Samakal:
2025-09-18@06:18:09 GMT

কেবল কমিটিই করিয়া যাইব!

Published: 2nd, June 2025 GMT

কেবল কমিটিই করিয়া যাইব!

কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সিলেটসহ উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জনজীবন যখন চরম দুর্ভোগে পতিত, তখন সিলেট হইতে আসিল গভীরতর বেদনাদায়ক দুঃসংবাদ। সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানা যাইতেছে, শনিবার গভীর রাত্রিতে গোলাপগঞ্জ উপজেলার বখতিয়ারঘাট এলাকায় টিলা ধসিয়া এক পরিবারের চারজন ঘুমন্ত অবস্থাতেই প্রাণ হারাইয়াছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জানাইয়াছেন, কয়েকদিন ধরিয়া টিলাধসের আশঙ্কায় উক্ত এলাকায় মাইকিংযোগে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক করা হইতেছিল। স্পষ্টত, সেই সতর্কবার্তা কাহারও কর্ণকুহরে প্রবেশ করে নাই। আমরা মনে করি, স্থানীয় প্রশাসনও দায়িত্ব উপেক্ষা করিতে পারে না। ভঙ্গুর পাহাড়ের পাদদেশ যে বসবাসের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ– তাহা কাহারও অজানা নহে। কিন্তু ইহাও সত্য, এহেন ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বসবাসকারীরা প্রায় ব্যতিক্রমহীনভাবে দরিদ্র ও অসহায়। প্রাণ হারানো গৃহকর্তারও বিকল্প বাসস্থান ছিল না। নিতান্ত নিয়তির উপর ভরসা করিয়াই যে তিনি সপরিবার প্রশাসনের সতর্কবার্তা সত্ত্বেও পাহাড়ের পাদদেশে থাকিয়া গিয়াছিলেন, তাহা বুঝিতে বিশেষজ্ঞ হইতে হয় না। আমরা মনে করি, এইখানেই স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতা নিহিত। একদিকে তাহারা বিপন্ন মানুষদের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল গড়িয়া তুলিতে পারে নাই, অন্যদিকে অন্তত দুর্যোগকালেও এই সকল মানুষকে কোনো আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরের তাগিদ অনুভব করে নাই। 

দেশে পাহাড়ধসের ঘটনাও নূতন নহে; বিশেষত টানা বৃষ্টিপাতে কয়েক দশক ধরিয়াই বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলে কোনো না কোনো ধসের ঘটনা ঘটিয়াছে। সেই সকল ঘটনায় প্রাণহানিও কম ঘটে নাই। ২০২৪ সালের ১০ জুন সিলেটেই মেজরটিলা চামেলীবাগ এলাকায় টিলা ধসিয়া শিশুসহ একই পরিবারের তিনজন প্রাণ হারাইয়াছিলেন। ২০২২ সালের ৬ জুন জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার পূর্ব সাতজনি গ্রামে টিলা ধসিয়া একই পরিবারের চারজনের প্রাণহানি ঘটিয়াছিল। আগের দিন সংঘটিত কক্সবাজার সদর উপজেলা এবং উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক পাহাড়ধসের ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যুসংবাদ দিতে গিয়া গত বৎসরের ১৩ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানাইয়াছিল, ঐ দিন অবধি উক্ত বৎসরের বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসে এই এলাকায় রোহিঙ্গাসহ মোট ২৭ জনের প্রাণহানি ঘটিয়াছিল। এই সকল প্রাণঘাতী পাহাড়ধসের পরও অসহায় মানুষের সুরক্ষায় অগ্রগতি হইয়াছে, বলা যাইবে না।

আমরা দেখিতেছি, ২০১৭ সালের জুনের মধ্যভাগ অবধি চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবানে পাহাড়ধসে ১২৬ জনের মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে ঐ বৎসরের ১২ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করিয়াছিল। সেই কমিটি পাহাড়ধসের ১৩টি কারণ চিহ্নিত করিয়াছিল, যেইগুলির আটটি ছিল মানবসৃষ্ট এবং পাঁচটি প্রাকৃতিক। মানবসৃষ্ট কারণগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল নির্বিচারে বন ও গাছপালা ধ্বংস, অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটিয়া বসতি স্থাপন, সড়ক নির্মাণ, অন্যান্য উন্নয়নমূলক স্থাপনা নির্মাণে ইমারত বিধিমালা মান্য না করা ইত্যাদি।
বলা বাহুল্য, উক্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রধানত দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলবিষয়ক হইলেও উহা সিলেট অঞ্চলের জন্যও প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু ঐ প্রতিবেদনে সমাধান হিসাবে যেই সকল সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত হইয়াছিল, সেইগুলির কোনোটাই অদ্যাবধি আলোর মুখ দেখে নাই। আমাদের প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টা লইয়া কার্যকর কিছু করিবে। শুধু কমিটি করিয়া প্রাণ রক্ষা হইবে না। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প হ ড়ধস র পর ব র এল ক য় ই সকল

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের

বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত

সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প

জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।

উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।

রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে। 

বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।

উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা। 

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।

ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।

ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।

এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।

ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।

যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে। 

ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ