রাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ সন্তান ঘোষণা করতে হবে;  যেসব জুলাই যোদ্ধার স্থায়ী অঙ্গহানি হয়েছে, তাদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে; ফ্যাসিবাদী আমলে সংঘটিত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভোটারবিহীন অবৈধ নির্বাচন বাতিল করে সংশ্লিষ্ট দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

এছাড়া ফ্যাসিবাদী আমলের সকল মন্ত্রী, এমপি ও দোষী আমলাসহ রাষ্ট্রীয় কর্মচারীদের বিচারের আওতায় এনে অবৈধভাবে উপার্জিত সম্পদ জব্দ করে তা শহীদ ও আহতদের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে; দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা রক্ষায় ভারতীয় আধিপত্যবিরোধী ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে; জুলাই, পিলখানা ও শাপলা গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করে দেশি-বিদেশি অপশক্তি চিহ্নিত করতে হবে; রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক সংস্কার করতে হবে যাতে ফ্যাসিবাদ আর স্বৈরতান্ত্রিকতা কখনও ফিরে না আসে; ৩৬ জুলাইকে জাতীয় মুক্তি দিবস ঘোষণা করতে হবে।

বাকি দাবিগুলো হলো- জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের ভিত্তিতে বৈষম্যবিরোধী কল্যাণ রাষ্ট্রের রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে; সংবিধান থেকে জনবিরোধী ও জুলাই সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সব ধারা বাতিল করে জুলাই সনদকে সংবিধানের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সব দল, মত ও লিঙ্গের ন্যায্য অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে; জুলাই সনদের ভাষাগত দুর্ব্যবহার পরিহার করে জনসাধারণের জন্য সহজ ভাষায় উপস্থাপন করতে হবে এবং সনদ চূড়ান্ত করার পূর্বে জনগণের মতামতের জন্য তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

আগামী ২৫ জুনের মধ্যে জুলাই সনদ ঘোষণা করা না হলে রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ অভিমুখে ‘লাল মার্চ’ করার ঘোষণাও দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৩৬ জুলাইকে জাতীয় মুক্তি দিবস ঘোষণাসহ ১৩ দাবি ইনকিলাব মঞ্চের
  • বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, ভালো উদ্যোগ নিলেও বিরোধিতা আসে
  • যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল