বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত ব্যবসায়ী শেখ জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। অথচ তার স্ত্রী শাহিনুর আক্তার ও দুই শিশুসন্তান এখনও চরম অনিশ্চয়তা আর সংগ্রামের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। স্বামীর রেখে যাওয়া দোকানের পুরোনো মালামালই এখন তাদের বেঁচে থাকার শেষ ভরসা। জীবনের প্রতিটি দিন কাটছে আশঙ্কা আর অনিশ্চয়তায়।

নিহত শেখ জাহাঙ্গীর আলম (৫০) সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা হলেও পেশাগত জীবনের প্রয়োজনে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার চন্নাপাড়া গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করতেন। স্থানীয় বাজারে ইলেকট্রনিকস পণ্যের ব্যবসার পাশাপাশি লেপ-তোশকের দোকান চালাতেন তিনি।

গত বছরের ৩ আগস্ট দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়লে মাওনা চৌরাস্তা এলাকাতেও উত্তেজনা তৈরি হয়। সেই আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন শেখ জাহাঙ্গীর।

মর্মান্তিক সেই দিনের স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেন না তাঁর স্ত্রী শাহিনুর। চোখের পানি আড়াল করতে করতে তিনি বলেন, ‘‘সেদিন সকালে নাশতা করে বলেছিলেন, মাওনায় গিয়ে দোকানের জন্য লেপ-তোশকের মাল আনবেন। পরে শুনি, মাথায় গুলি লেগে ঝাঁজরা হয়ে গেছে। তিন দিন পর তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে মরদেহ তুলে আনতে হয়।’’

নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, শাহিনুর ছোট ভাই জুয়েল মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীর পুরোনো দোকানের মালামাল গুছাচ্ছেন। ছোট্ট সংসারে দুই সন্তান জিমতিয়া পারভীন (৮) ও জাকিয়া সুলতানাকেও (৬) পাওয়া গেল পাশেই। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়ছে ওরা।

শাহিনুর বলেন, ‘‘স্বামীর রেখে যাওয়া ইলেকট্রনিকসের সামগ্রী বিক্রি করেই কোনোভাবে সংসার চলছে। জায়গাজমি কিছুই নেই। শ্বশুরবাড়ির লোকজনও পাশে নেই। বাবার বাড়ির অবস্থা এমনিতেই খারাপ।’’

আকুতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সরকারের কিছু সহযোগিতা পেয়েছি। তাতে কোনোমতে একটা বছর পেরোনো গেছে। তবে সামনে কী হবে জানি না। আমি চাই, সরকার, সমাজ আর মানুষেরা যেন আমার দুই বাচ্চার পাশে থাকে। তাহলে হয়তো এই যুদ্ধটা জিততে পারব।’’

শাহিনুরের ছোট ভাই জুয়েল মিয়া বলেন, ‘‘আপা একেবারে ভেঙে পড়েছে। সংসার, দুইটা বাচ্চা, ভবিষ্যতের চিন্তা সবকিছু মিলিয়ে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে আছে। আমি যতটুকু পারি সহায়তা করছি, কিন্তু সামনে কী হবে জানি না।’’

স্থানীয়রা জানান, শহীদ জাহাঙ্গীরের পরিবারকে সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ স্বাভাবিক জীবনে ফেরার মতো আর্থিক ও সামাজিক ভিত্তি তাদের নেই।

শেখ জাহাঙ্গীর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শ্রীপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

আব্দুল বারিক বলেন, ‘‘এ ঘটনায় কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’

তবে নিহতের পরিবার বলছে, মামলার অগ্রগতি কিংবা বিচারের বিষয়ে তারা তেমন কোনো আশাবাদী খবর পাচ্ছেন না।

শেখ জাহাঙ্গীরের পরিবার আজ শুধু স্বামীর মৃত্যুর বিচার নয়, বরং নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইও চালিয়ে যাচ্ছে। দুই সন্তান আর অশ্রুসিক্ত শাহিনুর আক্তারের নীরব কান্না যেন বলে দিচ্ছে এই দেশে একজন সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য কতটুকু, আর সেই মৃত্যুর পর পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রাম কতটা নির্মম হতে পারে।

ঢাকা/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

দুপুরে সংবাদ সম্মেলন ডে‌কে‌ছে সরকার

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে।

আজ দুপুর ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের করবী হলে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

রবিবার (২ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। 

শুধু বৈধ নিরাপত্তা পাশধারী স্বীকৃত সাংবাদিকরা এতে অংশ নিতে পারবেন। 

প্রেস উইং থেকে  স্বীকৃত সাংবাদিকদের সোমবার দুপুর ১২টায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ