আফগানিস্তানকে রাশিয়ার স্বীকৃতির ফল যা হতে পারে
Published: 13th, July 2025 GMT
গত ৪ জুলাই রাশিয়া আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০২১ সালে দুই দশকের বেশি সময়ের যুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পিছু হটার পর আফগানিস্তানে তালেবানরা ক্ষমতা দখল করে। এরপর এই প্রথম কোনো রাষ্ট্র তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিল।
তালেবান সরকারের বিরোধিতা করলেও পশ্চিমা শক্তিগুলো তাদের সঙ্গে পরোক্ষ যোগাযোগ চালু রেখেছে। কেউই তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ ও সম্পর্ক স্থাপনের সাহস পাচ্ছে না। মস্কোর স্বীকৃতির কারণে তালেবান সরকার এখন কূটনৈতিক, রাজনৈতিক তৎপরতার সুযোগ পেল।
তালেবানকে স্বীকৃতিদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলে আগেই। এপ্রিলে রুশ সরকার তালেবানকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে সরিয়ে দেয়। এবং সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে দুই দশকেরও বেশি সময় রাশিয়ার সঙ্গে তালেবানের তেমন কোনো সম্পর্ক ছিল না। তবে ২০২১ সালে তালেবানের ক্ষমতা দখলের সময় রাশিয়া কাবুলে দূতাবাস চালু রেখেছিল, অন্যদিকে পশ্চিমা কূটনীতিকরা তখন পলায়ন করেছিলেন।
আফগানিস্তানের সঙ্গে রাশিয়ার ভূরাজনৈতিক সম্পর্ক বহু আগের। একসময় সে দেশে সোভিয়েত ইউনিয়ন সমর্থিত সরকারও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৮৯ সালে রাশিয়ার পূর্বসূরি সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনাবাহিনী এক দশকের যুদ্ধে মুজাহিদিনদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক পর্যায়ে আফগানিস্তান থেকে সরে যায়। এই মুজাহিদরাই পরে তালেবানের মূল শক্তিতে পরিণত হয়।
রাশিয়ার জন্য এই স্বীকৃতি শুধু কূটনৈতিক পদক্ষেপ নয়, এটি তাদের অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কৌশলও বলা যায়। এ সম্পর্কের মাধ্যমে মস্কো এই অঞ্চলের ইসলামী উগ্রপন্থি গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব বিস্তার ঠেকানো এবং মধ্য এশিয়ার নাজুক স্থিতিশীলতা রক্ষায় তালেবানের সহযোগিতা চাইতে পারে, তাদের সঙ্গে কাজ করতে পারে।
২০২৪ সালে মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় অনেক মানুষ নিহত হয়েছিলেন। রুশ সরকারের তথ্যমতে, হামলাকারীরা ছিল আফগানিস্তানভিত্তিক আইএসআইএস-খোরাসান শাখার সদস্য। যারা তালেবান সরকারের ঘোর বিরোধী, তারা রাশিয়াকেও শত্রু মনে করে। সেই ঘটনা ক্রেমলিনের হিসাব বদলে দেয়। এই ঘটনার পর তারা তালেবানের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতার মাধ্যমে রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করতে চায়। ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তালেবানকে ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশীদার’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।
সুতরাং তালেবান সরকারকে রাশিয়ার স্বীকৃতি শুধু তালেবানকে বৈধতা দান নয়, তাদের সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের বিষয়টিও এখানে নিহিত।
আফগানিস্তান হচ্ছে লিথিয়াম, বিরল খনিজ ও অজানা খনিজ সম্পদে ভরপুর একটি দেশ। সে কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তির আগ্রহের লক্ষ্যবস্তু দেশটি। দেশ দুটির আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর রুশ কোম্পানিগুলো আইনি সুরক্ষা ও কূটনৈতিক সহায়তা নিয়ে বাজারে প্রবেশ করতে পারবে।
রুশ রপ্তানি ইতোমধ্যে আফগান বাজারে প্রবেশ করেছে, আর আফগান কৃষিপণ্য– শুকনো ফল থেকে ভেষজ– রুশ দোকানে জায়গা করে নিচ্ছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের তথ্যমতে, মস্কো নীরবে একটি বাণিজ্যিক করিডোর গড়ে তুলছে আফগানিস্তানের সঙ্গে। এ ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলো এখনও নানা হিসাবনিকাশে দ্বিধাগ্রস্ত।
এখানে আঞ্চলিক যোগাযোগের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। আফগানিস্তান মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার সেতুবন্ধ– পাকিস্তান, ভারত ও ভারত মহাসাগরের দিকে পৌঁছানোর পথ।
রাশিয়ার জন্য এটি শুধু কৌশল নয়, এটি সরবরাহ শৃঙ্খলা ও রপ্তানিমুখী রুটের প্রশ্ন। তার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা ও বৈশ্বিক বাণিজ্য পুনর্বিন্যাসের এই সময়ে প্রতিটি নতুন করিডোরই তাদের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলসে এখনও আফগানিস্তানকে পরাজয়ের প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখা হয়। এই ব্যর্থতা তাদের জন্য অবশ্যই স্বস্তিকর নয়। সে কারণে আফগানিস্তান, তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা তাদের জন্য অপমানজনক বিষয়।
আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপ রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। তবে যে পরিমাণ নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে, তাতে মনে হয় না নতুন করে রাশিয়ার আর কোনো কিছু হারানোর আছে। রাশিয়া শুধু তেল-গ্যাস ও অস্ত্র প্রযুক্তি দিয়ে নয়, মধ্য এশিয়ার ভূরাজনৈতিক সমীকরণে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার অংশীদার হতে পারে।
রাশিয়া ১৯৯৭ সালে তাজিকিস্তানের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটাতে মধ্যস্থতা করেছিল। তালেবান ও তাজিকিস্তানের সম্পর্ক এখনও উত্তেজনাপূর্ণ। রাশিয়াকে উভয় পক্ষই বিশ্বাস করে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামোর অংশ মনে করে। রাশিয়াই হতে পারে তাদের দ্বন্দ্ব নিরসনের একমাত্র দেশ ও সমঝোতার সেতুবন্ধ। একইভাবে তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গেও তালেবান সরকারের সম্পর্ক জটিল, সেখানেও রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এখন মস্কো এ অঞ্চলের একটি বৈঠক ডাকার ক্ষমতা রাখে, এমন আলোচনার পথ খুলতে পারে– যা অন্যরা পারে না। যখন পশ্চিমারা দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করছে, তখন রাশিয়া আফগানিস্তানকে বৈশ্বিক সমস্যা থেকে একটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রক্রিয়ার অংশীদারে রূপান্তর করছে।
ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন র ত ল ব ন সরক র ক টন ত ক র জন ত ক সরক র র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের সরাসরি বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে সুখবর দিল বিসিবি
আইসিসির শর্ত পূরণ করে ২০১৫, ২০১৯ এমনকি ২০২৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সরাসরি কোয়ালিফাই করেছে। ২০১৫ থেকে লম্বা সময় ধরে ওডিআই র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ ৭ নম্বরে। সেখান থেকে অবনমন হতে হতে এখন ১০ নম্বরে। তাইতো প্রশ্ন উঠছে ২০২৭ বিশ্বকাপে সরসরি খেলতে পারবে তো বাংলাদেশ?
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হারের পর এই স্বপ্নও ধীরে ধীরে ফিকে হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড জানিয়েছে, এখনও পর্যাপ্ত ম্যাচ আছে বাংলাদেশের। যেগুলোতে ভালো করলে রাংকিংয়ে অবস্থান ভালো হবে। তাতে বাংলাদেশ সরাসরি বিশ্বকাপ খেলতে পারবে বলে আশাবাদী বিসিবি।
আরো পড়ুন:
শারমনি-শর্নার ফিফটিতে ২৩৩ রানের টার্গেট দিল বাংলাদেশ
টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে দুই পরিবর্তন
২০২৭ বিশ্বকাপে সরাসরি কোয়ালিফাই করতে হলে র্যাংকিংয়ে সেরা আট দলের মধ্যে থাকতে হবে। ১৪ দলের টুর্নামেন্টে বাকি দলগুলোকে বাছাইপর্বের বাধা পেরোতে হবে। ২০২৭ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা এবং জিম্বাবুয়ে ছাড়া ওডিআই র্যাংকিংয়ের সেরা আটে থাকা দলই বিশ্বকাপে সরাসরি খেলবে। অর্থাৎ দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ে সেরা আটের মধ্যে থাকলে র্যাংকিংয়ে দশ নম্বর পর্যন্ত থাকা দলগুলো সরাসরি অংশগ্রহণ করবে।
এই সময়কালের মধ্যে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে সেরা অবস্থানের মধ্যে না থাকতে পারলে তখন ১০ দলের বাছাইপর্ব খেলতে হবে। যা গত বিশ্বকাপে পেরোতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
এই মুহূর্তে আফগানিস্তান ৯৪ রেটিং নিয়ে আছে সপ্তমে। ৮৮ রেটিংয়ে আটে অবস্থান ইংল্যান্ডের। ৮০ রেটিংয়ে নয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর এর পরেই দশম অবস্থানে বাংলাদেশ, রেটিং ৭৫।
বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জনের পথটা বাংলাদেশের জন্য এখন বেশ জটিল। প্রতিটি সিরিজ, প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। তবে পর্যাপ্ত সুযোগও আছে।
বিসিবি জানিয়েছে ২০২৫-২৬ সময়কালে বাংলাদেশ আরও ২৪টি ওয়ানডে খেলবে। ফলে র্যাংকিংয়ে উন্নতি করে এখনও সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের বাকি থাকা ম্যাচগুলো- আফগানিস্তান – ১ ওয়ানডে (চলমান সিরিজ), ওয়েস্ট ইন্ডিজ – ৩ ওয়ানডে (হোম), পাকিস্তান – ৩ ওয়ানডে (হোম), নিউ জিল্যান্ড – ৩ ওয়ানডে (হোম), অস্ট্রেলিয়া – ৩ ওয়ানডে (হোম), জিম্বাবুয়ে – ৫ ওয়ানডে (অ্যাওয়ে), আয়ারল্যান্ড – ৩ ওয়ানডে (অ্যাওয়ে) ও ভারত – ৩ ওয়ানডে (হোম)।
এই ম্যাচগুলি আইসিসি এফটিপি’র অধীনে দ্বিপাক্ষিক সিরিজের অংশ এবং ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান নির্ধারণে সরাসরি ভূমিকা পালন করবে।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল