দক্ষিণ কোরিয়ায় উচ্চশিক্ষা লাভের নেপথ্যে মূল আকর্ষণ হচ্ছে, দেশটির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পাঠ্যক্রমে ইংরেজি ভাষার গুরুত্বের ফলে নিজেদের পছন্দমতো বিষয় নির্বাচন করতে পারেন বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা। তবে খণ্ডকালীন কাজের জন্য কোরিয়ান ভাষায় পারদর্শিতা জরুরি। এটি পড়াশোনার পাশাপাশি জীবনধারণকেও সহজ করে তুলবে। বিশেষত স্কলারশিপ অর্জনের ক্ষেত্রে আলাদা মাত্রা যোগ করতে পারে এ ভাষা দক্ষতা। উপরন্তু ভর্তিপ্রক্রিয়া চলাকালীন স্কলারশিপ নিশ্চিত করা গেলে তা ভিসা প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে। চলুন, দেশটিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জেনে নেওয়া যাক—

দক্ষিণ কোরিয়ায় কেন পড়তে যাবেন

আন্তর্জাতিক সংস্থা ওইসিডির (অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) তালিকাভুক্ত দেশগুলোর একটি দক্ষিণ কোরিয়া। একাডেমিক কৃতিত্ব ও প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষিত ও পেশাদার ফোরামে দেশটির রয়েছে একটি অভিজাত অবস্থান।

দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি যথেষ্ট স্থিতিশীল হওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের চাকরি নিয়ে তেমন বিড়ম্বনা পোহাতে হয় না। প্রতিটি জব সেক্টর একদম শিক্ষানবিশ পর্যায় থেকে জব স্যাটিসফেকশন নিশ্চিত করায় কাজে পাওয়া যায় নিরাপদ ভবিষ্যতের সম্ভাবনা।

জীবনযাত্রার খরচ–সংক্রান্ত বৃহৎ অনলাইন ডেটাবেজ নাম্বিও অনুসারে বিশ্বে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান দ্বিতীয়। এ ছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রমবর্ধমান মাথাপিছু আয় এবং ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মতো বিশেষণগুলোও যুক্ত হয়েছে দেশটির চলমান প্রেক্ষাপটের সঙ্গে। সর্বোপরি প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মধ্যে বসবাসের জন্য পূর্ব এশিয়ার সেরা গন্তব্য এই দেশ।

আরও পড়ুনউচ্চশিক্ষার জন্য চীনে যেতে চান, জেনে রাখুন কিছু বিষয়২৪ অক্টোবর ২০২৩

দক্ষিণ কোরিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় কোনগুলো

বিশ্বব্যাপী স্বনামধন্য দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম সারির ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো—সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইয়োনসেই বিশ্ববিদ্যালয়, কোরিয়া ইউনিভার্সিটি, পোহং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, সুংকিউনকওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, হ্যানিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়, উলসান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, দেগু গিয়াংবুক ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ও কিউং হি ইউনিভার্সিটি।

পড়াশোনার জন্য জনপ্রিয় বিষয়

অর্থনীতি, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং, ফাইন্যান্স, ফ্যাশন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট, ডিজাইন মিডিয়া, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বায়োটেকনোলজি।

আবেদনের উপায়

প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রী ভর্তির জন্য নিজস্ব অনলাইন পোর্টাল ব্যবহার করে। তা ছাড়া ভর্তি কার্যক্রম শুরুর সময়কাল এবং পূর্বশর্তগুলোও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই চূড়ান্ত আবেদনের আগে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট চেক করা উচিত।

ভর্তির আবেদনগুলো সাধারণত সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হওয়ার অন্তত তিন থেকে চার মাস আগে জমা নেওয়া হয়। গড়পড়তায় অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির মৌসুম প্রধানত দুটি। প্রথমটি হলো স্প্রিং সেমিস্টার, যার আবেদন গ্রহণ মার্চ থেকে জুন মাসে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চলে।

দ্বিতীয়টি হলো ফল সেমিস্টার, যে মৌসুমের আবেদন গ্রহণ সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর অবধি শুরু করা হয়। আর ভর্তির যাবতীয় কার্যক্রম শেষ হয় মে থেকে জুন মাসের মধ্যে।

আরও পড়ুনচীনে উচ্চশিক্ষা: স্কলারশিপের সঙ্গে আছে পড়ার শেষে চাকরি ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ২৬ আগস্ট ২০২৪ভর্তির আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

সম্পূর্ণ পূরণকৃত আবেদনপত্র

পাসপোর্ট

পাসপোর্ট সাইজের ছবি

উচ্চমাধ্যমিক সনদ বা সমমানের ডিপ্লোমা

ইংরেজি ভাষা দক্ষতা সনদ: টোয়েফল (ন্যূনতম ৭১) বা আইইএলটিএস (কমপক্ষে ৫ দশমিক ৫)

পার্সোনাল স্টেটমেন্ট

ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা আর্থিক সহায়তার হলফনামা

লেটার অব রিকমেন্ডেশন

সিভি

পিতামাতার পাসপোর্ট বা পরিচয়পত্র (এনআইডি)

মাস্টার্সে আবেদনের জন্য অতিরিক্ত নথি

ব্যাচেলর ডিগ্রি বা সমমানের ডিপ্লোমা সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট

কাজের অভিজ্ঞতা (প্রোগ্রাম বিশেষে প্রযোজ্য)

পিএইচডি আবেদনের নথি

স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বা সমমানের ডিপ্লোমা সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট

মাস্টার্স থিসিস বা গবেষণার প্রস্তাবনা

স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন

আবেদন অনুযায়ী ভর্তির অফার লেটার প্রাপ্তির পরপরই প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে ভিসার কাজ শুরু করা। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘমেয়াদি অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার ডি-২ ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এই ভিসায় প্রাথমিকভাবে ২ বছর পর্যন্ত মেয়াদ মঞ্জুর করা হয়। আর একক এন্ট্রি ভিসার মেয়াদ ৩ মাস। আবেদনের জন্য সরাসরি চলে যেতে হবে কোরিয়ান ভিসা পোর্টালে । এই লিংকের ফরম পূরণের সময় ভিসার জন্য দরকারি সব নথিপত্র আপলোড করতে হবে। তারপর ই-ফরমটি বারকোডসহ প্রিন্ট করে আপলোডকৃত নথির হার্ড কপিসহ একত্রে কোরিয়ান দূতাবাস বা কনস্যুলেটে জমা দিতে হবে।

ফাইল ছবি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট স র জন য তর জ ত ক ন র জন য অব স য ভর ত র

এছাড়াও পড়ুন:

নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া প্রশ্নে রুল

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ রুল দেন। একই সঙ্গে যেকোনো অপারেটরকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব (নিযুক্ত) দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি অনুসারে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক বিডিং (দরপত্র আহ্বান) নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

আরও পড়ুননতুন ব্যবস্থাপনায় নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনা শুরু০৭ জুলাই ২০২৫

নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন রিটটি করেন। রিটে নৌসচিব, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়।

‘নিউমুরিং টার্মিনালে সবই আছে, তবু কেন বিদেশির হাতে যাচ্ছে’ শিরোনামে গত ২৬ এপ্রিল প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এ প্রতিবেদনসহ এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এনসিটি পরিচালনায় ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করার নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়।

আগের ধারাবাহিকতায় ৯ জুলাই রিটের ওপর শুনানি শেষ হয়। সেদিন আদালত ২৩ জুলাই আদেশের জন্য দিন রাখেন। ধার্য তারিখে আদালত আদেশের জন্য ৩০ জুলাই দিন রাখেন। এ অনুসারে আজ বিষয়টি আদেশের জন্য আদালতের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

আজ মধ্যাহ্নবিরতির পর আদালত আদেশ দেন। আদালত বলেন, শুধু রুল দেওয়া হলো।

আদেশের সময় রিটের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আহসানুল করিম এবং আইনজীবী কায়সার কামাল ও আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মহাদ্দেস-উল-ইসলাম।

পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার নতুন দায়িত্ব নিয়েছে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড। টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাইফ পাওয়ারটেকের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৬ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে এ দায়িত্ব নেয় জাহাজ মেরামতের এ প্রতিষ্ঠান। প্রথমবারের মতো বন্দরে টার্মিনাল পরিচালনায় যুক্ত হলো চিটাগং ড্রাইডক।

চট্টগ্রাম বন্দরের বৃহৎ এই টার্মিনাল নির্মিত হয় ২০০৭ সালে। টার্মিনালটি নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি সংযোজনে বন্দর কর্তৃপক্ষ ধাপে ধাপে মোট ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কনটেইনারের সিংহভাগ এই টার্মিনাল দিয়ে পরিবহন হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ