বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশ থেকে ১৮–২০ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৮০০ কোটি থেকে ২ হাজার কোটি ডলার পাচার হয়েছে (বাংলাদেশি টাকায় ২ থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকা)। একজনই ৩৫০টি বাড়ি কিনেছেন। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এসব অর্থ পাচার করা হয়েছে। এসব ঘটনা উদ্‌ঘাটন করা গেছে। দিন দিন এই অর্থের পরিমাণ বাড়ছে।

অর্থ পাচার প্রতিরোধে সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এই মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে এই সভা আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএফআইইউর প্রধান কর্মকর্তা এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘পাচারের অর্থ ফেরত আনতে হবে, এ ধরনের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য নতুন। আমরা কেউ এ ধরনের কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। পাচারের অর্থ ফেরত আনার কাজ গতিশীল করতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। সে জন্য আইনে পরিবর্তন আনা হবে। ১১টি গ্রুপ নিয়ে যৌথ তদন্ত চলছে।’

গভর্নর আরও বলেন, ‘পাচারের অর্থ ফেরত আনতে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লেগে যাবে। ইতিমধ্যে বিদেশে একজনের সম্পদ জব্দ হয়েছে। সামনে আরও সম্পদ জব্দ হবে। আমাদের উদ্দেশ্য, পাচারকারীদের ওপর চাপ তৈরি করা, যাতে আদালতের বাইরে গিয়ে অর্থ উদ্ধার করা যায়। কাউকে জেলে নিয়ে হয়রানি করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। কারও ব্যবসা বন্ধ করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা কারও ব্যবসা বন্ধ করিনি। যাদের ব্যবসা বন্ধ হয়েছে, অন্য কারণে তা হয়েছে।’

সভায় জানানো হয়, চলতি অর্থবছরে বিএফআইইউতে মোট ১৭ হাজার ৩৪৫টি সন্দেহজনক লেনদেন ও কার্যক্রম–সংক্রান্ত প্রতিবেদন (এসটিআর/এসএআর) দাখিল হয়েছে; আগের বছরের তুলনায় যা প্রায় ২৩ শতাংশ বেশি। এতে বোঝা যায়, অর্থ পাচার প্রতিরোধ কার্যক্রমে প্রতিবেদন প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সচেতনতা ও দক্ষতা বেড়েছে।

এ ছাড়া বিএফআইইউ গত অর্থবছরে ১১৪টি আর্থিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার কাছে পাঠিয়েছে। আইন প্রয়োগকারী, নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ মোট ১ হাজার ২২০টি তথ্য বিনিময়ও হয়েছে, আগের বছরের তুলনায় যা ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি।

বিএফআইইউর প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম বলেন, অর্থ পাচার ও হুন্ডি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও লেনদেন ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এই প্রবণতা। অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় স্থিতিশীলতা ফেরাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে কাজ চলছে। ১১টি গ্রুপ নিয়ে যৌথ তদন্ত চলছে। এ কাজে পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক।

বিএফআইইউর প্রধান বলেন, পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার লক্ষ্যে সংস্থাটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, তদন্তকারী সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে। বিশ্বব্যাংকের এসটিএআর, যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসডোজ, আইএসিসিসি ও আইসিএআরের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। এমনকি বিদেশি আইনি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের মাধ্যমে অর্থ পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে। তবে প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল হওয়ায় সময় লাগবে।

সভায় বিএফআইইউর পরিচালক মুহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন, অর্থ পাচার ধরা ও উদ্ধার করা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এটা চলতেই থাকবে। গত বছরের জুলাই মাসের পর বিএফআইইউর কাজ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। সন্দেহজনক প্রতিবেদন অনেক বেড়েছে। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন পাঠানো চার গুণ বেড়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অর থ প চ র তদন ত বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

তিন কারণে পণ্য রপ্তানিতে আগের মতোই প্রণোদনা পাবেন ব্যবসায়ীরা

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৪৩ খাতে রপ্তানি প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা আগের মতোই বহাল রেখেছে সরকার। জাহাজীকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে রপ্তানি প্রণোদনা এবং নগদ সহায়তার হার পণ্যভেদে দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। এ নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, তিন কারণে রপ্তানি খাতে আর্থিক প্রণোদনা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের সময়সীমা আরও পাঁচ মাস পিছিয়ে দিয়েছে সরকার। আগামী বছরের (২০২৬) জুলাই থেকে এটি কার্যকর করার কথা ছিল। এখন তা পিছিয়ে আগামী বছরের নভেম্বর মাস নির্ধারণ করা হয়েছে।

সূত্রটি জানায়, যে কারণে এই সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে তা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অধিক হারে শুল্কারোপ, স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে ভারতের বিধিনিষেধ এবং গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিল্প খাতে অস্থিরতা। বিগত সাত অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি খাতে প্রণোদনা দেওয়ার পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। এই আর্থিক প্রণোদনার সিংহভাগ (৮০ ভাগের বেশি) পেয়েছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার গত বছরের দুই দফায় রপ্তানি প্রণোদনা কমায়। তখন বলা হয়, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিবিধান অনুসারে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর কোনো ধরনের রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা দেওয়া যায় না। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর একবারে সহায়তা প্রত্যাহার করা হলে রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাই ধাপে ধাপে সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

কোন খাতে কত প্রণোদনা

নগদ সহায়তার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত। দেশি সুতা ব্যবহার করে উৎপাদিত তৈরি পোশাক নতুন বাজারে রপ্তানি করলে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৯ শতাংশ প্রণোদনা মিলবে; যা গত বছরের জুনের আগে ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ।
বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা ১০ শতাংশ এবং ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদারে ৬ শতাংশ প্রণোদনা মিলবে। এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ মিলবে।

কয়েক বছর ধরেই পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমছে। তারপরও বৈচিত্র্যময় পাটপণ্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা বহাল থাকবে। এ ছাড়া পাটজাত পণ্যে ৫ শতাংশ এবং পাট সুতায় প্রণোদনা মিলবে ৩ শতাংশ। একইভাবে হালকা প্রকৌশল পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ, ওষুধের কাঁচামালে ৫ শতাংশ, বাইসাইকেল রপ্তানিতে ৩ শতাংশ এবং আসবাব পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা থাকবে ৮ শতাংশ। এ ছাড়া হিমায়িত চিংড়ি, মোটরসাইকেল, ইলেকট্রনিকস, পেট বোতল ফ্লেক্স, জাহাজ, প্লাস্টিক পণ্য, হাতে তৈরি পণ্য যেমন হোগলা, খড়, আখ বা নারিকেলের ছোবড়া, তৈরি পোশাক কারখানার ঝুট, গরু, মহিষের নাড়ি, ভুঁড়ি, শিং ও রগ, কাঁকড়া, কুঁচে, আগর, আঁতর ইত্যাদি পণ্য রপ্তানিতেও নগদ সহায়তা আগের মতো থাকবে।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, রপ্তানিতে নগদ সহায়তার অর্থ পেতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয় ব্যবসায়ীদের। এটি কমিয়ে আনতে প্রবাসী আয়ের বিপরীতে যেভাবে প্রণোদনা দেয়, সেভাবে রপ্তানিকারকদেরও দিতে পারে সরকার। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভারত বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহ দিচ্ছে। তবে বাংলাদেশে ঘটছে উল্টো। এদিকে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি খরচ বাড়লেও প্রণোদনা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, কাজই শুরু হয়নি
  • ভর্তুকি দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে রেশমশিল্প
  • আট পণ্যে আটকা দেশের রপ্তানি খাত
  • সরকারের ঋণ হবে সাড়ে ২৩ লাখ কোটি টাকা 
  • তিন কারণে পণ্য রপ্তানিতে আগের মতোই প্রণোদনা পাবেন ব্যবসায়ীরা
  • বিনিয়োগের সন্ধানে চীন যাচ্ছে বিডার প্রতিনিধি দল
  • ব্যয় সংকোচনে আরো কঠোর সরকার
  • চলতি অর্থবছরে ব্যয় সাশ্রয়ী নীতি অব্যাহত থাকবে
  • সরকারি দপ্তরে গাড়ি কেনা ও বিদেশ সফর বন্ধ
  • ট্রাম্পের নতুন শুল্ক, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আয় ৩০ হাজার কোটি ডলারে উঠতে পারে