জুলাই শহীদ শেখ জাহাঙ্গীরের পরিবারের জীবন সংগ্রাম
Published: 13th, July 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত ব্যবসায়ী শেখ জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। অথচ তার স্ত্রী শাহিনুর আক্তার ও দুই শিশুসন্তান এখনও চরম অনিশ্চয়তা আর সংগ্রামের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। স্বামীর রেখে যাওয়া দোকানের পুরোনো মালামালই এখন তাদের বেঁচে থাকার শেষ ভরসা। জীবনের প্রতিটি দিন কাটছে আশঙ্কা আর অনিশ্চয়তায়।
নিহত শেখ জাহাঙ্গীর আলম (৫০) সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা হলেও পেশাগত জীবনের প্রয়োজনে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার চন্নাপাড়া গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করতেন। স্থানীয় বাজারে ইলেকট্রনিকস পণ্যের ব্যবসার পাশাপাশি লেপ-তোশকের দোকান চালাতেন তিনি।
গত বছরের ৩ আগস্ট দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়লে মাওনা চৌরাস্তা এলাকাতেও উত্তেজনা তৈরি হয়। সেই আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন শেখ জাহাঙ্গীর।
মর্মান্তিক সেই দিনের স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেন না তাঁর স্ত্রী শাহিনুর। চোখের পানি আড়াল করতে করতে তিনি বলেন, ‘‘সেদিন সকালে নাশতা করে বলেছিলেন, মাওনায় গিয়ে দোকানের জন্য লেপ-তোশকের মাল আনবেন। পরে শুনি, মাথায় গুলি লেগে ঝাঁজরা হয়ে গেছে। তিন দিন পর তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে মরদেহ তুলে আনতে হয়।’’
নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, শাহিনুর ছোট ভাই জুয়েল মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীর পুরোনো দোকানের মালামাল গুছাচ্ছেন। ছোট্ট সংসারে দুই সন্তান জিমতিয়া পারভীন (৮) ও জাকিয়া সুলতানাকেও (৬) পাওয়া গেল পাশেই। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়ছে ওরা।
শাহিনুর বলেন, ‘‘স্বামীর রেখে যাওয়া ইলেকট্রনিকসের সামগ্রী বিক্রি করেই কোনোভাবে সংসার চলছে। জায়গাজমি কিছুই নেই। শ্বশুরবাড়ির লোকজনও পাশে নেই। বাবার বাড়ির অবস্থা এমনিতেই খারাপ।’’
আকুতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সরকারের কিছু সহযোগিতা পেয়েছি। তাতে কোনোমতে একটা বছর পেরোনো গেছে। তবে সামনে কী হবে জানি না। আমি চাই, সরকার, সমাজ আর মানুষেরা যেন আমার দুই বাচ্চার পাশে থাকে। তাহলে হয়তো এই যুদ্ধটা জিততে পারব।’’
শাহিনুরের ছোট ভাই জুয়েল মিয়া বলেন, ‘‘আপা একেবারে ভেঙে পড়েছে। সংসার, দুইটা বাচ্চা, ভবিষ্যতের চিন্তা সবকিছু মিলিয়ে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে আছে। আমি যতটুকু পারি সহায়তা করছি, কিন্তু সামনে কী হবে জানি না।’’
স্থানীয়রা জানান, শহীদ জাহাঙ্গীরের পরিবারকে সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ স্বাভাবিক জীবনে ফেরার মতো আর্থিক ও সামাজিক ভিত্তি তাদের নেই।
শেখ জাহাঙ্গীর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শ্রীপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
তবে নিহতের পরিবার বলছে, মামলার অগ্রগতি কিংবা বিচারের বিষয়ে তারা তেমন কোনো আশাবাদী খবর পাচ্ছেন না।
শেখ জাহাঙ্গীরের পরিবার আজ শুধু স্বামীর মৃত্যুর বিচার নয়, বরং নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইও চালিয়ে যাচ্ছে। দুই সন্তান আর অশ্রুসিক্ত শাহিনুর আক্তারের নীরব কান্না যেন বলে দিচ্ছে এই দেশে একজন সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য কতটুকু, আর সেই মৃত্যুর পর পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রাম কতটা নির্মম হতে পারে।
ঢাকা/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ