জুলাই শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বরাদ্দ ৪০৫ কোটি টাকা
Published: 3rd, June 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য এককালীন অর্থ, মাসিক সম্মানী, চিকিৎসা ভাতা, বাসস্থানের ব্যবস্থা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে অন্তর্বর্তী সরকার।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
গতকাল সোমবার অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তবে অর্থ বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাস্তবে তাঁদের জন্য টাকা লাগবে আরও বেশি। এ জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা ‘সংরক্ষিত’ অংশ থেকে বাড়তি ব্যয় করা হবে।
অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তব্যে আরও জানিয়েছেন, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য ২৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য ভাতা, চিকিৎসা, অনুদান ও পুনর্বাসনের জন্য এ বরাদ্দ দেওয়া হয়।
আগামী অর্থবছরে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু না বললেও অর্থ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, শিগগিরই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের ভাতা দেওয়ার জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এ ছাড়া আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা থেকে জুলাই শহীদদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য এককালীন ২০ লাখ টাকা করে সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়া হবে—এ সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। চলতি অর্থবছরে ১০ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেটভুক্ত এখন পর্যন্ত জুলাই শহীদ পরিবার ৮৩৪টি। এ ছাড়া আট বিভাগে গেজেটভুক্ত আহত ১২ হাজার ৪৩ জন। অর্থ উপদেষ্টা যে নীতিমালা তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, সে বিষয়ে ইতিমধ্যে খসড়া তৈরি হয়েছে। এতে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের নতুন করে মাসিক সম্মানী ভাতা দেওয়া এবং ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা থাকতে পারে।
অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তব্যে আরও জানিয়েছেন, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য ২৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য ভাতা, চিকিৎসা, অনুদান ও পুনর্বাসনের জন্য এ বরাদ্দ দেওয়া হয়।জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের এককালীন চিকিৎসাসহায়তা চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও থাকবে বলে জানা গেছে। চলতি অর্থবছরে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য মাসিক সম্মানী ভাতা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়নি। আগামী অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হবে। এগুলো বাস্তবায়ন করা হবে নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার পর।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অতি গুরুতর আহত ব্যক্তিদের জন্য ‘ক’, গুরুতর আহত ব্যক্তিদের জন্য ‘খ’ এবং আহত ব্যক্তিদের জন্য ‘গ’ নামে তিনটি শ্রেণি করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ‘ক’ শ্রেণির ৪৯৩ জনকে মাসিক সম্মানী দেওয়া হতে পারে ২০ হাজার টাকা করে। যাঁরা উভয় হাত/পা হারিয়েছেন, দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ হারিয়েছেন, মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন বা স্বাভাবিক কাজ করার সম্পূর্ণ অক্ষম হয়েছেন—তাঁরা রয়েছেন ‘ক’ শ্রেণিতে।
‘খ’ শ্রেণির ৯০৮ জনকে দেওয়া হতে পারে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা করে। যাঁরা একটি অঙ্গ হারিয়েছেন বা আংশিক অক্ষম হয়েছেন, তাঁরা ‘খ’ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত। আর ‘গ’ শ্রেণির ১০ হাজারের বেশি আহত ব্যক্তিরা পেতে পারেন প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে। যাঁরা চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তাঁরা এ শ্রেণিতে রয়েছেন।
অর্থ উপদেষ্টা জুলাই শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের যে কথাটি বলেছেন, তার ব্যাখ্যা জানতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে গতকাল অর্থ বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জানা গেছে, জুলাই শহীদ ও গুরুতর আহত ব্যক্তিদের জন্য ঢাকায় একটি করে ফ্ল্যাট দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ঢাকার মিরপুর-১৪ নম্বর সেক্টরে পুলিশ স্টাফ কলেজের উল্টো পাশে এবং মিরপুর-৯ নম্বর এলাকার পল্লবী থানার পেছনে জায়গাও চিহ্নিত করা হয়েছে।
‘ক’ শ্রেণির ৪৯৩ জনকে মাসিক সম্মানী দেওয়া হতে পারে ২০ হাজার টাকা করে। যাঁরা উভয় হাত/পা হারিয়েছেন, দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ হারিয়েছেন, মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন বা স্বাভাবিক কাজ করার সম্পূর্ণ অক্ষম হয়েছেন—তাঁরা রয়েছেন ‘ক’ শ্রেণিতে।১৪ তলাবিশিষ্ট ২৫টি ভবন নির্মাণ করা হবে, যেসব ভবনে থাকবে প্রতিটি ১ হাজার ২৫০ ও ১ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট। এতে ৭৬১ কোটি টাকার মতো ব্যয় হতে পারে। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষকে এ জন্য অনুদান দেওয়া হতে পারে। শহীদ পরিবার ও গুরুতর আহত ব্যক্তিদের কাছে বিনা মূল্যে দেওয়া হতে পারে এসব ফ্ল্যাট। বাজেট পাস হওয়ার পর এ ব্যাপারে দরপত্র আহ্বান করা হবে। দুই বছরের মধ্যে এ কাজ শেষ করার চিন্তা সরকারের।
অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ, গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার পুনর্বাসনসহ গণ-অভ্যুত্থানের আদর্শ ও চেতনাকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার কাজও চলমান।
‘খ’ শ্রেণির ৯০৮ জনকে দেওয়া হতে পারে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা করে। যাঁরা একটি অঙ্গ হারিয়েছেন বা আংশিক অক্ষম হয়েছেন, তাঁরা ‘খ’ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত। আর ‘গ’ শ্রেণির ১০ হাজারের বেশি আহত ব্যক্তিরা পেতে পারেন প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে। যাঁরা চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তাঁরা এ শ্রেণিতে রয়েছেন।তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো ১০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল করা হচ্ছে উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্যও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ৪৮ জেলায় শিক্ষিত ও কর্মপ্রত্যাশী ২৮ হাজার ৮০০ যুবকের জন্য ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
‘দেশের ৪৮ জেলায় শিক্ষিত কর্মপ্রত্যাশী যুবদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি’ প্রকল্পটি অবশ্য আওয়ামী লীগ সরকার আমলে নেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা। জানা গেছে, আগের সরকারের আমলে এর প্রায় সব ঠিকঠাক ছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে ৩০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কেনাকাটার প্রস্তাব অনুমোদন পায়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব জ ট বক ত ১০ হ জ র বর দ দ র র জন য এ প রকল প সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
সব করদাতার অনলাইনে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক হচ্ছে
আগামী বছর থেকে সব করদাতার অনলাইনে বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অনলাইনে রিটার্ন জমা করদাতাদের কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে বলে মনে করেন অর্থ উপদেষ্টা।
অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তৃতায় বলেন, আগামী বছর স্বাভাবিক ব্যক্তিশ্রেণির সব করদাতার জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে কোম্পানি করদাতারা যাতে অনলাইনে রিটার্ন দিতে পারেন, সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন তিনি।
সর্বশেষ মৌসুমে ১৬ লাখ করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিয়েছেন। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের সব সরকারি কর্মকর্তা, সব তফসিলি ব্যাংক ও কিছু বড় কোম্পানির কর্মকর্তাদের অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি। সাধারণ করদাতাদের জন্য অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আগের মতোই বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা অপরিবর্তিত রেখেছেন।
তবে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ৩০ শতাংশ হারে একটি কর স্তর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া স্তরেও পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি ২০২৬–২৭ অর্থবছর থেকে পরের এক অর্থবছর পর্যন্ত করমুক্ত আয়সীমা ২৫ হাজার টাকা বাড়ানোর ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন অর্থ উপদেষ্টা। ২০২৬–২৭ ও ২০২৭–২৮ অর্থবছরে করমুক্ত আয়সীমা হবে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। কর স্তরের পুনর্বিন্যাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ১ কোটি ১১ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএনধারী) আছেন। চলতি অর্থবছরে প্রায় ৪০ লাখ করদাতা রিটার্ন দিয়েছেন।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের প্রকৃত আয় কমছে। এক বছর ধরে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে আছে। এর মানে হলো, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ গত এক বছরে ১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। কিন্তু মজুরির হার এক বছর ধরে ৮ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে আছে। তাঁদের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমেছে।