ব্রিটিশ প্রসাধনী কোম্পানিকে কিনে নিচ্ছে ফরাসি ব্র্যান্ড লরিয়েল
Published: 9th, June 2025 GMT
ফ্রান্সের বিশ্বখ্যাত প্রসাধনী ব্র্যান্ড লরিয়েল ব্রিটিশ স্কিনকেয়ার তথা ত্বক পরিচর্যার পণ্য প্রস্তুতকারক ব্র্যান্ড মেডিক৮–এর বেশির ভাগ শেয়ার অধিগ্রহণ করতে চলেছে। এতে ত্বক পরিচর্যায় ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রীর দ্রুত বর্ধনশীল বৈশ্বিক বাজারে ফরাসি কোম্পানিটির অবস্থান আরও সুসংহত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
লরিয়েলের কাছে মেডিক৮-এর শেয়ার বিক্রির দায়িত্ব পালন করছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বেসরকারি ইকুইটি ফার্ম ইনফ্লেক্সিয়ন। লরিয়েল ও ইনফ্লেক্সিয়ন আজ সোমবার পৃথক বিবৃতিতে মেডিক৮-এর শেয়ার বিক্রির তথ্য প্রকাশ করেছে। তবে এ–সংক্রান্ত চুক্তিতে কী কী শর্ত থাকছে, তা কোনো পক্ষই প্রকাশ করেনি। খবর রয়টার্সের।
বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন একজন বলেন, এ–সংক্রান্ত চুক্তিতে মেডিক৮–এর এন্টারপ্রাইজ তথা কোম্পানি–মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ইউরো।
লরিয়েলের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই অধিগ্রহণ লরিয়েলের বিলাসবহুল পোর্টফোলিও তথা পণ্যসম্ভারকে আরও শক্তিশালী করবে। লরিয়েল নিজেদের সঙ্গে এমন একটি স্কিনকেয়ার বা ত্বক পরিচর্যার পণ্য প্রস্তুতকারক ব্র্যান্ডকে যুক্ত করছে, যাদের সাফল্যের প্রমাণিত রেকর্ড আছে এবং বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি অর্জনের জোর সম্ভাবনা রয়েছে।
লরিয়েল ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল পণ্য মিউমিউ পারফিউম, ল্যানকোম স্কিনকেয়ার ও অ্যাইসোপ ক্লিনজার প্রভৃতি বিক্রিতে গত বছর প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। এসব প্রসাধনী পণ্য বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি কমার অন্যতম কারণ হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি। ক্রেতারা মূলত মল্যস্ফীতির কারণেই বিলাসবহুল প্রসাধনীর পরিবর্তে কম দামি ব্র্যান্ডের বেছে নিতে শুরু করেছেন।
লরিয়েলের সব বিভাগের মধ্যে বিলাসবহুল পণ্যেই গত বছর সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে তা বিলাসবহুল প্রসাধনী বিক্রিতে লরিয়েলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এলভিএমএইচের একই বিভাগের পণ্যসামগ্রীর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
লরিয়েলের বর্তমান মালিক ফ্রাঁসোয়া বেটেনকোর্ট মেয়ার্স বিশ্বের একজন শীর্ষস্থানীয় বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতি। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ফোর্বসের চলতি ২০২৫ সালের বিলিয়নিয়ার লিস্ট বা শীর্ষ শতকোটিপতির তালিকায় তিনি ২০তম স্থান পেয়েছেন। গত ২৫ এপ্রিল এই তালিকা প্রকাশের দিনে তাঁর নিট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৮১ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার। পরের দেড় মাসে তাঁর সম্পদের পরিমাণ আরও প্রায় ৮৫০ কোটি ডলার বেড়েছে। ফোর্বসের রিয়েল টাইম হিসাব অনুযায়ী, আজ বাংলাদেশ সময় বিকেল পাঁচটা নাগাদ তাঁর সম্পদের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৯০ বিলিয়ন বা ৯ হাজার কোটি ডলার।
ফ্রাঁসোয়া বেটেনকোর্ট মেয়ার্স হলেন লরিয়েলের প্রতিষ্ঠাতা ইউজেন শুয়েলারের নাতনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ল সবহ ল প প রব দ ধ
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫