কুমিল্লায় এনসিপির প্রথম কমিটি নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য
Published: 18th, June 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রথম কুমিল্লা জেলা সমন্বয় কমিটির তালিকা প্রকাশের পরই এ নিয়ে পাল্টপাল্টি বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় উঠেছে। ঘোষিত ওই কমিটিতে স্থান পাওয়া প্রধান সমন্বয়কারী আবদুর রহিম ওরফে জুয়েল বলেছেন, ‘৩৫ বছর ধরে বিএনপি করি। আমাকে না জানিয়ে কমিটিতে রাখা হয়েছে।’ তিনি জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার বাসিন্দা। তবে এনসিপি বলছে, আলোচনা করেই জুয়েলকে কমিটিতে রাখা হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাতে এনসিপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে কুমিল্লা জেলা সমন্বয় কমিটির তালিকা প্রকাশ করেন সংগঠনের যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন ওরফে সিফাত। জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত ওই কমিটিতে প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে ঘোষণা করা হয় আবদুর রহিমের নাম। ৩১ সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটিতে পাঁচজনকে যুগ্ম সমন্বয়কারী এবং বাকি ২৫ জনকে সদস্য করা হয়। আগামী তিন মাস অথবা আহ্বায়ক কমিটি গঠনের আগ পর্যন্ত এই কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
কমিটিতে পাঁচ যুগ্ম সমন্বয়কারী হলেন- সৈয়দ আহসান (টিটু), শরীফুজ্জামান, মাজহারুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম সরকার ও ইব্রাহিম খালিদ হাসান।
এছাড়াও সদস্য করা হয়েছে- জামাল হোসেন, জাকারিয়া শরীফ, মীর হাসিব মাহমুদ, ফজলে এলাহি (রুবেল), রাসেল ভূঁইয়া, ওয়ালিউল্লাহ শিশির, লতা সরকার, কাজি নাহিদ হোসাইন, নজরুল আমীন, খোদাদাদ ওমর ভূঁইয়া (অনিক), মাসুদ রানা, এনামুল হক, শ্রাবণী চৌধুরী, আবদুস সামাদ, খন্দকার মো.
ফেসবুকে এই কমিটি প্রকাশের পর থেকে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে এনসিপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে ওই কমিটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জেলা কমিটিতে প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া আবদুর রহিম ওরফে জুয়েল একটি বীমা কোম্পানিতে কর্মরত রয়েছেন। তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা কৃষক দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রজীবনে লাকসামের নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের নির্বাচিত সভাপতি এবং পরবর্তী সময়ে লাকসাম উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এরপর নাঙ্গলকোট উপজেলা যুবদলের সহ-সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি নাঙ্গলকোটে বিএনপির রাজনীতি করেন।
আজ বুধবার আবদুর রহিম জুয়েল সমকালকে বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি কিশোর ও তরুণদের দল। আমি ৩৫ বছর বিএনপির রাজনীতি করি, আমি কীভাবে তাদের নেতৃত্বে থাকি? তারা আমার সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই কমিটিতে আমার নাম ব্যবহার করেছে। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। কমিটি প্রকাশের পর যখন বিষয়টি জেনেছি, তখন সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে এটার বিরুদ্ধে পোস্ট করেছি। ৩৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে দুঃসময়েও কখনও বিএনপিকে ছাড়িনি, তাহলে এখন কেন ছাড়তে যাবো?’
তিনি আরও বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেই আজীবন থাকার ঘোষণা দেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে বুধবার রাতে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
কুমিল্লা অঞ্চলে সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে অন্যতম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাফসা জাহান বিএনপি নেতা আবদুর রহিমের এসব কথাকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে আবদুর রহিমের বেশ কয়েকবার কথা ও আলোচনা হয়েছে। তার মতামতের ভিত্তিতেই কমিটিতে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন তিনি উল্টাপাল্টা কথা বলছেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতেও তার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তখন বলেছেন, তিনি অসুস্থ। তাই, দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এরপর আমরা ফেসবুক পেজ থেকে কমিটি সরিয়ে নিয়েছি। শিগগিরই নতুন কমিটি প্রকাশ করা হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনস প সমন বয়ক র ই কম ট ত র র জন ত ফ সব ক প রক শ সদস য এনস প ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
বরগুনায় সমন্বয়ক পরিচয়ে দোকানে ঢুকে ব্যবসায়ীকে মারধর
বরগুনায় সমন্বয় পরিচয়ে দোকানে ঢুকে এক ব্যবসায়ীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে অন্য ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে ফেলেন।
শনিবার (২ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে বরগুনা পৌর শহরের বিবি সড়কের একটি কাপড়ের দোকানে এ হামলা হয়।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মো. জসিম বরগুনা শহরের লেডিস পয়েন্ট নামের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জসিমের শিশু সন্তানের সঙ্গে ইয়াসমিন তানিয়া নামের এক পথচারী নারীর ধাক্কা লাগে। এতে জসিমের শিশুসন্তান ছিটকে পড়ে যায়। এ নিয়ে জসিম এবং ওই নারী মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানের জন্য উভয় পক্ষকে ডাকেন বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা।
এ সময় সেখানে সমন্বয়ক পরিচয়ে লোকজন নিয়ে উপস্থিত হন ইয়াসমিন তানিয়ার ছেলে সিনহা রহমান। উভয় পক্ষের কথোপকথনের একপর্যায়ে সিনহা জসিমের ওপর হামলা করেন। এ সময় অন্য ব্যবসায়ীরা বাধা দিতে আসলে তাদেরকেও মারধর করার হুমকি দেন সিনহা। এতে শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করেন।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মো. জসিম বলেছেন, “আমি আমার সন্তানকে নিয়ে খাবার কিনতে যাচ্ছিলাম। এ সময় এক পথচারী নারী আমার সন্তানকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় ওই নারী কোনো প্রকার সহানুভূতি না দেখিয়ে উল্টো বলেন, দেখে হাঁটতে পারেন না। বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডার পর যে যার মতো চলে যাই। পরে ওই নারী তার ছেলেকে জানালে বিষয়টির মীমাংসা করতে আমাকে ডাকেন বস্ত্র ব্যবসয়ী সমিতির নেতারা। সেখানে উপস্থিত হলে সবার সামনেই আমাকে মারধর করেন নিজেকে সমন্বয়ক দাবি করা সিনহা। আমি এ হামলার বিচার চাই।”
এ বিষয়ে বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হারুন আর রশিদ বলেছেন, “জসিমের সঙ্গে এক নারী পথচারীর বাকবিতণ্ডা হয়। বিষয়টি সমাধানের জন্য উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার একপর্যায়ে ওই নারীর ছেলে সিনহা ও সঙ্গে থাকা আরেক ছেলে দোকানে উঠে জসিমকে মারধর শুরু করে। এ সময় আমরা তাদেরকে থামাই। সিনহা আমাদেরকেও মারধর করার হুমকি দেন। আমাদের গালিগালাজ করতে করতে বলেন, ‘তোরা আওয়ামী লীগের দালাল, আমরা আন্দোলন করে তোদের বিদায় করেছি।’ এ ঘটনার পরপরই ব্যবসায়ীরা সকল দোকান বন্ধ করে দিয়েছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এ ঘটনায় উপযুক্ত বিচার না হলে আগামীকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।”
এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াকুব হোসাইন রাইজিংবিডি ডটকমকে জানিয়েছেন, ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা/ইমরান/রফিক