জামায়াত নেতা আজহারের খালাস জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ভেঙে দিয়েছে: গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট
Published: 27th, May 2025 GMT
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাসের রায় প্রত্যাখ্যান করেছে বামপন্থী সাতটি ছাত্রসংগঠনের মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। তারা বলেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং স্বাধীন বিচারব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করেছিল। দুঃখজনকভাবে এই রায় সেই প্রত্যাশাকে ভেঙে দিয়েছে। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে মানুষের মধ্যে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, এই রায় সেই শঙ্কাকে আরও দৃঢ় করল।
আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি তামজিদ হায়দার, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (ইউপিডিএফ) সভাপতি অমল ত্রিপুরা, ছাত্র ফেডারেশনের (জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল) সভাপতি মিতু সরকার ও বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাওফিকা প্রিয়া।
এর আগে আজ সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত সদস্যের বেঞ্চ জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারকে খালাস দেন।
এ টি এম আজহারের মামলার রায় বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেনি মন্তব্য করে বামপন্থী ছাত্র জোটের বিবৃতিতে বলা হয়, আজহারের মামলায় আপিল বিভাগের রিভিউ শুনানির রায় হয়েছে আজ। রায়ে তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের গণদাবিকে প্রহসনে পরিণত করেছিল, নিজের ক্ষমতায় টিকে থাকার হাতিয়ার বানিয়েছিল এবং ত্রুটিপূর্ণ বিচার করেছিল। প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে তারা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছে। এতে বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে।
এ টি এম আজহার ও তাঁর দল জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল ও গণহত্যায় অংশগ্রহণ করেছিল উল্লেখ করে জোট বলেছে, আওয়ামী লীগ আমলে ঘোষিত আজহারের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন থাকলে নতুন করে শুনানি শুরু করা যেত। সেটাই স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়া। অথচ তা না করে রিভিউ শুনানির রায়ে তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা করা হলো। মুক্তির প্রক্রিয়াটি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত। এর মাধ্যমে আদালতের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিচারব্যবস্থা যে এখনো পুরো মাত্রায় রাজনৈতিক প্রভাবাধীন, তা প্রমাণিত হলো।
রায় প্রত্যাখ্যান করে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট আরও বলেছে, মুক্তিযুদ্ধকে আওয়ামী লীগ যেভাবে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেছে, তাকে প্রতিরোধ করেছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং স্বাধীন বিচারব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করেছিল। দুঃখজনকভাবে এই রায় সেই প্রত্যাশাকে ভেঙে দিয়েছে। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে মানুষের মধ্যে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, এই রায় সেই শঙ্কাকে আরও দৃঢ় করল।
আরও পড়ুনজামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল খালাস পাওয়ায় বাম জোটের উদ্বেগ২ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ছ ত র জ ট এই র য় স ই আজহ র র কর ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’
তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’
অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’
পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’
আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’
ঢাকা/আসাদ/রাজীব