রংপুরের মিঠাপুকুরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারজাত শুরু হয়েছে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃত সুস্বাদু হাঁড়িভাঙা আম। 

মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরে পদাগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল।

উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের যৌথ আয়োজনে আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মুলতামিস বিল্লাহ। সভায় কৃষি বিভাগ, আমচাষি, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা বক্তব্য দেন।

স্বাগত বক্তব্যে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাইফুল আবেদীন জানান, এ বছর মিঠাপুকুরে ১,৩০০ হেক্টর জমিতে ২৬ হাজার মেট্রিক টন হাঁড়িভাঙা আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ বছর হাঁড়িভাঙ্গা আম প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকা বিকিনি হবে বলে ধারণা করেন তিনি। তবে আমের মান ধরে রাখতে তিন–চার ইঞ্চি বোঁটাসহ আম সংগ্রহ, কুসুম গরম পানিতে ধৌতকরণ ও বরিক অ্যাসিড দিয়ে প্লে করার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি জানান, হাঁড়িভাঙা আমের রপ্তানির লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এবং কৃষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গুণগত মান ধরে রাখতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।

এদিকে, চাষিরা অভিযোগ করেন, পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ তারিখ পরিবর্তনের কারণে বাজারে সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর জেলা প্রশাসন তারিখ ঘোষণা করলেও এবার আগে জানানো হয়নি। কৃষি বিভাগ ২০ জুন তারিখ নির্ধারণ করলেও তা পাঁচ দিন এগিয়ে আনা হয়।

চাষিরা আরও অভিযোগ করেন, পদাগঞ্জ বাজারের রাস্তা-মার্কেট অবকাঠামো দুর্বল এবং ব্যাংকের কোনো শাখা নেই, যা বিপণনে ভোগান্তি বাড়ায়। রংপুর থেকে পদাগঞ্জের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। বদরগঞ্জ থেকে ১২ কিলোমিটার হলেও সড়ক উন্নয়ন হয়নি।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (উদ্যান) হাবিবুর রহমান বলেন, “চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত গরমে আম দ্রুত পেকে গেছে। হাঁড়িভাঙা আম পাকলে নরম হয়ে যায় এবং ভেতরে গলে যায়। এ সমস্যা সমাধানে আমকেন্দ্রিক শিল্পকারখানা গড়ে তোলা জরুরি।”

রংপুর জেলা প্রশাসক বলেন, “বিশ্ববাজারে রপ্তানির জন্য হাঁড়িভাঙার গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। অতিরিক্ত হরমোন বা কার্বাইডের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।” 

তিনি পদাগঞ্জের যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নের আশ্বাস দেন এবং পরে বাজার এলাকা ঘুরে দেখেন। ব্যবসায়ীরা বাজারের জমি নির্ধারণ, শেড নির্মাণ, ড্রেনেজ ও সড়ক উন্নয়নের দাবি জানান।

সভায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ছাড়াও পদাগঞ্জের আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/আমিরুল/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

সিআইডিতে বিচারবহির্ভূত হত্যার তদন্ত বিষয়ে আন্তর্জাতিক কর্মশালা

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে ‘সম্ভাব্য অবৈধ মৃত্যুর তদন্তসংক্রান্ত মিনেসোটা নীতিমালা’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর (ইউএনআরসি) কার্যালয় এবং বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) যৌথ আয়োজনে ৩০ ও ৩১ জুলাই ঢাকার সিআইডি সদর দপ্তরে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় সিআইডি।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন সিআইডির প্রধান ও বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. ছিবগাত উল্লাহ। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সিআইডি এখন একটি আধুনিক, তথ্যভিত্তিক ও প্রযুক্তিনির্ভর তদন্ত সংস্থা হিসেবে গড়ে উঠছে। মানবাধিকার রক্ষা ও বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে প্রমাণনির্ভর নিরপেক্ষ তদন্ত অপরিহার্য এবং এ ধরনের আন্তর্জাতিক কর্মশালা আমাদের সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করে।’

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের বিচারবহির্ভূত, সংক্ষিপ্ত বা ইচ্ছামতো মৃত্যুবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক মরিস টিডবল-বিন্‌জ। তিনি বলেন, মিনেসোটা নীতিমালা একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানদণ্ড, যা সন্দেহজনক মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা সৃষ্টি করে। উপস্থাপনায় তিনি লিবিয়া ও ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জে আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্তের উদাহরণ তুলে ধরেন।

কর্মশালার শুরুতে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার শম্পা ইয়াসমীন দেশের ডিএনএ ও ফরেনসিক সক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করেন। দুই দিনব্যাপী এই কর্মশালায় অংশ নেন দেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিচারক, চিকিৎসক ও ফরেনসিক সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধি এবং প্রযুক্তি ও অনুসন্ধান-সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা।

আলোচনার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল, আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী মৃতদেহ শনাক্তকরণ (দুর্যোগে নিহত ব্যক্তি শনাক্তকরণ), নিরপেক্ষ ফরেনসিক প্রতিবেদন তৈরির কৌশল, মানবাধিকার সংরক্ষণে তদন্তকারীদের নৈতিক ও পেশাগত দিকনির্দেশনা এবং বাস্তব ক্ষেত্রভিত্তিক কেস স্টাডি উপস্থাপন।

বিশেষ অধিবেশন পরিচালনা করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মমতাজ আরা, পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক জান্নাতুল হাসান এবং সিআইডির ডিএনএ বিশ্লেষক আহমেদ ফেরদৌস। তাঁদের আলোচনায় জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত অপরাধের তদন্তের অগ্রগতি, সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জও উঠে আসে।

সমাপনী দিনে বক্তারা বলেন, প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশের তদন্তপ্রক্রিয়াকে আরও মানবিক, কার্যকর ও স্বচ্ছ করা সম্ভব। সিআইডির প্রধান ভবিষ্যতে ফরেনসিক সক্ষমতা সম্প্রসারণ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সমাপনী বক্তব্যে মরিস টিডবল-বিন্‌জ বলেন, আইনবহির্ভূত মৃত্যুর তদন্তে প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভ্রাম্যমাণ ডিএনএ পরীক্ষাগার, ঘটনাস্থলে মরদেহ শনাক্তকরণ পদ্ধতি ও অন্যান্য প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগে জাতিসংঘ প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যেভাবে ভারতের যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছিল পাকিস্তান
  • সিআইডিতে বিচারবহির্ভূত হত্যার তদন্ত বিষয়ে আন্তর্জাতিক কর্মশালা