বিদেশ থেকে ফেরার সময় বিনা শুল্কে মোবাইল, ল্যাপটপ, ফ্রিজ-টিভিসহ ১৯টি পণ্য আনতে পারবেন
Published: 19th, June 2025 GMT
বিদেশ থেকে আসার সময় যাত্রীরা নিজের ছেলেমেয়ে, স্ত্রী, মা-বাবাসহ আত্মীয়স্বজনের জন্য নানা ধরনের উপহারসামগ্রী আনেন। আবার গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও নিয়ে আসেন তাঁরা। এ জন্য সরকার ব্যাগেজ রুল সুবিধা দেয়।
১৯ ধরনের পণ্য বিনা শুল্কে এবং ১১ ধরনের পণ্য শুল্ক–কর পরিশোধ করে আনা যায়। এ জন্য কোনো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে হবে না। ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে ফেরার সময় আনা যাবে ওই সব পণ্য।
সরকার দু-এক বছর পর পর ব্যাগেজ রুলে পরিবর্তন আনে। এবারের বাজেটেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।
বিনা শুল্কে যা আনা যাবে১২ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সী একজন যাত্রী ৬৫ কেজি ওজনের ব্যাগেজ শুল্ক-কর ছাড়া খালাস করতে পারবেন। তবে ১২ বছরের নিচের বয়সী যাত্রী ৪০ কেজি ব্যাগেজ বিনা শুল্কে খালাস করতে পারবে।
বিনা শুল্কে যে ১৯ ধরনের পণ্য আনা যাবে। এ পণ্যের তালিকায় আছে দুটি ব্যবহৃত মুঠোফোন; একটি নতুন মোবাইল ফোন; ১৫ বর্গমিটার আয়তনবিশিষ্ট কার্পেট; ২৯ ইঞ্চি পর্যন্ত টেলিভিশন; ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ; কম্পিউটার স্ক্যানার; প্রিন্টার; ভিডিও ক্যামেরা; স্টিল বা ডিজিটাল ক্যামেরা; ওভেন ও মাইক্রোওয়েভ ওভেন; রাইস কুকার, প্রেসার কুকার, গ্যাস ওভেন; টোস্টার, স্যান্ডউইচ মেকার, ব্লেন্ডার, ফুড প্রসেসর, জুসার, কফি মেকার; সেলাই মেশিন; টেবিল ফ্যান; ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য খেলার সামগ্রী; ১০০ গ্রাম ওজনের সোনার গয়না; এক কার্টন সিগারেট; সিডি ও স্পিকারসহ মিউজিক সিস্টেম।
শুল্ক-কর পরিশোধ করে যে ১১ ধরনের পণ্য আনা যাবে। এগুলো হলো ১১৭ গ্রাম ওজনের স্বর্ণবার। এ জন্য ৪০ হাজার টাকা শুল্ক-কর দিতে হবে। এ ছাড়া ২৩৪ গ্রাম বা ২০ তোলা রৌপ্যবার; ৩০ ইঞ্চি ও তদূর্ধ্ব টেলিভিশন; হোম থিয়েটার; রেফ্রিজারেটর ও ডিপ ফ্রিজার; এয়ারকন্ডিশনার; ডিশ অ্যানটেনা; এইচডি ক্যামেরা; ঝাড়বাতি; বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে এয়ারগান; ডিশওয়াশার বা ওয়াশিং মেশিন বা ক্লথ ড্রায়ার আনা যাবে। এসব পণ্যে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হয়।
এবার যত পরিবর্তনএবারের বাজেটে বিদেশ থেকে ফেরার সময় বছরে একবার সর্বোচ্চ ১১৭ গ্রাম ওজনের একটি করে সোনার বার আনতে পারবেন। সোনার বার আনার ক্ষেত্রে প্রতি ভরিতে (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) শুল্ক ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আগে একজন যাত্রী বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময় যতবার খুশি ততবার ১০০ গ্রাম ওজনের সোনার গয়না বিনা শুল্কে আনতে পারতেন। এখন থেকে একজন যাত্রী বছরে মোট ১০০ গ্রাম ওজনের সোনার গয়না বিনা শুল্কে আনতে পারবেন। বিদেশফেরত একজন যাত্রী দুটি ব্যবহৃত মুঠোফোন ও প্রতিবছর একবারই একটি নতুন মুঠোফোন শুল্ক-কর পরিশোধ ছাড়া আনতে পারবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র ম ওজন র স একজন য ত র ফ র র সময় প রব ন
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ