টানা বৃষ্টিতে ২১ জেলার ৭২ হাজার হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে
Published: 10th, July 2025 GMT
টানা ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় অস্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ২১টি জেলায় ৭২ হাজার ৭৬ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। মাঠের আউশ ধান, আমনের বীজতলা, পাট, শাকসবজি, ফলবাগান, পানসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে ডুবে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলা। পরিস্থিতি সবচেয়ে উদ্বেগজনক কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ফেনী জেলায়। যেখানে বৃষ্টির তীব্রতা ও সেচ নিষ্কাশন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে জলাবদ্ধতা বেশি দেখা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার কৃষি মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় বলছে, উপদ্রুত এলাকাগুলোতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আউশ ধান ও আমনের বীজতলা। আউশ ধান ৪ হাজার ৬৬২, আমন বীজতলা ১৪ হাজর ৩৯৩, শাকসবজি ৯ হাজার ৬৭৩, বোনা আমন ২৯৭, পাট ১৩৫, কলা ১১৪, পেঁপে ২৯৩, পান ৩৮৭, মরিচ ১০৪, গ্রীষ্মকালীন তরমুজ ২৮১ হেক্টর। মোট ক্ষতিগ্রস্ত জমি ৭২ হাজার ৭৬ হেক্টর।
কুমিল্লায় ১১ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমির আউশ, আমন, শাকসবজি ও মরিচ পানির নিচে। নোয়াখালীর ৭ হাজার ৮০৬ হেক্টর এবং ফেনীর ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় বৃষ্টিপাত আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত বন্যার সম্ভাবনা নেই বলে জানানো হয়েছে।
অস্থায়ী জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে আমনের বীজতলা। ফসল যদি বেশি দিন ডুবে থাকে, তবে বীজতলা পুনরায় তৈরি করতে হবে, যা শস্যচক্র ও উৎপাদনে প্রভাব ফেলবে।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরের কৃষক মো.
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম বলেন, বৃষ্টিপাত হ্রাস পাওয়ায় জলাবদ্ধতা ধীরে ধীরে কমছে। জেলা পর্যায়ে মাঠকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত জমির তালিকা তৈরি ও কৃষকদের পরামর্শ দিতে কাজ শুরু করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পর পুনর্বাসন ও বীজ সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক রাতের বৃষ্টিতে ৪৪৫৯ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির মুখে
চাঁপাইনবাবগঞ্জে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাতভর বৃষ্টিতে পাকা-আধাপাকা ধান, ভুট্টা, শাকসবজির ক্ষেত ডুবে গেছে। এতে জেলায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমির আবাদি ফসল ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি অফিস।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, জেলার শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাতে ১৯১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত ১০ বছরে একরাতে এমন বৃষ্টির রেকর্ড নেই।
আরো পড়ুন:
তেঁতুলিয়ায় ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত, মিলেছে শীতের আভাস
গাছ থেকে সাইনবোর্ড ও পেরেক তোলার অভিযান হিলি পৌরসভার
লঘুচাপের প্রভাবে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সারা দিন আকাশ মেঘলা ছিল। সন্ধ্যার পরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। রাত সাড়ে ৮টার পর জেলাজুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত হতে থাকে।
জেলার বিদিরপুর এলাকার আমন ধান চাষি আমানউল্লাহ বলেন, ‘‘আমার দুই বিঘা জমির ধান পুরোপুরি ডুবে গেছে। কয়েক দিন পরে ধান কাটা শুরু হতো। শেষ মুহূর্তে দুর্যোগের কবলে পড়ে অধিকাংশ ধান শেষ হয়ে গেছে।’’ একই এলাকার আরেক চাষি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘‘আমরা কল্পনাও করিনি এই সময়ে এসে এত বৃষ্টি হবে।’’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী বলেন, ‘‘ভারী বৃষ্টিতে জেলায় ৪ হাজার ৪৫৯ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২ হাজার ২৩৫ হেক্টর রোপা আমন ধান, ৩৭ হেক্টর আলু, ৯১৭ হেক্টর সরিষা, ৩১৬ হেক্টর শাকসবজি, ২৪৪ হেক্টর পেঁয়াজ, ২৫০ হেক্টর মাসকলাই, ৬৮ হেক্টর ভূট্টা, ১৩ হেক্টর স্ট্রবেরি এবং ৩৭৯ হেক্টর রসুন রয়েছে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘বৃষ্টিতে পাকা ধান হেলে পড়েছে, সেগুলো কিছুটা ক্ষতি হবে। এর পাশাপাশি শাকসবজির কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।’’
তবে জমি থেকে পানি দ্রুত নেমে গেলে এবং আর বৃষ্টি না হলে ফসলের বেশি ক্ষতি হবে না বলেও জানান তিনি।
ঢাকা/শিয়াম/বকুল