রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পেতে আরও অপেক্ষা
Published: 4th, July 2025 GMT
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার অপেক্ষা আরও বাড়ল। সঞ্চালন লাইন তৈরি হলেও জাতীয় গ্রিডে এখনই যুক্ত হচ্ছে না বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। পরিকল্পনা অনুসারে কাজ শেষ না হওয়ায় রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দুই বছর বাড়তি সময় দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় মেয়াদ বাড়াতে হয়েছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। মূল চুক্তিতে নির্ধারিত সময় ছিল প্রথম ইউনিটের জন্য ২০২৩ সালের অক্টোবর আর দ্বিতীয় ইউনিটের জন্য ২০২৪ সালের অক্টোবর। এখন নতুন চুক্তিতে প্রথম ইউনিটের জন্য ২০২৬ সালের ডিসেম্বর, দ্বিতীয় ইউনিটের জন্য ২০২৭ সালের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নিয়ে গত ২০ জুন রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, বিশেষজ্ঞদের যাতায়াতে জটিলতা, যন্ত্রপাতি সরবরাহে দেরিসহ নানা কারণে কাজ পিছিয়েছে। রূপপুর প্রকল্পের খরচের জন্য বছরে বরাদ্দ অর্থের ১০ শতাংশ দিতে হয় বাংলাদেশ সরকারকে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে তা-ও নিয়মিত পরিশোধ করা যায়নি।
নতুন করে কোনো দেরি হয়নি। এখন কাজ স্বাভাবিকভাবেই এগোচ্ছে। তবে অতীতে মহামারি ও যুদ্ধের কারণে দেরি হয়েছে। ফলে ঠিকাদার সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। আশা করছি, আগামী বছর থেকে ধাপে ধাপে উৎপাদন শুরু হবে।প্রকল্প পরিচালক মো.কবীর হোসেন
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একক অবকাঠামো নির্মাণের প্রকল্প। এটি বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় পাবনার ঈশ্বরদীতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে থাকবে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট। খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংস্থা রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট প্রকল্পের প্রধান ঠিকাদার।
প্রকল্পের নীতিনির্ধারণে রাশিয়া ও বাংলাদেশের একটি যৌথ সমন্বয় কমিটি রয়েছে। গত বছর ঢাকায় ওই কমিটির বৈঠকে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। তবে চূড়ান্ত চুক্তি হতে সময় লেগে যায়।
পরমাণু শক্তি কমিশন সূত্র জানায়, শুরুতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় দেড় বছর বাড়ানোর অনুমোদন দেয়। এতে রাজি হয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে আরও ছয় মাস সময় বাড়িয়ে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, কারিগরি বিবেচনায় প্রকল্পের কাজ কোনোভাবেই আগামী বছরের জুনের মধ্যে শেষ করা সম্ভব নয়।
রূপপুর প্রকল্পের খরচের জন্য বছরে বরাদ্দ অর্থের ১০ শতাংশ দিতে হয় বাংলাদেশ সরকারকে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে তা-ও নিয়মিত পরিশোধ করা যায়নি।চুক্তি অনুসারে সময় বাড়লেও খরচ বাড়াতে পারবে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাষ্য, সময়মতো উৎপাদন শুরু না হওয়ায় কেন্দ্রটি কোনো আয় করতে পারছে না। এতে সরকারের পক্ষ থেকে পরিচালন ব্যয় মেটাতে হচ্ছে, যা শেষ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়িয়ে দেবে।
প্রকল্প পরিচালক মো. কবীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন করে কোনো দেরি হয়নি। এখন কাজ স্বাভাবিকভাবেই এগোচ্ছে। তবে অতীতে মহামারি ও যুদ্ধের কারণে দেরি হয়েছে। ফলে ঠিকাদার সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। আশা করছি, আগামী বছর থেকে ধাপে ধাপে উৎপাদন শুরু হবে।’
গ্রিডের সমস্যার কথা বলা অজুহাত ছিল। পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে বিকল্প গ্রিড আগে থেকেই তৈরি ছিল। আসলে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রস্তুত হতে পারেনি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক শফিকুল ইসলামবিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর পরিকল্পনা ছিল। পরে তা পিছিয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া হয়। সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ না হওয়াকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়। যদিও রূপপুর থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সঞ্চালন লাইন গত ২ জুন চালু করেছে সরকারি কোম্পানি পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ। এরপর বলা হয়, দু-তিন মাসের মধ্যে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হবে। সর্বশেষ জানানো হয়, এ বছরের অক্টোবরে উৎপাদন শুরু হতে পারে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রূপপুরে কাজের গতি কিছুটা কমেছে। চুল্লিপাত্রে পারমাণবিক জ্বালানি ঢোকাতে ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর শুরু হবে পরীক্ষামূলক উৎপাদন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চুল্লিপাত্রে জ্বালানি ঢোকানোর পর অন্তত ছয় মাস পরীক্ষামূলক উৎপাদন চলবে। এ সময় ধাপে ধাপে পরীক্ষা ও আন্তর্জাতিক অনুমতি নিতে হবে। এতে আগামী বছরের জুনের আগে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর তেমন সম্ভাবনা নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গ্রিডের সমস্যার কথা বলা অজুহাত ছিল। পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে বিকল্প গ্রিড আগে থেকেই তৈরি ছিল। আসলে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রস্তুত হতে পারেনি।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সময়মতো উৎপাদনে এলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জ্বালানি আমদানির ওপর চাপ কমত উল্লেখ করে শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্প পেছানোয় জনবলের পেছনে খরচ বাড়ছে। এটি বাস্তবায়নে ১০ বছরের বেশি সময় লাগলে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ল র ড স ম বর ইউন ট র জন য র প রকল প প রকল প র র পপ র প সময় ব ড় খরচ ব ড় প রথম বছর র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
উইম্বলডনে কেন ‘ভূমিকম্প’
এবার উইম্বলডনের শুরুতেই আলোচনায় ‘ভূকম্পন’। না, খেলার সময় কোর্টের মাটি বা স্থাপনা কেঁপে ওঠেনি। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় রাউন্ডে যে ধরনের ফল হয়েছে, তাতে টেনিস–বিশ্বে ভূকম্পনই অনুভূত হয়েছে। দ্বিতীয় রাউন্ডের মধ্যেই (একটি ম্যাচ শুক্রবার পর্যন্ত স্থগিত) বাদ পড়ে গেছেন ৩৬ বাছাই খেলোয়াড়। যা টেনিসে নতুন রেকর্ড।
এর আগে তৃতীয় রাউন্ডের আগে সর্বোচ্চ ৩৫ বাছাই বাদ পড়েছিলেন ২০২০ ফ্রেঞ্চ ওপেনে। এবারের উইম্বলডনে দ্বিতীয় রাউন্ডের ভেতরেই বিদায় নিয়েছেন গত মাসে ফ্রেঞ্চ ওপেনের চ্যাম্পিয়ন কোকো গফ ও ছেলেদের তৃতীয় বাছাই আলেক্সান্ডার জভেরভ। শুধু প্রথম রাউন্ড থেকেই বাদ পড়েছেন শীর্ষ ১০ বাছাইয়ের আটজন। যা ১৯৬৮ সালে টেনিসে উন্মুক্ত যুগ শুরুর পর সবচেয়ে বেশি।
অবাক করার মতো তথ্য আছে আরও। মেয়েদের শীর্ষ ৫ বাছাইয়ের মধ্যে তৃতীয় রাউন্ডে জায়গা করতে পেরেছেন শুধু র্যাঙ্কিংয়ের ১ নম্বরে থাকা আরিয়ানা সাবালেঙ্কা, উন্মুক্ত যুগে এমনটা ঘটল মাত্র দ্বিতীয়বার। প্রশ্ন হচ্ছে, এবারের উইম্বলডনে এত বেশি ‘তারকা-পতন’ কেন?
বিবিসি এর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে। যেখানে উঠে এসেছে অন্তত পাঁচটি কারণ।
আরও পড়ুনজোকোভিচের সামনে ‘সেঞ্চুরির’ হাতছানি২০ ঘণ্টা আগেঅস্বাভাবিক আবহাওয়াএবারের উইম্বলডনে খেলোয়াড়দের লড়তে হচ্ছে চরম গরমের সঙ্গেও। উইম্বলডনের ইতিহাসে এবারই প্রথম উদ্বোধনী দিনে সবচেয়ে বেশি গরম রেকর্ড করা হয়েছে—সোমবার ও মঙ্গলবার তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল। খেলোয়াড়দের বরফের প্যাক, ঠান্ডা তোয়ালে ও প্রচুর পানি দেওয়া হয়েছে পরিস্থিতি সহনশীল করার জন্য। তবু কেউ কেউ শারীরিক অসুস্থতা ও ক্লান্তির কথা জানিয়েছেন। ব্রিটিশ ক্যামেরন নরি যেমন বলেছেন, আবহাওয়া ‘শরীরের জন্য একধরনের ধাক্কা ছিল’।
গরমে ভুগছেন খেলোয়াড়েরা