পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি কাটাতে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে জড়ো হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকেরা। ঈদের দ্বিতীয় দিন আজ রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত অন্তত ছয় শতাধিক যানবাহনে কক্সবাজার পৌঁছেছেন প্রায় ছয় হাজার পর্যটক। ট্রেন ও উড়োজাহাজে এসেছেন আরও দেড় হাজারের বেশি মানুষ।

পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের তৃতীয় দিন, আগামীকাল সোমবার থেকে সৈকতে পর্যটকের ঢল নামবে। তখন প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে। ফলে জমে উঠবে ব্যবসা-বাণিজ্যও।

হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকদের ভাষ্য, ৯, ১০ ও ১১ জুন টানা তিন দিনে সৈকত ভ্রমণে আসবেন অন্তত চার লাখ পর্যটক। এই তিন দিনের জন্য ইতিমধ্যে শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউস ও কটেজের ৯৫ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। ১২ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত সাত দিনে আরও পাঁচ লাখের বেশি পর্যটকের আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময়ের জন্য কক্ষ বুকিং হয়েছে ৭৬ শতাংশ। সব মিলিয়ে ঈদের ছুটির ১০ দিনে সৈকতে অন্তত ৯ লাখ পর্যটক আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল, গেস্টহাউস, রিসোর্ট ও কটেজে দৈনিক সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৮৭ হাজার। পর্যটকদের বরণে গতকাল শনিবার সকাল থেকেই হোটেল-রেস্তোরাঁ, বিনোদনকেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। তবে কক্ষভাড়ায় বিশেষ ছাড় নেই।

কক্সবাজার কলাতলী হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ‘গত ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ১০ দিনে সৈকতে ১২ লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছিল। তখন আবহাওয়া ভালো ছিল, বঙ্গোপসাগরও শান্ত ছিল। এবার বৈরী পরিবেশ, কখনো গরম, কখনো বৃষ্টি। নিম্নচাপ হলে সমুদ্র উত্তাল হয়, তখন গোসলে নামাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। তারপরও এবারের ঈদুল আজহার ছুটিতে ৯ লাখের বেশি পর্যটক আসছেন। বৈরী আবহাওয়া, সাগরের উত্তাল রূপ, নির্জন সৈকত, পাহাড়-ঝরনার মিতালি অনেকের কাছে আলাদা আবেদন তৈরি করে।’

মুখর সৈকত

আজ সকাল নয়টায় সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, শত শত পর্যটক সমুদ্রের পানিতে নেমে সাঁতার কাটছেন। বেশির ভাগ পর্যটক বালুচরে দাঁড়িয়ে বা চেয়ার-ছাতার (কিটকট) নিচে বসে আড্ডায় মেতে আছেন। সকাল থেকে আকাশ পরিষ্কার, বেলা বাড়ার সঙ্গে তাপমাত্রাও বাড়ছে।

সি-সেফ লাইফ গার্ডের কয়েকজন কর্মী চৌকিতে বসে পর্যটকদের নজরদারি করছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের নিযুক্ত বিচ কর্মীরাও পর্যটকদের গোসলসহ বিভিন্ন বিষয়ে সতর্ক করছেন।

কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ী আবু শামা স্ত্রী ও ছয় বছরের মেয়েকে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘বছরে অন্তত একবার পরিবারের সঙ্গে দূরে কোথাও ঘুরতে যাই। সেই তালিকার শীর্ষেই কক্সবাজার থাকে। এখানে ডুবসাঁতার, বিকেলে পশ্চিম আকাশে সূর্যাস্ত উপভোগ—এই দুটিই প্রধান আকর্ষণ।’

কলাতলী সৈকতেও কয়েক শ পর্যটকের সমাগম ছিল। সৈকতের এক কিলোমিটারজুড়ে বসানো হয়েছে পাঁচ শতাধিক চেয়ার।

ঢাকার রমনার আনোয়ার সাদিক স্ত্রীকে নিয়ে ছবি তুলছিলেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের পাশাপাশি মেরিন ড্রাইভটাও সুন্দর। পুরো মেরিন ড্রাইভটায় ঘুরে এলেই ভ্রমণটা সার্থক মনে হয়।’

পর্যটকেরা ঘুরে বেড়ান কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের পাটোয়ারটেক সৈকতেও। আজ দুপুরে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শত ধ ক

এছাড়াও পড়ুন:

পর্যটক বরণে প্রস্তুত রাঙামাটি

ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১০ দিনের লম্বা ছুটি পেয়েছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। ছুটি উপভোগ করতে এ সময় অনেকেই বেড়ানোর পরিকল্পনা করেন। পর্যটকদের সেই পরিকল্পনা সার্থক এবং আনন্দময় করতে সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শেষ করেছেন রাঙামাটির পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাদের ধারনা, টানা ছুটিতে পর্যটকদের আগমন বাড়বে। 

পাহাড় ও হ্রদঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য জেলা রাঙামাটি বরাবরই পছন্দের তালিকায় থাকে পর্যটকদের। ভ্রমণপিপাসুরা যান্ত্রিক শহরের ক্লান্তি দূর করতে এখানে ছুটে আসেন। জেলার সাজেক ভ্যালি, ঝুলন্ত সেতু, কাপ্তাই হ্রদ, পলওয়েল পার্ক, আরণ্যক ও সুবলং ঝরনাসহ মনোমুগ্ধকর সব পর্যটন স্পটগুলো মুখরিত হয়ে উঠবে পর্যটদের উপস্থিতিতে। 

টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঝরনাগুলো তাদের যৌবন ফিরে পেয়েছে। বর্তমানে যেসব পর্যটক রাঙামাটিতে অবস্থান করছেন তাদের অনেকেই ঝরনা দেখতে যাচ্ছেন।

আরো পড়ুন:

তিন শর্তে খুলল রুমা ও থানচির পর্যটন

এভারেস্ট দিবস
এ দেশে যে প্রশ্ন শুনতে হয় ‘এভারেস্টে উঠলে কী হয়?’ 

রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে ঝুলন্ত সেতু। ইতোমধ্যে ঝুলন্ত সেতু এবং এর আশপাশ রঙ করেছে কর্তৃপক্ষ। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যারা কাপ্তাই হ্রদে যাবেন তাদের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে ট্যুরিস্ট বোট ব্যবসায়ীরা।

রাঙামাটি পর্যটন নৌযান ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, “পর্যটক বরণে আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ। বোটগুলো সংস্কার, রঙ করাসহ সব কাজ শেষ। আমরা এখন পর্যটকদের জন্য অপেক্ষা করছি।”

জেলার আরেক অন্যতম বিনোদন স্পট পলওয়েল পার্কও প্রস্তত পর্যটক বরণে। পুরো পার্ক নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। সংস্কার করা হয়েছে পার্কের একমাত্র ঝুলন্ত সেতুটিও। 

পার্কটির দায়িত্বে থাকা মিজানুর রহমান বলেন, “আমাদের ১১টি কটেজ আছে। যেখানে ৩৬ জন থাকতে পারেন। ৮ জুন থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত আমাদের কটেজগুলো শতভাগ বুকিং রয়েছে।”

হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইউসুফ বলেন, “টানা ছুটির কারণে এবার রাঙামাটিতে ভালো পর্যটকের সমাগম হবে। এখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভালো। সবমিলে এবারের ছুটিতে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক আসবেন বলে আশা করছি।” 

তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে হোটেলগুলোর ৮০ ভাগ পর্যন্ত অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।”

পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, “আমাদের হোটেল-মোটেল মিলে ৮৭টি রুমে ১৭০ জন থাকতে পারেন। ৯ জুন থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত ৮০ ভাগ রুম অগ্রিম বুকিং আছে।”

ঢাকা/শংকর/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফাটল-ধসে বিপর্যস্ত মাধবকুণ্ড, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে লাল পতাকা
  • দর্শণার্থীদের পদভারে মুখর রাঙামাটি
  • খাগড়াছড়িতে হোটেল-মোটেল খালি, ভিড় রেস্তোরাঁ ও পর্যটনকেন্দ্রে
  • নিস্তব্ধ পাহাড়ের পাদদেশে মুখরিত টাঙ্গুয়ার হাওর
  • কাঙ্ক্ষিত পর্যটক নেই কুয়াকাটায়
  • পাহাড়, নদী ও লেকের অপার সৌন্দর্য নিয়ে অপেক্ষায় টাঙ্গুয়ার হাওর
  • পর্যটক বরণে প্রস্তুত রাঙামাটি
  • ঈদের লম্বা ছুটিতে পর্যটক টানতে ছাড়ের প্রতিযোগিতা 
  • তিন শর্তে খুললো রুমা ও থানচি