নারীবিষয়ক কমিশন বাতিলসহ সব দাবি না মানলে দেশ অচলের হুঁশিয়ারি হেফাজতের
Published: 2nd, May 2025 GMT
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল, হেফাজত নেতাদের নামে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ সব দাবি পূরণ না করা হলে ঢাকাসহ সারা দেশ অচল করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহসভাপতি ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব।
আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে হেফাজতের এই নেতা বলেন, ‘আমাদের দাবি না মানা হলে আগামীকাল ঢাকা অচল হয়ে যাবে। আন্দোলনের মুখে হাসিনার বিদায় হয়েছে, আপনি ফুঁয়ের সঙ্গে বিদায় হয়ে যাবেন। আপনার সময় আগামীকাল পর্যন্ত, এর মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত না এলে দেশ অচল করে দেওয়া হবে, আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে।’
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের কোরআনবিরোধী প্রতিবেদন ও কমিশন বাতিল; সংবিধানে বহুত্ববাদের পরিবর্তে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল; ফ্যাসিবাদের আমলে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, শাপলা চত্বরসহ সব গণহত্যার বিচার; ফিলিস্তিনে এবং ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে আগামীকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশ সফলের লক্ষ্যে বিক্ষোভ সমাবেশটির আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের পল্টন জোন।
আগামীকাল হেফাজতের সমাবেশে সারা দেশ থেকে মানুষ অংশগ্রহণ করবে জানিয়ে জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ইতোমধ্যে দিনাজপুর থেকে ৪২টি বাস আসার জন্য প্রস্তুত হয়েছে। চার থেকে সাড়ে হাজার মানুষ বরিশাল থেকে লঞ্চে আসবে। সমাবেশ সফল করতে তিনি সবাইকে শনিবার ফজরের নামাজের পর মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানান।
হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী বলেন, আগামীকাল আলটিমেটাম দেওয়া হবে। হেফাজতের নেতাদের নামে, আলেমদের নামে থাকা মামলা প্রত্যাহার এবং নারী কমিশন বাতিল না হলে প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা সারওয়ার কামাল আজিজী বলেন, ‘আমাদের দাবি স্পষ্ট, তা মানতে হবে। না হলে প্রয়োজনে আরেকটা শাপলা চত্বর করা হবে। ইসলামবিরোধী এই কমিশন বাতিল করতে হবে, বাতিল না করা পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আহমেদ আলী কাসেমী, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মীর ইদ্রিস, পল্টন জোনের উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আবদুল কাইয়ুম সোবহানী, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি জাবের কাসেমী প্রমুখ।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে হেফাজতে ইসলামের পল্টন জোনের সভাপতি মাওলানা সালাহ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি মিছিল বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে বের হয়ে পল্টন হয়ে বিজয়নগর মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
আরও সংগঠনের মিছিল
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বিলুপ্ত এবং এর প্রতিবেদন বাতিলের দাবিতে বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটক এলাকায় পৃথক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ।
এ ছাড়া ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা বন্ধ এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার দাবিতে পৃথক বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ। মিছিল থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা দখলের প্রতিবাদ এবং জাতিগত নিধন বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ব ষয়ক আগ ম ক ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)