শাহরিয়ার হত্যার বিচার দাবিতে শাহবাগ মোড়ো ছাত্রদলের অবস্থান, যান চলাচল বন্ধ
Published: 22nd, May 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবস্থান নিয়েছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। অবস্থানের কারণে শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক নেতা-কর্মী শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। এর আগে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা শাহবাগ মোড়ে জড়ো হতে থাকেন।
শাহবাগ মোড়ে অবস্থানরত ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা জানান, আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তাঁদের এই অবস্থান কর্মসূচি চলবে। কর্মসূচিতে অংশ নিতে বিভিন্ন শাখা-ইউনিটের নেতা-কর্মীরা আসছেন।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখনো সাম্য হত্যার বিচারের কোনো আশ্বাস কিংবা দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে পাইনি। প্রশাসন আমাদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে।’
গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটকের কথা এক বিবৃতিতে জানায়। এ প্রসঙ্গে রাকিবুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিনজনকে আটকের কথা জানিয়েছে। কিন্তু তাঁদের পরিচয় সম্পর্কে জানাতে পারেনি। তাঁরা মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো সন্দিহান। আসামিদের সম্পর্কে তারা নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেনি। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তাঁদের কর্মসূচি চলবে।
ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের অবস্থানের কারণে ইতিমধ্যে শাহবাগ মোড় সংশ্লিষ্ট সড়কগুলোতে যানজট তৈরি হয়েছে। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন লোকজন।
গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আজকের এই অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতির প্রতিবাদ এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল ঘাতকসহ সব আসামিকে গ্রেপ্তার, সুষ্ঠু বিচারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত শাহবাগ মোড় ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে অবস্থান করবে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ম য হত য শ হব গ ম ড় ছ ত রদল র অবস থ ন কর ম র হত য র
এছাড়াও পড়ুন:
স্থানীয় ইউপি সদস্যের পরিকল্পনায় মুরাদনগরে ‘মব’ সৃষ্টি করে তিনজনকে হত্যা
কুমিল্লার মুরাদনগরে ‘মব’ সৃষ্টি করে একই পরিবারের তিনজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাঁদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বাচ্চু মিয়ার পরিকল্পনায় নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার বাদী রিক্তা আক্তারও তাঁর মা, ভাই ও বোনকে হত্যার জন্য বাচ্চু মিয়া (৫৫) ও তাঁর সহযোগীদের দায়ী করেছেন। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যে মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানার কড়ইবাড়ী গ্রামে রোকসানা বেগম ওরফে রুবি (৫৩), তাঁর ছেলে মো. রাসেল মিয়া (৩৫) এবং মেয়ে তাসপিয়া আক্তার ওরফে জোনাকিকে (২৯)
কুপিয়ে হত্যা করেন হামলাকারীরা। এ ছাড়া সেখানে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা রোকসানার আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৭) বর্তমানে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় নিহত রোকসানার মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে গতকাল শনিবার বাঙ্গরা বাজার থানায় বাচ্চু মিয়াসহ ৩৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করার পর গতকাল বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন র্যাব-১১–এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন। তিনি জানান, মামলার এজাহারনামীয় আসামি বাচ্চু মিয়া, রবিউল আওয়াল (৫৫) ও দুলাল (৪৫) ছাড়াও আতিকুর রহমান (৪২), বয়েজ মাস্টার (৪৩) ও আকাশকে (২৪) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানী ও কুমিল্লায় একাধিক অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ঘটনার সূত্রপাত যেখান থেকের্যাব–১১–এর অধিনায়কের দেওয়া সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য এবং মামলার এজাহারের তথ্য বলছে, গত ১ জুন রবিউল আওয়ালের একটি মুঠোফোন চুরি হয়। এর জন্য বোরহান নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে মারধর করেন বাচ্চু মিয়া ও তাঁর সহযোগীরা। তখন ছেলেকে ছাড়িয়ে আনতে বোরহানের বাবা জসীম উদ্দিন স্থানীয় মাতবরদের কাছে যান। এরপরও ছেলেকে ফিরে না পেয়ে একপর্যায়ে তিনি রোকসানা বেগমের কাছে যান। পরে বোরহানের বাবা ছেলের সন্ধান চেয়ে বাঙ্গরা বাজার থানায় একটি মামলা করেন।
র্যাব–১১–এর অধিনায়ক এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তখন বাচ্চু মিয়াসহ অন্যদের ধারণা হয়, রোকসানা বেগমের পরামর্শে জসীম উদ্দিন থানায় মামলা করেছেন। তখন মব সৃষ্টি করে বাচ্চু মিয়াসহ অন্য আসামিরা সেদিন রোকসানার বাড়িতে হামলা করে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করেন।
মামলার এজাহারে রোকসানার মেয়ে রিক্তা আক্তার উল্লেখ করেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার সময় রোকসানাদের পরিবারকে ঘেরাও করেন বাচ্চু মিয়াসহ অন্য আসামিরা। বাড়ির সামনে এসে তাঁরা রোকসানার নাম ধরে ডাকতে থাকেন। রোকসানা ঘর থেকে বের হয়ে এলে বাচ্চু মিয়া তাঁর মাথায় একটি কোপ দেন। বাচ্চু মিয়ার পূর্বপরিচিত স্থানীয় চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ ও বাছির মিয়াও রোকসানার মাথায় কোপ দেন। এ সময় মাকে বাঁচাতে ঘর থেকে ছুটে আসেন তাঁর ছোট মেয়ে জোনাকী। তখন জোনাকীর মাথায় কোপাতে থাকেন শিমুল বিল্লাহ, রফিকসহ কয়েকজন। জোনাকি ও রোকসানাকে কোপানোর খবর পেয়ে মোটরসাইকেলে করে তখন বাড়িতে আসেন রোকসানার ছেলে রাসেল। তখন শিমুল বিল্লাহসহ অন্যরা রাসেলকে কুপিয়ে ঘটনাস্থলে হত্যা করেন। এ সময় রোকসানার আরেক মেয়ে রুমা
এগিয়ে এলে বাচ্চু মিয়া তাঁর হাতে থাকা রামদা দিয়ে মাথায় কোপ দেন। তখন রুমা পড়ে যান। এ সময় অন্যরাও তাঁর মাথায় কোপাতে থাকেন। পরে মামলার বাদী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর
৯৯৯–এ ফোন দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলেও ততক্ষেণ তিনজন খুন হয়ে সেখানেই পড়ে ছিলেন। পরে পুলিশ তাঁদের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।