ব্রাহমা জাতের ৮০০ কেজি ওজনের সম্রাটকে নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন প্রাক্তন স্কুলশিক্ষক নূরুল আমিন। তাঁর ভাষ্য, ঈদের সময় ঘনিয়ে এসেছে। এখনও পর্যন্ত কোনো পাইকার কিংবা ক্রেতা গরুটির দরদামই করতে আসেনি। স্থানীয় ৮ থেকে ১০ জনের সহায়তায় মাঝেমধ্যে গরুটি গোয়ালঘর থেকে বের করা হয়। তবে হাটে তুলে কাঙ্ক্ষিত দামে বিক্রি না হওয়ার শঙ্কায় এখনও কোনো হাটে তোলা হয়নি।
আলাপকালে খুবই আক্ষেপের স্বরে তিনি বলেন, ‘খুব শখ করে গরুটা বড় করেছিলাম। বুঝতে পারিনি এতটা বেকায়দায় পড়ে যাব।’ তাঁর ভাষ্য, প্রতিদিন গরুটির পেছনে এক থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ। চার বছরে চার লাখ টাকার ওপরে খরচ হয়েছে। তিন-চারজন লোক প্রতিনিয়ত পরিচর্যা করছে গরুটিকে। তিনি বলেন, ‘এত টাকা ব্যয় করে, এত কষ্ট করে গরুটা বড় করলাম। ভেবেছিলাম বড় গরুর কথা শুনে বাড়িতে পাইকার এবং ক্রেতাদের লাইন লেগে যাবে। ফল হলো উল্টো। লাইন তো দূরের কথা দামই হয় না।’ গরুর মালিক নূরুল আমিন মাস্টারের বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজীবপুর ইউনিয়নের উত্তর মমরেজপুর গ্রামে।
এক হাজার কেজির লালবাবুকে নিয়েও বিপাকে পড়েছেন গরুর মালিক আব্দুল হান্নান। বিক্রির জন্য গত বছরই তোলা হয়েছিল কোরবানির হাটে। তখন গরুটির ওজন ছিল ৮০০ কেজি। কিন্তু সে বছর আশানুরূপ দাম না ওঠায় বিক্রি হয়নি। ফের এক বছর লালন-পালন করে কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু এ বছরও একই অবস্থা। এ নিয়ে উদ্বেগে দিন কাটছে হান্নানের। তাঁর বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার শিমরাইল গ্রামে।
শুধু এই দু’জনই নন, ঈদুল আজহার সময় ঘনিয়ে এলেও এখনও বিক্রি হয়নি অসংখ্য বড় গরু। শুধু বড় গরুই নয়, মাঝারি সাইজের ৮ থেকে ১০ মণ ওজনের গরু নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার প্রান্তিক খামারিরা। সারাবছর পরিশ্রম ও বিপুল অর্থ বিনিয়োগের পর শেষ মুহূর্তে এসে আশানুরূপ দাম নিয়ে উদ্বেগে সময় কাটছে তাদের। তাদেরই একজন ফিরোজ মাহমুদ। উচাখিলা ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামে ফিরোজ ডেইরি ফার্ম নামে খামার রয়েছে তাঁর। কোরবানি ঈদ সামনে রেখে প্রতিবছরের মতো এবারও আটটি গরু প্রস্তুত করেছেন তিনি। বড় গরুটির ওজন ১৬-১৭ মণের মতো। অন্যগুলোর মধ্যে একটি ছোট, বাকিগুলোর ওজনও বড় গরুটির কাছাকাছি। অন্য বছর এক মাস আগে থেকেই বাড়িতে এসে ব্যাপারীরা গরু দরদাম করলেও এবার তাদের তেমন একটা দেখা নেই। হাতেগোনা কয়েকজন এলেও যে দাম বলছেন, তাতে বিক্রি করলে লাভ দূরের কথা, খরচ উঠবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত ফিরোজ।
গত শুক্রবার ছিল পৌর এলাকার প্রথম গো-হাটের দিন। এমনিতে প্রতি সোমবার গো-হাটের দিন হলেও ঈদ উপলক্ষে শুক্রবারও হাট বসানো হয়। অন্যান্য বছর দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হয়। তবে এ বছর টানা বৃষ্টির কারণে গত শুক্রবারের হাটে কোনো গরুই ওঠেনি। হাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন– একদিকে টানা বৃষ্টি, অন্যদিকে ঝড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে কোরবানির হাটে।
প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, এবার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় তাদের তালিকাভুক্ত কোরবানির উপযুক্ত পশুর সংখ্যা ১৩ হাজার ৩৯৭টি। এর মধ্যে ছয় হাজার ষাঁড় ও তিন হাজার ৮২টি বকনা গরু, চার হাজার ৩১৫টি ছাগল রয়েছে। তাদের তালিকার বাইরেও অসংখ্য প্রান্তিক কৃষকের ঘরে রয়েছে কোরবানির গরু-ছাগল। তবে এ উপজেলায় চাহিদা রয়েছে ৯ হাজার ৮৫০টি পশুর।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.

মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বড় গরুর চাহিদা তুলনামূলক কম। সে ক্ষেত্রে গরুর মালিকদের আমরা পরামর্শ দিই, তিনি যেন আগেভাগেই ঢাকাসহ অনলাইন 
পশুর হাটে প্রচার চালান।’ পাশাপাশি তাদের গরুগুলো যেন খুব সহজেই কাঙ্ক্ষিত দামে বিক্রি করতে পারেন, সে জন্য ময়মনসিংহ কোরবানির হাট নামক একটি অনলাইন পশুর হাট চালু করা হয়েছে। সেখানে গরুর ছবি, মালিকের নাম, ঠিকানা সব তথ্য-উপাত্ত দিয়ে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া গরুর যে কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক যেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, সে আহ্বান বার বার করা হচ্ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গর ক রব ন র হ ট উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও