আমাদের কোনো আচরণে, পারফরমেন্সে কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমা করে দেবেন: জামায়াতের আমির
Published: 27th, May 2025 GMT
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘দল হিসেবে দাবি করি না, আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে। প্রতিটি কর্মী বা দলের কারণে যে যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সবার কাছে বিনা শর্তে মাফ চাই। আপনারা আমাদের ক্ষমা করে দেবেন। আমাদের কোনো আচরণে, কোনো পারফরমেন্সে কষ্ট পেয়ে থাকলেও ক্ষমা করে দেবেন।’
আজ মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের আমির এসব কথা বলেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাসের রায় নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দলটি।
শফিকুর রহমান বলেন, এই রায়ে প্রমাণিত হয়েছে, সত্যকে চেপে রাখা যায় না, সত্য মেঘের আড়াল ভেদ করে আলোর ঝলক নিয়ে আসে।
জামায়াতের আমির বলেন, জাতির অনেকগুলো বার্নিং ইস্যু এখনো আনরিসলভড। এখানেও সব রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট অংশীজন জনগণের স্বার্থকে যেন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়।
শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা কথা দিচ্ছি, আল্লাহর একান্ত ইচ্ছায়, দেশবাসীর সমর্থন পেয়ে দেশের সেবা করার দায়িত্ব পেলে প্রতিশোধের রাজনীতি ও বৈষম্যের রাজনীতির অবসান ঘটাব। সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করব।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘শেখ হাসিনার আমলে আমরা ভয়ংকর জুলুমের শিকার হয়েছি। আমাদের ১১ জন শীর্ষ নেতাকে মিথ্যা মামলায় সাজানো, পাতানো আদালত এবং মিথ্যা সাক্ষ্যের মাধ্যমে কার্যত জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে।’
শফিকুর রহমান বলেন, এটিএম আজহারের রায় সুবিচার হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এ মামলাগুলো পরিচালনা করতে গিয়ে সীমাহীন জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তাঁর বইয়ে এটা স্বীকার করেছেন, কীভাবে বিচার বিভাগ ও সরকার মিলে বিচার নয়, বরং ঠান্ডা মাথায় খুন করার ছক আঁকা হয়েছে। একটি পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, যেন কেউ প্রতিবাদ করতে না পারেন।
জামায়াত আমির বলেন, একেকটা রায়ের পর পরিবারের সদস্যদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। এতে পরিবারগুলো ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেছে।
শফিকুর রহমান বলেন, এই মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে ‘ইন্টারন্যাশনাল কাস্টমারি ল’ কিংবা ‘ডমেস্টিক কাস্টমারি ল’ অনুসরণ করা হয়নি। সেদিন সংবিধান বা আইন কোনো বিষয় ছিল না। যাঁদের ইশারায় কোর্ট পরিচালনা হতো, তাঁদের ইচ্ছাই এখানে মুখ্য ছিলো। সেটি বৈধ হোক কিংবা অবৈধ।
জামায়াত আমির বলেন, ব্রিটেনের উচ্চ আদালত তাঁদের রায়ে বলেছেন, এই মামলাগুলো ছিল বিচারের নামে ‘জেনোসাইড অব দ্য জাস্টিস’। বিচারকে গণহত্যা করা হয়েছে। তাঁরা ‘কিলিং অব দ্য জাস্টিস’ বলেনি। কারণ, সিঙ্গেল কেস হলে কিলিং বলতেন। এখানে ছিল একাধিক কেস। বাংলাদেশের আদালত আজ তাঁদের রায়ে বলেছেন, ‘মিসকারেজ অব দ্য জাস্টিস’। এটা নেতৃত্ব গণহত্যা ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো, দলকে নেতৃত্ব শূণ্য করা। তবে তাঁরা (জামায়াত) প্রতিশোধ নেননি, তাঁরা ন্যায়বিচার চেয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ‘‘বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি তোলা উচিত, চব্বিশ এবং আগের গণহত্যা, নির্যাতন-নিপীড়ন, ভোটাধিকার হরণ—এসবের জন্য যদি আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হতে পারে। তাহলে একাত্তরে গণহত্যা, ধর্ষণ, নারকীয় হত্যাযজ্ঞের জন্য জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। তাদের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করতে হবে। একই অপরাধে দুই রকমের বিচার হতে পারে না।’’
শনিবার (১ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজনে ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন: দুলু
নৌকা ডুবেছে, শাপলা ভাসবে: এনসিপির তুষার
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘‘যদি আওয়ামী লীগের মতো একই ধরনের অপরাধে জামায়াতের বিচার না হয়, তাহলে সেটা হবে ইতিহাসের প্রতি অবিচার।’’
তিনি বলেন, ‘‘আজকে জামায়াত তাদের পোশাক-চেহারা, আচরণ পাল্টে নতুন রূপে হাজির হয়েছে। তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈঠক করছে। কিন্তু, মূল উদ্দেশ্য বিএনপিকে আক্রমণ করা। এই বহুরূপীদের চেহারা জনগণ চিনে ফেলেছে।’’
বিএনপির এই নেতা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে বিএনপিই একমাত্র শক্তি। অথচ এই শক্তিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র চলছে। সরকার নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনের নামে প্রক্রিয়া চালালেও জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আলাল আরো বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার মনে করেছে, দেশের সব অনাচারের মূলে সংবিধান। কিন্তু সমস্যার মূল সংবিধান নয়—ক্ষমতার অপব্যবহার ও জনগণের ভোটাধিকার হরণ। শেখ হাসিনার ১৬-১৭ বছরের শাসনে এই অন্যায়, নির্যাতন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারই হয়েছে সবচেয়ে বড় বাস্তবতা।’’
ঢাকা/রায়হান/রাজীব