ট্রাকচালক আব্বাসের সহযোগী সেলিম জানে সবই
Published: 29th, May 2025 GMT
দেশের বিনোদন অঙ্গনের দুই ব্যতিক্রমী স্রষ্টা-নির্মাতা অমিতাভ রেজা ও অভিনেতা মোশাররফ করিম। একজন তাঁর দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলীর জন্য পরিচিত, অন্যজন অভিনয়ের গভীরতা ও বৈচিত্র্যে অনন্য। বহুদিন ধরে দর্শকের মনে প্রশ্ন ছিল, কবে তাদের যুগলবন্দি দেখা যাবে? সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এবার তারা হাজির হয়েছেন ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’ নামে এক নতুন ধারার ওয়েব সিরিজ নিয়ে।
নামেই বোঝা যায়, এটি কোনো সাধারণ সিরিজ নয়; বরং এটি এক ধরনের দর্শনচর্চা, জীবনের অনিশ্চয়তা, বোহেমিয়ান জীবনের আকুলতা এবং মানুষের ভেতরের এক অদৃশ্য ঘোড়ার পেছনে ছোটার গল্প।
এর আগে ওটিটি মাধ্যমে ‘মহানগর’-এর ‘ওসি হারুন’ থেকে ‘মোবারকনামা’র মোবারক দিয়ে মোশাররফ করিম হইচইয়ের দর্শকদের মনে দাগ কেটেছেন তাঁর আন্তরিকতাপূর্ণ ও সনির্বন্ধ চরিত্রে অভিনয় দিয়ে।
এবারের ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’য় ট্রাকচালক আব্বাস চরিত্রটি দর্শকদের জন্য হতে যাচ্ছে এক দারুণ চমক। সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে সিরিজটির ট্রেইলার। দুই মিনিটের এই ট্রেইলারে উঠে এসেছে আব্বাস ও তাঁর আট স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের গল্প। দেখা যায় ট্রাকচালক আব্বাস বিভিন্ন জেলায় নানা পরিস্থিতিতে পড়ে সাতটা বিয়ে করেছেন। প্রত্যেক স্ত্রীর কাছে আব্বাস আলাদা ধরনের মানুষ। কোনো বউই একে অপরের ব্যাপারে জানেন না। তবে আব্বাসের সহযোগী সেলিম সবই জানে। ঘটনাচক্রে আট নম্বর বিয়ে করার পরই আব্বাসের জীবনে নেমে আসে দুর্যোগ। সেই পরিস্থিতি থেকে কি আব্বাস মুক্তি পায়? তাঁর জীবনে কী শান্তি মেলে? এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে আগামী ৫ জুন।
এই সিরিজে নিজের অভিনীত চরিত্র নিয়ে মোশাররফ করিম বলেন, ‘‘অমিতাভ রেজার সঙ্গে এত বড় পরিসরে এটিই আমার প্রথম কাজ। সেই সঙ্গে দুর্দান্ত গল্প ও চরিত্রের কারণে এ সিরিজের সঙ্গে আমার যুক্ত হওয়া। হইচইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা তো বহুদিনের, তাই এই সিরিজ নিয়ে প্রত্যাশা অনেক। দর্শক ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’তে সম্পূর্ণ নতুন কিছু পাবেন বলে আমার বিশ্বাস। আমরা আমাদের কাজটুকু করেছি। এখন অপেক্ষা সিরিজটি দর্শকের কাছে পৌঁছানোর।’’
সিরিজে মোশাররফ করিমের বিপরীতে রয়েছেন একঝাঁক জনপ্রিয় অভিনেত্রী– রুনা খান, মৌসুমী হামিদ, সাদিয়া আয়মান, তানজিকা আমিন, রোবেনা রেজা জুঁই, ফারহানা হামিদ, অদিতি এবং বৃষ্টি। প্রত্যেকেই সিরিজে তুলে এনেছেন ভিন্ন ভিন্ন স্ত্রীর গল্প, দৃষ্টিভঙ্গি ও আবেগ।
‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’য় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক চরিত্রে অভিনয় করেছেন রুনা খান। হইচইয়ের পর্দায় এর আগেও বেশ কিছু চরিত্রে তাঁকে অভিনয় করতে দেখা গেছে। এই সিরিজে তাঁর চরিত্রটি একদম ভিন্ন; গরম মেজাজের ও আত্মবিশ্বাসী এক নারীর। অন্যদিকে বাস্তব জীবনে অভিনেত্রী তানজিকা আমিন যেমন, ঠিক তাঁর বিপরীত চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। মৌসুমী হামিদকে দেখা যাবে নারী মৌয়ালের চরিত্রে। সাদিয়া আয়মান অভিনয় করেছেন ছটফটে, চঞ্চল এক তরুণীর ভূমিকায়। জুঁই করিমকে দর্শক দেখবেন একদম নতুন আঙ্গিকে। সঙ্গে আছে ফারহানা হামিদ, তাঁর চরিত্রে রয়েছে সংযম, অনুভূতি আর নিঃশব্দ এক অভিজ্ঞান, যা দর্শকদের ছুঁয়ে যাবে। এ ছাড়া অদিতি ও বৃষ্টি দুই নতুন মুখের আবির্ভাব ঘটেছে এই সিরিজে। এতে আরও অভিনয় করেছেন রাকিব হোসাইন ইভন, অশোক ব্যাপারী, সুমন পাটোয়ারী, পঙ্কজ মজুমদার, সায়্যেদা, শরীফুলসহ আরও অনেকে।
অমিতাভ রেজা
‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’ সিরিজের প্রধান চরিত্র আব্বাস কীভাবে ভালোবাসা, প্রত্যাশা আর সন্দেহ একসঙ্গে সামলান, সেই কৌতুকপূর্ণ জটিলতা উঠে এসেছে, সঙ্গে আছে নানা ধরনের রোড অ্যাডভেঞ্চার। আব্বাস চরিত্রটি এমন একজন মানুষ, যার ব্যক্তিত্বে এক চুম্বকীয় আকর্ষণ আছে। সে সহজেই নারীর মন জয় করে ফেলে, কিন্তু নিজের জীবনধারা ও সিদ্ধান্ত নিয়ে সে সব সময় এক গভীর দ্বন্দ্বে ভোগে। আমার একজন অভিনেতা প্রয়োজন ছিল, যার অভিনয়ক্ষমতা এমন যে, ক্ষণে ক্ষণে চরিত্রের রূপ পরিবর্তন করতে পারে। মেথড অভিনয়ে পারদর্শী, যা এই শহরে দু-একজনই আছে, যার মাঝে মোশাররফ করিম একজন। এই সিরিজে মোশাররফ করিম দারুণ অভিনয় করেছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এই স র জ য় কর ছ ন চর ত র
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ