ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় এক বছরের ব্যবধানে বেসরকারি খাতের ঢাকা ব্যাংকের সুদ বাবদ আয় ৬৬৪ কোটি টাকা বা সাড়ে ৩১ শতাংশ বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে সরকারি ট্রেজারি বিল বন্ডে বিনিয়োগ থেকে আয়ও। এক বছরের ব্যবধানে এ খাত থেকে ব্যাংকটির আয় ১৯২ কোটি টাকা বা ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। গত বুধবার অনুষ্ঠিত ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় অনুমোদন হওয়া গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর শেষে ব্যাংকটি ঋণের সুদ বাবদ আয় করেছে ২ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির ঋণের সুদ বাবদ আয় বেড়েছে ৬৬৪ কোটি টাকা। একইভাবে গত বছর শেষে সরকারি বিল বন্ড থেকে ব্যাংকটি আয় করেছে ৬১৫ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৪২৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এই খাত থেকে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির আয় ১৯২ কোটি টাকা বা ৪৫ শতাংশ বেড়েছে।

ঋণের সুদ বাবদ আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি আমানতের সুদ বেড়ে যাওয়ায় এ বাবদ খরচও বেড়েছে ঢাকা ব্যাংকের। গত বছর আমানতের সুদ বাবদ ব্যাংকটির ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে আমানতের সুদ বাবদ ঢাকা ব্যাংকের খরচ ৬১৬ কোটি টাকা বা ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।

এদিকে ঋণের সুদ ও বিনিয়োগ থেকে আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধির ফলে ঢাকা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা এক বছরের ব্যবধানে ২৫৯ কোটি টাকা বেড়েছে। গত বছর শেষে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৯ কোটি টাকায়। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৮১০ কোটি টাকা। পরিচালন মুনাফা বাড়লেও মন্দ ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিং ও কর বাবদ খরচ বেড়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ব্যাংকটির মুনাফা আগের বছরের চেয়ে কমে গেছে। গত বছর শেষে ঢাকা ব্যাংকের মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১২৮ কোটি টাকায়। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির মুনাফা ছিল ১৬৭ কোটি টাকা। বেশি পরিচালন মুনাফা করার পরও চূড়ান্ত মুনাফা কমে যাওয়ার মূল কারণ ছিল প্রভিশনিং বাবদ খরচ বেড়ে যাওয়া। গত বছর শেষে ব্যাংকটি মুনাফা থেকে ৭২৬ কোটি টাকা প্রভিশনিং করেছে। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির প্রভিশনিংয়ের পরিমাণ ছিল ৪০৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ঢাকা ব্যাংকের প্রভিশনিং বেড়েছে ৩২৩ কোটি টাকা।

এদিকে মুনাফা কমলেও গত বছর শেষে শেয়ারধারীদের মোট ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। যার মধ্যে রয়েছে ৫ শতাংশ বোনাস ও ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ। ২০২৩ সালে ব্যাংকটি ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল শেয়ারধারীদের। এবারও সমপরিমাণ লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে, তবে তা বোনাস ও নগদ মিলিয়ে। গত বছরের জন্য ব্যাংকটি ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে ব্যাংকটির খরচ হবে ৫০ কোটি টাকার বেশি।

ঢাকা ব্যাংক শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানি। বর্তমানে এটির প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ১০ টাকা ২০ পয়সা। লভ্যাংশ ঘোষণার খবরে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্যাংকটির শেয়ারের দাম বেড়েছে। ওই দিন ঢাকার বাজারে ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৪ শতাংশ বা ৪০ পয়সা বেড়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য র পর ম ণ ছ ল গত বছর শ ষ ২০২৩ স ল ঋণ র স দ

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী