বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে অতিদ্রুত নতুন কমিটি গঠন করা হবে। সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে এ আলোচনা এখন তুঙ্গে। খোদ বিএনপি চেয়ারপার্সন তারেক রহমান ব্যক্তিগতভাবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ওপর নজরদারি রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
কমিটির মেয়াদ পূর্ণ না করে দুই বছর মেয়াদী কমিটি কেন ভাঙা হবে, তা নিয়ে রয়েছে পক্ষে-বিপক্ষে মত। নতুন কমিটির রূপরেখাও দিচ্ছেন কেউ কেউ। তবে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষনেতারা বলছেন, সংগঠনে এমন কোনো আলোচনা নেই। তারপরও দল চাইলে কমিটি ভাঙতেই পারে।
জানা গেছে, গত বছর ১ মার্চ বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সভাপতি এবং নাসির উদ্দীন নাসিরকে সাধারণ সম্পাদক করে সাত সদস্যের আংশিক কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়। পরে ১৫ জুন তিনটি পদ ফাঁকা রেখে ২৬০ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় দফায় কমিটি বর্ধিত করার কথা থাকলেও তা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।
আরো পড়ুন:
ছাত্রীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক: নোবিপ্রবির সেই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত
তিতুমীর কলেজে বৈষম্যবিরোধীসহ সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রদলের হামলা
তারপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগর, জেলাসহ বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠনে ছাত্রদলের এ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ওঠে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ। এ নিয়ে সংগঠনের একাংশের মধ্যে তৈরি হয় অসন্তোষ।
রাকিব-নাছিরের বর্তমান নেতৃত্ব দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, নিষ্ক্রিয়, ‘মাই ম্যান' ও অছাত্রদের পদায়নের অভিযোগে দুষ্ট। এমনকি বিভিন্ন ইউনিটে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও কখনোই ছাত্রদল না করা ব্যক্তিদের পদায়নের অভিযোগ রয়েছে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি ইউনিটে কমিটি ঘোষণার পর ছাত্রদলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের একটি অংশ তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। এছাড়া বিক্ষোভ, ককটেল বিস্ফোরণ, রাকিব-নাছিরের কুশপুত্তলিকা পোড়ানোসহ নানা কর্মসূচি পালন করে এই অংশটি।
এতে বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজগুলোতে পদপ্রাপ্তদের অনেকেই ঢুকতে পারেনি ক্যাম্পাসে। পরবর্তীতে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনের সরাসরি হস্তক্ষেপ ও পদবঞ্চিতদের সঙ্গে সমন্বয়ের ফলে বর্তমানে পরিস্থিতি বাহ্যত শান্ত। এ নিয়ে বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল সভাপতি-সম্পাদককে সঙ্গে নিয়ে পদবঞ্চিতদের সঙ্গে বৈঠক, দাপ্তরিকভাবে পদবঞ্চিতদের জীবনবৃত্তান্ত গ্রহণ করার পরও পদ পায়নি বঞ্চিতরা। ছাত্র সম্পাদকের বেশ কয়েকবারের আশ্বাস প্রদানও বিফলে গেছে।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন রাকিব। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের পরও রাকিব-নাছিরের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় বেশ কিছু নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফাঁকা তিনটি পদের মধ্যে দুটিতে পদায়ন হলেও একজন সভাপতি আরেকজন সম্পাদকের ঘনিষ্ঠ বলেই অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদবঞ্চিত ঢাবি ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা অভিযোগ করে বলেন, “ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের বর্তমান কমিটিতে পদায়নের ক্ষেত্রে ন্যূনতম কোনো মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়নি। নির্দিষ্ট অঞ্চলের নেতা তৈরি করা হয়েছে, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের পদধারী নেতা, সরকারি চাকরিজীবী, ব্যাংকার ছাত্রদলের পদ পেয়েছে। ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদে এমন অনেকে নেতৃত্বে এসেছেন, যাদের প্রথম রাজনৈতিক পদ ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক।”
তিনি বলেন, “পূর্বে ওই নেতাদের কোনো রাজনৈতিক পদ ছিল না। তাদের পরিচয় তারা সভাপতি-সম্পাদকের লোক। কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার সময় কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছিল, যেসব ছাত্রদল নেতাকর্মী ২৮ অক্টোবরের পরবর্তী সময়ে সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেছে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কিন্তু আমরা তার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র কমিটিতে দেখলাম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের রাজপথে রক্ত,শ্রম, ঘাম দেওয়া কর্মীদের বঞ্চিত করে সভাপতি-সম্পাদকের নিজ এলাকার গ্রুপের অগ্রাধিকার দেওয়া হলো।”
তিনি আরো বলেন, “ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের কমিটির ক্ষেত্রে সুপার ইউনিট হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এবারই প্রথম সর্বোচ্চ সংখ্যক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা কেন্দ্রীয় সংসদে পদবঞ্চিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য সুপার ইউনিটের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে যাকে-তাকে দিয়ে তারা পদ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। এতে ভবিষ্যতে ছাত্রদলের প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি ও ছাত্রদলের রাজনীতি করতে নিরুৎসাহিত করবে।”
এই নেতা বলেন, “২৮ অক্টোবর থেকে ৭ জানুয়ারি আমি ব্যক্তিগতভাবে যতগুলো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছি, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬০ সদস্যের মধ্যে ৫০ জনও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যারা আমার সমান রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে।”
নাম প্রকাশ না করা শর্তে বর্তমান কমিটির এক যুগ্ম-সম্পাদক বলেন, বর্তমান শীর্ষ দুই নেতৃত্ব কমিটির অনেকেরই ফোন ধরেন না। যাদের ফোন ধরেন না, তারা তো নির্দেশনামাফিক কাজ করতে পারেন না। তাহলে তারা কেনো বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখবে?”
ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জানায়, অভ্যুত্থান পরবর্তী অনুকূল পরিবেশেও ছাত্রদলের বর্তমান নেতৃত্ব শিক্ষার্থীবান্ধব ও ইতিবাচক কর্মসূচি দিতে না পারা, নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা, অর্থের বিনিময়ে অযোগ্য, নিষ্ক্রিয় ও ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টদের পদায়ন এবং ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে দুঃসময়ের ত্যাগী ও যোগ্য নেতাকর্মীদের কৌশলে পদবঞ্চিত করার ব্যাপক অভিযোগ পেয়েছে নীতি-নির্ধারণী মহল।
জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে মূলধারার বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন বেশ কিছু শিক্ষার্থীবান্ধব ও সাড়া জাগানো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে। সেই তুলনায় তেমন কোনো শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মসূচি নেই ছাত্রদলের। বরং দিনদিন ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রদলের জনপ্রিয়তা ও নেতাকর্মী ক্রমশ কমছে। নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা ঢাকতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন এজন্যই কৌশলে ঠেকাতে চায় তারা। ফলে বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
যেকোন মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে ছাত্রদলের এই কমিটি- এমন গুঞ্জন নেতাকর্মীদের মধ্যে। সম্ভাব্য নতুন কমিটিতে কাঙ্ক্ষিত জায়গা পেতে পদপ্রত্যাশীরা বেশ দৌড়ঝাঁপও শুরু করেছেন।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সম্ভাব্য কমিটির শীর্ষ পদের জন্য আলোচনায় থাকা ঢাবির নেতারা হলেন-২০০৭-০৮ সেশন থেকে নাসির উদ্দিন নাসির, শ্যামল মালুম এবং জহির রায়হান আহমেদ। ২০০৮-০৯ সেশন থেকে এইচ এম আবু জাফর, খোরশেদ আলম সোহেল, রিয়াদ রহমান, শাফি ইসলাম এবং সোহেল রানা।
২০০৯-১০ সেশনের আমানুল্লাহ আমান, এস এম মাহমুদুল হাসান রনি, মমিনুল ইসলাম জিসান, শরিফ প্রধান শুভ, ফারুক হোসেন, আরিফুল ইসলাম, শাহরিয়ার হক মজুমদার শিমুল এবং মাসুদুর রহমান মাসুদ। ২০১০-১১ সেশনের গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, মাসুম বিল্লাহ (এফআর) এবং আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক।
২০১১-১২ সেশনের গাজী মো.
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল ছ ত রদল ক ন দ র ন ত কর ম দ র ছ ত রদল র পদবঞ চ ত ল ইসল ম পরবর ত কম ট ত র জন ত পদ য ন কম ট র রহম ন ব এনপ গঠন ক ইউন ট স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ: একাদশে ভর্তিতে যোগ্যতার শর্ত প্রকাশ, আসন ২৩৯০টি
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদনের জন্য এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রীদের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একাদশ শ্রেণির ভর্তির নীতিমালা-২০২৫ অনুযায়ী ভর্তি করা হবে।
আবেদনের জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা১. ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রীদের জন্য: বিজ্ঞানে (বাংলা মাধ্যম) জিপিএ ৩.৫০, বিজ্ঞানে (ইংরেজি ভার্সন) জিপিএ ৩.৫০, ব্যবসায় শিক্ষায় জিপিএ ৩.০০ এবং মানবিকে ৩.০০ পেতে হবে।
২. অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের জন্য: বিজ্ঞানে (বাংলা মাধ্যম): জিপিএ ৫.০০, বিজ্ঞানে (ইংরেজি ভার্সন) জিপিএ ৫.০০, ব্যবসায় শিক্ষায় জিপিএ ৪.৫০ এবং মানবিকে ৪.০০ পেতে হবে।
আসনসংখ্যাবিজ্ঞানে (বাংলা মাধ্যম): ১৫৩০টি, বিজ্ঞানে (ইংরেজি ভার্সন) ৩০০টি, ব্যবসায় শিক্ষায় ২৮০টি এবং মানবিক ২৮০টি আসনে সর্বমোট ২ হাজার ৩৯০ ছাত্রী ভর্তি করা হবে।
অনলাইনে আবেদন ও নিশ্চায়নের তারিখ
প্রথম পর্যায়: অনলাইনে আবেদন ৩০ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট ২০২৫, নিশ্চায়নের তারিখ ২০ আগস্ট থেকে ২২ আগস্ট ২০২৫।
দ্বিতীয় পর্যায়: অনলাইনে আবেদন ২৩ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্ট ২০২৫, নিশ্চায়নের তারিখ ২৯ আগস্ট থেকে ৩০ আগস্ট ২০২৫।
তৃতীয় পর্যায়: অনলাইনে আবেদন ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, নিশ্চায়নের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫।
আরও পড়ুনবিল গেটস বৃত্তি, সুযোগ তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর২৩ জুলাই ২০২৫দরকারি তথ্য১. ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রীদের মধ্যে যারা এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে ইচ্ছুক, তাদের অবশ্যই প্রথম পছন্দ হিসেবে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্বাচন করতে হবে। উল্লেখ্য, অনলাইনে আবেদন করার জন্য প্রত্যেক ছাত্রীকে সর্বনিম্ন ৫টি কলেজ নির্বাচন করতে হবে।
২. আবেদন ফি ২২০ টাকা মাত্র।
৩. ইংরেজি ভার্সন বিজ্ঞান শাখা থেকে পাস করা ছাত্রীরাই শুধু ইংরেজি ভার্সনে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।
৪. পরবর্তী সময়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত মেধাতালিকা প্রকাশের পর নির্বাচন নিশ্চায়ন ফি ৩৩৫ টাকা পরিশোধ করে প্রাথমিক নিশ্চায়ন সম্পন্ন করতে হবে।
৫. নিশ্চায়ন সম্পন্ন করার পর ভিএনএসসির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনলাইন প্রক্রিয়ায় ভর্তি সম্পন্ন করতে হবে। অনলাইনে ভর্তিপ্রক্রিয়ার বিস্তারিত পদ্ধতি পরবর্তী সময়ে নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
# অনলাইন আবেদনের ওয়েব লিংক: https://esvg.xiclassadmission.gov.bd/
একাদশে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের তৃতীয় বা চতুর্থ বিষয় হিসেবে উচ্চতর গণিত নেওয়া বাধ্যতামূলক। সেই সঙ্গে জীববিজ্ঞান ও পরিসংখ্যান বিষয়ের মধ্যে যেকোনো একটি বিষয় নিতে পারবে