আমাদের সমাজ পুরুষকে সব সময় বলে, ‘তুমি কাঁদতে পারবে না। তোমার দুর্বলতা প্রকাশ করতে পারবে না।’—ফলে দেখা যায় পুরুষের মনের ভেতরে অনেক সমস্যা চলছে কিন্তু সামাজিক অবস্থার কথা চিন্তা করে পুরুষটি তার মানসিক অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে পারেন না। শত সমস্যা থাকার পরেও একজন পুরুষ সবার সামনে হাসিমুখে থাকেন, পরিবারের দায়িত্ব পালন করে যান। এই করে-করে তিনি আর কখনও বলতেই পারেন না যে ‘আমি ভালো নেই, আমারও কান্না আসে’। কিন্তু হাসি, কান্নাতো ন্যাচারাল ব্যাপার। একজন পুরুষের সুখে হাসি আসে, দুখে কান্না আসে। এই বাস্তবতা সমাজ বুঝতে শিখুক। পুরুষ নিজে বুঝুক কান্না আসলে কাঁদতে হয়।
ডা.
পুরুষের মধ্যে মানসিক স্বাস্থসেবা গ্রহণ করার প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে কম। এই মনোবিদ জানান, যারা সুইসাইড করার চিন্তা করছেন অথবা যারা চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বা হারিয়ে ফেলেছেন- এমন পুরুষেরা মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসেন, তাও সংখ্যায় খুবই কম।
‘‘পুরুষদের মধ্যে কিছু কিছু ফ্যাক্টর আছে, যেগুলোর প্রভাবে তারা মানসিক রোগের চিকিৎসা নিতে দ্বিধাবোধ করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে সামাজিক। সমাজ পুরুষদের সব সময় বলে, তোমাকে স্ট্রং হতে হবে। যে কারণে পুরুষ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও সাহায্য চাইতে দ্বিধাবোধ করে।’’— যোগ করেন ডা. পূবালী চৌধুরী
সমাজের বেধে দেওয়া নিয়ম না মেনে মানসিক সমস্যা দেখা দিলে কাছের মানুষদের কাছে সহায়তা চাওয়া উচিত। তাতেও যদি সমাধান না হয়, মনোবিদের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
কখন মনোবিদের কাছে যাবেন
১. যদি দেখেন অল্প খেলেই পেট ভরে যায়
২. হজমে সমস্যা
৩. রাতে ঘুম না হওয়া
৪. ঘুমের ভেতর নানারকম ভয়ের স্বপ্ন দেখা
৫. পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কানেক্টেড ফিল না করা
এই সব সমস্যায় মানসিক রোগের বৈশিষ্ট্য বহন করে। ডা. পূবালী চৌধুরী বলেন, ‘‘মানুষের অ্যাম্বিশনের সঙ্গে অ্যাংজাইটির কোথাও না কোথাও কানেকশন থাকে। কেউ কেউ দেখা যায় কাজের ক্ষেত্রে খুব ভালো করেন কিন্তু পারিবারিকভাবে খুব বেশি সুখী হতে পারেন না। বা নিজেকে নিয়ে হ্যাপি হতে পারেন না। এই পুরুষেরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। পুরুষদের ক্ষেত্রে যখন চুল পড়া শুরু করে, বয়স বাড়ার ফলে যখন ভুড়ি বাড়তে থাকে তখন তারাও ইনসিকিউর ফিল করেন।’’
ভালো থাকার উপায় জানতে হবে
১.হেলদি লাইফ স্টাইল মেইনটেইন করুন
২. ব্যালেন্স ডায়েট করুন
৩. অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন
৪. প্রতিদিন এক্সারসাইজ করা
৫. ছোটবেলায় যা যা হবি ছিল সেগুলোর যত্ন নেওয়া
আর হ্যাঁ, পুরুষ বলে কাঁদবেন না-তা নয়। কান্না আসলে কাঁদুন।
ঢাকা/লিপি
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ